খরচ কম, সহজে ভর্তি; বাংলাদেশে বাড়ছে বিদেশী শিক্ষার্থী by শফিক রহমান
দক্ষিণ
এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে
বাংলাদেশ। দেশটির সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল
কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলো রয়েছে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এ ধারা
ধরে রাখতে পাড়লে খুব শিগগিরই বিদেশি শিক্ষার্থীবান্ধব দেশ হবে বাংলাদেশ।
তবে গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষার মানে, নিশ্চয়তা দিতে হবে সার্বিক নিরাপত্তার-
এমনটিই মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠরা।
গত সেশনে বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ২,৪৩৮ জন। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও নার্সিং কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্রবিষয়ক দফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শিউলি আফছার জানান, মেডিকেল, মেডিসিন ও স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার (মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়ে থাকে)।
সরকারি হিসাবে ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থীদের দেশগুলোর তালিকায় ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলের ৩৫টি দেশের কথা বলা হলেও বড় একটি আসছে নেপাল, ভারত, ভূটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান থেকে।
এক সময় বাংলাদেশে মালয়েশিয়া, ইরান, ফিলিস্তিনি এবং আফ্রিকার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য ছিল। গত শতকের আশির দশকের শেষের দিকে সার্ক বৃত্তি (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক) চালু হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসা শুরু করে। ওরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পড়তে এসেছিলেন ভূটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। এমনকি তাঁর কেবিনেটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. তানজিং দর্জি, তিনি ছিলেন ডা. লোটে শেরিং-এর রুম মেট এবং ‘ক্যাম্পাসের বড় ভাই’ (সিনিয়র ব্যাচমেট)। এঁরা দুজনেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিল। ডা. লোটে শেরিং ১৯৯১ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন। এফসিপিএস কোর্সও তিনি বাংলাদেশে করেন।
তবে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ কিংবা নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোর ক্যাম্পাস নেপালী শিক্ষার্থীদের দখলে। স্কলারশিপ কিংবা প্রচার-প্রাচারণা নয় স্রেফ পারিবারিক সংযোগেই প্রতিবছর আসছেন শত শত শিক্ষার্থী। বিশেষ করে কারো মামা-চাচা বা কারো ভাই-ভগ্নিপতি এখানে পড়াশুনা করে গেছেন এখন আসছেন তাদের জুনিয়র গ্রুপ।
এমন পারিবারিক সংযোগেরই গল্প জানালেন ঢাকার শের-এ-বাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনকতি কুমাড় মহন্থ। যিনি লেখা-পড়ার পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব বিভাগের সঙ্গে। তিনি সহ মোট ১০ জনের অংশগ্রহণে সপ্তাহের প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭.১৫টা থেকে ৭.৪৫টা পর্যন্ত টার্গেট এরিয়া নেপালের জন্যে প্রচারিত হচ্ছে নেপালী ভাষায় অনুষ্ঠান।
অনকতি কুমাড় অস্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বলেন, ‘আমার বড় বোনের স্বামী এখানে ডেন্টাল কলেজ থেকে কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট করছেন। আমার যখন ভর্তি হওয়ার সময় আসে তখন বাবার এক নম্বর চয়েস ছিল বাংলাদেশ। তিনি বলতেন ‘বাংলাদেশ ভালো দেশ। ওখানে তুই নিরাপদে থাকবি।’
এছাড়া মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম, তুলনামূলক কম শিক্ষা খরচ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সহজতর ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা বলেন অনকতি কুমাড়।
আসছে ভারতের শিক্ষার্থীও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে সার্ক ও নন-সার্ক কোটায় মোট ১২৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৫ জন সার্ক কোটায় এবং ৪১ জন নন-সার্ক কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। সার্ক কোটায় সবচেয়ে বেশি ২২ জন ভারতের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর নন-সার্ক কোটায় সর্বোচ্চ ১৪ জন ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন।
সার্ক কোটায় নির্বাচিত বিভিন্ন দেশের ৮৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ভারতের ২২ জন, পাকিস্তানের ২১, নেপালের ১৯, ভুটানের ১০ ও শ্রীলঙ্কার ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। অপরদিকে নন-সার্ক কোটায় ৪১ জনের মধ্যে ফিলিস্তিনের ১৪ জন, যুক্তরাষ্ট্রের সাতজন, যুক্তরাজ্যের তিনজন, কানাডার পাঁচজন, আয়ারল্যান্ডের একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সেশনে ভর্তি হয়েছেন ৭৫ জন। এদের মধ্যে ৭ জন রয়েছেন ভারতের। নেপালের ৩০ জন। এছাড়া আফগানিস্তানের রয়েছেন ১৯ জন। যারা পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্ড) কোর্স করছেন। তবে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের কোন শিক্ষার্থী নেই। সেটা পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বলে জানান শিউলি আফছার। ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সম্পর্ক চ্ছিন্ন করা হয়।
এদিকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় অংশীদার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ কিংবা নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলো। বৃহৎ ক্যাম্পাস এবং সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েও বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে পারছে না সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসি’র ২০১৮ সালের হিসাব এখনও প্রকাশ হয়নি। কিন্তু ২০১৭ সালের হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে- ওই বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়গুলোতে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ১৯৭৭ জন। এর আগের বছরেও ভর্তি হয়েছিল ১৯২৭ জন।
কিন্তু এর বিপরীতে ২০১৭ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে ৪৬১ জন। গত দশ বছরে সর্বোচ্চ ৫৯৩ জন ভর্তি হয়েছিল ২০১৫ সালে। অথচ, চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতেই (ইউএসটিসি) ২০১৭ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬১৮ জন।
তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসার এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর দাবি শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠদের। গত ২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ১২তম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সম্মেলন। ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনস (ইউডিইএফ) ও রানার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি আয়োজিত ওই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের ডেপুটি হেড অব মিশন এনিস ফারুক এরদেম এবং ইউডিইএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট আসলান বেকিরোগলু। তাদেরও বক্তব্য: বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বাংলাদেশের ইতিবাচক একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য দরকার একটু প্রচার-প্রচারণা এবং পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, কম শিক্ষা খরচ এবং সহজতর ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। তবে যতজন এসেছে তার চাইতে ১০ গুণ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করা সম্ভব। এর জন্য দরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা মেলায় অংশগ্রহণসহ প্রচার-প্রচারণা। সেখানে ঘাটতি আছে বলে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছি না।
প্রায় একই বক্তব্য ইউজিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর। তিনি বলেন, এক সময় আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে অস্থিরতা ছিল, সেশন জট ছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে সেই সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠেছি, পরিবেশ উন্নত হয়েছে। কিন্তু এখন নজর দিতে হবে শিক্ষার মানে। আর যেই সুযোগটা তৈরি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রায়ই আলোচনা হয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাংকিং কিংবা এশিয়া র্যাংকিংয়ে অবস্থান নিয়ে। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে পারলে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনাম বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ কাজ দেবে।
গত সেশনে বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ২,৪৩৮ জন। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও নার্সিং কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্রবিষয়ক দফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শিউলি আফছার জানান, মেডিকেল, মেডিসিন ও স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার (মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়ে থাকে)।
সরকারি হিসাবে ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থীদের দেশগুলোর তালিকায় ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলের ৩৫টি দেশের কথা বলা হলেও বড় একটি আসছে নেপাল, ভারত, ভূটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান থেকে।
এক সময় বাংলাদেশে মালয়েশিয়া, ইরান, ফিলিস্তিনি এবং আফ্রিকার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য ছিল। গত শতকের আশির দশকের শেষের দিকে সার্ক বৃত্তি (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক) চালু হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসা শুরু করে। ওরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পড়তে এসেছিলেন ভূটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। এমনকি তাঁর কেবিনেটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. তানজিং দর্জি, তিনি ছিলেন ডা. লোটে শেরিং-এর রুম মেট এবং ‘ক্যাম্পাসের বড় ভাই’ (সিনিয়র ব্যাচমেট)। এঁরা দুজনেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিল। ডা. লোটে শেরিং ১৯৯১ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন। এফসিপিএস কোর্সও তিনি বাংলাদেশে করেন।
তবে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ কিংবা নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোর ক্যাম্পাস নেপালী শিক্ষার্থীদের দখলে। স্কলারশিপ কিংবা প্রচার-প্রাচারণা নয় স্রেফ পারিবারিক সংযোগেই প্রতিবছর আসছেন শত শত শিক্ষার্থী। বিশেষ করে কারো মামা-চাচা বা কারো ভাই-ভগ্নিপতি এখানে পড়াশুনা করে গেছেন এখন আসছেন তাদের জুনিয়র গ্রুপ।
এমন পারিবারিক সংযোগেরই গল্প জানালেন ঢাকার শের-এ-বাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনকতি কুমাড় মহন্থ। যিনি লেখা-পড়ার পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব বিভাগের সঙ্গে। তিনি সহ মোট ১০ জনের অংশগ্রহণে সপ্তাহের প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭.১৫টা থেকে ৭.৪৫টা পর্যন্ত টার্গেট এরিয়া নেপালের জন্যে প্রচারিত হচ্ছে নেপালী ভাষায় অনুষ্ঠান।
অনকতি কুমাড় অস্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বলেন, ‘আমার বড় বোনের স্বামী এখানে ডেন্টাল কলেজ থেকে কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট করছেন। আমার যখন ভর্তি হওয়ার সময় আসে তখন বাবার এক নম্বর চয়েস ছিল বাংলাদেশ। তিনি বলতেন ‘বাংলাদেশ ভালো দেশ। ওখানে তুই নিরাপদে থাকবি।’
এছাড়া মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম, তুলনামূলক কম শিক্ষা খরচ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সহজতর ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা বলেন অনকতি কুমাড়।
আসছে ভারতের শিক্ষার্থীও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে সার্ক ও নন-সার্ক কোটায় মোট ১২৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৫ জন সার্ক কোটায় এবং ৪১ জন নন-সার্ক কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। সার্ক কোটায় সবচেয়ে বেশি ২২ জন ভারতের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর নন-সার্ক কোটায় সর্বোচ্চ ১৪ জন ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন।
সার্ক কোটায় নির্বাচিত বিভিন্ন দেশের ৮৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ভারতের ২২ জন, পাকিস্তানের ২১, নেপালের ১৯, ভুটানের ১০ ও শ্রীলঙ্কার ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। অপরদিকে নন-সার্ক কোটায় ৪১ জনের মধ্যে ফিলিস্তিনের ১৪ জন, যুক্তরাষ্ট্রের সাতজন, যুক্তরাজ্যের তিনজন, কানাডার পাঁচজন, আয়ারল্যান্ডের একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সেশনে ভর্তি হয়েছেন ৭৫ জন। এদের মধ্যে ৭ জন রয়েছেন ভারতের। নেপালের ৩০ জন। এছাড়া আফগানিস্তানের রয়েছেন ১৯ জন। যারা পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্ড) কোর্স করছেন। তবে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের কোন শিক্ষার্থী নেই। সেটা পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বলে জানান শিউলি আফছার। ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সম্পর্ক চ্ছিন্ন করা হয়।
এদিকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় অংশীদার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ কিংবা নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলো। বৃহৎ ক্যাম্পাস এবং সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েও বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে পারছে না সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসি’র ২০১৮ সালের হিসাব এখনও প্রকাশ হয়নি। কিন্তু ২০১৭ সালের হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে- ওই বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়গুলোতে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ১৯৭৭ জন। এর আগের বছরেও ভর্তি হয়েছিল ১৯২৭ জন।
কিন্তু এর বিপরীতে ২০১৭ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে ৪৬১ জন। গত দশ বছরে সর্বোচ্চ ৫৯৩ জন ভর্তি হয়েছিল ২০১৫ সালে। অথচ, চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতেই (ইউএসটিসি) ২০১৭ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬১৮ জন।
তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসার এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর দাবি শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠদের। গত ২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ১২তম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সম্মেলন। ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনস (ইউডিইএফ) ও রানার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি আয়োজিত ওই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের ডেপুটি হেড অব মিশন এনিস ফারুক এরদেম এবং ইউডিইএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট আসলান বেকিরোগলু। তাদেরও বক্তব্য: বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বাংলাদেশের ইতিবাচক একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য দরকার একটু প্রচার-প্রচারণা এবং পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, কম শিক্ষা খরচ এবং সহজতর ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। তবে যতজন এসেছে তার চাইতে ১০ গুণ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করা সম্ভব। এর জন্য দরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা মেলায় অংশগ্রহণসহ প্রচার-প্রচারণা। সেখানে ঘাটতি আছে বলে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছি না।
প্রায় একই বক্তব্য ইউজিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর। তিনি বলেন, এক সময় আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে অস্থিরতা ছিল, সেশন জট ছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে সেই সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠেছি, পরিবেশ উন্নত হয়েছে। কিন্তু এখন নজর দিতে হবে শিক্ষার মানে। আর যেই সুযোগটা তৈরি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রায়ই আলোচনা হয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাংকিং কিংবা এশিয়া র্যাংকিংয়ে অবস্থান নিয়ে। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে পারলে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনাম বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ কাজ দেবে।
১২তম ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সামিটে অংশ নেয়া বাংলাদেশে অধ্যয়নরত বিদেশি ও দেশি শিক্ষার্থীরা |
No comments