ডিজিটাল মাদকে আসক্ত প্রজন্ম by শাহনেওয়াজ বাবলু
যান্ত্রিক
প্রযুক্তির অদ্ভুত এক চক্রে বন্দি তাদের নির্মল শৈশব। সহজেই হাতের নাগালে
থাকা স্মার্টফোনের কল্যাণে তারা বিভিন্ন গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। দিনের
বেশিরভাগ সময় কাটছে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে গেমস খেলে। যুদ্ধ, ধ্বংস,
অস্বাভাবিক গতি নির্ভর গেমসগুলো তাদের মনোজগতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে,
তাদের মধ্যে আগ্রাসী, ধ্বংসাত্মক এবং ঝুঁকিপ্রবণ আচরণের প্রবনতা বেড়ে চলছে।
মার্কিন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. নিকোলাস কারদারাস এ ধরনের আসক্তিকে
‘ডিজিটাল মাদক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে মানসিক রোগ হিসেবেও তালিকাভুক্ত করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বছর ১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি-তে গেমসে আসক্ত হওয়াকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সব কিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়।
বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতিমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে এর চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই গেমিং আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় আইন করা হয়েছে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা মধ্যরাত থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতে পারবে না। জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনে সেখানকার সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাতুল, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মাহিয়া দিনের অনেকটা সময় গেমস খেলে কাটায়। স্কুল থেকে বাসায় আসার পর প্রায়ই মোবাইল ফোন ও আইপটে গেমস খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। এই শিশুরা প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা মোবাইলে গেমস খেলে। গত ছয় মাসে ক্রমাগতই উভয়েরই চোখের পাওয়ার কমেছে।
তাহসিন রহমান তনয় ১৬ বছর ও আলিস রহমানের বয়স ১২ বছর। তারা দুই ভাই। সেন্ট জোসেফ স্কুলে একজন ৯ম ও আরেকজন ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মা ফৌজিয়া রহমান জানান, দুই ভাই প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা মোবাইল, আইপট ও টিভি স্ক্রিনের সামনে থাকে। মা জানান, চোখের ডাক্তার দেখানোর আগে ছেলেরা ৫/৭ ঘণ্টা গেমস খেলে, গান দেখে আর কার্টুন দেখে কাটাতো। এই শিশুরা গত ২৫শে মার্চ বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চোখ দেখাতে আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন আসা শিশুদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশু মায়োপিয়া সমস্যায় ভুগছে। তাদের এখনই এই সমস্যা রোধ করা না গেলে ৫ বছরের নিচে শিশুদের দূরদৃষ্টিজনিত সমস্যা বেড়ে যাবে এবং তা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে উন্নিত হবে। ছোট বাচ্চাদের জন্য এ ক্ষতি আরো বেশি হয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ আই হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার কাজী সাব্বির আনোয়ার।
তিনি বলেন, রাস্তায় কিংবা স্কুলে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেক শিশুর চোখে সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কারণ এই ডিজিটাল মাদকাসক্তি। প্রতিদিন দেখা যায়, রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশই এই সমস্যায় ভুগছে। বাবা-মা সর্তক করেও কোনো প্রভাব ফেলতে পারছেন না। পাঁচ বছরের নিচে দূরদৃষ্টির সমস্যা দেখা দিলে সে শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং তা সনাক্ত হচ্ছে দেরি করে।
ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ‘শিশু বিভাগের তথ্য ৮ বছর থেকে ১৪ বছরের শিশুদের চোখের সমস্য বাড়ছে। আর এর মূল কারণ শিশুদের অতিরিক্ত গেমস খেলা এবং টিভি দেখাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোকেনে আসক্ত একজন মাদকাসক্ত মানুষকে যদি মাদক খেতে দেয়া না হয়, তাহলে তার মস্তিষ্ক থেকে কেমিক্যালগুলো বের হয়ে তাকে অস্থির করে তোলে। ফেসবুকে আসক্ত একজন মানুষকে যদি ফেসবুকিং করতে দেয়া না হয় তাহলে তার মস্তিষ্কে সেই একই ঘটনা ঘটে। আর গেমসে আসক্তি মাদকে আসক্তির মতো গুরুতর একটি ঘটনা।
গবেষণা যা বলে: ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৬৪ শতাংশ স্কুলে খেলাধুলার কোনো ক্লাসই নেয়া হয় না। বেশিরভাগ স্কুলেই খেলার মাঠ নেই। ৬৭ শতাংশ শিশুর বাড়ির কাছাকাছি খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। ৩৭ শতাংশ শিশু ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করে। ২৯ শতাংশ শিশু কোনো খেলাধুলাই করে না এবং ৪৭ শতাংশ শিশু দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় টেলিভিশন দেখে কাটায়। ২০১৫ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক জরিপে ৪,২০০ শিশুর কাছে তাদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৮৩ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা চায় এলাকায় একটি খেলার মাঠ তৈরি করে দেয়া হোক। ৭৩ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা চায় এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠুক। ৭৬ শতাংশ শিশু বলেছে, এলাকায় শিশুপার্ক গড়ে তোলা হোক, ৬৭ শতাংশ শরীরচর্চা কেন্দ্র, ৩ শতাংশ পাঠাগার ও ২ শতাংশ চিড়িয়াখানা গড়ে তোলার কথা বলে।
মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও গ্যাজেট ভিত্তিক শিশু বিনোদনের ভয়াবহ পরিণতির চিত্র পাওয়া গেছে ২০১৬ সালে করা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর এক জরিপে। এতে দেখা যায়, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্ণোগ্রাফি দেখে। ৮ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখতে পায়, ছেলে শিশুরা সব সময় যৌনমনোভাব সম্পন্ন থাকে। যা নারীর জন্য যৌন নির্যাতনের ঝুঁঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে, কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে মানসিক রোগ হিসেবেও তালিকাভুক্ত করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বছর ১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি-তে গেমসে আসক্ত হওয়াকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সব কিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়।
বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতিমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে এর চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই গেমিং আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় আইন করা হয়েছে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা মধ্যরাত থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতে পারবে না। জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনে সেখানকার সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাতুল, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মাহিয়া দিনের অনেকটা সময় গেমস খেলে কাটায়। স্কুল থেকে বাসায় আসার পর প্রায়ই মোবাইল ফোন ও আইপটে গেমস খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। এই শিশুরা প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা মোবাইলে গেমস খেলে। গত ছয় মাসে ক্রমাগতই উভয়েরই চোখের পাওয়ার কমেছে।
তাহসিন রহমান তনয় ১৬ বছর ও আলিস রহমানের বয়স ১২ বছর। তারা দুই ভাই। সেন্ট জোসেফ স্কুলে একজন ৯ম ও আরেকজন ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মা ফৌজিয়া রহমান জানান, দুই ভাই প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা মোবাইল, আইপট ও টিভি স্ক্রিনের সামনে থাকে। মা জানান, চোখের ডাক্তার দেখানোর আগে ছেলেরা ৫/৭ ঘণ্টা গেমস খেলে, গান দেখে আর কার্টুন দেখে কাটাতো। এই শিশুরা গত ২৫শে মার্চ বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চোখ দেখাতে আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন আসা শিশুদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশু মায়োপিয়া সমস্যায় ভুগছে। তাদের এখনই এই সমস্যা রোধ করা না গেলে ৫ বছরের নিচে শিশুদের দূরদৃষ্টিজনিত সমস্যা বেড়ে যাবে এবং তা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে উন্নিত হবে। ছোট বাচ্চাদের জন্য এ ক্ষতি আরো বেশি হয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ আই হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার কাজী সাব্বির আনোয়ার।
তিনি বলেন, রাস্তায় কিংবা স্কুলে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেক শিশুর চোখে সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কারণ এই ডিজিটাল মাদকাসক্তি। প্রতিদিন দেখা যায়, রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশই এই সমস্যায় ভুগছে। বাবা-মা সর্তক করেও কোনো প্রভাব ফেলতে পারছেন না। পাঁচ বছরের নিচে দূরদৃষ্টির সমস্যা দেখা দিলে সে শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং তা সনাক্ত হচ্ছে দেরি করে।
ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ‘শিশু বিভাগের তথ্য ৮ বছর থেকে ১৪ বছরের শিশুদের চোখের সমস্য বাড়ছে। আর এর মূল কারণ শিশুদের অতিরিক্ত গেমস খেলা এবং টিভি দেখাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোকেনে আসক্ত একজন মাদকাসক্ত মানুষকে যদি মাদক খেতে দেয়া না হয়, তাহলে তার মস্তিষ্ক থেকে কেমিক্যালগুলো বের হয়ে তাকে অস্থির করে তোলে। ফেসবুকে আসক্ত একজন মানুষকে যদি ফেসবুকিং করতে দেয়া না হয় তাহলে তার মস্তিষ্কে সেই একই ঘটনা ঘটে। আর গেমসে আসক্তি মাদকে আসক্তির মতো গুরুতর একটি ঘটনা।
গবেষণা যা বলে: ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৬৪ শতাংশ স্কুলে খেলাধুলার কোনো ক্লাসই নেয়া হয় না। বেশিরভাগ স্কুলেই খেলার মাঠ নেই। ৬৭ শতাংশ শিশুর বাড়ির কাছাকাছি খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। ৩৭ শতাংশ শিশু ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করে। ২৯ শতাংশ শিশু কোনো খেলাধুলাই করে না এবং ৪৭ শতাংশ শিশু দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় টেলিভিশন দেখে কাটায়। ২০১৫ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক জরিপে ৪,২০০ শিশুর কাছে তাদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৮৩ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা চায় এলাকায় একটি খেলার মাঠ তৈরি করে দেয়া হোক। ৭৩ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা চায় এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠুক। ৭৬ শতাংশ শিশু বলেছে, এলাকায় শিশুপার্ক গড়ে তোলা হোক, ৬৭ শতাংশ শরীরচর্চা কেন্দ্র, ৩ শতাংশ পাঠাগার ও ২ শতাংশ চিড়িয়াখানা গড়ে তোলার কথা বলে।
মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও গ্যাজেট ভিত্তিক শিশু বিনোদনের ভয়াবহ পরিণতির চিত্র পাওয়া গেছে ২০১৬ সালে করা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর এক জরিপে। এতে দেখা যায়, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্ণোগ্রাফি দেখে। ৮ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখতে পায়, ছেলে শিশুরা সব সময় যৌনমনোভাব সম্পন্ন থাকে। যা নারীর জন্য যৌন নির্যাতনের ঝুঁঁকি বাড়িয়ে দেয়।
No comments