শিশুরা কোথায় নিরাপদ? বাড়ছে হত্যা, ধর্ষণ by মরিয়ম চম্পা
সাত বছরের ছোট্ট শিশু সামিয়া আফরিন সায়মা।
পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাই ছিল তার নেশা। ওয়ারি সিলভারডেল স্কুলের
নার্সারিতে পড়তো। সে ছিল মায়াবী এবং মিশুক। ওয়ারির ১৩৯ নং বনগ্রাম রোডের
বাসায় এখন শোকের মাতম। সায়মার মায়ের আহাজারিতে কংক্রিটের দেয়ালগুলোও যেন
গুমরে কাঁদছে। ওদিকে নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লায় বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার
১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে সম্প্রতি আটক হয় মাদ্রাসার
অধ্যক্ষ আল আমিন। তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
র্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওই শিক্ষক মাদ্রাসার ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। এ ছাড়া তার মুঠোফোন ও কম্পিউটারে তল্লাশি চালিয়ে পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুদের ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করেছে আল আমিন। এমন একটি দুটি নয়। প্রতিদিন ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। শিশুরাও এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
চলতি মাসে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল খায়ের বেলালী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলায় তাঁকে জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আবুল খায়ের বেলালী কেন্দুয়া পৌরশহরের একটি মহিলা কওমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁওয়ের গোনাকানি গ্রামে। অধ্যক্ষ বেলালী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দুই শিশুকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। এর আগে মাদ্রাসার আরও ছয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বেলালী। শুধু এসব ঘটনাই নয় সম্প্রতি সারা দেশে বেড়েছে শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এসব ঘটনায় উদ্বিঘ্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসবাসের জায়গাসহ নিরাপদ স্থানেই যদি শিশুরা নির্যাতিত হয়, নিরাপদ না থাকে থাহলে তারা নিরাপত্তা পাবে কোথায়?
রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, সে কিশোর। অভিযোগ ওঠা কিশোর হাসপাতালটির ক্যান্টিনে কাজ করে। সে এখন পুলিশ হেফাজতে।
জুন মাসে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ৯ মাসের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক যুবক আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। একই মাসে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আইসক্রিম খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৯ বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ছয় মাসে বাংলাদেশে ৩৯৯জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ধর্ষণের পর একজন ছেলে শিশুসহ মোট ১৬জন শিশু মারা গেছে। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এই তথ্য পেয়েছে। প্রতিবেদনের আরো বলা হয়, অন্তত ৪৯টি শিশু (৪৭ জন মেয়েশিশু ও ২ জন ছেলেশিশু) যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে মারা গেছে ২২ জন এবং আহত হয়েছে ৩৩৪ জন।
শিশু ধর্ষণের ঘটনা আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এক বিবৃতিতে অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমের পৃথক একটি গবেষণার দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী শিশুরা। ২০১৯ সালে শিশু ধর্ষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রথম সাড়ে চার মাসেই ২০১৮ সালের পুরো বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ছিল ২৮৯ এবং চলতি বছর ২০১৯ সালের ১৫ মে পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ২৯৬ জন। ফল পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছেলে শিশুও।
শিশু নির্যাতন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, এতো বেশি শিশুদের যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে যেটা আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন সমাজ অনেক বেশি হিংসাত্মক হয়ে গেছে। ফলে এখন যৌন ঘটনার সঙ্গে হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটছে। হিংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে যৌন নির্যাতন জড়িত। এবং দুর্বলের ওপর অত্যাচার করার যে প্রবণতা এটা বেড়েছে। আগে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এতো প্রতিষ্ঠা পায়নি। সোনাগাজির নুসরাতের মা কিন্তু যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করে পুলিশের কাছে গিয়েছে। কিন্তু আগে কোনো অভিভাবক পুলিশের কাছে যেতেন না। আগে থেকে সমাজ অনেক বেশি হিংস্র এখন। এখন সমাজে সবচেয়ে অনিরাপদ হচ্ছে শিশুরা। ওকে (শিশুকে) রক্ষা করার কেউ নেই। সমাজে অসহায়ত্ব অনেক বেড়ে গেছে। ২০ বছর আগের তুলনায় তুলনায়মূলকভাবে এই সমাজ এখন অনেক বেশি অসহায়।
মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকেট সালমা আলী বলেন, শিশুরা নিজেদের পরিবারের সদস্য চাচা, মামাসহ কাছের লোকদের দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ওয়ারিতে ধর্ষণ শেষে খুন হওয়া সায়মা নামের শিশুটির বিষয়ে পড়েছি ওকে নাকি সবাই অনেক আদর করতো। একজন সচেতন মা বাবা কোনো ভাবেই এলাউ করবে না তার বাচ্চাকে আদর করতে। ‘গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ’ বলে একটা বিষয় আছে। একটা মেয়ে বা শিশুকে টাচ করার মধ্যে আদরের টাচ যেমন আছে আবার খারাপ বা যৌনতা সংক্রান্ত টাচও আছে। ওই শিশুটিকে হয়তো বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনকারী অনুস্বরণ করছিল। কিন্তু বাচ্চারা তো এটা বোঝে না। তিনি বলেন, আমাদের বাবা-মা ছোট বেলায় আমাদের শিখিয়েছে ‘কেউ গায়ে হাত দিলে, কোনো কিছু করলে, কেউ আদর করতে চাইলে এগুলো তুমি নিবে না। এবং কোনো কিছু করলে আমাকে এসে বলবে’। একটি শিশুর বাসার ভেতরে আর মাঠে খেলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এ বিষয়ে বাবা-মায়ের অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে পরিবারের যেমন দায়িত্ব আছে একইভাবে কমিউনিটিরও একটি দায়িত্ব আছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, সম্প্রতিকালে ৫ বছর ও তার কম বয়সের বাচ্চা থেকে শুরু করে কোনো শিশুই নিরাপদ না। যে সকল ঘটনা ঘটছে তাতে কোনো শিশুই যে একেবারে নিরাপদে আছে এটা বলা যাবে না। শিশুদের এই যে নিরাপত্তাহীনতা এটা প্রচন্ড একটি উদ্বেগজনক বিষয়। এটা সমাজের জন্য খুব একটা খারাপ চিত্র বহন করে। খুব খারাপ ম্যাসেজ দেয় ‘যে শিশুরা নিরাপদ না’। অতএব শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
র্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওই শিক্ষক মাদ্রাসার ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। এ ছাড়া তার মুঠোফোন ও কম্পিউটারে তল্লাশি চালিয়ে পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুদের ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করেছে আল আমিন। এমন একটি দুটি নয়। প্রতিদিন ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। শিশুরাও এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
চলতি মাসে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল খায়ের বেলালী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলায় তাঁকে জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আবুল খায়ের বেলালী কেন্দুয়া পৌরশহরের একটি মহিলা কওমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁওয়ের গোনাকানি গ্রামে। অধ্যক্ষ বেলালী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দুই শিশুকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। এর আগে মাদ্রাসার আরও ছয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বেলালী। শুধু এসব ঘটনাই নয় সম্প্রতি সারা দেশে বেড়েছে শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এসব ঘটনায় উদ্বিঘ্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসবাসের জায়গাসহ নিরাপদ স্থানেই যদি শিশুরা নির্যাতিত হয়, নিরাপদ না থাকে থাহলে তারা নিরাপত্তা পাবে কোথায়?
রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, সে কিশোর। অভিযোগ ওঠা কিশোর হাসপাতালটির ক্যান্টিনে কাজ করে। সে এখন পুলিশ হেফাজতে।
জুন মাসে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ৯ মাসের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক যুবক আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। একই মাসে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আইসক্রিম খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৯ বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ছয় মাসে বাংলাদেশে ৩৯৯জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ধর্ষণের পর একজন ছেলে শিশুসহ মোট ১৬জন শিশু মারা গেছে। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এই তথ্য পেয়েছে। প্রতিবেদনের আরো বলা হয়, অন্তত ৪৯টি শিশু (৪৭ জন মেয়েশিশু ও ২ জন ছেলেশিশু) যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে মারা গেছে ২২ জন এবং আহত হয়েছে ৩৩৪ জন।
শিশু ধর্ষণের ঘটনা আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এক বিবৃতিতে অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমের পৃথক একটি গবেষণার দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী শিশুরা। ২০১৯ সালে শিশু ধর্ষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রথম সাড়ে চার মাসেই ২০১৮ সালের পুরো বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ছিল ২৮৯ এবং চলতি বছর ২০১৯ সালের ১৫ মে পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ২৯৬ জন। ফল পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছেলে শিশুও।
শিশু নির্যাতন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, এতো বেশি শিশুদের যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে যেটা আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন সমাজ অনেক বেশি হিংসাত্মক হয়ে গেছে। ফলে এখন যৌন ঘটনার সঙ্গে হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটছে। হিংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে যৌন নির্যাতন জড়িত। এবং দুর্বলের ওপর অত্যাচার করার যে প্রবণতা এটা বেড়েছে। আগে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এতো প্রতিষ্ঠা পায়নি। সোনাগাজির নুসরাতের মা কিন্তু যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করে পুলিশের কাছে গিয়েছে। কিন্তু আগে কোনো অভিভাবক পুলিশের কাছে যেতেন না। আগে থেকে সমাজ অনেক বেশি হিংস্র এখন। এখন সমাজে সবচেয়ে অনিরাপদ হচ্ছে শিশুরা। ওকে (শিশুকে) রক্ষা করার কেউ নেই। সমাজে অসহায়ত্ব অনেক বেড়ে গেছে। ২০ বছর আগের তুলনায় তুলনায়মূলকভাবে এই সমাজ এখন অনেক বেশি অসহায়।
মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকেট সালমা আলী বলেন, শিশুরা নিজেদের পরিবারের সদস্য চাচা, মামাসহ কাছের লোকদের দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ওয়ারিতে ধর্ষণ শেষে খুন হওয়া সায়মা নামের শিশুটির বিষয়ে পড়েছি ওকে নাকি সবাই অনেক আদর করতো। একজন সচেতন মা বাবা কোনো ভাবেই এলাউ করবে না তার বাচ্চাকে আদর করতে। ‘গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ’ বলে একটা বিষয় আছে। একটা মেয়ে বা শিশুকে টাচ করার মধ্যে আদরের টাচ যেমন আছে আবার খারাপ বা যৌনতা সংক্রান্ত টাচও আছে। ওই শিশুটিকে হয়তো বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনকারী অনুস্বরণ করছিল। কিন্তু বাচ্চারা তো এটা বোঝে না। তিনি বলেন, আমাদের বাবা-মা ছোট বেলায় আমাদের শিখিয়েছে ‘কেউ গায়ে হাত দিলে, কোনো কিছু করলে, কেউ আদর করতে চাইলে এগুলো তুমি নিবে না। এবং কোনো কিছু করলে আমাকে এসে বলবে’। একটি শিশুর বাসার ভেতরে আর মাঠে খেলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এ বিষয়ে বাবা-মায়ের অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে পরিবারের যেমন দায়িত্ব আছে একইভাবে কমিউনিটিরও একটি দায়িত্ব আছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, সম্প্রতিকালে ৫ বছর ও তার কম বয়সের বাচ্চা থেকে শুরু করে কোনো শিশুই নিরাপদ না। যে সকল ঘটনা ঘটছে তাতে কোনো শিশুই যে একেবারে নিরাপদে আছে এটা বলা যাবে না। শিশুদের এই যে নিরাপত্তাহীনতা এটা প্রচন্ড একটি উদ্বেগজনক বিষয়। এটা সমাজের জন্য খুব একটা খারাপ চিত্র বহন করে। খুব খারাপ ম্যাসেজ দেয় ‘যে শিশুরা নিরাপদ না’। অতএব শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
No comments