চা বাগান ঘেরা শমশেরনগর by নুসরাত জাহান
২২ জুলাই ২০১৯: যান্ত্রিকতার
শহর ছেড়ে, কোলাহল থেকে দূরে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো
সত্যিই তৃপ্তি এনে দেয়। আর সবুজের মাঝে একটি দিন হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ বলে
বোঝানো সম্ভব নয়! চারপাশে সবুজের সমারোহ বরাবরই আমার ভালো লাগে। ঘোরাঘুরির
সময় তাই পাহাড় আর সবুজকে প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করি। সেই ভাবনা থেকে দুই
দিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম সবুজের সান্নিধ্যে।
শমসেরনগরে সুইস ভ্যালি রিসোর্টে লেখক ও তার ছেলে |
ভোরবেলা
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরলাম। শহর ছেড়ে ট্রেন চলছে। যতই সামনে
এগোচ্ছি ততই সবুজের সমারোহ চোখে পড়ছে। দুপুরে গিয়ে পৌঁছালাম গন্তব্যে।
চারপাশে সারি সারি চা বাগান।
আমরা গিয়েছিলাম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে। ইউনিয়ন হলেও এলাকাটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে আছে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কুল, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, স্যাটেলাইট চ্যানেলের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা আর চা শ্রমিকদের জন্য ডানকান ব্রাদার্স ফাউন্ডেশনের বেশ উন্নত একটি হাসপাতাল।
এছাড়া এই ইউনিয়নে সুইস ভ্যালি নামের একটি রিসোর্টের নাম শুনেছি। এতে থাকার জন্য ছয়টি সুন্দর কটেজে রয়েছে ১১টি কক্ষ। প্রতিটি কটেজ আলাদা। বিভিন্ন ধরনের বাঁশ ও কাঠের সমন্বয়ে তৈরি কটেজগুলো বেশ সুন্দর।
আমরা গিয়েছিলাম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে। ইউনিয়ন হলেও এলাকাটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে আছে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কুল, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, স্যাটেলাইট চ্যানেলের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা আর চা শ্রমিকদের জন্য ডানকান ব্রাদার্স ফাউন্ডেশনের বেশ উন্নত একটি হাসপাতাল।
এছাড়া এই ইউনিয়নে সুইস ভ্যালি নামের একটি রিসোর্টের নাম শুনেছি। এতে থাকার জন্য ছয়টি সুন্দর কটেজে রয়েছে ১১টি কক্ষ। প্রতিটি কটেজ আলাদা। বিভিন্ন ধরনের বাঁশ ও কাঠের সমন্বয়ে তৈরি কটেজগুলো বেশ সুন্দর।
আমাদের
কটেজ আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। এর পাশেই বেশ লম্বা খোলা জায়গা। রাতে পুরো
কটেজ জুড়ে বিভিন্ন রঙের আলো জ্বলে উঠলে মন জুড়িয়ে যায়। কটেজগুলোতে যেমন
রয়েছে এয়ারকন্ডিশন সুবিধা, তেমনি আছে চমৎকার বাথরুম ও আলাদা গোসলের জায়গা।
গ্রামীণ আবহে সাজানো কটেজের জানালা খুলে দিলে মনে হয় নির্জন এক গ্রামে বসে
আছি!
আগেই জেনেছি, সুইস ভ্যালি রিসোর্টে খোলা জায়গায় রাতের
খাবারের ব্যবস্থা আছে। বিশেষ করে বারবিকিউ’র ব্যবস্থা আছে জেনে খুবই ভালো
লাগলো। সেই সঙ্গে স্থানীয় আয়োজন বা গানের ব্যবস্থা।
আমরা যেদিন গিয়েছি সেদিনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টির সম্ভাবনা
দেখা গেলো। তার আগেই রিসোর্টের এক কোণে ১ হাজার ৯৫৯ বর্গফুটের সুইমিং পুলে
গিয়ে নামলাম আমরা। আমার সাড়ে তিন বছর বয়সী ছেলে নুহান নেহাদ পুলে নেমে
খুবই খুশি। নীল স্বচ্ছ পানি দেখে সে বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে লাফিয়ে পড়তে চায়!
সুইমিং পুল তার খুব পছন্দের। যেখানেই পায় খুশিতে ডগমগ হয়ে যায়!
সুইমিং
পুলের পর্ব শেষে কটেজে ফিরতেই নেমে এলো বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই আমরা
কটেজে বসে পেলাম দারুণ এক আবহ। উপরে টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। আমরা
জানালা খুলে তা উপভোগ করছি। সত্যিই এক অসাধারণ অনুভূতি। রাতেও বৃষ্টির দেখা
পেয়েছি।
পরদিন সকালে উঠেই পুরো সুইস ভ্যালি ঘুরে দেখলাম।
কটেজগুলোর সামনে মাটি কেটে কেটে সুন্দরভাবে পথ তৈরি করা। একটি টিলার ওপরে
আছে বসার জায়গা। কটেজের একপাশে রয়েছে সুন্দর একটি লেক।
মূল
সড়ক থেকে কটেজ পর্যন্ত যেতে চারপাশে সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে। আলাদা মাচা
আছে এখানে, যার চারপাশ খোলা। শুয়েবসে গল্প করার জন্য দারুণ জায়গা এটি।
ক্লান্তি লাগলে কটেজের পাশে আছে ঝুলে থাকার ব্যবস্থা! কাপড়ে নিজেকে মুড়িয়ে
এতে শুয়ে থাকা যায়। বাচ্চাদের জন্য আছে একাধিক খেলার ব্যবস্থা।
এককথায় সুইস ভ্যালি রিসোর্ট চমৎকার একটি জায়গা। রিসোর্টের কর্মীরা যেকোনও প্রয়োজনে সহায়তা করেন। মূল ফটকে সবসময়ই প্রহরী থাকেন।
কটেজ
বুকিংয়ের সঙ্গে থাকে সৌজন্য নাশতা। স্যাটেলাইট সংযোগযুক্ত টিভি দেখার
ব্যবস্থা আছে কক্ষে। ঢাকার বাইরে এতদূরে সুন্দর ও চকচকে টিভি চ্যানেল দেখে
সত্যিই ভালো লেগেছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্র পাওয়া যায় সৌজন্য হিসেবে।
রিসোর্টের
একেবারে কাছেই হাঁটা দূরত্বে রয়েছে শমশেরনগর বিমানবন্দর, রাবার বাগানসহ
বেশকিছু সুন্দর জায়গা। এছাড়া রিসোর্টের খুব কাছেই রয়েছে ভারতের সীমান্ত,
যার ওপাশে ত্রিপুরা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চা-বাগান শমশেরনগরেই অবস্থিত।
এখানে এসে চা শ্রমিকদের জীবনযাপন, খাশিয়া গ্রাম, মণিপুরি গ্রাম, মাধপুর
লেক, লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট, মাগুরছাড়া গ্যাসফিল্ড, বাংলাদেশ চা গবেষণা
ইনস্টিটিউট, ছোট চিড়িয়াখানা, সাত রঙের চা, বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওর,
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত উপভোগ করা যায় চাইলেই।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরত্বে সুইস ভ্যালি রিসোর্ট। চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। রিসোর্টে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে নিয়মিত ট্রেন ছাড়ে। এগুলো হলো পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনি এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস।
ঢাকা থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরত্বে সুইস ভ্যালি রিসোর্ট। চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। রিসোর্টে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে নিয়মিত ট্রেন ছাড়ে। এগুলো হলো পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনি এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস।
শমসেরনগর রেলস্টেশন থেকে রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র দুই
কিলোমিটার। ট্রেনে করে যেতে চাইলে শমসেরনগর স্টেশন বা ভানুগাছি স্টেশনে
নামতে হবে। বাসে গেলে শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। এরপর সিএনজির মাধ্যমে রিসোর্টে
যাওয়া যায়। বিমানে চড়ে যেতে চাইলে সিলেট বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে
রিসোর্টে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আগে থেকে রিসোর্টে যোগাযোগ করলে গাড়ি মিলে
যেতে পারে।
>>>ছবি: লেখক
No comments