‘ধানের দাম নাই আমরার ঈদও নাই’- হাওরাঞ্চলে কৃষকের ঈদ ভাবনা by রাশেদ আহমদ খান
“ধারকর্জ
করে ফসল ফলাইলাম। মাথার ঘাম পায়ে ফালাইয়া জমি করছি। ধান মোটামুটি হইছে।
কিন্তু দাম এক্কেবারে ফানির মতন। ফলাইতে যে খরচ হইছে, ধান বিক্রি কইর্যা এ
টাকাও আমরা ফাইছি না। কষ্ট আর টাকা দুইটাই গেল। এখন বাচ্ছা কাচ্ছা নিয়া
সারা বছর কি খাইমু এ নিয়াই ঘুম আয় না। আমরার আবার ঈদ আর পূজা কিতা।
ধানের দাম নাই আমরার ঈদও নাই।” বিষণ্ন মনে কথাগুলো বলছিলেন বানিয়াচংয়ের মখা গ্রামের কৃষক আব্দু নুর মিয়া। ৫ কানি জমি চাষ করে যে ফসল পেয়েছেন তা বিক্রির পর লোকসান হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আগামীতে আর কৃষি কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষক আব্দু নুর। শুধু নুর মিয়া নয় ভাটি অঞ্চলের সকল কৃষকদের মাঝেই এখন দুশ্চিন্তার ছাপ। ধানের অস্বাভাবিক কম মূল্যে দিশাহারা কৃষকরা। নতুন ধান ঘরে তুলেও তাদের মনে আনন্দ নেই। উৎপাদন খরচ থেকে ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় অনেকটা দিশাহারা তারা। আর সরকারিভাবে ধান কেনা হচ্ছে, এ খবরই জানেন না অধিকাংশ কৃষক। যদিও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কয়েকস্থানে ধান ক্রয় করলেই এ খবরে প্রভাব পড়েনি সাধারণ কৃষকদের মাঝে। তাদের ধারণা ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয়ের নামে কঠিন শর্ত চেপে দিয়ে গুদাম কর্তৃপক্ষ কৃষকদের সঙ্গে হয়রানি করে। তাই গুদামে ধান দেয়ার কথা ভাবেন না প্রকৃত কৃষকরা। তারা মনে করেন গুদামে ধান দিবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী দালালরা।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ই মে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ২৬ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫৪ টন বোরো ধান। আগামী ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত এই বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি চলমান থাকবে। জেলা খাদ্য অফিস জানায়, জেলার ১০টি খাদ্য গুদামে ১৫ হাজার ৬৩১ টন চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মাঝে ৩৬ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৬৩০ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ১ টন আতপ চাল। এছাড়াও ২৬ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫৪ টন বোরো ধান।
আজমিরীগঞ্জের পিরিজপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের সদস্য বদরুল আলম জানান, শুনেছি আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার কৃষকের বিপরীতে ২৬ টাকা কেজিতে ১০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে সরকার। দুই হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এই সুবিধা দিলে মাথাপিছু ৫ কেজি করে ধান বিক্রি করতে পারবেন তারা। সরকারি বড় কর্মকর্তারা প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে গিয়ে ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করে কৃষকদের ধন্য করেছেন। এতে প্রতিদিন কর্মকর্তাদের টিএ/ডিএ বিল হয় অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। হতভাগা কৃষকদের কোনো উপকারই হয় না।
মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে ৫ কানি জমি চাষ করেছিলেন বানিয়াচংয়ের আতুকুড়া গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন। আশা ছিল ধান বিক্রি করে মহাজনের টাকা পরিশোধ করেবন। সারা বছরের জন্য খোরাকের ধান সংগ্রহ করে রাখতে পাবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। পানির দরে ধান বিক্রি করে চাষের খরচই পাননি জমির উদ্দিন। এখন মহাজনের সুদের টাকার চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা তার। ৩ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে ৫ সদস্যের সংসার। এদের পেট ভরে দু’বেলা খেতে দিতে পারেন না তিনি। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। কিন্তু ঈদের আনন্দ নাই তার পরিবারে। এ নিয়ে ভাবতেও চান না ষাটোর্ধ্ব জমির উদ্দিন। দু’মুঠো খেয়ে বাঁচলেই যেন তিনি সুখী। এ চিত্র হাওরাঞ্চলের প্রতিটি কৃষক পরিবারের। এবার বোরো মৌসুমে মাঝারি ধরনের ফলন হলেও ধানের দাম একেবারেই কম। মৌসুমে এসব অঞ্চলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকায়। অন্যদিকে ধান কাটার লোকের অভাবে শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়েছে বাড়তি টাকায়। এতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তাই কষ্টার্জিত ধান কমমূল্যে বিক্রি করে হতাশ কৃষকরা। আর এ পরিস্থিতিতে ঈদ তাদের জন্য কোন খুশির বার্তা নিয়ে আসতে পারেনি। বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে তারা একবারেই ক্লান্ত। তাই ঈদ বা পূজা কোনো উৎসবই তাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। বর্তমান সরকারের কাছে তাদের দাবি সরকার যাতে ধানের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের রক্ষা করে। শুধু লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা নয়, কৃষি ও কৃষকদের রক্ষায় তারা প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ধানের দাম নাই আমরার ঈদও নাই।” বিষণ্ন মনে কথাগুলো বলছিলেন বানিয়াচংয়ের মখা গ্রামের কৃষক আব্দু নুর মিয়া। ৫ কানি জমি চাষ করে যে ফসল পেয়েছেন তা বিক্রির পর লোকসান হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আগামীতে আর কৃষি কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষক আব্দু নুর। শুধু নুর মিয়া নয় ভাটি অঞ্চলের সকল কৃষকদের মাঝেই এখন দুশ্চিন্তার ছাপ। ধানের অস্বাভাবিক কম মূল্যে দিশাহারা কৃষকরা। নতুন ধান ঘরে তুলেও তাদের মনে আনন্দ নেই। উৎপাদন খরচ থেকে ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় অনেকটা দিশাহারা তারা। আর সরকারিভাবে ধান কেনা হচ্ছে, এ খবরই জানেন না অধিকাংশ কৃষক। যদিও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কয়েকস্থানে ধান ক্রয় করলেই এ খবরে প্রভাব পড়েনি সাধারণ কৃষকদের মাঝে। তাদের ধারণা ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয়ের নামে কঠিন শর্ত চেপে দিয়ে গুদাম কর্তৃপক্ষ কৃষকদের সঙ্গে হয়রানি করে। তাই গুদামে ধান দেয়ার কথা ভাবেন না প্রকৃত কৃষকরা। তারা মনে করেন গুদামে ধান দিবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী দালালরা।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ই মে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ২৬ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫৪ টন বোরো ধান। আগামী ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত এই বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি চলমান থাকবে। জেলা খাদ্য অফিস জানায়, জেলার ১০টি খাদ্য গুদামে ১৫ হাজার ৬৩১ টন চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মাঝে ৩৬ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৬৩০ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ১ টন আতপ চাল। এছাড়াও ২৬ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫৪ টন বোরো ধান।
আজমিরীগঞ্জের পিরিজপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের সদস্য বদরুল আলম জানান, শুনেছি আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার কৃষকের বিপরীতে ২৬ টাকা কেজিতে ১০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে সরকার। দুই হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এই সুবিধা দিলে মাথাপিছু ৫ কেজি করে ধান বিক্রি করতে পারবেন তারা। সরকারি বড় কর্মকর্তারা প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে গিয়ে ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করে কৃষকদের ধন্য করেছেন। এতে প্রতিদিন কর্মকর্তাদের টিএ/ডিএ বিল হয় অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। হতভাগা কৃষকদের কোনো উপকারই হয় না।
মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে ৫ কানি জমি চাষ করেছিলেন বানিয়াচংয়ের আতুকুড়া গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন। আশা ছিল ধান বিক্রি করে মহাজনের টাকা পরিশোধ করেবন। সারা বছরের জন্য খোরাকের ধান সংগ্রহ করে রাখতে পাবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। পানির দরে ধান বিক্রি করে চাষের খরচই পাননি জমির উদ্দিন। এখন মহাজনের সুদের টাকার চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা তার। ৩ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে ৫ সদস্যের সংসার। এদের পেট ভরে দু’বেলা খেতে দিতে পারেন না তিনি। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। কিন্তু ঈদের আনন্দ নাই তার পরিবারে। এ নিয়ে ভাবতেও চান না ষাটোর্ধ্ব জমির উদ্দিন। দু’মুঠো খেয়ে বাঁচলেই যেন তিনি সুখী। এ চিত্র হাওরাঞ্চলের প্রতিটি কৃষক পরিবারের। এবার বোরো মৌসুমে মাঝারি ধরনের ফলন হলেও ধানের দাম একেবারেই কম। মৌসুমে এসব অঞ্চলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকায়। অন্যদিকে ধান কাটার লোকের অভাবে শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়েছে বাড়তি টাকায়। এতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তাই কষ্টার্জিত ধান কমমূল্যে বিক্রি করে হতাশ কৃষকরা। আর এ পরিস্থিতিতে ঈদ তাদের জন্য কোন খুশির বার্তা নিয়ে আসতে পারেনি। বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে তারা একবারেই ক্লান্ত। তাই ঈদ বা পূজা কোনো উৎসবই তাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। বর্তমান সরকারের কাছে তাদের দাবি সরকার যাতে ধানের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের রক্ষা করে। শুধু লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা নয়, কৃষি ও কৃষকদের রক্ষায় তারা প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
No comments