চট্টগ্রামে বেপরোয়া অর্ধশত কিশোর গ্যাং by ইব্রাহিম খলিল
চট্টগ্রাম
মহানগরীতে বেপরোয়া অর্ধশত কিশোর গ্যাং। যারা জড়িয়ে পড়েছে দখলবাজি,
চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে। সেবন করছে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ নানা
মাদকদ্রব্য। আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রও।
এদের ছত্রছায়ায় রয়েছে নগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ গডফাদাররা, যা একের পর এক বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে স্কুল ছাত্রলীগের অপরপক্ষের ছুরিকাঘাতে কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী ছাত্র আদনান ইসফার (১৫) হত্যার পর।
আদনান ইসফার হত্যায় জড়িত আরমান, সাব্বির, মুনতাসির, মহিম ও আবু সাঈদও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী।
যারা গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে স্কুল ছাত্রলীগের নামে প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং এর তথ্য দেন বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজেরা তজু উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি হাই স্কুলসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন স্কুলে ‘স্কুল ছাত্রলীগের’ নামে এসব কিশোর গ্যাং গড়ে উঠে।
যারা নগরীর স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী, চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, খুলশি, ফয়েস লেক, ডেবারপার, চান্দগাঁও শমসের পাড়া, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাদক বেচাকেনাসহ মোটরসাইকেল ও সাইকেল ছিনতাই, গান-বাজনা, খেলার মাঠ, ডান্স ও ডিজে পার্টি, ক্লাবের আড্ডাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে মরিয়া।
শুধু তাই নয়, এসব কিশোর গ্যাং চক্র মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের বেশির ভাগ ঘটনায় জড়িত। নিজ এলাকা ছাড়িয়ে অনেক সময় তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালায়। এরকম নগরীর ১৬ থানা এলাকায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং চক্রের তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ট্রাস্ট স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবীর খুন হয় ২০১৭ সালের ৬ই জানুয়ারি। এর ঠিক এক বছর ১০ দিন পর গত ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের জামালখানে কিশোর গ্যাং স্টারে হাতে খুন হয় কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসফার। সেও নবম শ্রেণিতে পড়ে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আবু সাঈদ ছাড়া ৪ জন নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর এ হত্যাকাণ্ডে ছুরিকাঘাতের মূল হোতা মঈন উদ্দিন হাজেরা তজু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন আরো জানান, গত এক দশকে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকায়ও একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটে। সামপ্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।
তিনি জানান, আদনান ইসফারকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর গ্রেপ্তারকৃত আরমান, সাব্বির, মুনতাসির, মহিম ও আবু সাঈদ নগরীর চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রউফের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। আদনান হত্যায় খুনি কিশোরদের হাতে পিস্তল তুলে দেন আবদুর রউফ।
আদনান ইসফারও জামালখান এলাকার ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের অনুসারি স্কুল ছাত্রলীগ নেতা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই এই দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধ ছিল। সেই সূত্র ধরে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ মাঠে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে আদনান ইসফারকে খুনের পরিকল্পনা করে মঈন উদ্দিন। এভাবে রাজনীতিক ছত্রছায়ায় নগরীর সবকটি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগে থাকলেও আদনান ইসফার হচ্ছে প্রথম বলি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক সমর্থন, বিপুল অর্থপ্রাপ্তি, এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপের উত্থান। এরমধ্যে কাজেম আলী স্কুল মার্কেটের মামার দোকানে জিলহস গ্রুপ, জামালখান আংকেলের দোকান ও দেবপাহাড়ে রনি, সাফায়েত ও ফাহিম গ্রুপ, জামালখানে সাব্বিরের আরো একটি গ্রুপ, মেজ্জান হাইলে আইয়্যু রেস্তরাঁর কাছে খালার দোকানভিত্তিক আলাদা কিশোর গ্যাং গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তাদের বিচরণ আন্দরকিল্লা মোড় থেকে রহমতগঞ্জ হয়ে গণি বেকারি সীমানাও ছাড়িয়ে গেছে। তারা সামান্য কথা কাটাকাটিতে একজন অন্যজনকে চিৎকার করে মোবাইলে ফোন দেয়। মুহূর্তের মধ্যে সদলবলে হাজির হয়। এরপর চলে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর এমনকি দোকানপাট ভাঙচুর। কোনো এক জায়গায় বসা নিয়ে কথিত বড়ভাইদের সঙ্গে ছোটভাইদের কথা কাটাকাটি থেকেও ঘটে যায় বড় ধরনের সংঘর্ষ। তারা ফুটপাথে রাতে বিকট শব্দে আতশবাজি ফাটিয়ে জন্মদিন উদযাপন করে।
প্রায় তিন বছর আগে জামাল খান সড়কের র্যাংগস বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশে শফিউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীর ফটোকপির দোকান ছিল। এক কিশোর সেখানে একটি ফটোকপি করতে যায়। ফটোকপি করাকে কেন্দ্র করে শফিউল্লাহর সঙ্গে ওই কিশোরের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে একদল কিশোর এসে শফিউল্লাহর ওপর হামলা চালায়। তার ফটোকপির মেশিন ও দোকানের কাচ ভেঙে দেয়া হয়। শফিউল্লাহকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফুটপাথে ফেলে রাখা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়।
ওই ঘটনার পর শফিউল্লাহ আর দোকান খুলতে পারেনি। দোকান ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় মামলা না করার জন্যও তাকে শাসিয়ে দেয়া হয়। ফলে মামলাও করেনি। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি পোষাতে না পেরে তিনি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত চাকরি শুরু করেন।
গত একদশকেরও কম সময়ে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত নগরীর জামাল খান সড়কে অনেক বহুতল ভবন গড়ে ওঠে। এসব ভবনে ফ্ল্যাট কেনেন সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা। অনেকে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। এসব ব্যক্তি নিজেদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে ১৪ বছর থেকে শুরু করে ১৮/২০ বছরের এসব ছেলে হয়ে ওঠে বেপরোয়া।
চট্টগ্রাম মহানগরীর অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কিশোর অপরাধ বন্ধ করতে পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন দরকার। এখন তো সামাজিক অনুশাসন বলতে কিছুই নেই। এ অবস্থায় পারিবারিক অনুশাসন বাড়াতে হবে। সামাজিক অনুশাসন যেটা চলে গেছে, তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিশোর অপরাধীদের পেছনে কোনো রাজনৈতিক সহযোগিতা থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ অথবা প্রত্যাহার করতে হবে। যেসব বড় ভাই তাদের ইন্ধন দেয়, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে অপরাধীদের নামের তালিকা ইতোমধ্যে তৈরির কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। নগরীর ১৬টি থানার ওসিদের এ তালিকা তৈরি করে এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ কমিশনার বরাবরে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকায় কোন থানায় কতজন কিশোর অপরাধী রয়েছে, তারা কখন কোথায় অবস্থান করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।
এদের ছত্রছায়ায় রয়েছে নগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ গডফাদাররা, যা একের পর এক বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে স্কুল ছাত্রলীগের অপরপক্ষের ছুরিকাঘাতে কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী ছাত্র আদনান ইসফার (১৫) হত্যার পর।
আদনান ইসফার হত্যায় জড়িত আরমান, সাব্বির, মুনতাসির, মহিম ও আবু সাঈদও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী।
যারা গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে স্কুল ছাত্রলীগের নামে প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং এর তথ্য দেন বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজেরা তজু উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি হাই স্কুলসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন স্কুলে ‘স্কুল ছাত্রলীগের’ নামে এসব কিশোর গ্যাং গড়ে উঠে।
যারা নগরীর স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী, চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, খুলশি, ফয়েস লেক, ডেবারপার, চান্দগাঁও শমসের পাড়া, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাদক বেচাকেনাসহ মোটরসাইকেল ও সাইকেল ছিনতাই, গান-বাজনা, খেলার মাঠ, ডান্স ও ডিজে পার্টি, ক্লাবের আড্ডাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে মরিয়া।
শুধু তাই নয়, এসব কিশোর গ্যাং চক্র মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের বেশির ভাগ ঘটনায় জড়িত। নিজ এলাকা ছাড়িয়ে অনেক সময় তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালায়। এরকম নগরীর ১৬ থানা এলাকায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং চক্রের তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ট্রাস্ট স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবীর খুন হয় ২০১৭ সালের ৬ই জানুয়ারি। এর ঠিক এক বছর ১০ দিন পর গত ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের জামালখানে কিশোর গ্যাং স্টারে হাতে খুন হয় কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসফার। সেও নবম শ্রেণিতে পড়ে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আবু সাঈদ ছাড়া ৪ জন নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর এ হত্যাকাণ্ডে ছুরিকাঘাতের মূল হোতা মঈন উদ্দিন হাজেরা তজু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন আরো জানান, গত এক দশকে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকায়ও একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটে। সামপ্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।
তিনি জানান, আদনান ইসফারকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর গ্রেপ্তারকৃত আরমান, সাব্বির, মুনতাসির, মহিম ও আবু সাঈদ নগরীর চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রউফের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। আদনান হত্যায় খুনি কিশোরদের হাতে পিস্তল তুলে দেন আবদুর রউফ।
আদনান ইসফারও জামালখান এলাকার ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের অনুসারি স্কুল ছাত্রলীগ নেতা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই এই দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধ ছিল। সেই সূত্র ধরে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ মাঠে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে আদনান ইসফারকে খুনের পরিকল্পনা করে মঈন উদ্দিন। এভাবে রাজনীতিক ছত্রছায়ায় নগরীর সবকটি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগে থাকলেও আদনান ইসফার হচ্ছে প্রথম বলি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক সমর্থন, বিপুল অর্থপ্রাপ্তি, এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপের উত্থান। এরমধ্যে কাজেম আলী স্কুল মার্কেটের মামার দোকানে জিলহস গ্রুপ, জামালখান আংকেলের দোকান ও দেবপাহাড়ে রনি, সাফায়েত ও ফাহিম গ্রুপ, জামালখানে সাব্বিরের আরো একটি গ্রুপ, মেজ্জান হাইলে আইয়্যু রেস্তরাঁর কাছে খালার দোকানভিত্তিক আলাদা কিশোর গ্যাং গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তাদের বিচরণ আন্দরকিল্লা মোড় থেকে রহমতগঞ্জ হয়ে গণি বেকারি সীমানাও ছাড়িয়ে গেছে। তারা সামান্য কথা কাটাকাটিতে একজন অন্যজনকে চিৎকার করে মোবাইলে ফোন দেয়। মুহূর্তের মধ্যে সদলবলে হাজির হয়। এরপর চলে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর এমনকি দোকানপাট ভাঙচুর। কোনো এক জায়গায় বসা নিয়ে কথিত বড়ভাইদের সঙ্গে ছোটভাইদের কথা কাটাকাটি থেকেও ঘটে যায় বড় ধরনের সংঘর্ষ। তারা ফুটপাথে রাতে বিকট শব্দে আতশবাজি ফাটিয়ে জন্মদিন উদযাপন করে।
প্রায় তিন বছর আগে জামাল খান সড়কের র্যাংগস বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশে শফিউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীর ফটোকপির দোকান ছিল। এক কিশোর সেখানে একটি ফটোকপি করতে যায়। ফটোকপি করাকে কেন্দ্র করে শফিউল্লাহর সঙ্গে ওই কিশোরের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে একদল কিশোর এসে শফিউল্লাহর ওপর হামলা চালায়। তার ফটোকপির মেশিন ও দোকানের কাচ ভেঙে দেয়া হয়। শফিউল্লাহকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফুটপাথে ফেলে রাখা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়।
ওই ঘটনার পর শফিউল্লাহ আর দোকান খুলতে পারেনি। দোকান ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় মামলা না করার জন্যও তাকে শাসিয়ে দেয়া হয়। ফলে মামলাও করেনি। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি পোষাতে না পেরে তিনি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত চাকরি শুরু করেন।
গত একদশকেরও কম সময়ে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত নগরীর জামাল খান সড়কে অনেক বহুতল ভবন গড়ে ওঠে। এসব ভবনে ফ্ল্যাট কেনেন সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা। অনেকে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। এসব ব্যক্তি নিজেদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে ১৪ বছর থেকে শুরু করে ১৮/২০ বছরের এসব ছেলে হয়ে ওঠে বেপরোয়া।
চট্টগ্রাম মহানগরীর অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কিশোর অপরাধ বন্ধ করতে পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন দরকার। এখন তো সামাজিক অনুশাসন বলতে কিছুই নেই। এ অবস্থায় পারিবারিক অনুশাসন বাড়াতে হবে। সামাজিক অনুশাসন যেটা চলে গেছে, তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিশোর অপরাধীদের পেছনে কোনো রাজনৈতিক সহযোগিতা থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ অথবা প্রত্যাহার করতে হবে। যেসব বড় ভাই তাদের ইন্ধন দেয়, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে অপরাধীদের নামের তালিকা ইতোমধ্যে তৈরির কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। নগরীর ১৬টি থানার ওসিদের এ তালিকা তৈরি করে এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ কমিশনার বরাবরে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকায় কোন থানায় কতজন কিশোর অপরাধী রয়েছে, তারা কখন কোথায় অবস্থান করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।
No comments