সবজিতে কুয়াশার হানা
প্রথম
দফায় সবজিতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যার কারণে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এসেছে
অকালে টানা বর্ষণ। সবশেষে তীব্র শীত এবং ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
ক্ষেতের ফসল। এ কারণে শীতের ভরা মওসুমেও সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেল
সবজি। ভরা শীতেও ৩০ টাকার কমে এক কেজি সবজি মিলছে না। অথচ অন্যান্য বছর এ
সময়ে ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যে থাকত সবধরনের সবজির দাম। শীত কমতে থাকলেও চলতি
মওসুমে সবজির দাম কমার আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গতকাল
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন গত সপ্তাহের
চেয়ে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায়, শিম ১০ টাকা বেড়ে ৬০, পেঁপে ৫ টাকা বেড়ে ২৫
টাকা, আলু ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা, মুলা ৫ টাকা বেড়ে ২০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা
বেড়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা,
শসা ৪০ থেকে ৬০, প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৫ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা
দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাল শাক, পালং শাক ও ডাঁটা শাক দুই আঁটি ১৫ থেকে
২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষক এবং সবজি বিক্রেতার
সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মওসুমে বড় ধরনের ফলন বিপর্যয়ে পড়েছেন আলু
চাষিরা। এরই মধ্যে ব্যাপক হারে আলু তোলা শুরু হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে।
ক্ষেত থেকে আলু তোলার পর আলুর গায়ে কালো দাগ আর পচন দেখা যাচ্ছে। শুধু তা-ই
নয়, এ মওসুমে বিঘাপ্রতি সাধারণত ৬০ মণ আলু হওয়ার কথা। কিন্তু তা কমে গড়ে
ফলন হচ্ছে ৩০ মণ পর্যন্ত। এমন জমিও আছে যেগুলোতে বিঘাপ্রতি ১০ মণ আলু
উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগের দাবি বন্যা আর বৃষ্টির প্রভাবেই এমনটি হয়েছে।
জানা যায়, গত মওসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যেসব কৃষক কোল্ড স্টোরেজে আলু
রেখেছিলেন লোকসানের কারণে তাদের বেশির ভাগই এখনো আলু বের করতে পারেননি।
কারণ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু রাখার জন্য কৃষকদের খরচ দিতে হয় ৭০০ টাকা।
কিন্তু এখন আলু নিতে গেলে দিতে হবে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। যার বিপরীতে
বাজারে আলুর দাম প্রতি মণ ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এ অবস্থায় আলু নিতে
গেলে লোকসান হবে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এ বছর অনেক বাড়তি দামে আলু কিনতে হতে
পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভরা মওসুমেও সবজির বাড়তি দাম প্রসঙ্গে
কাওরানবাজারের সবজি বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, মওসুমের শুরুতে দুই দফা বন্যা
এবং এক দফায় টানা বৃষ্টিতে এবার সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘন কুয়াশায়
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর সবজি।
পাশাপাশি রয়েছে পরিবহন সঙ্কটও। সব মিলিয়ে
এখন বাজারে সবজির দাম বাড়তি। গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি
হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়েও দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। সবজির দাম
নতুন করে কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ দিকে মূল্যবৃদ্ধির হাওয়া নতুন করে
লেগেছে পেঁয়াজের দামেও। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়া দেশী
পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম
কেজিতে ১০ টাবা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। বিক্রেতাদের
দাবি, সরবরাহ কম থাকায় বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজ দামের ওপর কোনো প্রভাবই
ফেলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে পাতা
কিনছেন বলে জানান বিক্রেতারা। বাজারে গতকাল দেশী রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা,
আমদানি করা রসুন ৮৫ থেকে ১০০ টাকা, চিনি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, দেশী মসুর ডাল
১০০ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানি করা মসুর ডাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি করে বিক্রি
হয়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি
২০০ টাকা এবং পাকিস্তানি লাল মুরগি ২০ টাকা বেড়ে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
বাজারে গতকাল প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ টাকা দরে
বিক্রি করতে দেখা যায়। এ দিকে চালের বাজারের এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে।
নতুন করে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি
কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয় ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা,
বিআর-২৮ ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, পারিজা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা কেজিদরে। পাইজাম চাল
৪৮ থেকে ৫৪ টাকা, বাসমতি ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৮০ থেকে ৮২ টাকা এবং
পোলাও চাল ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারে গতকাল আকারভেদে প্রতি কেজি
রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০
টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের
কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ২৫০
টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রকারভেদে চিংড়ি
৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, আকারভেদে প্রতিটি ইলিশ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি
হচ্ছে, বড় আকারের প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা।
No comments