পাটের পুনরুজ্জীবন চাই
আনকাট,
বিটিআর ও বিডব্লিউআর—এই তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর বস্ত্র ও পাট
মন্ত্রণালয় যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেটি পাটশিল্পের ওপর কিছুটা হলেও
ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। পাটকল মালিকদের অনুরোধে গত
বৃহস্পতিবার পাটবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়। পাটকল মালিকদের অভিযোগ ছিল, বিদেশে কাঁচা পাট নির্বিচারে
রপ্তানির কারণে পাটের অভাবে অনেক সময় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। এটি
পাট খাতের বহুবিধ সমস্যার একটি। আবার পাটচাষি বা উৎপাদকদের অভিযোগ, বিদেশে
রপ্তানি বন্ধ হলে দেশীয় পাটকল মালিকেরা যে দাম তাঁদের দেন, তাতে তাঁদের
উৎপাদন খরচই ওঠে না। বেশ কয়েক বছর আগে ভারত কাঁচা পাট আমদানির ওপর
বিধিনিষেধ জারি করলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে জানানো হয়েছিল। পরে সেই
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
পাটকল মালিকদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে যাতে চাষিরা
ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। চাষিরা দেশে পণ্যের ভালো দাম
পেলে বিদেশে কেন রপ্তানি করতে যাবেন? বেসরকারি পাটকল মালিকেরা যখন কারখানা
চালু রাখতে পাট রপ্তানি বন্ধের তদবির করছেন, তখন রাষ্ট্রমালিকানাধীন
পাটকলগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। বর্তমান সরকারের আমলে চালু অধিকাংশ সরকারি
পাটকল ফের বন্ধ হয়ে গেছে এবং শ্রমিক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন না। এ
ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে
কোনো কারখানা চলতে পারে না। যে দেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার
করতে পারেন, যে দেশকে বহির্বিশ্ব সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে চেনে, সেই দেশে
ফের পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা কঠিন নয়। বাইরের দুনিয়ায় যখন পরিবেশসম্মত
পণ্য হিসেবে পাটের ব্যবহার বেড়েছে, তখন বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন? পাটের
পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। পাটের
উৎপাদক, পাটকল মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থ সমুন্নত রেখে পাট
খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
No comments