শরণার্থীদের আপন করে নেয়া এক দম্পতি by প্রিয়াংকা চক্রবর্ত্তী
সাল
২০১৫। তুরস্কের সমুদ্র তীরে ভেসে আসা সিরিয়ান শিশু আয়লান কুর্দির
মর্মান্তিক মৃত্যু স্তব্ধ করেছিল সারা বিশ্বকে। বিশ্ববাসীর কাছে মানবতার
প্রশ্ন রেখে গিয়েছিল তিন বছরের এই শিশুর মৃত্যু। ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কটের
প্রতিভূ হয়ে উঠেছিল সমুদ্র তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লানের নিথর দেহ।
আয়লানের মৃত্যু নাড়া দিয়েছিল বৃটিশ দম্পতি লেন ও ক্যারেনকও। লেন অ্যাব্রামস একজন ধর্ম যাজক।
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তার স্ত্রী ক্যারেন অ্যাব্রামস একজন লাইব্রেবিয়ান। আয়লানের মৃত্যুতে তারা এতোটাই মর্মাহত হন যে, তারা চেয়েছিলেন এইসব শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর আশায় লাখ লাখ শরণার্থী বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামেন। যাত্রাপথে অনেকের সলীল সমাধি হয়। বাকিরা কোনমতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ইউরোপে। কিন্তু পৌঁছালেও তাদের দুর্দশার শেষ হয়নি। মাথাগোঁজার ঠাই ছিল না অনেকের। শরণার্থীদের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন লেন ও ক্যারেন। সিদ্ধান্ত নেন অন্তত দু’-একজনকে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দেবেন। এই আতিথেয়তা শরণার্থীদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে ছোট্ট পদক্ষেপ বলে মনে করেন এই দম্পতি।
তারা প্রথমে আফগানিস্তানের এক মুসলিম যুবককে সাহায্য করতে এগিয়ে যান। ওই যুবক যখন বৃটেনের সারেতে পৌঁছায়, তখন একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া তার কাছে আর কিছুই ছিল না। মুসলিম ওই যুবককে নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দেন লেন ও ক্যারেন। তার জন্য হালাল খাবারের ব্যবস্থা করেন। তার নামাজ পড়ার সুবিধার্থে কেবলা নির্ণায়ক একটি অ্যাপও ডাউনলোড করেন।
আফগানিস্তানে বেড়ে ওঠার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোকে নিয়ে ওই যুবক অনেক ভ্রান্ত ধারণাও পোষণ করতেন। কিন্তু তিনি বলেন যে, লেন এবং তার স্ত্রীর উদারতা আঠারো বছরের সকল মিথ্যা ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে।
লেন আরও বলেন, এই ধরনের পরিবেশ থেকে যখন মানুষ আপনার বাড়িতে আসবে, তখন তাদের দৃষ্টিতে আপনি নিজের সমস্ত জিনিস দেখতে পাবেন। এসব আপনাকে নতুন করে জীবনের মূল্য বুঝাতে সাহায্য করবে। আর এসব শরনার্থীর বাড়িতে আশ্রয় দিতে পারা আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
তাদের এই প্রথম পদক্ষেপটি ফলপ্রসূ হওয়ার পরে তারা এখন তাদের দ্বিতীয় অতিথিকে আতিথেয়তা করছেন। মালাওয়ি থেকে আসা ৩৬ বছরের গ্রেস। সদাহাস্য গ্রেস সহজেই এই পরিবারটির সঙ্গে মিশে যান। লেন ও ক্যারেনের প্রতিও তার অসম্ভব ভালোবাসা রয়েছে বলেও জানান এই দম্পতি।
গ্রেসের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে ক্যারেন বলেন, দুর্বিষহ মুহূর্তেও গ্রেস এতোটা আশাবাদী এবং তার বিশ্বাস এতোটা জোরালো যে, সে অন্যদের উপর তার এই চারিত্রিক গুণের প্রভাব রাখতে পারে।
গ্রেস বলেন, আমার উপকারে আজ পর্যন্ত সকলে যা কিছু করেছেন, এই দম্পতির আতিথেয়তা তার মধ্যে সেরা। যখন আমি একা ছিলাম, সবসময় অস্থিরতা কাজ করতো। কিন্তু এখন আমার বসবাসের জায়গা আছে। আমি এখন মুক্ত। লেন এবং ক্যারেন দম্পতির সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে গ্রেস তিন মাস গৃহহীন ছিলেন। তিনি পার্কে, শপিং মলে এমনকি বাসেও ঘুমাতেন। তিনি বলেন, আমার প্রচুর বন্ধু ছিল। কিন্তু যখন আমি ঘরছাড়া হলাম, তখন তাদের আসল রূপ দেখতে পেলাম। তাদের আচরণে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছিলাম। যে মুহূর্তে আপনি ঘর ছাড়া হবেন, আর আপনার বন্ধুরা মোবাইল বন্ধ করে রাখবে কিংবা বলবে যে তারা ব্যস্ত আছে, এটা আপনাকে সরাসরি না বলে ইঙ্গিতে বুঝানো হচ্ছে যে আপনি আর কল দিবেন না। মাঝেমধ্যে আপনাকে আসতে দেখে তারা তাদের জিনিসপত্র লুকোতে থাকবে। তারা চিন্তা করে, তাদের কাছে টাকা নেই, তারা মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করবে। কিন্তু আমি লেন এবং ক্যারেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উপলব্ধি করেছিলাম তারা খুবই হৃদয়বান।
লেন জানান, আমাদের দুই সন্তান এখন আলাদা থাকে। কাজেই এতো বড় বাড়িতে শুধু আমরা দু’জন থাকি। গ্রেস আমাদের সঙ্গে থাকাতে বরং ভালোই হয়েছে। আমাকে প্রায়ই কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়। তখন ক্যারেন অন্তত একজন সঙ্গী পান।
লেন পেশাগত কাজে বাইরে থাকলে ক্যারেন ও গ্রেসের সময়টা ভালোই কাটে। তারা মাঝে-মধ্যে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বনে হাঁটাহাঁটি করেন। লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারেও বেড়িয়ে এসেছেন একসঙ্গে।
গ্রেস আরও বলেন, যে পরিবারটি আমাকে সাহায্য করেছে, তাদেরকে আমাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। কেউ কোনো অর্থ ছাড়া তাদের বাড়িতে থাকতে দিবে এটা বিশ্বাস করাটা কঠিন। কেননা এখানে খুব কম মানুষই আছে যারা তাদের বাড়ির দরজা আপনার জন্য খুলে দিবে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, গার্ডিয়ান
আয়লানের মৃত্যু নাড়া দিয়েছিল বৃটিশ দম্পতি লেন ও ক্যারেনকও। লেন অ্যাব্রামস একজন ধর্ম যাজক।
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তার স্ত্রী ক্যারেন অ্যাব্রামস একজন লাইব্রেবিয়ান। আয়লানের মৃত্যুতে তারা এতোটাই মর্মাহত হন যে, তারা চেয়েছিলেন এইসব শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর আশায় লাখ লাখ শরণার্থী বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামেন। যাত্রাপথে অনেকের সলীল সমাধি হয়। বাকিরা কোনমতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ইউরোপে। কিন্তু পৌঁছালেও তাদের দুর্দশার শেষ হয়নি। মাথাগোঁজার ঠাই ছিল না অনেকের। শরণার্থীদের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন লেন ও ক্যারেন। সিদ্ধান্ত নেন অন্তত দু’-একজনকে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দেবেন। এই আতিথেয়তা শরণার্থীদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে ছোট্ট পদক্ষেপ বলে মনে করেন এই দম্পতি।
তারা প্রথমে আফগানিস্তানের এক মুসলিম যুবককে সাহায্য করতে এগিয়ে যান। ওই যুবক যখন বৃটেনের সারেতে পৌঁছায়, তখন একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া তার কাছে আর কিছুই ছিল না। মুসলিম ওই যুবককে নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দেন লেন ও ক্যারেন। তার জন্য হালাল খাবারের ব্যবস্থা করেন। তার নামাজ পড়ার সুবিধার্থে কেবলা নির্ণায়ক একটি অ্যাপও ডাউনলোড করেন।
আফগানিস্তানে বেড়ে ওঠার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোকে নিয়ে ওই যুবক অনেক ভ্রান্ত ধারণাও পোষণ করতেন। কিন্তু তিনি বলেন যে, লেন এবং তার স্ত্রীর উদারতা আঠারো বছরের সকল মিথ্যা ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে।
লেন আরও বলেন, এই ধরনের পরিবেশ থেকে যখন মানুষ আপনার বাড়িতে আসবে, তখন তাদের দৃষ্টিতে আপনি নিজের সমস্ত জিনিস দেখতে পাবেন। এসব আপনাকে নতুন করে জীবনের মূল্য বুঝাতে সাহায্য করবে। আর এসব শরনার্থীর বাড়িতে আশ্রয় দিতে পারা আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
তাদের এই প্রথম পদক্ষেপটি ফলপ্রসূ হওয়ার পরে তারা এখন তাদের দ্বিতীয় অতিথিকে আতিথেয়তা করছেন। মালাওয়ি থেকে আসা ৩৬ বছরের গ্রেস। সদাহাস্য গ্রেস সহজেই এই পরিবারটির সঙ্গে মিশে যান। লেন ও ক্যারেনের প্রতিও তার অসম্ভব ভালোবাসা রয়েছে বলেও জানান এই দম্পতি।
গ্রেসের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে ক্যারেন বলেন, দুর্বিষহ মুহূর্তেও গ্রেস এতোটা আশাবাদী এবং তার বিশ্বাস এতোটা জোরালো যে, সে অন্যদের উপর তার এই চারিত্রিক গুণের প্রভাব রাখতে পারে।
গ্রেস বলেন, আমার উপকারে আজ পর্যন্ত সকলে যা কিছু করেছেন, এই দম্পতির আতিথেয়তা তার মধ্যে সেরা। যখন আমি একা ছিলাম, সবসময় অস্থিরতা কাজ করতো। কিন্তু এখন আমার বসবাসের জায়গা আছে। আমি এখন মুক্ত। লেন এবং ক্যারেন দম্পতির সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে গ্রেস তিন মাস গৃহহীন ছিলেন। তিনি পার্কে, শপিং মলে এমনকি বাসেও ঘুমাতেন। তিনি বলেন, আমার প্রচুর বন্ধু ছিল। কিন্তু যখন আমি ঘরছাড়া হলাম, তখন তাদের আসল রূপ দেখতে পেলাম। তাদের আচরণে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছিলাম। যে মুহূর্তে আপনি ঘর ছাড়া হবেন, আর আপনার বন্ধুরা মোবাইল বন্ধ করে রাখবে কিংবা বলবে যে তারা ব্যস্ত আছে, এটা আপনাকে সরাসরি না বলে ইঙ্গিতে বুঝানো হচ্ছে যে আপনি আর কল দিবেন না। মাঝেমধ্যে আপনাকে আসতে দেখে তারা তাদের জিনিসপত্র লুকোতে থাকবে। তারা চিন্তা করে, তাদের কাছে টাকা নেই, তারা মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করবে। কিন্তু আমি লেন এবং ক্যারেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উপলব্ধি করেছিলাম তারা খুবই হৃদয়বান।
লেন জানান, আমাদের দুই সন্তান এখন আলাদা থাকে। কাজেই এতো বড় বাড়িতে শুধু আমরা দু’জন থাকি। গ্রেস আমাদের সঙ্গে থাকাতে বরং ভালোই হয়েছে। আমাকে প্রায়ই কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়। তখন ক্যারেন অন্তত একজন সঙ্গী পান।
লেন পেশাগত কাজে বাইরে থাকলে ক্যারেন ও গ্রেসের সময়টা ভালোই কাটে। তারা মাঝে-মধ্যে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বনে হাঁটাহাঁটি করেন। লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারেও বেড়িয়ে এসেছেন একসঙ্গে।
গ্রেস আরও বলেন, যে পরিবারটি আমাকে সাহায্য করেছে, তাদেরকে আমাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। কেউ কোনো অর্থ ছাড়া তাদের বাড়িতে থাকতে দিবে এটা বিশ্বাস করাটা কঠিন। কেননা এখানে খুব কম মানুষই আছে যারা তাদের বাড়ির দরজা আপনার জন্য খুলে দিবে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, গার্ডিয়ান
No comments