রক্তে মিলবে ক্যান্সারের লক্ষ্মণ
রক্তে
ক্যান্সারের উপস্থিতি শনাক্তে সর্বজনীন একটি পরীক্ষার পথে অনেকটাই এগিয়ে
গেছেন বিজ্ঞানীরা। যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে অন্যতম এক যুগান্তকারী
পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমন
একটি রক্তপরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। যাতে রক্তপ্রবাহে থাকা টিউমারের
পরিবর্তিত ডিএনএ ও প্রোটিনের ক্ষুদ্র চিহ্ন শনাক্ত করা যায়। বিবিসি। এরই
মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হাজারও রোগীর মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে এ পদ্ধতির
সফলতা দেখতে পেয়েছেন তারা। এবার তাদের লক্ষ্য ক্যান্সার শনাক্ত হয়নি এমন
ব্যক্তিদের মধ্যে পদ্ধতিটির পরীক্ষা চালানো। গবেষকরা বলছেন, মানবদেহের
রক্তপ্রবাহে ক্যান্সারের কারণে সৃষ্ট টিউমারের পরিবর্তিত ডিএনএ ও প্রোটিনের
ক্ষুদ্র চিহ্ন থাকে। তাদের পরীক্ষায় মানবদেহের ১৬টি জিনের পরিবর্তন হয়েছে
কিনা তা দেখা হয়। খোঁজা হয় ৮টি প্রোটিন, যা ক্যান্সার রোগীর রক্তে প্রায়ই
নির্গত হয়। পদ্ধতিটি কার্যকর বলে নিশ্চিত হলে বছরে মাত্র একবার রক্ত
পরীক্ষাতেই যে কেউ তার দেহে ক্যান্সারের অস্তিত্ব আছে কিনা তা জানতে
পারবেন। এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার ধরা পড়বে। এতে জীবন
বাঁচানো সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞানীদের এ আবিষ্কারকে ‘বেশ
চমকপ্রদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব
মেডিসিনের ড. ক্রিস্টিয়ান টমাসেট্টি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্ত
করা বেশ কঠিন, যদিও এ পরীক্ষার ফল বেশ চমকপ্রদ। আমার ধারণা, এটি
ক্যান্সারজনিত মৃত্যু কমাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।’ যত দ্রুত ক্যান্সার
শনাক্ত করা যাবে ততই রোগটি থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
৮টির মধ্যে
পাঁচ ধরনের ক্যান্সারেই প্রাথমিক অবস্থায় তা শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই।
অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণও এতই কম এবং ধরাও পড়ে এত দেরিতে যে, এ ধরনের
ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের চারজনই ক্যান্সার শনাক্তের বছরই মারা
যান। টমাসেট্টি বলেন, অপারেশন করে সারিয়ে ফেলা যাবে তেমন অবস্থাতেই টিউমার
শনাক্ত করা গেলে তা এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে তার ‘রাত-দিন তফাত’ তৈরি করবে।
গবেষকরা এখন পর্যন্ত ডিম্বাশয়, যকৃৎ, পাকস্থলী, অগ্নাশয়, খাদ্যনালি,
মলাশয়, ফুসফুস ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এক হাজার পাঁচজন ব্যক্তির ওপর এ
পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে সফলতা আসার পর এখন ক্যান্সার
ধরা পড়েনি এমন মানুষের ওপর এ রক্ত পরীক্ষা চালানো হবে। সেখানে উতরে গেলেই
এর আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু করা যাবে। জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত এ
ক্যান্সার সিক টেস্টকে ‘অভূতপূর্ব’ বলা হচ্ছে কেননা এটি ক্যান্সারের কারণে
পরিবর্তিত ডিএনএ এবং প্রোটিন দুটিরই সন্ধান করছে। বিজ্ঞানীদের আশা এ
পরীক্ষা স্তন ক্যান্সার শনাক্তে ব্যবহৃত ম্যামোগ্রাম এবং মলাশয় ও মলদ্বারের
ক্যান্সার শনাক্তে ব্যবহৃত কোলনস্কোপির সম্পূরক হবে। টমাসেট্টি বলেন,
‘আমরা এমন একটি রক্ত পরীক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যা বছরে একবার করা
যায়। পরীক্ষার জন্য রোগীদের ৫০০ ডলারের মতো খরচ হবে, যা কোলনস্কোপির
কাছাকাছি।
No comments