আঠারোর দিকে তাকিয়ে সতেরো সাল by সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
২০১৮
সালের জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর, ১০ বছর আগে তিনি ছিলেন ৮ থেকে
১০ বছরের শিশু, অথবা ১১ থেকে ১২ বছরের কিশোর। আজ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে
তিনি প্রথমবারের মতো একজন ভোটার। তিনি একজন গর্বিত তরুণ বাংলাদেশী নাগরিক।
তিনি হয়তো রাজপথের উত্তেজিত কর্মী। ধরে নিলাম তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার অনুরক্ত বা ভক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলবেন, সেটা নিয়ে
রাজপথ কাঁপিয়ে স্লোগান দেন এই তরুণেরা। প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন,
পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য সংবিধান কর্তৃক বেঁধে দেয়া নিয়ম থেকে একচুলও
বাইরে যাবো না, তখনই এ তরুণেরা রাজপথ কাঁপিয়ে তার সমর্থনে স্লোগান দেয়।
প্রধানমন্ত্রী যখনই বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আর কোনোদিনই বাংলাদেশে
আসবে না, তখনই এই তরুণেরা রাজপথ কাঁপিয়ে স্লোগান দিতে থাকে, আনা যাবে না
আনা যাবে না। কিন্তু এই তরুণেরা একবারও চিন্তা করে না, ১০, ২০ বা ২৫ বছর
আগে প্রধানমন্ত্রী তাদের নেত্রী কী বলেছিলেন? যাদের বয়স তখন ৮ থেকে ১২ বছর
এরূপ ছিল, তারা তখন নেত্রীর কথাবার্তা অনুসরণ, অনুধাবন ও মূল্যায়ন করার মতো
কি মানসিকভাবে শক্তিশালী বা জ্ঞানী ছিল? এর উত্তর- নিশ্চয়ই ছিল না। ২০০৬
সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ। বিএনপি সরকার বিদায় নেবে। এর আগে থেকেই
কথাবার্তা উঠছিল, আলাপ-আলোচনা চলছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন,
সে প্রসঙ্গে। নিশ্চিতভাবেই পাঠকদের কারো কারো মনে অবশ্যই ওই স্মৃতি
উজ্জ্বলভাবে এখনো আছে, আবার কারো কারো মন থেকে বিষয়টি একদম বিলুপ্ত হয়ে
গেছে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে যে সংবিধান বহাল ছিল, সে সংবিধান অনুযায়ী বিএনপি
সরকার বিদায় নেয়ার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল হওয়ার কথা। ওই
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা সর্বশেষ বা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান
বিচারপতির। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি ছিলেন
বিচারপতি কে এম হাসান। ২০০৬ সালে যিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, তিনি
আজকের প্রধানমন্ত্রী। সে দিনের আওয়ামী লীগ প্রধান একটি আপত্তি তোলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা বললেন, ‘আমরা কে এম হাসানকে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মানব না; তিনি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য
নন।’ কারণ কী? আওয়ামী লীগ সভাপতি কারণ বর্ণনা করলেন। কারণটি হলো- তাদের
মূল্যায়নে কে এম হাসানের শরীর থেকে ‘বিএনপির গন্ধ’ বের হচ্ছে। সবাই বলল,
এটা কিভাবে হয়? কে এম হাসান তো বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বের হলেন।
শেখ হাসিনা উত্তর দিলেন, ‘১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে হাসান বিএনপির
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।’ অবশ্য
বিচারপতি কে এম হাসান পরে আইন পেশায় অনেক ভালো করেন, হাইকোর্ট বিভাগের
বিচারপতি হন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হন এবং সর্বশেষ ধাপে
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হলেন। তথাপি আওয়ামী লীগের মূল্যায়নে কে এম
হাসানের শরীর থেকে ‘বিএনপির গন্ধ’ যায়নি! সেই আশির দশকের শুরু থেকে ২০০৬
সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে হাসান তার বিভিন্ন পোশাক কতবার ধোলাই করেছেন,
ড্রাই ক্লিন করিয়েছেন, নিজে কতবার গোসল করেছেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
কিন্তু ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের ঘ্রাণ নেয়ার শক্তি এত বেশি শক্তিশালী ছিল
যে, হাসানের শরীর থেকে তখনো বিএনপির গন্ধ আসছিল। কথাটা অবিশ্বাস্য। তারপরেও
আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাষ্য ছিল এটাই। তিনি বলেছিলেন, বিএনপির গন্ধ বের
হচ্ছে যার শরীর থেকে, তাকে সরকারপ্রধান মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো দিনও
নির্বাচনে যাবে না। এভাবে আওয়ামী লীগ কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক
সরকারপ্রধান না মেনে পুরো পরিস্থিতি এমন ঘোলাটে করে দিয়েছিল যে, বিএনপি
মনোনীত তৎকলীন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে
পারেননি। ফলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক শক্তি ব্যবহার করে সেনাপ্রধান
মইন ইউ আহমদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পরোক্ষ (রিমোট কন্ট্রোল) নিয়ন্ত্রণে একটি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মইন ইউ আহমদের সহযোগী ছিলেন ফখরুদ্দীন
আহমেদ। মইনউদ্দিন বা ফখরুদ্দীনের শরীর থেকে আওয়ামী লীগ বিএনপির গন্ধ
আবিষ্কার করেনি। এ কথার ধারাবাহিকতায় আমরা ২০১৮ সালে আসি। ১১ বছর আগের
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জুডিশিয়াল বিদ্রোহ বা
জুডিশিয়াল বিপ্লব বা জুডিশিয়াল ক্যু বা জুডিশিয়াল ম্যানিপুলেশনের কথা বলব
না; কিন্তু এটা তো বলবই যে, যত প্রকারে সম্ভব তত প্রকারের পার্লামেন্টারি
ম্যানিপুলেশন করে বা করিয়ে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান
সংবিধানকে বুকে ধারণ করছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ২০১৮ সালের সংস্করণ
মোতাবেক, কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিধান নেই। এই সংবিধান মোতাবেক,
নির্বাচনকালে দলীয়ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীই নির্বাচনকালীন
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আমরা অনুমান করে নেই, ২০১৮ সালের
অক্টোবর, নভেম্বর বা ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কে থাকবেন?
স্বাভাবিক নিয়মে তখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন শেখ হাসিনা। তিনি
প্রায় ৩৬ বছরের অধিককাল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী; অর্থাৎ তিন যুগ ধরে তিনি
দলের সভানেত্রী। তিনি আপাদমস্তক একজন আওয়ামী লীগার; এটাই স্বাভাবিক এবং
এটাকে স্বাগত; এটাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের সভাপতির শরীর
থেকে আওয়ামী লীগের গন্ধ’ বের হওয়াই স্বাভাবিক; গন্ধ বের না হওয়াটাই
অস্বাভাবিক। এরূপ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের গন্ধে বিধৌত ও আবৃত আরো
নেতৃত্বে গঠিত সরকারের অধীনে সমগ্র বাংলাদেশকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেয়ার
জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান; আহ্বান
জানাচ্ছেন সেই সংবিধানের অধীনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী; আহ্বান
জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী; আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের
একটি বড় অংশ, যারা বর্তমান সরকারের সুবিধাভোগী। ২০০৬ সালের পরিস্থিতির সাথে
২০১৮ সালের পরিস্থিতির তুলনা করি। ২০০৬ সাল থেকে পেছনের দিকে ১৯৮৪ সাল
পর্যন্ত ২০ বছর। কে এম হাসান ২০ বছর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম
সম্পাদক ছিলেন। এ কারণে হাসানের অধীনে শেখ হাসিনা নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি
জানান ২০০৬ সালে। অপরদিকে ৩৬ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর
দায়িত্ব পালনকারী নেত্রীর অধীনে নির্বাচনে আসার জন্য, সবাইকে অবলীলাক্রমে
আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই কলামের পাঠক নিজেরাই বিবেচনা করুন, এখানে
সংশ্লিষ্ট দলের রাজনৈতিক কথায় ও আচরণে স্ববিরোধিতা আছে কিনা। একটি কথা
প্রচলিত আছে, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। কিন্তু নিশ্চয়ই রাজনীতিতে
উল্টাপাল্টা চলারও কথা নয়। অথচ এখন চলছে উল্টাপাল্টার দিন। কথাগুলো বললাম এ
জন্য যে, ২০১৮ সালে আরো অনেক উল্টাপাল্টা কথা শোনার জন্য সবাই প্রস্তুত
থাকতে হবে। ঢাকা মহানগর থেকে অনেকগুলো জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকা বের
হয়। প্রত্যেকটি পত্রিকাতেই ডিসেম্বরের শেষ দুই-তিন দিন এবং জানুয়ারির প্রথম
দুই-তিন দিন বিভিন্ন কলাম ও সংবাদভিত্তিক মূল্যায়ন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭
সালকে কেন্দ্র করে। এরকম একটি জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকা ৩১ ডিসেম্বর সংখ্যার ৫
নম্বর পৃষ্ঠা হাতে নিয়ে এই অনুচ্ছেদটি লিখছি। ভোলায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র
আবিষ্কারের কথা এখানে লেখা আছে। আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত একুশতম
আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী কিশোর প্রথম স্থান অধিকার
করার কথা লেখা আছে। ইলিশ মাছের ‘জিআই’ স্বীকৃতি লাভের কথাও আছে।
আইসিডিডিআরবি’র ক্লিনিক্যাল রিসার্চ বিভাগের প্রধান ডক্টর মো: জুবায়ের
চিশতী, নিউমোনিয়া থেকে শিশুদের বাঁচাতে আবিষ্কার করেছেন শ্যাম্পুর বোতল
থেরাপি, যেটার আনুষ্ঠানিক নাম বাবল সিপিএপি পদ্ধতি। এর কথাও লেখা আছে।
বাংলাদেশী তরুণ বিজ্ঞানী ডক্টর সাইফুল ইসলাম অন্য একজন জাপানি গবেষকের সাথে
সম্মিলিতভাবে গবেষণা করে কলেস্টারোলেমিয়া ও ডায়াবেটিস চিকিৎসায় উপকারের
কারণ আবিষ্কার করেছেন। সে কথা লেখা আছে। ২০১৭ সালে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রায়
বাংলাদেশের মানুষের মনকে স্পর্শ করেছে।
২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে
আনা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সগুলোর প্রসঙ্গে রায় প্রদান করেছেন। ২০১৭ সালের ১
আগস্ট প্রকাশিত হলো আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে
বাতিল করে দেয়া রায়। পত্রিকাটির একই পৃষ্ঠায় আরো অনেক চমকপ্রদ স্মৃতি
জাগানিয়া খবর আছে ২০১৭ সালকে কেন্দ্র করে। কিন্তু অপহরণ এবং গুম নিয়ে বিশেষ
কোনো খবর এখানে নেই, থাকলে ভালো হতো। ২০১৮ সালেও এমন অনেক খবর বের হবে।
আমরা এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকব। কিন্তু যে দুই-তিনটি খবরের জন্য
আমরা সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব হয়ে আছি, সেগুলো হলো- আগামী পার্লামেন্ট
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে; যেমনÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি ক্ষমতায় থেকেই
নির্বাচন করবেন? পার্লামেন্ট বহাল রেখেই কি নির্বাচন করানো হবে? নির্বাচনে
সেনাবাহিনী কি মোতায়েন করা হবে যেভাবে বিরোধী দল চাচ্ছে? জনমনে স্বস্তি
আনয়নের লক্ষ্যে যেভাবে প্রয়োজন তা করা হবে কিনা। নিরপেক্ষ সরকার প্রসঙ্গে
শেখ হাসিনা কি তার মনোভাব বদলাবেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে কি স্বাধীন ও
উন্মুক্ত নাগরিক হিসেবে নির্বাচনী মাঠে বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ
দেয়া হবে? আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার অনেক ধরনের
পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই নিয়েছে, এখনো নিচ্ছে এবং আগামী দু’চার মাসব্যাপী নেবে।
বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের কৌশলী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে
একটি, বেগম খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে। বেগম জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে
রাখার জন্য যত প্রকারে সম্ভব, ততভাবে দুরভিসন্ধি সরকার এঁটেই যাচ্ছে।
নির্বাচনকালে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র ও আমলাতন্ত্র একং মাঠপর্যায়ের সরকারি
কর্মকর্তারা যেন সরকারি দলের পক্ষে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ভূমিকা
রাখেন, তার জন্য যত প্রকারের কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, সরকার সেগুলো
নিয়েই যাচ্ছে। সরকারের এ ধরনের সার্বিক পদক্ষেপগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য
বিএনপি তথা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রস্তুতিও চলমান; প্রস্তুতি
খুব শক্তিশালী বললে ভুল হবে অথবা প্রস্তুতি খুব দুর্বল বললেও ভুল হবে;
প্রস্তুতি আছে এবং আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে বললেই সঠিক হবে। আগামী নির্বাচন
নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ভূমিকা নিয়ে অল্প কথা লিখেই আজকের লেখা শেষ
করছি। আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগের পাঁচ-ছয়
সপ্তাহের ঘটনাবলিকে স্মরণ করি। জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি
নির্বাচনে যাবে না, যাবে না- এটাই বলে আসছিল। কিন্তু বজ্রপাতের মতো একটি
ঘটনা ঘটল। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি আমলা, দিল্লি থেকে
আনুষ্ঠানিক সফরে আসলেন ঢাকায়। তিনি ছিলেন তৎকালীন ভারত সরকারের পররাষ্ট্র
সচিব। নাম সুজাতা সিং (একজন ভদ্রমহিলা)। তিনি বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেননি।
তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে দেখা করলেন এবং বললেন, আপনি যদি
নির্বাচনে না আসেন, তাহলে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এসে যাবে; এটা আমাদের
জন্য ক্ষতিকর হবে; এটা আপনাদের জন্যও ক্ষতিরকারণ হবে। অতএব আপনি অবশ্যই
নির্বাচনে আসবেন।’ এরশাদের সাথে বৈঠকের পর টেলিভিশনের সাথে কথা বলার সময়
এরশাদ এ কথাগুলো বলে দিয়েছেন জাতির উদ্দেশ্যে। সুজাতা সিংয়ের উদাত্ত আহ্বান
সত্ত্বেও, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কিঞ্চিত দোদুল্যমান ছিলেন। সে সময় ঢাকা
মহানগরের উচ্চমার্গের অভিজাত এলাকা বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের পার্ক রোডে
অবস্থিত প্রেসিডেন্ট হাউজে আরেকটি নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল। প্রেসিডেন্ট হাউজ
মানে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের বহুতল বাসভবন। সেখানে বাংলাদেশের অতীব
গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার অতি জ্যেষ্ঠ লোকজন যানবাহন এবং শক্তিশালী
পেশির অধিকারী তরুণদের নিয়ে উপস্থিত হন। তারা (অর্থাৎ গোয়েন্দা মুরুব্বিরা)
সুস্থ ব্যক্তি এরশাদকে জোর-জবরদস্তি করে, এটা-ওটা বুঝিয়ে, এদিক-ওদিক চাপ
দিয়ে, এদিক-ওদিক ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তোলেন। গাড়িতে করে তাকে নিয়ে আসা
হয়েছিল ঢাকা সেনানিবাসের উত্তর অংশে অবস্থিত বিশাল হাসপাতালে। এর নাম
কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল, সংক্ষেপে সিএমএইচ। সাবেক প্রেসিডেন্ট অবশ্যই
ভিআইপিদের মধ্যে অত্যন্ত জ্যেষ্ঠ। চিকিৎসকদের দিয়ে তাকে চিকিৎসাধীন ঘোষণা
করা হলো। সাবেক প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলীয় সহকর্মী এবং ঘনিষ্ঠ
পারিবারিক সদস্যদের দিয়ে ঘোষণা করানো হলো, সাবেক প্রেসিডেন্ট মহোদয় অসুস্থ
বিধায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তথাকথিত অসুস্থ সাবেক প্রেসিডেন্টকে এমন
মানসিক, স্নায়বিক, শারীরিক ও আদালতীয় চিকিৎসা দেয়া হলো যে, তিনি
সানন্দচিত্তে হাসিমুখে ঘোষণা করলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। ২০১৮
সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে অন্তত চোখ-কান খোলা রাখা প্রয়োজন, যেন
আরেকজন সুজাতা সিং এসে কী করেন বা বলেন, সেটা জনগণ ত্বরিত জানতে পারে। অথবা
আরেকজন গোয়েন্দাপ্রবর, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বা ওইরূপ উচ্চমার্গের সাবেককে
আবারো উচ্চমার্গীয় ‘আদর-যত্ন’ করে হাসপাতালের ভিআইপি কামরায় প্রবেশ করান
কিনা সেদিকে যেন খেয়াল রাখা যায়।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব.); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
ই-মেইল : mgsmibrahim@gmail.com
লেখক : মেজর জেনারেল (অব.); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
ই-মেইল : mgsmibrahim@gmail.com
No comments