‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বিশ্ব আমাদের ছেড়ে যায়নি’
প্রথম আলো: গত চার বছরে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকার এগিয়েছে। এসব ঘটনাপ্রবাহকে কীভাবে দেখেন?
তৌহিদ হোসেন: কূটনীতিকেরা হলেন বিপণন কর্মকর্তা। আপনি সেটাই বিক্রি করতে পারেন, যা আপনি তৈরি করেন এবং যার চাহিদা রয়েছে। তাহলে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কূটনীতিকদের বিদেশে নিজের দেশকে তুলে ধরতে হলে, সব ক্ষেত্রে দেশ যেভাবে চলবে, যা নিয়ে বাইরের আগ্রহ আছে সেটাই তুলে ধরেন। মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে না, এটা বাইরের দুনিয়ার চাহিদা। তাই আপনার দেশে যদি মানবাধিকারের লঙ্ঘন হতে থাকে, আপনার কূটনীতিক যত চেষ্টাই করুক না কেন বিক্রি করতে পারবে না। বলা হচ্ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির) নির্বাচন হবে। তখন কিন্তু একটা ইঙ্গিত ছিল, নির্বাচনটা সাময়িক আরেকটা নির্বাচন হবে। পরে সেটা যে হয়নি, তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের মতো দেশগুলোতে ক্ষমতায় গিয়ে মেয়াদ পূরণের আগে কেউ দায়িত্ব ছেড়ে দেবে, এটা ঘটে না। পরে আর নির্বাচন না হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো সংকট হয়নি।
প্রথম আলো: জানুয়ারিতে যেভাবে বলা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী পরে নির্বাচন হলো না। এ নিয়ে কিন্তু কারও সঙ্গে সম্পর্কের তেমন টানাপোড়েন হয়নি।
তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী, এটাই পৃথিবীর একমাত্র বিবেচ্য নয়। সারা বিশ্বে তো আরও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এ দেশে সংকট তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত কোনো দেশের জন্য তা লাভজনক নয়। বিশ্বজুড়ে ভারতের একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। ভারত যেহেতু নির্বাচনের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা হয়তো পরবর্তী সময়ে অন্য দেশগুলো গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেক দেশেরই নিজের স্বার্থ আছে। তা ছাড়া মুখ ফিরিয়ে নিলে কার কী লাভ!
প্রথম আলো: আপনি বলছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর সুশাসনই বিশ্বের কাছে একমাত্র বিবেচ্য নয়। সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর প্রত্যেক দেশ নিজের স্বার্থটাই গুরুত্ব দিয়েছে। তার মানে ‘রিয়েলপলিটিক’টাই সবাই বড় করে দেখেছে?
তৌহিদ হোসেন: রিয়েলপলিটিক সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই সরকার নির্বাচনের পর বড় সমস্যার মুখে পড়েনি।
প্রথম আলো: ২০১৫ সালে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হলো। এটা তো দুই দেশের সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক অর্জন।
তৌহিদ হোসেন: এটি দুই দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দুই দেশেরও কারও কারও মধ্যে এটিকে শুধু আমাদের সমস্যা হিসেবে দেখার প্রবণতা দেখা যায়। ভুলে গেলে চলবে না এটি দুই দেশের সমস্যা। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় এ দেশের জনগণ একটু বেশি বিচলিত হয়। তাই ছিটমহলের মানুষের কারণে আমরা বেশি সংবেদনশীল ছিলাম। অথচ দেখানোর চেষ্টা আছে, ভারত বাংলাদেশকে কিছু একটা দিল। এটা কিন্তু ঠিক নয়। বরং ভারত যে এত দিন এটা করছিল না, এটি তাদের ব্যর্থতা। বিজেপির কারণেই এটি আরও দুই বছর আগে হতে পারেনি।
প্রথম আলো: রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
তৌহিদ হোসেন: রোহিঙ্গাদের চিরতরে বের করে দিতে মিয়ানমার এবার আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। আরসার হামলার নামে যা বলা হয়, তা পুরোপুরি আইওয়াশ। এটা মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেরাই করিয়েছে। আমার বিশ্বাস, সেনাবাহিনীই ওই ঘটনায় মদদ দিয়েছে। ২৫ আগস্টের তিন সপ্তাহ আগেই রাখাইনে সেনা মোতায়েন শুরু হয়। কাজেই রাখাইনে এবার যা হয়েছে, তা বেশ পূর্বপরিকল্পিত। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মিয়ানমারের বাইরে। কেন তারা এটা করেছে? রাশিয়া, চীন ও ভারত তাদের সঙ্গে আছে। জাতিসংঘ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তাই এই অপকর্ম করার সাহস মিয়ানমার করেছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের কোনো ভবিষ্যৎ দেখছি না। যতই চুক্তি সই করি না কেন, আমি খুব একটা আশার আলো দেখছি না।
প্রথম আলো: সব মিলিয়ে সরকারের চার বছরের কূটনীতির মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
তৌহিদ হোসেন: গত চার বছরে বড় কোনো ব্যর্থতা আমাদের নেই। সাফল্য আছে। বিপণনের কাজটা আমরা একেবারে খারাপ করিনি। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও পৃথিবী তো আমাদের ছেড়ে যায়নি। কাজেই আমরা আমাদের কূটনীতিকদের কেন কৃতিত্ব দেব না? আমাদের অর্থনীতির চাকা তো ঘুরছে। সেখানে তো কূটনীতির কৃতিত্ব আছে। লোকজন বাইরে যাচ্ছেন, বড় বড় প্রকল্প আছে। তবে এটা ঠিক যে দেশের ভেতরে যদি আরও ভালো করতে পারতাম, বিপণনকারী হিসেবে আমাদের কূটনীতিকেরা আরও সফল হতেন।
তৌহিদ হোসেন: কূটনীতিকেরা হলেন বিপণন কর্মকর্তা। আপনি সেটাই বিক্রি করতে পারেন, যা আপনি তৈরি করেন এবং যার চাহিদা রয়েছে। তাহলে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কূটনীতিকদের বিদেশে নিজের দেশকে তুলে ধরতে হলে, সব ক্ষেত্রে দেশ যেভাবে চলবে, যা নিয়ে বাইরের আগ্রহ আছে সেটাই তুলে ধরেন। মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে না, এটা বাইরের দুনিয়ার চাহিদা। তাই আপনার দেশে যদি মানবাধিকারের লঙ্ঘন হতে থাকে, আপনার কূটনীতিক যত চেষ্টাই করুক না কেন বিক্রি করতে পারবে না। বলা হচ্ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির) নির্বাচন হবে। তখন কিন্তু একটা ইঙ্গিত ছিল, নির্বাচনটা সাময়িক আরেকটা নির্বাচন হবে। পরে সেটা যে হয়নি, তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের মতো দেশগুলোতে ক্ষমতায় গিয়ে মেয়াদ পূরণের আগে কেউ দায়িত্ব ছেড়ে দেবে, এটা ঘটে না। পরে আর নির্বাচন না হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো সংকট হয়নি।
প্রথম আলো: জানুয়ারিতে যেভাবে বলা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী পরে নির্বাচন হলো না। এ নিয়ে কিন্তু কারও সঙ্গে সম্পর্কের তেমন টানাপোড়েন হয়নি।
তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী, এটাই পৃথিবীর একমাত্র বিবেচ্য নয়। সারা বিশ্বে তো আরও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এ দেশে সংকট তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত কোনো দেশের জন্য তা লাভজনক নয়। বিশ্বজুড়ে ভারতের একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। ভারত যেহেতু নির্বাচনের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা হয়তো পরবর্তী সময়ে অন্য দেশগুলো গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেক দেশেরই নিজের স্বার্থ আছে। তা ছাড়া মুখ ফিরিয়ে নিলে কার কী লাভ!
প্রথম আলো: আপনি বলছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর সুশাসনই বিশ্বের কাছে একমাত্র বিবেচ্য নয়। সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর প্রত্যেক দেশ নিজের স্বার্থটাই গুরুত্ব দিয়েছে। তার মানে ‘রিয়েলপলিটিক’টাই সবাই বড় করে দেখেছে?
তৌহিদ হোসেন: রিয়েলপলিটিক সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই সরকার নির্বাচনের পর বড় সমস্যার মুখে পড়েনি।
প্রথম আলো: ২০১৫ সালে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হলো। এটা তো দুই দেশের সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক অর্জন।
তৌহিদ হোসেন: এটি দুই দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দুই দেশেরও কারও কারও মধ্যে এটিকে শুধু আমাদের সমস্যা হিসেবে দেখার প্রবণতা দেখা যায়। ভুলে গেলে চলবে না এটি দুই দেশের সমস্যা। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় এ দেশের জনগণ একটু বেশি বিচলিত হয়। তাই ছিটমহলের মানুষের কারণে আমরা বেশি সংবেদনশীল ছিলাম। অথচ দেখানোর চেষ্টা আছে, ভারত বাংলাদেশকে কিছু একটা দিল। এটা কিন্তু ঠিক নয়। বরং ভারত যে এত দিন এটা করছিল না, এটি তাদের ব্যর্থতা। বিজেপির কারণেই এটি আরও দুই বছর আগে হতে পারেনি।
প্রথম আলো: রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
তৌহিদ হোসেন: রোহিঙ্গাদের চিরতরে বের করে দিতে মিয়ানমার এবার আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। আরসার হামলার নামে যা বলা হয়, তা পুরোপুরি আইওয়াশ। এটা মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেরাই করিয়েছে। আমার বিশ্বাস, সেনাবাহিনীই ওই ঘটনায় মদদ দিয়েছে। ২৫ আগস্টের তিন সপ্তাহ আগেই রাখাইনে সেনা মোতায়েন শুরু হয়। কাজেই রাখাইনে এবার যা হয়েছে, তা বেশ পূর্বপরিকল্পিত। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মিয়ানমারের বাইরে। কেন তারা এটা করেছে? রাশিয়া, চীন ও ভারত তাদের সঙ্গে আছে। জাতিসংঘ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তাই এই অপকর্ম করার সাহস মিয়ানমার করেছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের কোনো ভবিষ্যৎ দেখছি না। যতই চুক্তি সই করি না কেন, আমি খুব একটা আশার আলো দেখছি না।
প্রথম আলো: সব মিলিয়ে সরকারের চার বছরের কূটনীতির মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
তৌহিদ হোসেন: গত চার বছরে বড় কোনো ব্যর্থতা আমাদের নেই। সাফল্য আছে। বিপণনের কাজটা আমরা একেবারে খারাপ করিনি। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও পৃথিবী তো আমাদের ছেড়ে যায়নি। কাজেই আমরা আমাদের কূটনীতিকদের কেন কৃতিত্ব দেব না? আমাদের অর্থনীতির চাকা তো ঘুরছে। সেখানে তো কূটনীতির কৃতিত্ব আছে। লোকজন বাইরে যাচ্ছেন, বড় বড় প্রকল্প আছে। তবে এটা ঠিক যে দেশের ভেতরে যদি আরও ভালো করতে পারতাম, বিপণনকারী হিসেবে আমাদের কূটনীতিকেরা আরও সফল হতেন।
No comments