মেয়েকে নিয়ে বাবার চ্যালেঞ্জ
"জন্মের
পর থেকে আমার মেয়ের প্রতি চারপাশের মানুষ যে অবহেলা, যে অনীহা আর
কুসংস্কারমূলক কথাবার্তা বলেছে, তা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু সেই
অনীহাই আমাকে উৎসাহিত করেছে তাকে নিয়ে কিছু করার ব্যাপারে। আমার ইচ্ছা ছিল
এই মেয়েকে নিয়ে আমি এমন কিছু করে দেখাব যেন সবাইকে বলতে পারি, দেখো আমার
মেয়ে প্রতিবন্ধী নয়।" কথাগুলো বলছিলেন যশোরের ঝিকরগাছার বাসিন্দা রওশন
আলী। তিনি এক অদম্য কিশোরী তামান্না আকতারের বাবা। তার মেয়ের জন্ম হয়েছিলো
মাত্র একটি পা নিয়ে। তার কোনো হাত নেই। কিন্তু এই কিশোরীই সব প্রতিকূলতা
অতিক্রম করে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ গ্রেডে পাশ করার পর এখন
সে পড়ছে দশম শ্রেণীতে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সে বেছে নিয়েছে
বিজ্ঞান বিভাগ। পা দিয়ে লেখার পাশাপাশি সুন্দর ছবি আকার জন্য প্রশংসিত
হচ্ছে এই কিশোরী। তামান্নার এ পর্যায়ে উঠে আসা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো? সেই
গল্প বলছিলেন বাবা রওশন আলী। "আমার মেয়ের জন্য আমি এতো শিক্ষিত হয়েও,
কোনো চাকরি করিনি। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে আমার মনে চ্যালেঞ্জ ফুটে উঠলো যে
ওকে অনেক ওপরে নিয়ে যেতে হবে।"
"প্রথম যখন ওর পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক দেই,
ও বলছিল, আব্বু একটু যেন ব্যথা করে। এরপর আমি কলমের মত বলে পাটখড়ি দিতাম
পায়ের আঙুলের ফাকে। একটা সময় যখন সেটা ওর অভ্যাস হলো, তখন আস্তে আস্তে
কলম দিতে শুরু করলাম। কিছুদিন পর সে বর্ণমালা লেখা শিখে ফেললো।" "কিন্তু
স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই বললো, 'একে আনছেন কেনো?' 'এ কি
পারবে নাকি'? এরকম কথা আমাকে ভীষণ আহত করেছিল। আমার মনে হয়েছিল, এই
মেয়েকে নিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।" স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর তামান্না
প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ওঠে ফার্স্ট হয়ে, সেটা যেন ওর উৎসাহ
আরো বাড়িয়ে দেয়। এখন বাবা-মায়ের স্বপ্ন মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করা। ২০১৬
তে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ২০১২
সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তামান্না। জন্মের সময়
তার দুটি হাত ও দুটি পা নয়, শুধু একটি পা ছিল। তা দিয়েই তার সব কাজ।
এমনকি পা দিয়ে সুন্দর ছবিও আঁকে তামান্না। - বিবিসি
No comments