৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ
বাংলাদেশে
একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪০ হাজার কোটি টাকা
বিনিয়োগ করবে চীনা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ঝেজিয়াং জিনজুন হোল্ডিং গ্রুপ, যাকে
একক হিসেবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বলছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এ জন্য সেখানে
১ হাজার একর জমি ইজারা নিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে তারা জমির
ইজারামূল্যের একটি অংশ জমা দিয়েছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন
ক্ষমতা হবে ২ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ
(বেজা) জানিয়েছে, দু-এক মাসের মধ্যেই ঝেজিয়াং জিনদুন হোল্ডিংকে জমি বরাদ্দ
দেওয়া হবে। তারা আগামী মাসেই জমি উন্নয়নের কাজ শুরু করতে চায়। আর বিদ্যুৎ
উৎপাদন শুরু করতে চায় ২০২২ সালের মে মাসে। জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী
চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় খবর।
চীনা বিনিয়োগকারীরা যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে দেখছে, এটা
তারই নমুনা। তিনি বলেন, চীনা কোম্পানিটির এই বিনিয়োগ দেশের বিদ্যুৎ খাতে
মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে। জিনদুনের বিনিয়োগকে দেশে সবচেয়ে
বড় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ
ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের বিদেশি
বিনিয়োগ এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ কোটি ডলার বেশি। তবে এ পরিমাণ
বাংলাদেশের প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে মনে করা হয়। চীনা কোম্পানিটির বিনিয়োগ
প্রস্তাবের আবেদন করা হয়েছে ঝেজিয়াং জিনদুন প্রেশার ভেসেল কোম্পানি
লিমিটেডের নামে। এ প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ চাপের গ্যাস সিলিন্ডার তৈরি করে। এ
কোম্পানিটি আবার ঝেজিয়াং জিনদুন হোল্ডিং গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
গ্রুপটির খনিজ সম্পদ উত্তোলন, ভারী সরঞ্জাম উৎপাদন, পণ্য বাণিজ্যসহ বিভিন্ন
খাতে ব্যবসা আছে। বেজা জানিয়েছে, বাংলাদেশে এ চীনা কোম্পানিটির বিনিয়োগ
প্রস্তাবের বাস্তব রূপ দিতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। অবশেষে সম্প্রতি তা
চূড়ান্ত হয় এবং চীনা কোম্পানিটি জমি ইজারার মূল্য বাবদ শুরুতে ৬ লাখ ৯৮
হাজার ডলার বেজাকে দেয়। জানা গেছে, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ঝেজিয়াং
জিনদুনকে অনুন্নত জমি দিচ্ছে বেজা। তারা এ জমি ইজারা নিচ্ছে ৫০ বছরের
এককালীন ইজারামূল্যে। এতে মোট ইজারামূল্য হয় ৬ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, যা
বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৭২ কোটি টাকা। জিনদুনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ
বিনিয়োগে বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। জানতে চাইলে
বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, জিনদুন তাদের
উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রি করবে। এ জন্য তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ
বিভাগের আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, মিরসরাইয়ে আরও কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের
বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে ৩০
হাজার একরের। এর মধ্যে ১২ হাজার একর জমি বেজার অধীনে রয়েছে। গত বছরের
এপ্রিল মাসে মিরসরাইয়ে জমি বরাদ্দের বিবরণপত্র প্রকাশ করে বেজা। এরপর এখন
পর্যন্ত কারখানা করতে জমি বরাদ্দ অথবা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে ৪৮টি
প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার ৬৫০ একর জমি পাবে। মিরসরাইয়ে ভারতীয়
অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ১ হাজার একর জমি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি
প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সেখানে একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ
অঞ্চল করতে ১ হাজার ১৫০ একর জমি নিয়েছে। উন্নত করে ইজারা দেওয়ার জন্য ৫৫০
একর জমি পেয়েছে বসুন্ধরা-গ্যাসমিন-পাওয়ার প্যাক কনসোর্টিয়াম। এ ছাড়া দেশের
রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য ৫০০ একর জমি দেওয়ার কথা বলেছে বেজা।
No comments