ভেতরে-বাইরে সমস্যায় ইরান
মধ্যপ্রাচ্যের
আন্দোলনের ঢেউ কিছুটা হলেও আঘাত হেনেছে ইরানে। দেশটির নীতিনির্ধারণে এই
আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইরানে কি হচ্ছে
সম্ভবত এই প্রশ্নই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। যে
বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তা কি সত্যিই দেশটির অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে
সাধারণ মানুষের বিদ্রোহের আওয়াজ? অথবা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের ইন্ধনেই কি
এই বিক্ষোভ? ২০০৯ সালের বিক্ষোভের সাথে চলমান এই বিক্ষোভের কি কোনো
পার্থক্য আছে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এই বিক্ষোভ কি কোন বিপ্লবে রূপ
নিতে যাচ্ছে? এসব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর পাওয়া সত্যিই কঠিন, তবে সবশেষ যা
ঘটছে তার ওপর চোখ রাখলেই একটা উপসংহার টানা যায়। মূলত অর্থনৈতিক সঙ্কটকে
কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মাশাদ ও কোমের মতো গোড়া রক্ষণশীল শহরে।
ইরান এই মুহূর্তে চরম বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে। ২০০৯ সালের
বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে।
সংস্কারপন্থী রাজনীতিক মীর হোসেন মুসাভি এবং মেহেদী কাররোভি অভিযোগ আনেন
যে, মাহমুদ আহমেদিনেজাদ কারসাজি করে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। তারপরই ইরানের
উত্তরাঞ্চলের বিত্তবান ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু
করে। এবার খোদ তেহরান পর্দার আড়াল থেকে একেবারে সামনের সারিতে এবং বিক্ষোভে
অংশ নেয়ারদের বেশির ভাগই রক্ষণশীল তরুণ।
একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, ইরানের
বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও সংস্কারপন্থী। দেশের নির্বাচিত
প্রেসিডেন্ট ও রক্ষণশীলদের মধ্যে মতপার্থক্য বেশ স্পষ্ট। রুহানি বোঝানোর
চেষ্টা করছেন, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পরিবর্তনের
জন্যই এই বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভকারীদের আরো ভদ্রভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার
পরামর্শ দেন। অন্য দিকে খামেনি বলছেন, বিক্ষোভ সরাসরি বিদেশী শক্তির ইন্ধনে
ও হস্তক্ষেপের সঙ্কেত দিচ্ছে। এই হস্তক্ষেপ রুহানির বিরুদ্ধেও হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় করা পারমাণবিক চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসন ভেঙে
দেয়ার হতাশা থেকেই এই বিক্ষোভ বলে মনে হয় আমার কাছে। দীর্ঘ দিন অবরোধের
মধ্যে থাকা ইরানিরা আশা করেছিলেন, পারমাণবিক চুক্তি করার মধ্য দিয়ে তারা
বোধহয় মুক্তির দেখা পেলেন। কিন্তু আশা ভঙের হতাশাই এখন ফেটে পড়েছে বিক্ষোভ
হয়ে। অন্য দিকে কয়েক বছর ধরে চলছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশটিতে কি
হচ্ছে তা ইরানিরা ভালোই টের পাচ্ছেন। তাই আরব বসন্তের ঢেউ তাদের এখানেও
আঘাত করে কি না সে ব্যাপারে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। অবশ্য আমি বলছি না, এই
ঘটনায় কোনো বিদেশী হস্তক্ষেপ নেই। দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চর সক্রিয়
আছে এবং তারা এই বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত ও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্পের
অন্যতম চাওয়া ইরানি সরকারের পতন। তারওপর যুক্তরাষ্ট্র এ বছর সৌদি আরবের
কাছে ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র বিক্রি করেছে। সে চায় ইরান প্রথমে ভেতর থেকে
দুর্বল হোক এবং পরে শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ুক। যাই হোক, আমরা এটাও বলছি না যে
বিক্ষোভ পুরোপুরি পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের ফল। ইরানে অবশ্যই বিক্ষোভ প্রতিবাদের
মতো বিষয় ঘটছে এবং এই অপমানবোধ থেকেই ইরানিরা বিক্ষোভ করছে। একটি বিষয়
খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ রাশিয়া প্রভাব বিস্তার করায় গত কয়েক
বছরে ইরান বেশ শক্তিশালী অবস্থানে গেছে। সিরিয়ায় রাশিয়া-ইরান ব্লকের
বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি ব্লক কাজ করছে এবং এটি পরিস্কার যে,
শিয়া-সুন্নী মতবিরোধের সূত্র ধরে তারা মধ্যপ্রাচ্যের একটি নতুন বিন্যাস
চায়।
ডেইলি সাবাহ থেকে ভাষান্তর করেছেন মো: সাজেদুল ইসলাম
লেখক : নাগেহান আলসি, তুর্কি সাংবাদিক
ডেইলি সাবাহ থেকে ভাষান্তর করেছেন মো: সাজেদুল ইসলাম
লেখক : নাগেহান আলসি, তুর্কি সাংবাদিক
No comments