তুরস্ক-ইউরোপ টান টান উত্তেজনা, কঠোর প্রতিশোধের হুমকি
তুরস্ক
ও ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এর ফলে জার্মানি,
নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক কূটনৈতিক
সঙ্কট। তা দিনকে দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে
দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে। সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে
না। নেদারল্যান্ডসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের
সমর্থনে বের করা বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে।
রটারডাম শহরে তুরস্কের কনসুলেটে প্রবেশের চেষ্টা করায় তুরস্কের একজন
মন্ত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর জবাবে আঙ্কারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। একই
সঙ্গে কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি
ইলদিরিম কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ডাচ রাষ্ট্রদূত ও সিনিয়র
কূটনীতিকদের বাসা সিল করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে এমনটা করা হয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কালুসোগলুকে বহনকারী বিমান
নেদারল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি না দেয়ায় এ উত্তেজনার সূচনা। এ খবর দিয়েছে
অনলাইন বিবিসি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ
এরদোগানের ক্ষমতা আরও বাড়ানো নিয়ে যে গণভোট আয়োজন করা হয়েছে তাতে ‘হ্যাঁ’
ভোটের পক্ষে তুরস্ক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেয়।
এমনই একটি র্যালিতে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডসে গিয়েছিলেন তুরস্কের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তাকে অবতরণ করতে দেয়া হয় নি। এর ফলে কঠোর
প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। এর আগে জার্মানিও একই রকম পদক্ষেপ
গ্রহণ করে। এর ফলে তুরস্ক কূটনৈতিক নিয়ম ভেঙে প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এর কড়া সমালোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট
রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসকে নাৎসী বলে আখ্যায়িত
করেছেন। এর জবাবে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তি বলেছেন, এমন মন্তব্য
অগ্রহণযোগ্য। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আশা করেন তুরস্কের
চেতনা ফিরবে। ডেনমার্কের নেতারা বলেছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ
তাইয়্যিপ এরদোগানের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন। তিনি
বলেছেন, কূটনৈতিক মূলনীতি প্রচ- চাপে রয়েছে তুরস্কে। এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক
স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন তিনিই। বলেছেন, হল্যান্ডের বিরুদ্ধে তুরস্ক
বর্তমানে যেভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলছে বৈঠক বাতিল তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়।
উল্লেখ্য, তুরস্কের গণভোট বিষয়ে র্যালি নিরাপত্তার অজুহাতে নিজ নিজ দেশে
বন্ধ করেছেন জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডস। তবে এমন র্যালি হয়েছে
ফ্রান্সে। নেদারল্যান্ডের রটারডামে সপ্তাহান্তে তুরস্কের দু’জন মন্ত্রীর
দুটি সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের একজনকে এসকর্ট করে নিয়ে
যাওয়া হয় জার্মান সিমান্তে। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান অবতরণ
করতে দেয়া হয় নি। এ ঘটনায় নেদারল্যান্ডসকে ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ হিসেবে
আখ্যায়িত করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এ জন্য তিনি নেদারল্যান্ডসের
বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অবরোধ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি
পশ্চিমা দেশগুলোকে ইসলাম বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এক র্যালিতে
বলেন, এর আগে আমি বলেছিলাম আমি মনে করি নাৎসীবাদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি
ভুল ভেবেছিলাম। এখনও পশ্চিমে জীবিত আছে নাৎসীবাদ। তার এ বক্তব্যের কারণে
রোববার ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুত্তি। নিজের দেশ
সম্পর্কে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসীরা এ দেশের ওপর বোমা
হামলা করেছিল। তুরস্ক যেভাবে কথা বলছে তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। তুরস্ক যদি
তার বর্তমান অবস্থান অব্যাহত রাখে তাহলে নেদারল্যান্ডস তার পদক্ষেপ
সম্পর্কে বিবেচনা করবে। ওদিকে জার্মানির মন্ত্রীরাও তুরস্কের বিরুদ্ধে কড়া
জবাব দিয়েছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেছেন, জার্মানিতে
আয়োজিত র্যালিতে তুরস্কের মন্ত্রীদের যোগদানের বিরোধী নয় তার সকার। কিন্তু
তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস ডি মেইজিয়েরে বলেছেন, জার্মানিতে তুরস্কের
রাজনৈতিক সমাবেশের বিরোধী তিনি। তিনি বলেন, তুরস্কের রাজনৈতিক প্রচারণার
কোন ক্ষেত্র নেই জার্মানিতে। জার্মানির অর্থমন্ত্রী উলফগ্যাং শোয়েবল
বলেছেন, সহযোগিতার আরো অগ্রগতির ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছে তুরস্কে। খবর
পাওয়া যায়, সুইডেনের রাজধানী স্কটহোমেও এরদোগানপন্থিরা রোববার র্যালি
আয়োজন করেছিল। কিন্তু তা বাতিল করা হয়। সেখানে যোগ দেয়ার কথা ছিল তুরস্কের
কৃষি মন্ত্রীর। সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তুরস্কের অভ্যন্তরীন
বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জড়িত নয় সুইডেন। উল্লেখ্য, তুরস্কের
বৃহৎ বিরোধী দল সিএইচপি’র নেতা কামাল কিলিকদারোগলু অভিযোগ করেছেন,
প্রেসিডেন্টে ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে আয়োজিত এ গণভোট অবশ্যই সুষ্ঠু হতে যাচ্ছে
না। আমরা জানতে পেরেছি এরদোগানপন্থি মিডিয়া সম্প্রচার নীতি অবলম্বন করছে।
তাতে বিরোধী দলকে একেবারেই বাইরে রাখা হয়েছে।
No comments