যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে চীন ভীত নয়
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপের কাছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ টহল দেয়ার পর বেইজিং-ওয়াশিংটনের বাগযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। বুধবার চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে চীন ভীত নয়। তবে বেইজিং যুদ্ধের চেয়ে কূটনৈতিক ও আইনি সমাধানে বিশ্বাসী। মঙ্গলবার ইউএসএস লাসেন নামে যুক্তরাষ্ট্রের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ারটি চীনের কৃত্রিম দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। কোনো দেশের প্রাকৃতিক দ্বীপের চারপাশে এটাই স্বাভাবিক সমুদ্রসীমা। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন রণতরীটি তাদের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে। বিষয়টি ‘সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি’ এবং বেইজিং যে কোনো উস্কানিমূলক তৎপরতার জবাব দেবে। গ্লোবাল টাইমস রয়টার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুমোদন নিয়েই যুদ্ধজাহাজ দ্বীপের কাছে ঘেঁষেছে। পত্রিকাটি অভিযোগ করেছে, অথচ এখানে ঢোকার আগে চীনকে অবহিত করা হয়নি। পত্রিকাটির মতে, ওয়াশিংটন উস্কানি দিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলতে চাচ্ছে বেইজিংকে। চীনা জনগণকে ধৈর্য-প্রজ্ঞা ও সিদ্ধান্তের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের কার্যক্রমের একটি আইনি ব্যাখ্যাও দিয়েছে গ্লোবাল টাইমস। পত্রিকাটি বলছে, জাতিসংঘের সমুদ্র আইনের তিনটি ধারা আছে। প্রথমত, যেসব দ্বীপ প্রাকৃতিকভাবে গঠিত ও বসবাসযোগ্য এবং যা জোয়ারের পানিতেও ডুবে যায় না,
সে দ্বীপের উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা ও ২০০ নটিক্যাল মাইল এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন (ইইজেড)। দ্বিতীয়ত প্রবাল প্রাচীর, যেখানে জোয়ারে পানি ওঠে, কিন্তু ভাটার সময় পানি থাকে না ও বসবাসের অযোগ্য। এমন জায়গার রাজনৈতিক সীমা থাকবে কিন্তু ইইজেড থাকবে না। আর তৃতীয়ত, পানিতে নিমজ্জিত ভূমি, যা ভাটার সময়ও জেগে ওঠে না, তার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কোনো সীমানাই নেই। পত্রিকাটি জানায়, চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জ আইনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধারার মধ্যে পড়ে। কিন্তু চীন তো এখানে কোনো রাজনৈতিক সীমা নির্দেশ করেনি। বেইজিংয়ের স্থাপনা নির্মাণেই ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন হয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা করছে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চীন পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তাই কূটনীতি ও আইনি প্রক্রিয়ায় সবকিছুর সমাধান চায়। পত্রিকাটি অভিযোগ করে, যুক্তরাষ্ট্র যা করছে, তা উস্কানি ও হয়রানি। একইসঙ্গে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, সর্বোচ্চ খারাপ পরিস্থিতির জন্য চীনকে প্রস্তুত নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোয় আমাদের ইচ্ছা নেই, কিন্তু সেজন্য ভীতও নই। বেইজিং তার জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় চীনকে কৌশলী ভূমিকা নিতে হবে। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ শনাক্ত করা, নজরে রাখা, ইলেক্ট্রিক উপায়ে থামিয়ে দেয়া, রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, পাল্টা যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ ও মার্কিন নৌযানের ওপর যুদ্ধবিমান চক্কর দেয়া যেতে পারে। এদিকে, চীনের দ্বীপের কাছে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর মতো মহড়া আরও চলবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের হুমকিতে ভ্রুক্ষপ না করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার বলেছেন, ‘নৌ চলাচলে স্বাধীনতার’ অভিযান আরও চালাবেন তারা। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যেসব স্থান উন্মুক্ত, সেখানে বিমান ও জাহাজসহ সব ধরনের অভিযানই চালাবে যুক্তরাষ্ট্র।
No comments