স্বপ্নকন্যার গল্প শুনি
জীবন এখনও গুছানো, পরিপাটি। এলোমেলো জীবন কিংবা পথচলা তার একেবারেই পছন্দ নয়। যে কারণে শুটিং স্পটে যে নির্ধারিত সময়ের কথা মেহ্জাবিন বলেন তার মিনিট দশেক আগেই পৌঁছে যান তিনি। তাকে নিয়ে কোনো নির্মাতা ফেঁসেছেন এমন কথা বিগত ছয় বছরে একবারও শোনা যায়নি। বরং এমন শোনা গেছে যে শুটিং হওয়ার কথা, কিন্তু প্রযোজক ও পরিচালকের মাঝে ঝামেলার কারণে শুটিং বাতিল হয়েছে।
তাতে মেহ্জাবিনেরই সিডিউল নষ্ট হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৫- এই ছয় বছরে মেহ্জাবিন নিজেকে নিয়ে গেছেন দর্শকপ্রিয়তার এক অন্যরকম উচ্চতায়। অভিনয়ে মেহ্জাবিন নিজেকে এখন পরিপূর্ণ করে তুলেছেন। অথচ অভিনয় জীবনের শুরুতে তাকে কত কষ্টই না করতে হয়েছে। কারণ তিনি বেড়ে উঠেছেন দেশের বাইরে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন বিধায় বাংলা বলায় অভ্যাস ছিল না তার। তাই ২০০৯ সালে যখন ‘লাক্স চ্যানেল আই’ সুপারস্টার হলেন তখন থেকে মিডিয়াতে কাজ করতে গিয়ে বেশ অসুবিধায় পড়তে হতো তাকে। মেহ্জাবিন বলেন, ‘আমার অভিনয় ক্যারিয়ার কিংবা মডেল হিসেবে যখন আমি কাজ শুরু করেছি তখন থেকে যারাই আমার সঙ্গে কাজ করেছেন নির্মাতা বলি বা সহশিল্পীর কথাই বলি তারা প্রত্যেকেই আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। কারণ এমনও দেখা গেছে, বাংলা বলতে আমার অসুবিধা হতো বলে শর্ট এনজি হয় বারবার। কিন্তু শিল্পী এবং পরিচালকের আন্তরিক সহযোগিতায় আমি পরবর্তী সময়ে ঠিক করে নিতাম। তাই আমার আজকের অবস্থানের পেছনে আমার সব নাটক-বিজ্ঞাপনের নির্মাতা এবং সহশিল্পীদের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি।’ ২০০৯ ‘লাক্স-চ্যানেল আই’ প্রতিযোগিতায় মেহ্জাবিনের সঙ্গে যারা পরবর্তী অবস্থানে ছিলেন তাদের মধ্যে মেহ্জাবিনই এখন পর্যন্ত দর্শকপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছেন।
মেহ্জাবিন বলেন,‘লাক্স-চ্যানেল আই আমার জীবনকে সাজাতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। এই প্লাটফরম ছাড়া আমার জীবন হয়তো এত সুন্দর হতো না। তাই লাক্স-চ্যানেল আই পরিবারের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’-নিজের জীবনকে সুন্দর একটি প্লাটফরমে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘লাক্স-চ্যানেল আই’র ভূমিকা প্রসঙ্গে এমনই বললেন মেহ্জাবিন চৌধুরী। মেহ্জাবিন চৌধুরী একজন সুপারস্টার। তাই সাধারণ পাঠকেরও আগ্রহ যে, তার জীবনে প্রেম এসেছে কী না! এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে মেহ্জাবিন বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের জীবনেই প্রেম আসে। যার মাঝে প্রেমের বোধোদয় নেই আমার মনে হয় তিনি অ্যাবনরমাল। আমিও প্রেম করি। প্রেমতো জীবনেরই অংশ। তবে কার সঙ্গে প্রেম করি সেটা না হয় সিক্রেটই থাক।’ তাহলে বিয়ে করছেন কবে? ‘প্রেমটাই না হয় আপাতত করি। বিয়ে নিয়ে পরে ভাবা যাবে। বিয়ে তো আল্লাহর হাতে। সেটা না হয় জীবনের কোনো এক সুন্দর সময়ে আল্লাহর ইশারায় আর পরিবারের সবার সম্মতিতে হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। হয়তো বেশ দেরিতেই বিয়ে করব আমি। জানি না ভাগ্যে কী আছে।’ টিভির পর্দায় যারা নিয়মিত মেহ্জাবিনকে দেখছেন তাদের অধিকাংশেরই আগ্রহ তাকে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে দেখার। কিন্তু মেহ্জাবিন এখনও কোনো বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে কাজ করেননি। তবে কী চলচ্চিত্রে কাজ করার কোনো আগ্রহ নেই তার?
জবাব মেহ্জাবিনের, ‘আমি যে ধরনের চলচ্চিত্রে কাজ করার আগ্রহী সে ধরনের চলচ্চিত্রে কাজ করার প্রস্তাব এখনও পাইনি। তবে আমি আশা করছি, সামনে চলচ্চিত্রের খুব ভালো সময় আসছে। হয়তো সে সময় আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করব। সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়।’ মেহ্জাবিন প্রথম অভিনয় করেন ইফতেখার আহমেদ ফাহমির নির্দেশনায় ‘তুমি থাকো সিন্ধুপাড়ে’ নাটকে। এ নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন মাহফুজ আহমেদ। দীর্ঘ ছয় বছরে মেহ্জাবিন প্রায় একশ’টি একক নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন মাত্র তিনটি ধারাবাহিক নাটকে। প্রথম ধারাবাহিক অম্লান বিশ্বাসের ‘নো প্রবলেম’, দ্বিতীয়টি আতিক রহমানের ‘ইউনিভার্সিটি’ এবং তৃতীয়টি মাছরাঙায় প্রচার চলতি রায়হান খানের ‘সুপারস্টার’। বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন মেহ্জাবিন ‘লাক্স’র মডেল হয়ে। রাতারাতি বেড়ে যায় মেহ্জাবিনের দর্শকপ্রিয়তা। চট্টগ্রামের মেয়ে মেহ্জাবিন দর্শকের স্বপ্নকন্যা, অভিনয়ে অন্তঃপ্রাণ এই অভিনেত্রী নিজেকে অভিনয়ে আরও পরিপূর্ণ করে তুলতে চান অনুকরণীয় কিংবা অনুসরণীয় হয়ে উঠার মতো।
No comments