৮৫ বছর পর অধরা কণার খোঁজঃ ভাইল ফার্মিয়নের সন্ধান পেলেন জাহিদ হাসান by মুনির হাসান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ গবেষণাগারে পদার্থবিজ্ঞানী জাহিদ হাসান l ছবি: সংগৃহীত |
পঁচাশি
বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল বহুল প্রতীক্ষিত অধরা
কণা ফার্মিয়ন, ভাইল ফার্মিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের
পদার্থবিজ্ঞানী জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে একদল গবেষক পরীক্ষাগারে এই কণা
খুঁজে পেয়েছেন।
এই আবিষ্কার এখনকার মুঠোফোন, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গতি বাড়াবে, হবে শক্তিসাশ্রয়ী। গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ ভাইল ফার্মিয়নের পরীক্ষামূলক প্রমাণের বিষয়টি বিস্তারিত ছাপা হয়েছে।
গতকাল সোমবার জাহিদ হাসানের সঙ্গে এই আবিষ্কারের গুরুত্ব নিয়ে কথা হয়। টেলিফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব প্রমাণের মাধ্যমে দ্রুতগতির এবং অধিকতর দক্ষ নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের সূচনা হবে।
কেমন হবে সেই নতুন যুগের ইলেকট্রনিক সামগ্রী—জাহিদ হাসান বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, এই আবিষ্কার কাজে লাগিয়ে তৈরি নতুন প্রযুক্তির মুঠোফোন ব্যবহারের সময় সহজে গরম হবে না। কারণ, এই কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না।’
গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, গাছপালা, ফুল কিংবা মানুষ—সবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার পিণ্ড। দুনিয়ার এসব বস্তুকণাকে বিজ্ঞানীরা দুই দলে ভাগ করেন। এসব কণার একটি ফার্মিয়ন, যার একটি উপদল হলো ভাইল ফার্মিয়ন। ১৯২৯ সালে হারম্যান ভাইল এই কণার অস্তিত্বের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁরই পরীক্ষামূলক প্রমাণ হাজির করলেন জাহিদ হাসান। আরেক জাতের কণা হলো ‘বোসন’, যার নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর আবিষ্কারের ৯১ বছর পর ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে যুক্ত হলেন আরেক বাঙালি জাহিদ হাসান।
জাহিদ হাসান জানালেন, মোট তিন ধরনের ফার্মিয়নের মধ্যে ডিরাক ও মায়োরানা নামের বাকি দুই উপদলের ফার্মিয়ন বেশ আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন, নিউট্রিনোই সম্ভবত ভাইল ফার্মিয়ন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নিউট্রিনোর ভরের ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে আবার ভাইল ফার্মিয়নের খোঁজ শুরু হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ফার্মিয়ন নিয়ে কাজ করছেন কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আন্তন ভার্খব। আন্তর্জাতিক জার্নাল আইইইই স্পেকট্রামকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উচ্ছ্বসিত ভার্খব বলেন, তত্ত্বীয় জগতের জিনিসপত্র বাস্তব জগতে খুঁজে পাওয়ার মতো আনন্দের বিষয় আর কিছুই নেই।
জাহিদ হাসানের গবেষক দল এই কণাকে খুঁজে পেয়েছেন একটি যৌগিক কেলাসের (ক্রিস্টাল) মধ্যে এবং কেলাসেই কেবল এটি পাওয়া যায়। অবশ্য জাহিদ হাসানের ধারণা, নতুন যুগের সেই ইলেকট্রনিকসের জন্য হয়তো আরও ১০ থেকে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে গবেষক দলের অন্য সদ্যসরা হলেন ইলিয়া বেলোপোলস্কি, ড্যানিয়েল সানচেজ, গুয়াং বিয়ান ও হাও শ্যাং।
ইতিমধ্যে নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের অন্যতম উপকরণ হিসেবে গ্রাফিন পরিচিতি পেয়েছে। বেশ কিছুদিন হলো এই গ্রাফিন দিয়ে ট্রানজিস্টর, অপটিক্যাল ফটো সেন্সর, ন্যানো সেন্সর বানানোর কাজ চলছে। কিন্তু গ্রাফিন তৈরির কাজটি বেশ কঠিন। অবশ্য গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য ২০১০ সালে বিজ্ঞানী আন্দ্রে জেইম ও কনস্টানটিন নভোসেলভ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আরশাদ মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাফিন আবিষ্কার করার পর তা দিয়ে যে ধরনের ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল এবং এখনো হচ্ছে, ভাইল সেমি-মেটালের (অর্ধ ধাতু) ব্যবহারও একই ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে গ্রাফিন দ্বিমাত্রিক কাঠামোবিশিষ্ট হওয়ায় তা তৈরি করা কঠিন। এর তুলনায় ভাইল সেমি-মেটাল ত্রিমাত্রিক হওয়ায় তা তৈরি ও পরিবর্তন করা অনেক সহজ। কিন্তু প্রায়োগিক দিকের চেয়ে ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্বের প্রমাণ আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। আইনস্টাইনের প্রতিধ্বনি করলে বলতে হবে, বিধাতা একটি চমৎকার গাণিতিক ধারণা প্রকৃতিতে ব্যবহার করতে পিছপা হননি।’
আইনজীবী রহমত আলী ও গৃহিণী নাদিরা বেগমের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় জাহিদ হাসান। তিনি ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন। বিজ্ঞানের নানান বিষয় পড়তে পড়তে জাহিদের মনে আইনস্টাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা তৈরি হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত তা না হলেও তিনি পড়েন অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কাজ করেছেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ভাইনবার্গের সঙ্গে। তাঁর আগ্রহেই জাহিদ পরীক্ষানির্ভর পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করতে শুরু করেন। পরে, প্রথম সুযোগেই জাহিদ হাসান আইনস্টাইনের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। বর্তমানে তিনি সেখানে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপনা করছেন।
গত বছর টপোলজিক্যাল ইনসুলেটর নামের এক বিশেষ ধরনের অন্তরক পদার্থ আবিষ্কার করে নতুন বস্তু তৈরির জগতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি এই পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণা নিয়ে
এই আবিষ্কার এখনকার মুঠোফোন, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গতি বাড়াবে, হবে শক্তিসাশ্রয়ী। গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ ভাইল ফার্মিয়নের পরীক্ষামূলক প্রমাণের বিষয়টি বিস্তারিত ছাপা হয়েছে।
গতকাল সোমবার জাহিদ হাসানের সঙ্গে এই আবিষ্কারের গুরুত্ব নিয়ে কথা হয়। টেলিফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব প্রমাণের মাধ্যমে দ্রুতগতির এবং অধিকতর দক্ষ নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের সূচনা হবে।
কেমন হবে সেই নতুন যুগের ইলেকট্রনিক সামগ্রী—জাহিদ হাসান বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, এই আবিষ্কার কাজে লাগিয়ে তৈরি নতুন প্রযুক্তির মুঠোফোন ব্যবহারের সময় সহজে গরম হবে না। কারণ, এই কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না।’
গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, গাছপালা, ফুল কিংবা মানুষ—সবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার পিণ্ড। দুনিয়ার এসব বস্তুকণাকে বিজ্ঞানীরা দুই দলে ভাগ করেন। এসব কণার একটি ফার্মিয়ন, যার একটি উপদল হলো ভাইল ফার্মিয়ন। ১৯২৯ সালে হারম্যান ভাইল এই কণার অস্তিত্বের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁরই পরীক্ষামূলক প্রমাণ হাজির করলেন জাহিদ হাসান। আরেক জাতের কণা হলো ‘বোসন’, যার নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর আবিষ্কারের ৯১ বছর পর ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে যুক্ত হলেন আরেক বাঙালি জাহিদ হাসান।
জাহিদ হাসান জানালেন, মোট তিন ধরনের ফার্মিয়নের মধ্যে ডিরাক ও মায়োরানা নামের বাকি দুই উপদলের ফার্মিয়ন বেশ আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন, নিউট্রিনোই সম্ভবত ভাইল ফার্মিয়ন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নিউট্রিনোর ভরের ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে আবার ভাইল ফার্মিয়নের খোঁজ শুরু হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ফার্মিয়ন নিয়ে কাজ করছেন কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আন্তন ভার্খব। আন্তর্জাতিক জার্নাল আইইইই স্পেকট্রামকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উচ্ছ্বসিত ভার্খব বলেন, তত্ত্বীয় জগতের জিনিসপত্র বাস্তব জগতে খুঁজে পাওয়ার মতো আনন্দের বিষয় আর কিছুই নেই।
জাহিদ হাসানের গবেষক দল এই কণাকে খুঁজে পেয়েছেন একটি যৌগিক কেলাসের (ক্রিস্টাল) মধ্যে এবং কেলাসেই কেবল এটি পাওয়া যায়। অবশ্য জাহিদ হাসানের ধারণা, নতুন যুগের সেই ইলেকট্রনিকসের জন্য হয়তো আরও ১০ থেকে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে গবেষক দলের অন্য সদ্যসরা হলেন ইলিয়া বেলোপোলস্কি, ড্যানিয়েল সানচেজ, গুয়াং বিয়ান ও হাও শ্যাং।
ইতিমধ্যে নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের অন্যতম উপকরণ হিসেবে গ্রাফিন পরিচিতি পেয়েছে। বেশ কিছুদিন হলো এই গ্রাফিন দিয়ে ট্রানজিস্টর, অপটিক্যাল ফটো সেন্সর, ন্যানো সেন্সর বানানোর কাজ চলছে। কিন্তু গ্রাফিন তৈরির কাজটি বেশ কঠিন। অবশ্য গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য ২০১০ সালে বিজ্ঞানী আন্দ্রে জেইম ও কনস্টানটিন নভোসেলভ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আরশাদ মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাফিন আবিষ্কার করার পর তা দিয়ে যে ধরনের ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল এবং এখনো হচ্ছে, ভাইল সেমি-মেটালের (অর্ধ ধাতু) ব্যবহারও একই ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে গ্রাফিন দ্বিমাত্রিক কাঠামোবিশিষ্ট হওয়ায় তা তৈরি করা কঠিন। এর তুলনায় ভাইল সেমি-মেটাল ত্রিমাত্রিক হওয়ায় তা তৈরি ও পরিবর্তন করা অনেক সহজ। কিন্তু প্রায়োগিক দিকের চেয়ে ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্বের প্রমাণ আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। আইনস্টাইনের প্রতিধ্বনি করলে বলতে হবে, বিধাতা একটি চমৎকার গাণিতিক ধারণা প্রকৃতিতে ব্যবহার করতে পিছপা হননি।’
আইনজীবী রহমত আলী ও গৃহিণী নাদিরা বেগমের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় জাহিদ হাসান। তিনি ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন। বিজ্ঞানের নানান বিষয় পড়তে পড়তে জাহিদের মনে আইনস্টাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা তৈরি হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত তা না হলেও তিনি পড়েন অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কাজ করেছেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ভাইনবার্গের সঙ্গে। তাঁর আগ্রহেই জাহিদ পরীক্ষানির্ভর পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করতে শুরু করেন। পরে, প্রথম সুযোগেই জাহিদ হাসান আইনস্টাইনের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। বর্তমানে তিনি সেখানে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপনা করছেন।
গত বছর টপোলজিক্যাল ইনসুলেটর নামের এক বিশেষ ধরনের অন্তরক পদার্থ আবিষ্কার করে নতুন বস্তু তৈরির জগতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি এই পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণা নিয়ে
No comments