মালয়েশিয়ায় সংকটে বাংলাদেশি ছাত্ররা by শরিফুল হাসান
‘আন্তর্জাতিক
মানের পড়াশোনা। পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি। নিজের খরচ চালিয়ে বাড়িতে
টাকা পাঠানোর সুযোগ।’—পত্রিকা বা অন্য কোনো মাধ্যমে এমন বিজ্ঞাপন দেখে
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় এসে পড়াশোনা-আয়ের কথা ভেবে থাকলে এখনই সাবধান
হোন। কারণ, এমন বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়া এসে এখন ভয়াবহ সংকটে
আছেন বাংলাদেশি ছাত্ররা। কাজ না পাওয়ায় পড়াশোনাও হচ্ছে না।
গত দুই সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় এমন শতাধিক ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়েছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হোটেল ও সুপারশপে এখন যত বাংলাদেশি কর্মীর দেখা মিলছে, তাঁদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশি ছাত্র। নিজেদের কষ্টের কথা বলার পাশাপাশি দালালদের প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়া না আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনও এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে বলেছে।
মালয়েশিয়ায় পড়ার পাশাপাশি কাজ করতে এসে কত ছাত্র প্রতারিত হয়েছেন, তার সঠিক তথ্য বাংলাদেশ হাইকমিশনে নেই। তবে অনেকের মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ। এঁদের অনেকেই পড়তে এসে অবৈধ শ্রমিক হয়ে গেছেন। কারণ, দালালেরা এখানে আনলেও নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্টে ভিসার স্টিকার লাগায়নি। আবার দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও কলেজের ফি পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক ছাত্র। ফলে অবৈধ হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হতে হচ্ছে। আবার অনেকে মালয়েশিয়ায় আসার খরচ তুলতে গিয়ে পুরোপুরি শ্রমিক হয়ে গেছেন। অনেকে নিজেরাই দালাল হয়ে দেশ থেকে ছাত্র আনার ব্যবসায় নেমেছেন।
কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রীয় বাসস্টেশনের কাছে মালয়েশিয়ার চেইন সুপারশপ মাইডিনের একটি বিশাল শাখা আছে। সেখানে দেখা গেল, বিক্রেতা হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি তরুণ। তাঁরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এসেছেন টিএমসি কলেজে পড়তে।
মাহবুব বলেন, সপ্তাহে দুই দিন কলেজে যান। বাকিটা সময় কাজ করেন। কিন্তু এরপরও বছর শেষে কলেজে সাড়ে ছয় হাজার রিঙ্গিত (প্রায় দেড় লাখ টাকা) দিতে অনেক কষ্ট হয়। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি অনুরোধ জানান, দালালদের কথায় প্রলোভনে পড়ে বাংলাদেশ থেকে আর কেউ যেন পড়তে না আসে।
মাইডিনের ওই সুপারশপের ইনচার্জ রকিবুল ইসলাম। নয় বছর ধরে আছেন এখানে। তিনি বললেন, এই শাখায় ২৬০ থেকে ২৭০ জন বাংলাদেশি ছাত্র খণ্ডকালীন চাকরি করেন। ঘণ্টায় পারিশ্রমিক পাঁচ রিঙ্গিত (এক রিঙ্গিতে বাংলাদেশি ২০ টাকা)। আট ঘণ্টা কাজ করেন। কিন্তু এই আয়ে তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। ফলে লেখাপড়াও হয় না। কাজেই এই ভুল যেন আর কেউ না করে। বাংলাদেশ সরকারেরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সেলানগরের একটি রিসোর্টে কাজ করেন বাংলাদেশি ছাত্র মোহাম্মদ ফাহাদ। বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি বলেন, দালালদের কথায় পটে গিয়ে এসে দেখেন বাস্তবতা ভিন্ন।
বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ছাত্র বললেন, ছাত্র ভর্তি ও প্রতারণার দিক থেকে টিএমসি, লিংকন ও ভিক্টোরিয়া কলেজ সবচেয়ে এগিয়ে। এই তিন প্রতিষ্ঠানে সব মিলে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি ছাত্র আছেন। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ফরেন একাডেমি, কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, মেলভার্ন কলেজ, লাইফ কলেজ, এডাম কলেজসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেও আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। কিছু ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আছেন। নামসর্বস্ব কলেজেও আছেন।
মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা বললেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা বন্ধ হওয়ার পর এভাবে ছাত্র আসা বেড়েছে। গত তিন বছরে এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। জমজমাট ব্যবসার কারণে দুই দেশের দালালেরা এক হয়ে মালয়েশিয়ার অলিতে-গলিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। আর ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন স্থানে আকর্ষণীয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এমন কয়েক শ ছাত্রকে কর্মস্থল থেকে আটক করেছে।
মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বললেন, মালয়েশিয়ায় যাঁরা সত্যিকারভাবে পড়তে আসবেন তাঁরা একটু খোঁজখবর করলেই স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। এখানে কোনো স্তরেই ছাত্রদের বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্র হিসেবে কেউ মালয়েশিয়ায় আসতে চাইলে তাকে এসে শুধু লেখাপড়া নিয়েই থাকতে হবে। এখানে তার আয়ের সুযোগ নেই। শ্রমিক হিসেবে এলে শুধু শ্রমিক। কেউ যেন ছাত্র হিসেবে এসে শ্রমিক না হয়ে যায়। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।’
গত দুই সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় এমন শতাধিক ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়েছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হোটেল ও সুপারশপে এখন যত বাংলাদেশি কর্মীর দেখা মিলছে, তাঁদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশি ছাত্র। নিজেদের কষ্টের কথা বলার পাশাপাশি দালালদের প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়া না আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনও এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে বলেছে।
মালয়েশিয়ায় পড়ার পাশাপাশি কাজ করতে এসে কত ছাত্র প্রতারিত হয়েছেন, তার সঠিক তথ্য বাংলাদেশ হাইকমিশনে নেই। তবে অনেকের মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ। এঁদের অনেকেই পড়তে এসে অবৈধ শ্রমিক হয়ে গেছেন। কারণ, দালালেরা এখানে আনলেও নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্টে ভিসার স্টিকার লাগায়নি। আবার দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও কলেজের ফি পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক ছাত্র। ফলে অবৈধ হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হতে হচ্ছে। আবার অনেকে মালয়েশিয়ায় আসার খরচ তুলতে গিয়ে পুরোপুরি শ্রমিক হয়ে গেছেন। অনেকে নিজেরাই দালাল হয়ে দেশ থেকে ছাত্র আনার ব্যবসায় নেমেছেন।
কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রীয় বাসস্টেশনের কাছে মালয়েশিয়ার চেইন সুপারশপ মাইডিনের একটি বিশাল শাখা আছে। সেখানে দেখা গেল, বিক্রেতা হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি তরুণ। তাঁরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এসেছেন টিএমসি কলেজে পড়তে।
মাহবুব বলেন, সপ্তাহে দুই দিন কলেজে যান। বাকিটা সময় কাজ করেন। কিন্তু এরপরও বছর শেষে কলেজে সাড়ে ছয় হাজার রিঙ্গিত (প্রায় দেড় লাখ টাকা) দিতে অনেক কষ্ট হয়। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি অনুরোধ জানান, দালালদের কথায় প্রলোভনে পড়ে বাংলাদেশ থেকে আর কেউ যেন পড়তে না আসে।
মাইডিনের ওই সুপারশপের ইনচার্জ রকিবুল ইসলাম। নয় বছর ধরে আছেন এখানে। তিনি বললেন, এই শাখায় ২৬০ থেকে ২৭০ জন বাংলাদেশি ছাত্র খণ্ডকালীন চাকরি করেন। ঘণ্টায় পারিশ্রমিক পাঁচ রিঙ্গিত (এক রিঙ্গিতে বাংলাদেশি ২০ টাকা)। আট ঘণ্টা কাজ করেন। কিন্তু এই আয়ে তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। ফলে লেখাপড়াও হয় না। কাজেই এই ভুল যেন আর কেউ না করে। বাংলাদেশ সরকারেরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সেলানগরের একটি রিসোর্টে কাজ করেন বাংলাদেশি ছাত্র মোহাম্মদ ফাহাদ। বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি বলেন, দালালদের কথায় পটে গিয়ে এসে দেখেন বাস্তবতা ভিন্ন।
বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ছাত্র বললেন, ছাত্র ভর্তি ও প্রতারণার দিক থেকে টিএমসি, লিংকন ও ভিক্টোরিয়া কলেজ সবচেয়ে এগিয়ে। এই তিন প্রতিষ্ঠানে সব মিলে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি ছাত্র আছেন। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ফরেন একাডেমি, কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, মেলভার্ন কলেজ, লাইফ কলেজ, এডাম কলেজসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেও আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। কিছু ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আছেন। নামসর্বস্ব কলেজেও আছেন।
মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা বললেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা বন্ধ হওয়ার পর এভাবে ছাত্র আসা বেড়েছে। গত তিন বছরে এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। জমজমাট ব্যবসার কারণে দুই দেশের দালালেরা এক হয়ে মালয়েশিয়ার অলিতে-গলিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। আর ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন স্থানে আকর্ষণীয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এমন কয়েক শ ছাত্রকে কর্মস্থল থেকে আটক করেছে।
মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বললেন, মালয়েশিয়ায় যাঁরা সত্যিকারভাবে পড়তে আসবেন তাঁরা একটু খোঁজখবর করলেই স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। এখানে কোনো স্তরেই ছাত্রদের বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্র হিসেবে কেউ মালয়েশিয়ায় আসতে চাইলে তাকে এসে শুধু লেখাপড়া নিয়েই থাকতে হবে। এখানে তার আয়ের সুযোগ নেই। শ্রমিক হিসেবে এলে শুধু শ্রমিক। কেউ যেন ছাত্র হিসেবে এসে শ্রমিক না হয়ে যায়। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।’
No comments