পথে পথে ঝরে গেল অর্ধশত প্রাণ
সাবির
পরিবহনের বাসটি চট্টগ্রাম থেকে ছুটছিল রংপুরের উদ্দেশে। একনাগাড়ে এই
যাত্রায় ক্লান্ত চালক গাড়ি চালাচ্ছিলেন বেপরোয়াভাবে। এ জন্য চালককে বারবার
সতর্ক করছিলেন যাত্রীরা। তবে তা পাত্তা দেননি চালক। একপর্যায়ে অপর একটি
বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গত রোববার ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতুর সংযোগ
মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মূলিবাড়ি এলাকায় ওই দুর্ঘটনায় বাসের চালকসহ
১৭ জন নিহত হন। সিরাজগঞ্জের এই দুর্ঘটনাসহ ঈদের আগের দিন শুক্রবার থেকে
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় আরও কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশত
লোক নিহত হয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জে সাবির পরিবহনের ওই বাসটি আকস্মিকভাবে সড়কের ডানে চলে আসার কারণেই মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় গঠিত কমিটির প্রাথমিক তদন্তেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালনা এবং পরিশ্রান্ত ওই চালকের তন্দ্রাচ্ছন্নতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
অপরদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সিরাজগঞ্জ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটির কোনোটিরই রুট পারমিট ছিল না। এ ছাড়া সাবির পরিবহনের ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ ২০১৪ সালের এপ্রিলে শেষ হয়েছে। ফিটনেসও ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
দুর্ঘটনাকবলিত সাবির পরিবহনের বাসের চালকের আসন থেকে দুই আসন পেছনে ছিলেন যাত্রী মো. আছিব উদ্দীন। আহত হয়ে তিনি সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আছিব জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভালোভাবেই বাসটি চালিয়ে আসেন চালক। ঢাকা ছাড়ার পর গাড়ির চাপ কম থাকায় সড়ক উন্মুক্ত পেয়ে তিনি এলোমেলোভাবে বাসটি চালাতে থাকেন। এ সময় যাত্রীরা চালককে সতর্ক করেন। কিন্তু চালক তাতে কান দেননি। দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে পরিশ্রান্ত ওই চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পান আছিব। এরপর তাঁর আর কিছু মনে নেই। চেতনা ফেরার পর দেখেন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রয়েছেন।
ঈদের দিন সন্ধ্যা সাতটায় সাবির পরিবহনের ওই বাসটি চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ঈদের পরের দিন রোববার ভোর পাঁচটার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় সংযোগ মহাসড়কে ওই বাসটির সঙ্গে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী আজাদ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে আহত হন দুই বাসের অর্ধশত যাত্রী। তবে সাবির পরিবহনের বাসের চালকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি অচেতন রয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিচয় পাওয়া ১৫ জন হলেন: আজাদ এন্টারপ্রাইজের বাসের চালক গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের শাজা প্রধানের ছেলে মেনহাজ প্রধান (২৮); একই উপজেলার মোহাদিপুর গ্রামের বাবু মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া (৪২), দুবলাগাড়ি গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে মিলন মিয়া (২২) ও আমিনুল ইসলাম (২৫); গাইবান্ধা সদরের আফসার মাস্টারের ছেলে সবুজ হোসেন (২০); বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামুর গ্রামের হাবিব তালুকদারের ছেলে জিল্লুর রহমান (৪৬); নন্দীগ্রাম উপজেলার কালাম হোসেন (৩৫); দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মনমতপুর কৈপতপাড়ার কার্তিকের ছেলে চান বাবু (২২); চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্ণতী গ্রামের আসিনাত রায়ের ছেলে বিপ্লব (২৩); রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পোড়াচাকলা কাশিমপুরের মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী মৌসুমী খাতুন (২০); বদরগঞ্জ উপজেলার নয়াপাড়া এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম (১৯); পীরগঞ্জ উপজেলার কিশমতকাউলা এলাকার হোসেন আলীর ছেলে আবদুল কারী (৪৫); একই উপজেলার সোনারায় গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মফিজুল ইসলাম (২৬) ও তাম্বুল গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে মাহবুব হোসেন (৫৪); বদরগঞ্জ উপজেলার তাহেরা বেগম (৩০)।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, সাবির পরিবহনের বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। বাসটি আকস্মিকভাবে সড়কের ডান দিকে চলে আসে। আর তখনই ওই বাসটির সঙ্গে ঢাকাগামী আজাদ এন্টারপ্রাইজের বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। দুটি বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সেতু কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় বাস দুটিকে কেটে পৃথক করার পর লাশগুলো ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান উভয় বাসের চালকসহ ১২ জন। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজন, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার পাশাকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। রোববার থেকেই কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত দলের সদস্য বিআরটিএর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস ছাড়াই গাড়ি দুটি চলছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কাগজপত্রগুলো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অনলাইনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস দুটির প্রকৃত মালিকের বিষয়ে সবকিছু জানা যাবে।
তদন্ত দলের সদস্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্রেনজন চাম্বুগং বলেন, সাবির পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছিল। বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। চালক ক্লান্ত ও তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। ঢাকা থেকে গাড়ি ছাড়ার পরই তিনি এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এসব কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন জানান, লাশ পরিবহনের জন্য প্রত্যেক লাশের জন্য ১০ হাজার টাকা ও আহত ব্যক্তিদের ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিরা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান, সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা: এ ছাড়া ঈদের আগের দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে বানিয়াগাতী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে ছয়জন নিহত হন। একই দিন দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় বাস উল্টে দুই পোশাকশ্রমিক নিহত হন। একই রাতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের মাদারহাট এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলেই বাসের চালক ও তাঁর সহকারী মারা যান। একই রাতে মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরীগঞ্জ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস খাদে পড়ে গেলে একজন নিহত হন।
পটুয়াখালীতে ঈদের দিন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। একই দিন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লায় বাবা-ছেলেসহ তিনজন মারা যান। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান দুজন। কুষ্টিয়ায় নিহত হয় এক কিশোর। ঈদের পরের দিন বিকেলে রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের উত্তম মুচির মোড় এলাকায় অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হয় এক শিশু।
এ ছাড়া গতকাল মাদারীপুরের শিবচরে বাস খাদে পড়ে একজন, নওগাঁয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক কিশোর, ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের চাপায় প্রাইভেট কারের তিন আরোহী, বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকের চাপায় এক নারী, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। মুন্সিগঞ্জে গত তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জে সাবির পরিবহনের ওই বাসটি আকস্মিকভাবে সড়কের ডানে চলে আসার কারণেই মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় গঠিত কমিটির প্রাথমিক তদন্তেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালনা এবং পরিশ্রান্ত ওই চালকের তন্দ্রাচ্ছন্নতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
অপরদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সিরাজগঞ্জ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটির কোনোটিরই রুট পারমিট ছিল না। এ ছাড়া সাবির পরিবহনের ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ ২০১৪ সালের এপ্রিলে শেষ হয়েছে। ফিটনেসও ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
দুর্ঘটনাকবলিত সাবির পরিবহনের বাসের চালকের আসন থেকে দুই আসন পেছনে ছিলেন যাত্রী মো. আছিব উদ্দীন। আহত হয়ে তিনি সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আছিব জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভালোভাবেই বাসটি চালিয়ে আসেন চালক। ঢাকা ছাড়ার পর গাড়ির চাপ কম থাকায় সড়ক উন্মুক্ত পেয়ে তিনি এলোমেলোভাবে বাসটি চালাতে থাকেন। এ সময় যাত্রীরা চালককে সতর্ক করেন। কিন্তু চালক তাতে কান দেননি। দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে পরিশ্রান্ত ওই চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পান আছিব। এরপর তাঁর আর কিছু মনে নেই। চেতনা ফেরার পর দেখেন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রয়েছেন।
ঈদের দিন সন্ধ্যা সাতটায় সাবির পরিবহনের ওই বাসটি চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ঈদের পরের দিন রোববার ভোর পাঁচটার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় সংযোগ মহাসড়কে ওই বাসটির সঙ্গে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী আজাদ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে আহত হন দুই বাসের অর্ধশত যাত্রী। তবে সাবির পরিবহনের বাসের চালকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি অচেতন রয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিচয় পাওয়া ১৫ জন হলেন: আজাদ এন্টারপ্রাইজের বাসের চালক গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের শাজা প্রধানের ছেলে মেনহাজ প্রধান (২৮); একই উপজেলার মোহাদিপুর গ্রামের বাবু মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া (৪২), দুবলাগাড়ি গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে মিলন মিয়া (২২) ও আমিনুল ইসলাম (২৫); গাইবান্ধা সদরের আফসার মাস্টারের ছেলে সবুজ হোসেন (২০); বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামুর গ্রামের হাবিব তালুকদারের ছেলে জিল্লুর রহমান (৪৬); নন্দীগ্রাম উপজেলার কালাম হোসেন (৩৫); দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মনমতপুর কৈপতপাড়ার কার্তিকের ছেলে চান বাবু (২২); চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্ণতী গ্রামের আসিনাত রায়ের ছেলে বিপ্লব (২৩); রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পোড়াচাকলা কাশিমপুরের মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী মৌসুমী খাতুন (২০); বদরগঞ্জ উপজেলার নয়াপাড়া এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম (১৯); পীরগঞ্জ উপজেলার কিশমতকাউলা এলাকার হোসেন আলীর ছেলে আবদুল কারী (৪৫); একই উপজেলার সোনারায় গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মফিজুল ইসলাম (২৬) ও তাম্বুল গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে মাহবুব হোসেন (৫৪); বদরগঞ্জ উপজেলার তাহেরা বেগম (৩০)।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, সাবির পরিবহনের বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। বাসটি আকস্মিকভাবে সড়কের ডান দিকে চলে আসে। আর তখনই ওই বাসটির সঙ্গে ঢাকাগামী আজাদ এন্টারপ্রাইজের বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। দুটি বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সেতু কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় বাস দুটিকে কেটে পৃথক করার পর লাশগুলো ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান উভয় বাসের চালকসহ ১২ জন। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজন, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার পাশাকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। রোববার থেকেই কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত দলের সদস্য বিআরটিএর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস ছাড়াই গাড়ি দুটি চলছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কাগজপত্রগুলো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অনলাইনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস দুটির প্রকৃত মালিকের বিষয়ে সবকিছু জানা যাবে।
তদন্ত দলের সদস্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্রেনজন চাম্বুগং বলেন, সাবির পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছিল। বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। চালক ক্লান্ত ও তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। ঢাকা থেকে গাড়ি ছাড়ার পরই তিনি এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এসব কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন জানান, লাশ পরিবহনের জন্য প্রত্যেক লাশের জন্য ১০ হাজার টাকা ও আহত ব্যক্তিদের ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিরা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান, সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা: এ ছাড়া ঈদের আগের দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে বানিয়াগাতী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে ছয়জন নিহত হন। একই দিন দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় বাস উল্টে দুই পোশাকশ্রমিক নিহত হন। একই রাতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের মাদারহাট এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলেই বাসের চালক ও তাঁর সহকারী মারা যান। একই রাতে মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরীগঞ্জ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস খাদে পড়ে গেলে একজন নিহত হন।
পটুয়াখালীতে ঈদের দিন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। একই দিন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লায় বাবা-ছেলেসহ তিনজন মারা যান। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান দুজন। কুষ্টিয়ায় নিহত হয় এক কিশোর। ঈদের পরের দিন বিকেলে রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের উত্তম মুচির মোড় এলাকায় অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হয় এক শিশু।
এ ছাড়া গতকাল মাদারীপুরের শিবচরে বাস খাদে পড়ে একজন, নওগাঁয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক কিশোর, ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের চাপায় প্রাইভেট কারের তিন আরোহী, বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকের চাপায় এক নারী, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। মুন্সিগঞ্জে গত তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
No comments