রাজ্য বিজেপি নেতাদের ডুবিয়ে গেলেন অমিত শাহ by সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত |
রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে একেবারে
ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেলেন সভাপতি অমিত শাহ। হাওড়ার শরৎ সদনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে
তিনি ২০১৬-য় তৃণমূল কংগ্রেসকে কার্যত ওয়াকওভার দিয়ে ২০১৯-এর দিকে পাখির
চোখ স্থির করতে বলেন। এই বক্তব্য শরৎ সদনের চার দেয়ালের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরে
বের হওয়া মাত্র হুলস্থূল কাণ্ড শুরু হয়ে যায়। হতাশ রাজ্য বিজেপি নেতারা
বলতে শুরু করেন, এ কি সর্বনাশ করে দিলেন অমিতজি। কার্যত রাজ্য বিজেপির
লড়াইকে তিনি যে ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। সাত্তোরের নির্যাতিতা নিয়ে গত
কয়েকদিন ধরে রুপা গঙ্গোপাধ্যায়ের টানাপড়েন, পাড়–ইয়ে মাটি কামড়ে সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ভুক্ত বিজেপি কর্মীদের লড়াই, রাজ্যের সর্বত্র যে কোনো ঘটনায়
বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া সমস্ত লড়াই কার্যত চিলেকুঠুরিতে তুলে রাখার
ব্যবস্থা করা হলো। গতকাল সাত্তোর নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রুপা গঙ্গোপাধ্যায় অমিত
শাহের সভায় যেতে পারেননি। যদিও রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে তিনি
ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার ডাক পেয়েছিলেন। রাতে তার কাছে এই খবর পৌঁছা মাত্র
ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সকাল থেকে সেভাবে কারো সঙ্গে কথা বলেননি। অন্যদিকে জেলার
শীর্ষ স্থানীয় বিজেপি নেতারা চেষ্টা করেছেন কিভাবে অমিত শাহর বক্তব্যর ওপর
জ্বালা-যন্ত্রণা উপশমের প্রলেপ লাগানো যায়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা কতটা
কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ইতোমধ্যে জেলার নিচু তলার কর্মীরা বলতে
শুরু করেছেন, তাহলে আর এতদিন বিজেপি করে লাভ কি হলো? এ তো দেখছি মোদি-মমতা
তলায় তলায় খেলার ফলাফল ঠিক করে নিয়েছেন। ওপরে যা হচ্ছে সবই গট-আপ গেম।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছেন সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও। গ্রামগঞ্জে
চিট ফান্ড সাফায়ার্স ফোরামে বিজেপির কিছু লোকজন শামিল হয়েছিলেন। যেখানে
ফোরামের পক্ষ থেকে আন্দোলন হয়েছে বিজেপির লোকজন হাজির হয়েছেন। কিন্তু গত
বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে সিবিআই তদন্তে গা এলিয়ে দিয়েছে। নতুন তথ্য
থাকা সত্ত্বেও নতুন করে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে
নিচুতলার কর্মীরা শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রশ্ন করলে তাদের মুখ থেকে কোনো উত্তর
পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এই ইস্যু নিয়েও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি রাজ্যে
গভীর অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তার ওপর অমিত শাহর এই বক্তব্য কাটা ঘায়ে নুনের
ছিটে ছড়িয়ে দিয়েছে।
রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে এই নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এই খবর পেয়ে রাত থেকেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফোন করে বিজেপি নেতারা অমিত শাহর ‘প্রকৃত বক্তব্য’ বোঝানোর চেষ্টা করেন। রাহুল সিনহা, রীতেশ আগরওয়াল থেকে শুরু করে একমাত্র বিধায়ক শর্মীক ভট্টাচার্য কে ছিলেন না সেই তালিকায়। তাদের বক্তব্য, অমিত শাহ এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্বাঞ্চলের পাঁচ রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির সদস্য পদ বাড়ানো সংক্রান্ত সাংগঠনিক বৈঠক করতে। এই বৈঠকের নাম দেয়া হয়েছিল ‘সম্পর্ক অভিযান’। সেখানে প্রথম পর্বে তিনি বলেন, ২০১৯-এর নির্বাচনে পূর্বাঞ্চল থেকে ভালো ফল করতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যেহেতু আলাদা করে তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ টানেননি তাই ২০১৬-এর নামগন্ধ তার বক্তৃতায় ছিল না। তার মানে এই নয় যে, তিনি রাজ্য লড়াই ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বরং সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ‘আমরা কি জিনিস মমতা টের পাবে নির্বাচনের আগে। আপনাদের বলছি সাংগঠনিক পরিকাঠামো তৈরি করুন। ২০১৬-এর বিধানসভায় তৃণমূলকে আমরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব।’ অমিত শাহ দাওয়াই দেন, ‘মহাসম্পর্ক অভিযান, বুথভিত্তিক সভা ভালো করে করুন। বাকিটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দিন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, সভাপতি কার্যত অল আউট খেলার বার্তাই দিয়েছেন।
একটা পক্ষ এই যুক্তি মেনে নিলেও অন্য পক্ষ মানছে না। তাদের বক্তব্য পাঁচটি রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক হলেও হল ভরিয়েছিলেন মূলত পশ্চিমবঙ্গের লোকজনই। ফলে মূল বার্তাটি গিয়েছে এই যে ২০১৬ কে তিনি কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। এই নেতাদের একাংশ দিল্লি উড়ে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে চান, অবিলম্বে অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিবৃতি না দিলে দল টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হবে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই জেলা থেকে বিজেপি দফতরে ফোন আসা শুরু হয়। শুধু তাই নয়, কয়েকটি জায়গায় জেলা বিজেপি দফতরের সামনে ক্ষুব্ধ তৃণমূল পর্যায়ের বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। ইতোমধ্যে রাহুল সিনহা বিরোধী নেতৃত্ব বলতে শুরু করেছে, সংগঠনের কি হাল তা বেশ ভালোমতোই জানেন সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। সে কারণেই ২০১৬তে বিজেপির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। আজ সকালে গোটা ব্যাপারটা নিয়ে বিজেপি কর্মীদের সামনে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন, সদ্য নির্বাচিত রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয় বর্গী। বিজেপির সর্ব সময়ের কর্মীদের সামনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্য থেকে তাড়ানোই হবে প্রধান লক্ষ্য। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও বিশেষ কথা বলেননি। চুপ করে বসেছিলেন। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা সভাপতিরা কৈলাশ বিজয় বর্গীর কাছে গতকাল বিজেপি সভাপতির বক্তব্য বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। বীরভুমের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ পাল দাবি করেন, অমিত শাহ ঠিক কি বলতে চেয়েছেন তা বিস্তারিত জানিয়ে বিবৃতি দিতে হবে। তা না হলে জেলায় সাধারণ বিজেপি কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে করতে প্রাণান্ত হচ্ছে।
লেখক: কলকাতার সাংবাদিক
রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে এই নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এই খবর পেয়ে রাত থেকেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফোন করে বিজেপি নেতারা অমিত শাহর ‘প্রকৃত বক্তব্য’ বোঝানোর চেষ্টা করেন। রাহুল সিনহা, রীতেশ আগরওয়াল থেকে শুরু করে একমাত্র বিধায়ক শর্মীক ভট্টাচার্য কে ছিলেন না সেই তালিকায়। তাদের বক্তব্য, অমিত শাহ এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্বাঞ্চলের পাঁচ রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির সদস্য পদ বাড়ানো সংক্রান্ত সাংগঠনিক বৈঠক করতে। এই বৈঠকের নাম দেয়া হয়েছিল ‘সম্পর্ক অভিযান’। সেখানে প্রথম পর্বে তিনি বলেন, ২০১৯-এর নির্বাচনে পূর্বাঞ্চল থেকে ভালো ফল করতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যেহেতু আলাদা করে তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ টানেননি তাই ২০১৬-এর নামগন্ধ তার বক্তৃতায় ছিল না। তার মানে এই নয় যে, তিনি রাজ্য লড়াই ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বরং সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ‘আমরা কি জিনিস মমতা টের পাবে নির্বাচনের আগে। আপনাদের বলছি সাংগঠনিক পরিকাঠামো তৈরি করুন। ২০১৬-এর বিধানসভায় তৃণমূলকে আমরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব।’ অমিত শাহ দাওয়াই দেন, ‘মহাসম্পর্ক অভিযান, বুথভিত্তিক সভা ভালো করে করুন। বাকিটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দিন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, সভাপতি কার্যত অল আউট খেলার বার্তাই দিয়েছেন।
একটা পক্ষ এই যুক্তি মেনে নিলেও অন্য পক্ষ মানছে না। তাদের বক্তব্য পাঁচটি রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক হলেও হল ভরিয়েছিলেন মূলত পশ্চিমবঙ্গের লোকজনই। ফলে মূল বার্তাটি গিয়েছে এই যে ২০১৬ কে তিনি কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। এই নেতাদের একাংশ দিল্লি উড়ে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে চান, অবিলম্বে অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিবৃতি না দিলে দল টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হবে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই জেলা থেকে বিজেপি দফতরে ফোন আসা শুরু হয়। শুধু তাই নয়, কয়েকটি জায়গায় জেলা বিজেপি দফতরের সামনে ক্ষুব্ধ তৃণমূল পর্যায়ের বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। ইতোমধ্যে রাহুল সিনহা বিরোধী নেতৃত্ব বলতে শুরু করেছে, সংগঠনের কি হাল তা বেশ ভালোমতোই জানেন সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। সে কারণেই ২০১৬তে বিজেপির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। আজ সকালে গোটা ব্যাপারটা নিয়ে বিজেপি কর্মীদের সামনে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন, সদ্য নির্বাচিত রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয় বর্গী। বিজেপির সর্ব সময়ের কর্মীদের সামনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্য থেকে তাড়ানোই হবে প্রধান লক্ষ্য। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও বিশেষ কথা বলেননি। চুপ করে বসেছিলেন। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা সভাপতিরা কৈলাশ বিজয় বর্গীর কাছে গতকাল বিজেপি সভাপতির বক্তব্য বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। বীরভুমের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ পাল দাবি করেন, অমিত শাহ ঠিক কি বলতে চেয়েছেন তা বিস্তারিত জানিয়ে বিবৃতি দিতে হবে। তা না হলে জেলায় সাধারণ বিজেপি কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে করতে প্রাণান্ত হচ্ছে।
লেখক: কলকাতার সাংবাদিক
No comments