ফুটেজ দেখে খুনি শনাক্তের চেষ্টা by নুরুজ্জামান লাবু
লেখক
ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বাংলা
একাডেমির গ্রন্থমেলায় স্থাপিত সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ
করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, অভিজিৎ রায়কে যারা হত্যা করেছে তারা
গ্রন্থমেলা থেকেই তার পিছু নিয়েছিল। গ্রন্থমেলার ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে
অভিজিতের খুনিদের দেখা যেতে পারে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জঙ্গি
গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে প্রাধান্য দিয়েই তদন্ত চলছে। এদিকে গতকাল
দুপুরে নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবার সঙ্গে তাদের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় দেখা
করেছেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। তারা অভিজিতের
পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনে তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস
দিয়েছেন। এছাড়া এফবিআই কর্মকর্তারাও সহযোগিতার জন্য অভিজিতের বাবা অজয়
রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ওদিকে আলোচিত এই মামলাটি গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে
থানা পুলিশের কাছ থেকে মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশের ফুটপাতে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে পেছন থেকে আক্রমণ করে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাত অভিজিতের মাথার খুলি কেটে মস্তকে গিয়ে আঘাত লাগে। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে দুর্বৃত্তরা রাফিদাকেও আক্রমণ করে। এতে রাফিদার হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও শরীরে জখম হয়। দুজনকেই উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিজিতের মৃত্যু ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় রাফিদাকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহত অভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আমেরিকায় চলে যান। সেখানে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভিজিৎ হত্যার ঘটনাটি তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত খুনিদের কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেননি। মামলাটি থানা পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ডিবির কর্মকর্তারা একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে স্থাপিত মোট ৭০টি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এসব সিসিটিভি ফুটেজ নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন, অভিজিৎকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে অভিজিৎ যখন মেলায় প্রবেশ করেছেন তখন থেকেই খুনিরা তার ওপর নজরদারি শুরু করে। মেলায় তারা যেখানে যেখানে ঘুরেছেন খুনিরা তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে থাকতে পারে। পরে মেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর সুবিধামতো তারা হামলা চালায়। গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তারা যে বর্ণনা পেয়েছেন তাতে খুনিদের একজনের গায়ে সাদা শার্ট ও অপর একজনের গায়ে কালো কোট জাতীয় কিছু ছিল। তাদের বয়সও ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হবে। ফুটেজে অভিজিৎকে শনাক্ত করে তার পিছু নেয়া লোকজনের মধ্যে খুনিদের কেউ ছিল কি না তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ডিবির অপর এক কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের খুনের দায় স্বীকার করেছে আনসারুল্লাহ বাংলা-৭ নামে একটি সংগঠন।
ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজীবকে হত্যার আগে কয়েক দফা রেকি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা একেক জন একেক দায়িত্ব পালন করেছে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও খুনিরা একাধিক দিন রেকি করে থাকতে পারে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) হাসান আরাফাত জানান, একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। খুনিদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে ঘিরেই তদন্ত: মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে ঘিরেই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা ও আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনাসহ বিভিন্ন ব্লগারকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে। রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের কাছ থেকে সেসময় আটজনের একটি হিট লিস্ট উদ্ধার করা হয়। ওই হিটলিস্টের চার নম্বর তালিকায় ছিল অভিজিতের নাম। সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলার সদস্যরা কখনই হত্যাকাণ্ডের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। তারা ইসলামের দুশমন হিসেবে অভিহিত করে ‘কতল’-এর উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তবে তার অপারেশনাল উইংয়ের প্রধান ইজাজ আহমেদ বর্তমানে পাকিস্তানে পলাতক রয়েছেন। পাকিস্তানে থেকেই ইজাজ তার অন্যতম ক্যাডার রানার মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রানার নাম উঠে আসলেও এখন পর্যন্ত তাকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অসংখ্য ‘স্লিপার সেল’ রয়েছে। এসব সেলে ৫-৭ জন সদস্য রয়েছে। একটি সেলের সদস্যরা অপর সেলের সদস্যদের সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে পারে না। ফলে কোন স্লিপার সেলের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলে অন্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বলার মতো কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। পুলিশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তদন্তের স্বার্থে এগুলো বলা ঠিক হবে না।
তদন্তে সহযোগিতা করতে চায় এফবিআই: নিহত অভিজিতের বাবা অজয় রায় জানান, শুক্রবার তার কাছে এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছিল। তারা এই ঘটনা ‘টেকওভার’ করতে সহযোগিতা করবে বলে জানায়। তিনি এসময় এফবিআই কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে যে কোন উপায়ে খুনিদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানান। এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ফ্রাঙ্ক, গিবসন ও ইতি’র সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিহত অভিজিতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন। তারাও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) তদন্তে সহযোগিতা করবে। এদিকে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এফবিআইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, এফবিআইয়ের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন।
রাফিদার অবস্থা উন্নতির পথে: এদিকে অভিজিতের সঙ্গে আক্রমণের শিকার হওয়া স্ত্রী রাফিদার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল তাকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিজিতের মৃত্যুর খবর তাকে দেয়া হয়নি বলে পরিবারের এক সদস্য জানান। স্কয়ার হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাফিদার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স, নিউরোলজি ও মেডিসিন ওয়ার্ডের একজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয় করে চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন। তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আঙুলের অংশে কৃত্রিম আঙুল লাগানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
স্টল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ: এদিকে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিনে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অপর দিকে অভিজিতের বই প্রকাশকারী সংস্থা শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় তিনি এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ফেসবুকের একটি লিংক থেকে টুটুলকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে জিডিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আমেরিকা প্রবাসী লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনী সংস্থা শুদ্ধস্বর। চলতি গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘শূন্য মহাবিশ্ব’।
অভিজিৎকে হত্যার ঘটনায় ছাত্রদলের নিন্দা: এদিকে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। গতকাল এক বিবৃতিতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ প্রতিবাদ জানান। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জনাকীর্ণ স্থানে, পুলিশের সামনেই এভাবে খুন করে পালিয়ে যাওয়ায় জনগণ আজ ভীত-সন্ত্রস্ত। তারা অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে আহ্বান জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেন।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাবিতে আজ ধর্মঘট
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা এবং তার স্ত্রী রাফিদা বন্যাকে গুরুতর জখমকারীদের বিচার, ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। একই সময় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ সমাবেশ করারও ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা এ ঘোষণা দেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক। আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, ছাত্রফ্রন্টের দপ্তরবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স প্রমুখ। ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে তাকে আইসিটি আইনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথচ অভিজিৎ হত্যার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। এটা কি তাদের ব্যর্থতা নয়? তিনি বলেন, এ হত্যার মাধ্যমে মুক্তচিন্তার চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে। দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। শিক্ষার্থী নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। এ সময় জোটের পক্ষে তিনি ৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১লা মার্চ কালো ব্যাজ ধারণ, ৩রা মার্চ বিকালে শাহবাগে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা সংহতি সমাবেশ, ৪ঠা মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন সংস্কৃতিকর্মীদের: পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা ও তার স্ত্রী বন্যাকে জখম করা এবং পুলিশের নির্লিপ্ততায় তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-তে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তারা এ প্রশ্ন তুলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট প্রতিবাদ সভাটির আয়োজন করে। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান, জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর প্রমুখ।
ঢাবি ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের অপরাধ ছিল তারা স্বাধীন বাংলাদেশ, ভাষা আন্দোলন ও প্রগতির পক্ষে। যারা এসবের বিপক্ষে তারাই এ হামলা চালিয়েছে।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন যেমন দেশ চেয়েছিলাম, তেমন বাংলাদেশ পাইনি। জনগণ দাঁড়িয়ে আছে, পুলিশের অবস্থান আছে অথচ সেদিন হত্যাকাণ্ডের সময় কেউ এগিয়ে যায়নি। এর প্রধান কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ নই। দেশের সব জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্যই আমরা তাদের নির্বাচিত করেছি। অথচ তারা সেখানে ব্যর্থ হয়েছে।
হাসান আরিফ বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদের হত্যা করা হয়েছে। এটি কখনই মেনে নেয়া যায় না। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। তা দিতে ব্যর্থ হলে এর দায় সরকারের ওপরই বর্তায়। এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করেন গোলাম কুদ্দুস। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ৬ই মার্চ সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণ-অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি।
আজ শ্রদ্ধা জানানো হবে: সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অভিজিৎ রায়ের লাশ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাবে। এরপর অভিজিতের ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশের ফুটপাতে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে পেছন থেকে আক্রমণ করে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাত অভিজিতের মাথার খুলি কেটে মস্তকে গিয়ে আঘাত লাগে। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে দুর্বৃত্তরা রাফিদাকেও আক্রমণ করে। এতে রাফিদার হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও শরীরে জখম হয়। দুজনকেই উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিজিতের মৃত্যু ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় রাফিদাকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহত অভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আমেরিকায় চলে যান। সেখানে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভিজিৎ হত্যার ঘটনাটি তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত খুনিদের কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেননি। মামলাটি থানা পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ডিবির কর্মকর্তারা একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে স্থাপিত মোট ৭০টি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এসব সিসিটিভি ফুটেজ নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন, অভিজিৎকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে অভিজিৎ যখন মেলায় প্রবেশ করেছেন তখন থেকেই খুনিরা তার ওপর নজরদারি শুরু করে। মেলায় তারা যেখানে যেখানে ঘুরেছেন খুনিরা তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে থাকতে পারে। পরে মেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর সুবিধামতো তারা হামলা চালায়। গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তারা যে বর্ণনা পেয়েছেন তাতে খুনিদের একজনের গায়ে সাদা শার্ট ও অপর একজনের গায়ে কালো কোট জাতীয় কিছু ছিল। তাদের বয়সও ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হবে। ফুটেজে অভিজিৎকে শনাক্ত করে তার পিছু নেয়া লোকজনের মধ্যে খুনিদের কেউ ছিল কি না তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ডিবির অপর এক কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের খুনের দায় স্বীকার করেছে আনসারুল্লাহ বাংলা-৭ নামে একটি সংগঠন।
ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজীবকে হত্যার আগে কয়েক দফা রেকি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা একেক জন একেক দায়িত্ব পালন করেছে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও খুনিরা একাধিক দিন রেকি করে থাকতে পারে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) হাসান আরাফাত জানান, একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। খুনিদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে ঘিরেই তদন্ত: মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে ঘিরেই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা ও আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনাসহ বিভিন্ন ব্লগারকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে। রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের কাছ থেকে সেসময় আটজনের একটি হিট লিস্ট উদ্ধার করা হয়। ওই হিটলিস্টের চার নম্বর তালিকায় ছিল অভিজিতের নাম। সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলার সদস্যরা কখনই হত্যাকাণ্ডের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। তারা ইসলামের দুশমন হিসেবে অভিহিত করে ‘কতল’-এর উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তবে তার অপারেশনাল উইংয়ের প্রধান ইজাজ আহমেদ বর্তমানে পাকিস্তানে পলাতক রয়েছেন। পাকিস্তানে থেকেই ইজাজ তার অন্যতম ক্যাডার রানার মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রানার নাম উঠে আসলেও এখন পর্যন্ত তাকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অসংখ্য ‘স্লিপার সেল’ রয়েছে। এসব সেলে ৫-৭ জন সদস্য রয়েছে। একটি সেলের সদস্যরা অপর সেলের সদস্যদের সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে পারে না। ফলে কোন স্লিপার সেলের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলে অন্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বলার মতো কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। পুলিশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তদন্তের স্বার্থে এগুলো বলা ঠিক হবে না।
তদন্তে সহযোগিতা করতে চায় এফবিআই: নিহত অভিজিতের বাবা অজয় রায় জানান, শুক্রবার তার কাছে এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছিল। তারা এই ঘটনা ‘টেকওভার’ করতে সহযোগিতা করবে বলে জানায়। তিনি এসময় এফবিআই কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে যে কোন উপায়ে খুনিদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানান। এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ফ্রাঙ্ক, গিবসন ও ইতি’র সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিহত অভিজিতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন। তারাও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) তদন্তে সহযোগিতা করবে। এদিকে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এফবিআইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, এফবিআইয়ের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন।
রাফিদার অবস্থা উন্নতির পথে: এদিকে অভিজিতের সঙ্গে আক্রমণের শিকার হওয়া স্ত্রী রাফিদার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল তাকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিজিতের মৃত্যুর খবর তাকে দেয়া হয়নি বলে পরিবারের এক সদস্য জানান। স্কয়ার হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাফিদার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স, নিউরোলজি ও মেডিসিন ওয়ার্ডের একজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয় করে চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন। তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আঙুলের অংশে কৃত্রিম আঙুল লাগানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
স্টল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ: এদিকে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিনে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অপর দিকে অভিজিতের বই প্রকাশকারী সংস্থা শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় তিনি এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ফেসবুকের একটি লিংক থেকে টুটুলকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে জিডিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আমেরিকা প্রবাসী লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনী সংস্থা শুদ্ধস্বর। চলতি গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘শূন্য মহাবিশ্ব’।
অভিজিৎকে হত্যার ঘটনায় ছাত্রদলের নিন্দা: এদিকে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। গতকাল এক বিবৃতিতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ প্রতিবাদ জানান। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জনাকীর্ণ স্থানে, পুলিশের সামনেই এভাবে খুন করে পালিয়ে যাওয়ায় জনগণ আজ ভীত-সন্ত্রস্ত। তারা অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে আহ্বান জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেন।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাবিতে আজ ধর্মঘট
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা এবং তার স্ত্রী রাফিদা বন্যাকে গুরুতর জখমকারীদের বিচার, ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। একই সময় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ সমাবেশ করারও ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা এ ঘোষণা দেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক। আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, ছাত্রফ্রন্টের দপ্তরবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স প্রমুখ। ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে তাকে আইসিটি আইনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথচ অভিজিৎ হত্যার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। এটা কি তাদের ব্যর্থতা নয়? তিনি বলেন, এ হত্যার মাধ্যমে মুক্তচিন্তার চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে। দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। শিক্ষার্থী নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। এ সময় জোটের পক্ষে তিনি ৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১লা মার্চ কালো ব্যাজ ধারণ, ৩রা মার্চ বিকালে শাহবাগে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা সংহতি সমাবেশ, ৪ঠা মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন সংস্কৃতিকর্মীদের: পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা ও তার স্ত্রী বন্যাকে জখম করা এবং পুলিশের নির্লিপ্ততায় তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-তে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তারা এ প্রশ্ন তুলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট প্রতিবাদ সভাটির আয়োজন করে। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান, জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর প্রমুখ।
ঢাবি ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের অপরাধ ছিল তারা স্বাধীন বাংলাদেশ, ভাষা আন্দোলন ও প্রগতির পক্ষে। যারা এসবের বিপক্ষে তারাই এ হামলা চালিয়েছে।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন যেমন দেশ চেয়েছিলাম, তেমন বাংলাদেশ পাইনি। জনগণ দাঁড়িয়ে আছে, পুলিশের অবস্থান আছে অথচ সেদিন হত্যাকাণ্ডের সময় কেউ এগিয়ে যায়নি। এর প্রধান কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ নই। দেশের সব জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্যই আমরা তাদের নির্বাচিত করেছি। অথচ তারা সেখানে ব্যর্থ হয়েছে।
হাসান আরিফ বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদের হত্যা করা হয়েছে। এটি কখনই মেনে নেয়া যায় না। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। তা দিতে ব্যর্থ হলে এর দায় সরকারের ওপরই বর্তায়। এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করেন গোলাম কুদ্দুস। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ৬ই মার্চ সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণ-অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি।
আজ শ্রদ্ধা জানানো হবে: সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অভিজিৎ রায়ের লাশ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাবে। এরপর অভিজিতের ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হস্তান্তর করা হবে।
No comments