এবার নিভল হেলপার জাহাঙ্গীর ও রিকশাচালক লুৎফুরের জীবন প্রদীপ by শিপন হাবীব
পেট্রলবোমায়
দগ্ধ ট্রাক হেলপার জাহাঙ্গীর (৩৪) ও ককটেল বোমায় আহত রিকশাচালক লুৎফুর
রহমান (৪০) মারা গেছেন। জাহাঙ্গীর ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দীর্ঘ ৩৫
দিন ও লুৎফুর রহমান ঢামেক হাসপাতালে ১৭ দিন যন্ত্রণায় কাতরিয়ে শুক্রবার
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ নিয়ে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে ১৩ জন ও
ঢামেক হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জনের মৃত্যু হল।
বর্তমানে বার্ন ইউনিটে পেট্রলবোমায় দগ্ধ ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৬ জন। এদের
মধ্যে চরম শংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৬ জন।
শুক্রবার সকালে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, হেলপার জাহাঙ্গীরের স্ত্রীসহ স্বজনরা আর্তনাদ করছেন। বার্ন ইউনিটের বারান্দায় হা-হুতাশ করছেন তারা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় বার্ন ইউনিট আইসিইউতে মৃত্যু হয় জাহাঙ্গীরের। বৃহস্পতিবার বিকালে এ প্রতিবেদককে আইসিইউর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ৮৫ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ভর্তি জাহাঙ্গীরের অবস্থা খুই খারাপ ছিল। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর স্ত্রী বিউটি আক্তার বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমার স্বামীরে বাঁচিয়ে রাখলা না। আমি ভিক্ষা কইরা স্বামীরে খাওয়াতাম। তার (স্বামী) জানটা থাকলেই চলত।’ পাশেই বিলাপ করছিলেন নিহত জাহাঙ্গীর ছোট বোন শাপলা আক্তার। বোন শাপলা বুক থাপড়িয়ে বলছিলেন, ‘ভাই ভাইরে, তুমি ক্যান আমাদের ফেলে চলে গেলে, এখন আমরা কী করব। আমার স্বামীও যেন বাঁচবে না। তার শরীরও শুকাচ্ছে না।’
২৩ জানুয়ারি বগুড়া সদর উপজেলায় ট্রাকে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন ড্রাইভার মাসুদ মিয়া ও হেলপার জাহাঙ্গীর। মাসুদ মিয়া শাপলার স্বামী। মাসুদ মিয়ার সঙ্গেই ট্রাকে হেলপারের কাজ করে সংসার চলত জাহাঙ্গীরের। পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মাসুদ ও জাহাঙ্গীর ২৪ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আর মাসুদকে ভর্তি করা হয় এইচডিইউ ইউনিটে। মাসুদের শরীর পুড়ে যায় ৫৪ শতাংশ। মাসুদ আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। শাপলা আক্তার জানান, তারা খুবই গরিব, স্বামী বেঁচে থাকলেই তারা বেঁচে থাকবে। দিন এনে দিন খেতেন তারা। ভাইকে (জাহাঙ্গীর) বাঁচানো গেল না। এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন স্বামী। ক্ষোভ উগরে জানালেন, যারা তার ভাইকে খুন করেছে, স্বামীকে পুড়িয়ে দিয়েছে তারা যেন পুড়ে মরে।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বিউটি আক্তার জানান, দীর্ঘ ৩৫ দিন স্বামীর পাশেই ছিলেন তিনি। স্বামীর একটু উপশমের জন্য দিন-রাত চেষ্টা করেছেন। বললেন, পেট্রলবোমায় সারা শরীরের সঙ্গে তার স্বামীর দুটি পাও ভেঙে গিয়েছিল। কোন অপরাধে তার স্বামীকে খুন করা হল এমন প্রশ্ন রেখে বিউটি বললেন, তাদের মতো দরিদ্র মানুষদের কেন খুন করা হচ্ছে। কী দোষ তাদের? বললেন, এখন কে দেখবে তার দু’সন্তান জাহিদ (১১) ও জুই আক্তারকে (৭)। তিনিই বা কী করে বেঁচে থাকবেন।
এদিকে রিকশাচালক লুৎফুর রহমান ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ভৈরব এলাকায় বাসে ককটেল বোমায় গুরুত্বর আহত হন। তার মাথায় মারাত্মক জখম হয়। ওইদিন দিবাগত মধ্যরাতে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢামেক হাসপাতাল আইসিইউতে রাখা হয়। তার মাথার দু’পাশের হাড় ভেঙে যায়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
লুৎফুর রহমানের স্ত্রী মোমেনা বেগম জানান, তার স্বামীর বাড়ি গাইবান্ধা সদর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কুমারবিট গ্রামে। তাদের সংসারে মোশারফ (৯), মানিক (৬) ও সুজন (১) নামের তিনটি ছেলে রয়েছে। সংসার চালাতে লুৎফুর রহমান সিলেটে রিকশা চালাতেন। ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে বাসে করে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। ভৈরব বরাবর আসতেই বাসে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। তাতে গুরুত্বর আহত হন তার স্বামী।
মোমেনা জানান, স্বামী রিকশা চালিয়ে সিলেট থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা তুলে দোকান থেকে চাল, ডাল, নুন আনতেন। তিন সন্তান নিয়ে এখন কী করবেন, কে তাদের দেখবেন- এমন প্রশ্ন বার বার করছিলেন তিনি।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখন দগ্ধ ৪৬ রোগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যাদের মধ্যে ৬ জন চরম শংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ভর্তি কেউই আশংকামুক্ত নয়। যারা ভর্তি তাদের প্রায় সবারই ১৫ শতাংশ থেকে ৮৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। অনেকেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাই যতক্ষণ না রোগী সুস্থ হচ্ছে ততক্ষণ কাউকেই আশংকমুক্ত বলা যাচ্ছে না।
শুক্রবার সকালে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, হেলপার জাহাঙ্গীরের স্ত্রীসহ স্বজনরা আর্তনাদ করছেন। বার্ন ইউনিটের বারান্দায় হা-হুতাশ করছেন তারা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় বার্ন ইউনিট আইসিইউতে মৃত্যু হয় জাহাঙ্গীরের। বৃহস্পতিবার বিকালে এ প্রতিবেদককে আইসিইউর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ৮৫ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ভর্তি জাহাঙ্গীরের অবস্থা খুই খারাপ ছিল। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর স্ত্রী বিউটি আক্তার বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমার স্বামীরে বাঁচিয়ে রাখলা না। আমি ভিক্ষা কইরা স্বামীরে খাওয়াতাম। তার (স্বামী) জানটা থাকলেই চলত।’ পাশেই বিলাপ করছিলেন নিহত জাহাঙ্গীর ছোট বোন শাপলা আক্তার। বোন শাপলা বুক থাপড়িয়ে বলছিলেন, ‘ভাই ভাইরে, তুমি ক্যান আমাদের ফেলে চলে গেলে, এখন আমরা কী করব। আমার স্বামীও যেন বাঁচবে না। তার শরীরও শুকাচ্ছে না।’
২৩ জানুয়ারি বগুড়া সদর উপজেলায় ট্রাকে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন ড্রাইভার মাসুদ মিয়া ও হেলপার জাহাঙ্গীর। মাসুদ মিয়া শাপলার স্বামী। মাসুদ মিয়ার সঙ্গেই ট্রাকে হেলপারের কাজ করে সংসার চলত জাহাঙ্গীরের। পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মাসুদ ও জাহাঙ্গীর ২৪ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আর মাসুদকে ভর্তি করা হয় এইচডিইউ ইউনিটে। মাসুদের শরীর পুড়ে যায় ৫৪ শতাংশ। মাসুদ আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। শাপলা আক্তার জানান, তারা খুবই গরিব, স্বামী বেঁচে থাকলেই তারা বেঁচে থাকবে। দিন এনে দিন খেতেন তারা। ভাইকে (জাহাঙ্গীর) বাঁচানো গেল না। এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন স্বামী। ক্ষোভ উগরে জানালেন, যারা তার ভাইকে খুন করেছে, স্বামীকে পুড়িয়ে দিয়েছে তারা যেন পুড়ে মরে।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বিউটি আক্তার জানান, দীর্ঘ ৩৫ দিন স্বামীর পাশেই ছিলেন তিনি। স্বামীর একটু উপশমের জন্য দিন-রাত চেষ্টা করেছেন। বললেন, পেট্রলবোমায় সারা শরীরের সঙ্গে তার স্বামীর দুটি পাও ভেঙে গিয়েছিল। কোন অপরাধে তার স্বামীকে খুন করা হল এমন প্রশ্ন রেখে বিউটি বললেন, তাদের মতো দরিদ্র মানুষদের কেন খুন করা হচ্ছে। কী দোষ তাদের? বললেন, এখন কে দেখবে তার দু’সন্তান জাহিদ (১১) ও জুই আক্তারকে (৭)। তিনিই বা কী করে বেঁচে থাকবেন।
এদিকে রিকশাচালক লুৎফুর রহমান ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ভৈরব এলাকায় বাসে ককটেল বোমায় গুরুত্বর আহত হন। তার মাথায় মারাত্মক জখম হয়। ওইদিন দিবাগত মধ্যরাতে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢামেক হাসপাতাল আইসিইউতে রাখা হয়। তার মাথার দু’পাশের হাড় ভেঙে যায়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
লুৎফুর রহমানের স্ত্রী মোমেনা বেগম জানান, তার স্বামীর বাড়ি গাইবান্ধা সদর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কুমারবিট গ্রামে। তাদের সংসারে মোশারফ (৯), মানিক (৬) ও সুজন (১) নামের তিনটি ছেলে রয়েছে। সংসার চালাতে লুৎফুর রহমান সিলেটে রিকশা চালাতেন। ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে বাসে করে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। ভৈরব বরাবর আসতেই বাসে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। তাতে গুরুত্বর আহত হন তার স্বামী।
মোমেনা জানান, স্বামী রিকশা চালিয়ে সিলেট থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা তুলে দোকান থেকে চাল, ডাল, নুন আনতেন। তিন সন্তান নিয়ে এখন কী করবেন, কে তাদের দেখবেন- এমন প্রশ্ন বার বার করছিলেন তিনি।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখন দগ্ধ ৪৬ রোগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যাদের মধ্যে ৬ জন চরম শংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ভর্তি কেউই আশংকামুক্ত নয়। যারা ভর্তি তাদের প্রায় সবারই ১৫ শতাংশ থেকে ৮৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। অনেকেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাই যতক্ষণ না রোগী সুস্থ হচ্ছে ততক্ষণ কাউকেই আশংকমুক্ত বলা যাচ্ছে না।
No comments