সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন পিছানো যেতে পারে- ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক by উৎপল রায়
প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক
বলেছেন, বিদায়ী বছরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান দুই নেত্রী একে
অপরের উদ্দেশে বিষোদগার করেছেন।
বিবাদে জড়িয়েছেন। আশা করি,
নতুন বছরে তারা দেশের জন্য মিলেমিশে কাজ করবেন। দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে একে
অপরকে কাছে ডাকবেন। যদিও সে আশা দুরাশা। তারপরও আমরা সে প্রত্যাশা করছি।
পুরানা পল্টনস্থ নিজ বাসভবনে মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তা থেকে উত্তরণ, আগামী নির্বাচন ও এর গ্রহণযোগ্যতা,
রাজনীতিতে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে মতামত
তুলে ধরেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, আশা করি আগামী দিনগুলো ভাল যাবে।
সুখী, সমৃদ্ধ, রাজনৈতিক হানাহানিমুক্ত সোনার বাংলা হবে। প্রত্যাশায় আছি,
বাকিটা সময় বলবে। আগামী ৫ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন,
এটা কি নির্বাচন হচ্ছে না সিলেকশন হচ্ছে? এভাবে কোন দল ছাড়া ৫ তারিখ
নির্বাচন কিভাবে হয়? সবাই বলছে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে। সরকার বারবার
সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। তাতে কি বলা আছে তা বলছে না। সংবিধানের ৬৫(২)
অনুচ্ছেদে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে
প্রার্থী নির্বাচন করার কথা বলা আছে। সিলেকশনের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন
করার কথা বলা নেই। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচন অতীতে এরশাদ করেছেন, খালেদা
জিয়া করেছেন। কিছুদিন পর বাতিলও হয়েছে। পরিণতি ভাল হয়নি। সরকার সেই শিক্ষা
নেয়নি। ‘দশম নির্বাচনের সরকার ৬ মাস থেকে বড় জোর ১ বছর টিকতে পারে’
জানিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, যে নির্বাচন হচ্ছে তাতে দেশের চেয়ে শেখ
হাসিনার ক্ষতি হবে বেশি। ‘সংবিধানের আলোকে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে’
উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমঝোতা করে এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে। ১২৩ (৩)-এর
বি অনুচ্ছেদে এর স্পষ্ট সমাধান দেয়া আছে। সংবিধানের নাম নিয়ে সংবিধানের
বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন মানে হয় না। আওয়ামী লীগ ও সরকার
সংবিধান নাম নিয়ে নির্বাচনের কথা বলছে মুখে আর আমি বলছি সংবিধানের লেখা
নিয়মে। আর এতই যখন ভাল ভাল কাজ করেছেন- তত্ত্বাবধায়ক না হোক নির্দলীয়,
নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে এত ভয় কিসের? আমি
আগেও বলেছি, এখনও বলছি- এই দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। ‘দেশে কোন গণতন্ত্র নেই’ উল্লেখ করে সরকারের
সাবেক প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন- এতদিন বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির কোন
তৎপরতা ছিল না। আন্দোলনের নামে সহিংস কর্মসূচিও সমর্থন করি না। কিন্তু
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে তাদের তৎপরতা ছিল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের
সম্ভাবনা ছিল। আগে আমি বলেছিলাম বিএনপি বাস ফেল করেছে, অভিযাত্রা কর্মসূচি
দেখে বলেছি তারা ট্রেনে উঠেছে। সরকার সেটাও করতে দেয়নি। এটা তো ভাল
কর্মসূচি ছিল। দেশের রাজনীতিতে বিদেশী কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপকে ‘চরম লজ্জা’
দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এ আইনজীবী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে এখনও
বিদেশীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে হয়। এটি
শোভনীয় নয়। আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের নিজস্ব রাজনৈতিক নিয়মেই সমাধান
করতে হবে।
No comments