একতরফা নির্বাচন এড়ানো যেত
সংবিধানের মূল চেতনা হলো গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতি, যেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্বের কথা বলা হচ্ছে, আজকের নির্বাচনে সেটি হচ্ছে না। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের কথা হলো, জনগণই প্রজাতন্ত্রের মালিক। এই নির্বাচনে তাদের মালিকানা স্বীকার করা হচ্ছে না। জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল, সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা অনায়াসেই সেই নির্বাচন পেতে পারতাম। দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান সত্ত্বেও আমি মনে করি, একটি সমঝোতায় পৌঁছানো অসম্ভব হতো না। সমঝোতা মানে এক পক্ষের কাছে অপর পক্ষের হার নয়। আলোচনার টেবিলে কিন্তু অনেকগুলো প্রস্তাব ছিল। সেগুলো নিয়ে বসলে একতরফা নির্বাচন এড়ানো যেত। আন্দোলন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। কিন্তু সরকার বিরোধী দলের সেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধী দলের নেতার অবস্থান কী? সরকার বলছে, তিনি গৃহবন্দী নন। কিন্তু তাঁর বাড়ির সামনে যে পুলিশবেষ্টনী দিয়ে রাখা হয়েছে, তাঁকে ঘর থেকেও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামী নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অনেক কথা বলেন।
তাঁরা এদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেন। আমরা দেখে এসেছি, জামায়াতকে সব দলই তাদের রাজনৈতিক দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যবহার করে এসেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে মতামত শুনতে হয়। কিন্তু আমাদের বোঝানো হয়, একটি দল ও গোষ্ঠীই দেশকে ভালোবাসে। দেশে যখন একটি আতঙ্কগ্রস্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তখন কীভাবে নির্বাচন হবে? অনেকে স্বেচ্ছায় ভোট দিতে যাবেন না, অনেকে ভয়ে যাবেন না। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী আস্থাহীনতায় আছে। তারা বুঝতে পারছে না, কার কাছে নিরাপত্তা চাইবে? তবে আমি মনে করি, এ সংকট সাময়িক। আমাদের দেশের মানুষ অনেক বেশি সৃজনশীল ও সচেতন। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার দৃঢ়বিশ্বাস আছে। এই সাধারণ মানুষই সমাধানের একটি পথ বের করে আনবে। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূলে যে একনায়কত্ববাদী ব্যবস্থা, তারও অবসান হবে। কিন্তু সেটি বাইরের কেউ করবে না, দলের ভেতর থেকেই নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।
সালমা খান: নারীনেত্রী।
সালমা খান: নারীনেত্রী।
No comments