কী ভাবছে নাগরিক সমাজ : সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক- হরতাল-অবরোধ বন্ধ করতে হবে by সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী
বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে আজ যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো, এই নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে।
গত কয়েক মাসে অবরোধ ও হরতালের কারণে অর্থনীতি স্থবির ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যদিও কিছুদিন আগেও আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলো অত্যন্ত ভালো ছিল।
নির্বাচনের পর সরকার যদি শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সুশাসন দিতে পারে, তাহলে জনমনে শঙ্কা কিছুটা কমবে। একজন মন্ত্রী সে রকমটি আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু সরকার যদি সেটি করতে ব্যর্থ হয়, অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। তিন মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ আছে। এর নেতিবাচক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
দেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু এই রাজনৈতিক হানাহানি চায় না। তারা শান্তি ও স্বস্তিতে থাকতে চায়। নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে তুলতে চায়। কারা ক্ষমতায় এল, কারা না এল—এসব নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না।
তবে এও সত্য যে, সারা দেশে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে, তার সবটাই নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের একটি রায় কার্যকর হয়েছে, যারা এর বিরুদ্ধে, বাকিগুলো যাতে কার্যকর না হয়, সেই চেষ্টাই তারা করছে।
তবে নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধের বিচার—সবকিছুই জনগণকে নিয়ে করতে হবে। সেখানে ঘাটতি আছে বলে মনে হয়। যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচনে জনগণের কি কোনো আগ্রহ আছে? আমি গুলশানের বাসিন্দা। আমি জানিই না, এই এলাকায় কে প্রার্থী।
নির্বাচনের পর সরকারের দায়িত্ব হবে শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করা। সে ক্ষেত্রে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব।
সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে সাধারণ মানুষ রাজনীতির প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছে। যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁদের দল ও গোষ্ঠীর আগে দেশের কথা ভাবতে হবে।
সুস্থ রাজনীতি থাকলে বাংলাদেশে আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ হতো। অসুস্থ রাজনীতির কারণে অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবকিছু পিছিয়ে পড়েছে। কয়েক দিন আগে জাপানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু এই সংঘাত-সংঘর্ষ, হরতাল-অবরোধ চললে কেউ বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন না।
তাই আইন করে নাশকতা, হরতাল-অবরোধ বন্ধ করতে হবে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
No comments