দেশ বিপাকে পড়েছে
কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের তিনটি শর্ত। তা হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। বর্তমান নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে প্রশ্ন আছে। অতএব আমরা হতাশ। দ্বিতীয় হলো, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ১৫৩ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটারদের অধিকাংশই বঞ্চিত। এতে করে তাঁদের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে। এঁদের সংখ্যা কম নয়। এবার কয়েক লাখ নতুন ভোটার তাঁদের জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারলেন না। তৃতীয় হলো, একতরফা নির্বাচন যতবার হয়েছে, ততবারই ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে নির্বাচন এ দেশে হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। গত নির্বাচনেও ভোটারদের উপস্থিতিতে, বিশেষ করে নারী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এবারের পরিবেশের প্রধান চরিত্র হলো আতঙ্ক। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রাখায় শান্তি আসবে না। তারাও দেশবাসীকে শান্তি দেবে না। তাদেরও প্রশ্ন আছে, দাবি আছে। যখন প্রধান দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের অনাস্থা, সংঘাত ও সহিংসতা চলে, পারস্পরিক বিদ্বেষ প্রধান হয়ে ওঠে,
তখন প্রতিক্রিয়াশীল চক্র রাজনীতির স্থান দখল করে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের আতিপাতি সব সন্ত্রাসীই এখন মাঠে। এটাই সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার। এই রাজনীতি আমাদের কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে আতঙ্কিত আছি। দুঃখজনক যে ‘না’ ভোটের বিধানটাই উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মানুষ আছে বাংলাদেশে, যাঁরা এই সুযোগ থাকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের অনাস্থা প্রকাশ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়া আমার পছন্দ না, এই প্রার্থী আমার পছন্দ না, এখন সেটা জানানোরও সুযোগ নেই। জনগণ দুই রাজনৈতিক দলের বিবাদের মধ্যে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদদের মনে রাখা দরকার, জনগণ সুযোগ পেলেই কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ীকেও এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনতে পারে। আমরা নিশ্চিতভাবেই বিপাকে ও বিপর্যয়ে পড়েছি। প্রধান দুই জোটের দ্বারাই এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান কোনো জোট যারা দেশে তিনবার নির্বাচিত হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনায় জনগণের মধ্যে দ্বিধা ও অনীহা চলে আসে। রাজনীতিবিদেরা কেন সমঝোতায় আসবেন না, তা বুঝতে পারছি না। যদি দলের চেয়ে দেশ বড় হয়, তাহলে সমঝোতা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তার জন্য ছাড় দুই পক্ষকেই দিতে হবে। সময় চলে গেছে, কিন্তু অপশক্তির হাতে দেশ চলে যাওয়ার আগেই তাদের উচিত সাড়া দেওয়া।
রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
No comments