নির্বাচনের বিকল্প ছিল না
সবার অংশগ্রহণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুশি হতাম। তবে আজকে যে নির্বাচনটি হচ্ছে, সেটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বলেই মনে করি। এর কোনো বিকল্প ছিল না। তবে নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তার পেছনে অন্য কারণও আছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর থেকে সারা দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা ও নির্যাতন চলছে। এই হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা অচেনা নয়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির নীলনকশা ছিল সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা। এখনো তারা তৎপর। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে ৯ থেকে ১১ লাখ সংখ্যালঘু দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। গত নয় মাসে সাতক্ষীরা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু পরিবার দেশ ত্যাগ করেছে। ফলে সংখ্যালঘুরা শঙ্কা ও আতঙ্কে আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের আবেদন, সংখ্যালঘু জনগণের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষা করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
যারা সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করতে চায়, তারা কখনো গণতান্ত্রিক শক্তি হতে পারে না। পাকিস্তান আমলে শাসকেরা বাঙালিদের সংখ্যালঘু করার ব্যাপারে তৎপর ছিল। ’৭১-এ তারা বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। স্বাধীনতার পর পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হলেও ’৭৫-এর পর ফের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন চলতে থাকে। এই স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের উদ্দেশ্য, সংখ্যালঘুদের হার কমিয়ে আনা এবং বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক দেশ, বহু ধর্মের দেশ, সেই পরিচয় মুছে ফেলা। আমি মনে করি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যতই প্রশ্ন থাকুক, এটি পেছানোর কোনো সুযোগ ছিল না। সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতেই হতো। অনেকেই সংসদ ভেঙে দিয়ে তিন মাস পর নির্বাচনের কথা বলছেন। কিন্তু আমি মনে করি, সেটি সংবিধানসম্মত হতো না। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন পেছালেও বিরোধী দল সেই নির্বাচনে আসত, তার নিশ্চয়তা কী। বর্তমান নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিনটি আবেদন জানাতে চাই।
১. শিক্ষা, অর্থনীতিকে হরতালের আওতামুক্ত রাখতে হবে। কোনো কর্মসূচি পালনে কাউকে বাধ্য করা যাবে না এবং কর্মসূচির নামে সহিংসতা চালানো যাবে না। ২. জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়তে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালিত হতে হবে। ৩. ধর্মীয় ও জাতিগত জনগোষ্ঠীর স্বার্থ অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
রানা দাশগুপ্ত: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ
১. শিক্ষা, অর্থনীতিকে হরতালের আওতামুক্ত রাখতে হবে। কোনো কর্মসূচি পালনে কাউকে বাধ্য করা যাবে না এবং কর্মসূচির নামে সহিংসতা চালানো যাবে না। ২. জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়তে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালিত হতে হবে। ৩. ধর্মীয় ও জাতিগত জনগোষ্ঠীর স্বার্থ অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
রানা দাশগুপ্ত: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ
No comments