দিনটি থাকুক শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন
আজ ৫ জানুয়ারি রোববার। দশম জাতীয় সংসদ
নির্বাচন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বাদ দিলে নব্বইয়ের
দশকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন মানেই ভোটের উৎসব।
শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্র সব বয়সের নারী-পুুরুষের পছন্দের প্রার্থী ও দল
বেছে নেওয়ার ইচ্ছা পূরণের দিন। কিন্তু এবারের নির্বাচনকে কেউই সেভাবে দেখছে
না। আনন্দ-উচ্ছ্বাস একেবারেই অনুপস্থিত। নৈতিকভাবেও এ নির্বাচন
গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই দশম সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই
শুরু হয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা।
সরকারপক্ষের কাছে এ নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার। কেউ কেউ বলেন, কেবলই মুখ রক্ষার। কেউবা বলেন, রাজনৈতিক জেদের নির্বাচন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী জোট ১৮ দলের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিনটিকে অভিহিত করেছেন 'জঘন্য কলঙ্কময়' হিসেবে। তিনি ভোট বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, এ প্রহসনকে দেশ-বিদেশে কেউ নির্বাচন হিসেবে বৈধতা দেবে না। নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য ১ জানুয়ারি থেকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যেই ৪ ও ৫ জানুয়ারি ডাকা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল-অবরোধ মানেই সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তৎপর ১৮ দলের গুরুত্বপূর্ণ শরিক জামায়াতে ইসলামী। তাদের সামনে নির্বাচন ছাড়াও রয়েছে বিশেষ এজেন্ডা_ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের বিচারকাজ ভণ্ডুল করা। তাদের সহিংস কর্মকাণ্ডে সর্বমহল থেকে নিন্দা ও ধিক্কার আসছে। কিন্তু এই অপরাজনীতি থেকে তাদের সরে আসার লক্ষণ নেই। হরতাল শুরুর আগেই কয়েকটি জেলায় ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও হিংসাত্মক ঘটনার শঙ্কা প্রবল। নির্বাচন কমিশন পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মোতায়েন থাকবে। তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে কোথাও কোথাও এ বাহিনীকে আরও কয়েকদিন নির্বাচনকালীন দায়িত্বে বহল রাখা হতে পারে, এমন ধারণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিবউদ্দীন আহমদ।
নির্বাচনে প্রধান সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করানোর জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের উদ্যোগ-দৌড়ঝাঁপ লক্ষণীয় মাত্রাতেই ছিল। এতে সফলতা না আসায় শেষ মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত রাখার প্রস্তাবও আলোচনায় আসে। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন সরকার উভয়পক্ষই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়সংকল্প। বিরোধীপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টায় সহিংস কৌশল অনুসরণ করেও সফলতা দেখাতে পারেনি। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলায় সচেষ্ট ছিল। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের কাছে এ দাবির ন্যায্যতাও স্বীকৃত। প্রধান দুটি দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগে প্রবল আপত্তি আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে সেটা ঘটেছেও। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় যে, বিরোধীপক্ষ সরকারকে তার অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ১৮ দলীয় জোট আন্দোলনের নামে বিশেষভাবে জোর দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ওপর, যা জনগণকে আন্দোলনের প্রতিই বিরূপ করেছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকে সরকার আটক করেছে। অনেকে পলাতক। খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি। কিন্তু জনগণ এমনকি তাদের মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কর্মসূচিতেও সাড়া দেয়নি।
অতএব, আজ ভোট হচ্ছেই। কিন্তু ইতিমধ্যে ৩০০ আসনের ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা একক প্রার্থী হওয়ার কারণে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ায় ভোটের আয়োজন করতে হচ্ছে মাত্র ১৪৭টিতে। এসব আসনের বেশিরভাগেও নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটা জানা থাকায় ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-আগ্রহ কার্যত অনুপস্থিত। রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা করেছেন এবং তাতে জনসমাগমও ভালো ছিল। কিন্তু তার দল ও জোটের নেতারা ফাঁকা মাঠেও ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারেননি। ১৪৭ আসনে কী পরিমাণ ভোটার উপস্থিত হবে, সেটা অজানা। চরম শঙ্কার পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন অনেক স্থানে কার্যত ভোটারবিহীনও হতে পারে, এমনই খবর মিলছে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো আসনের প্রার্থীর জাল ভোটের প্রস্তুতির খবর দিয়েছে একাধিক সংবাদপত্র। বিদেশি পর্যবেক্ষক নেই। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও আগ্রহ নেই। প্রতিপক্ষ নেই। অনেকের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে নিজেকে নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় ভোটের হার বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে নেওয়ার জন্য অনেক আসনে অতি উৎসাহী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা প্রহসনের ষোলকলা পূর্ণ করতে তৎপর হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। এটা রোধ করতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সচেষ্ট হবেন, এমন আশা এ মুহূর্তে বৃথাই মনে হয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটাই ভাগ্যের লিখন হয়ে উঠেছে। এ নির্বাচনে উচ্ছ্বাস নেই, গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিশ্বাসযোগ্যতাও আদৌ মিলবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দশম সংসদ নয়_ একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, '৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে যে কোনো সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হয়নি। সুতরাং আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন।' এ ধরনের বক্তব্য অনড় অবস্থান থেকে সরকারের সরে আসারই ইঙ্গিত। আমরা আশা করব, দু'পক্ষই নিজেদের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করুক। তাদের আলোচনা-সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতেই হবে। এর প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু হোক। বিরোধী দল যে পথে নির্বাচন প্রতিহত করতে চেয়েছে, তাতে সফলতা আসেনি। তারা নতুন করে হিংসা-নাশকতার পথে যাবে না, এটাই প্রত্যাশা থাকবে। এটা স্পষ্ট যে, যত নাশকতা-ধ্বংসাত্মক কর্মপন্থাই নেওয়া হোক না কেন, তার দ্বারা নির্বাচন ভণ্ডুল করা যাবে না। সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করবেই। এ অবস্থায় তাদের কর্মসূচি কেবল সাধারণ মানুষের জন্যই দুর্ভোগের বোঝা বাড়াবে। দিনটিকে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নেই পার করতে দিন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররাও নিজেদের রাখুক নিয়ন্ত্রণে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা তাদের অস্বস্তি বাড়ায় এবং দেশবাসীকে দল ও সরকারের প্রতি আরও বিরূপ করে তোলে।
সরকারপক্ষের কাছে এ নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার। কেউ কেউ বলেন, কেবলই মুখ রক্ষার। কেউবা বলেন, রাজনৈতিক জেদের নির্বাচন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী জোট ১৮ দলের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিনটিকে অভিহিত করেছেন 'জঘন্য কলঙ্কময়' হিসেবে। তিনি ভোট বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, এ প্রহসনকে দেশ-বিদেশে কেউ নির্বাচন হিসেবে বৈধতা দেবে না। নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য ১ জানুয়ারি থেকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যেই ৪ ও ৫ জানুয়ারি ডাকা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল-অবরোধ মানেই সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তৎপর ১৮ দলের গুরুত্বপূর্ণ শরিক জামায়াতে ইসলামী। তাদের সামনে নির্বাচন ছাড়াও রয়েছে বিশেষ এজেন্ডা_ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের বিচারকাজ ভণ্ডুল করা। তাদের সহিংস কর্মকাণ্ডে সর্বমহল থেকে নিন্দা ও ধিক্কার আসছে। কিন্তু এই অপরাজনীতি থেকে তাদের সরে আসার লক্ষণ নেই। হরতাল শুরুর আগেই কয়েকটি জেলায় ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও হিংসাত্মক ঘটনার শঙ্কা প্রবল। নির্বাচন কমিশন পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মোতায়েন থাকবে। তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে কোথাও কোথাও এ বাহিনীকে আরও কয়েকদিন নির্বাচনকালীন দায়িত্বে বহল রাখা হতে পারে, এমন ধারণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিবউদ্দীন আহমদ।
নির্বাচনে প্রধান সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করানোর জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের উদ্যোগ-দৌড়ঝাঁপ লক্ষণীয় মাত্রাতেই ছিল। এতে সফলতা না আসায় শেষ মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত রাখার প্রস্তাবও আলোচনায় আসে। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন সরকার উভয়পক্ষই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়সংকল্প। বিরোধীপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টায় সহিংস কৌশল অনুসরণ করেও সফলতা দেখাতে পারেনি। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলায় সচেষ্ট ছিল। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের কাছে এ দাবির ন্যায্যতাও স্বীকৃত। প্রধান দুটি দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগে প্রবল আপত্তি আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে সেটা ঘটেছেও। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় যে, বিরোধীপক্ষ সরকারকে তার অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ১৮ দলীয় জোট আন্দোলনের নামে বিশেষভাবে জোর দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ওপর, যা জনগণকে আন্দোলনের প্রতিই বিরূপ করেছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকে সরকার আটক করেছে। অনেকে পলাতক। খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি। কিন্তু জনগণ এমনকি তাদের মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কর্মসূচিতেও সাড়া দেয়নি।
অতএব, আজ ভোট হচ্ছেই। কিন্তু ইতিমধ্যে ৩০০ আসনের ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা একক প্রার্থী হওয়ার কারণে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ায় ভোটের আয়োজন করতে হচ্ছে মাত্র ১৪৭টিতে। এসব আসনের বেশিরভাগেও নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটা জানা থাকায় ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-আগ্রহ কার্যত অনুপস্থিত। রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা করেছেন এবং তাতে জনসমাগমও ভালো ছিল। কিন্তু তার দল ও জোটের নেতারা ফাঁকা মাঠেও ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারেননি। ১৪৭ আসনে কী পরিমাণ ভোটার উপস্থিত হবে, সেটা অজানা। চরম শঙ্কার পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন অনেক স্থানে কার্যত ভোটারবিহীনও হতে পারে, এমনই খবর মিলছে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো আসনের প্রার্থীর জাল ভোটের প্রস্তুতির খবর দিয়েছে একাধিক সংবাদপত্র। বিদেশি পর্যবেক্ষক নেই। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও আগ্রহ নেই। প্রতিপক্ষ নেই। অনেকের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে নিজেকে নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় ভোটের হার বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে নেওয়ার জন্য অনেক আসনে অতি উৎসাহী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা প্রহসনের ষোলকলা পূর্ণ করতে তৎপর হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। এটা রোধ করতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সচেষ্ট হবেন, এমন আশা এ মুহূর্তে বৃথাই মনে হয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটাই ভাগ্যের লিখন হয়ে উঠেছে। এ নির্বাচনে উচ্ছ্বাস নেই, গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিশ্বাসযোগ্যতাও আদৌ মিলবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দশম সংসদ নয়_ একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, '৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে যে কোনো সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হয়নি। সুতরাং আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন।' এ ধরনের বক্তব্য অনড় অবস্থান থেকে সরকারের সরে আসারই ইঙ্গিত। আমরা আশা করব, দু'পক্ষই নিজেদের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করুক। তাদের আলোচনা-সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতেই হবে। এর প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু হোক। বিরোধী দল যে পথে নির্বাচন প্রতিহত করতে চেয়েছে, তাতে সফলতা আসেনি। তারা নতুন করে হিংসা-নাশকতার পথে যাবে না, এটাই প্রত্যাশা থাকবে। এটা স্পষ্ট যে, যত নাশকতা-ধ্বংসাত্মক কর্মপন্থাই নেওয়া হোক না কেন, তার দ্বারা নির্বাচন ভণ্ডুল করা যাবে না। সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করবেই। এ অবস্থায় তাদের কর্মসূচি কেবল সাধারণ মানুষের জন্যই দুর্ভোগের বোঝা বাড়াবে। দিনটিকে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নেই পার করতে দিন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররাও নিজেদের রাখুক নিয়ন্ত্রণে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা তাদের অস্বস্তি বাড়ায় এবং দেশবাসীকে দল ও সরকারের প্রতি আরও বিরূপ করে তোলে।
No comments