পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে? by সাবির মুস্তাফা
ক্রমবর্ধমান
সহিংসতার মধ্যেই বাংলাদেশে আজ রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্বভাবতই বিরোধী দলের বর্জনের কারণে নির্বাচনে উৎসবমুখর অবস্থা দৃশ্যমান
নয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বলেছে, তাদের দাবিকৃত তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে তারা এতে অংশ নিচ্ছে না।
সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে একজন করে প্রার্থী থাকার কারণে ওই আসনগুলো
বাদ দিয়ে ১৪৭ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ধরনের নির্বাচনে
প্রার্থীদের মধ্যে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠার সম্ভবনা না থাকায়
ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কম দেখা যায়। নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার
পদ্ধতির ব্যবহার বাইরের লোকদের কাছে রহস্যময় ঠেকলেও বাংলাদেশে অতীতের
কয়েকটি নির্বাচন এ পদ্ধতির অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি বর্তমান শাসক দল
আওয়ামী লীগ সংসদে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ২০১১ সালে
সংবিধান পরিবর্তন করে রহিত করে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে কার্যত
তাদের সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করছে। বিএনপি বলেছে, ভোট
কারচুপি করতে পারবে না বলে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে
দিয়েছে।
এ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে অব্যাহত রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য পশ্চিমা কূটনীতিকরা কয়েকবার চেষ্টা চালান। উভয়পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য গত মাসে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা আসেন। উভয়পক্ষ আলোচনায় মিলিত হলে অচলাবস্থা কাটতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
সরকার জোর দিচ্ছিল বিএনপি যাতে বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নেয়। কোনো পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচনের পরেই তা করা যেতে পারে বলেও তারা মত ব্যক্ত করে।
জামায়াতে ইসলামীসহ জোট মিত্রদের নিয়ে বিএনপি সহিংস হরতাল এবং সড়কপথ, রেলপথ অবরোধের পথ নেয়। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে সহিংসতায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের কিছু সমর্থক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এবং হরতাল-অবরোধের মধ্যে চলাচলকারী বাসে বিরোধীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় সাধারণ যাত্রীদের অগি্নদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিরাজমান অস্থিতিশীলতার কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনেকে আশঙ্কা করেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে এবং অর্থনীতি ধসে পড়ার মতো পরিস্থিতি হলে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। নির্বাচন প্রতিহত করতেই বিরোধীরা যানবাহনের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
এদিকে কেউ কেউ এটাও মনে করছেন যে, নবনির্বাচিত সরকারের প্রতি বিরোধিতা উৎপাটিত করার জন্য আওয়ামী লীগ দেশে জরুরি আইন জারি করতে পারে।
তবে নির্বাচনটি আর যাই হোক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া এখানে ব্যাপক জনগণের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ কিন্তু নেই। এরপরও আওয়ামী লীগ নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করতে পারে। তারা সাংবিধানিকভাবে কর্তব্য কর্ম করলেও এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জনমত জরিপে সবার অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের আভাস দেওয়া হচ্ছিল। আওয়ামী লীগকে তাদের পদক্ষেপ গণতন্ত্রকে কতটা এগিয়ে নেবে সেটা এই আলোকেই বিচার করতে হবে।
এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন তলানিতে, তেমনি ভোটাররাও এতে নিজেদের প্রতারিত ভাবতে পারেন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ভারত সম্ভবত একটি ফর্মুলা উদ্ভাবন করার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে সিরিয়াস আলোচনার জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ দিতে পারে। এসব আলোচনার মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম হতে পারে। তবে ওই নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এর অনেক আগেই তা অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কত আগে তা হবে সে ব্যাপারেও রয়েছে প্রশ্ন।
অনেকে মনে করেন, এখন থেকে ৬ মাসের মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের পর সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে তেমন একটা কানাঘুষাও রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের হয়তো ভিন্ন নিজস্ব ধারণাও থাকতে পারে। তারা এক বছর বা তারও কম সময় ক্ষমতায় থাকার কথা চিন্তা করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আরও সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অবলোকন করতে পারি।
গত কয়েক বছর থেকেই এই জামায়াতে ইসলামী তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অব্যাহতভাবে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। প্রকাশ্যেই তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এমনকি হত্যাও করছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য এর শীর্ষ নেতাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হয়েছে এবং গত মাসে একজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত সমর্থকরা মনে করছে, ভারতের সমর্থনে তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেবে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে এলে জামায়াত তাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে। যুদ্ধাপরাধ আদালত বিলুপ্ত করবে এবং এই আদালতের রায়কে বাতিল করবে। সে কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা এবং যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
তাই আগামীতে বিএনপি জামায়াতকে জোট সঙ্গী হিসেবে রাখবে কি রাখবে না তার ওপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যৎ যে কোনো আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করবে।
বিবিসি থেকে ভাষান্তরিত
বিবিসি বাংলা সম্পাদক
এ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে অব্যাহত রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য পশ্চিমা কূটনীতিকরা কয়েকবার চেষ্টা চালান। উভয়পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য গত মাসে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা আসেন। উভয়পক্ষ আলোচনায় মিলিত হলে অচলাবস্থা কাটতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
সরকার জোর দিচ্ছিল বিএনপি যাতে বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নেয়। কোনো পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচনের পরেই তা করা যেতে পারে বলেও তারা মত ব্যক্ত করে।
জামায়াতে ইসলামীসহ জোট মিত্রদের নিয়ে বিএনপি সহিংস হরতাল এবং সড়কপথ, রেলপথ অবরোধের পথ নেয়। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে সহিংসতায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের কিছু সমর্থক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এবং হরতাল-অবরোধের মধ্যে চলাচলকারী বাসে বিরোধীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় সাধারণ যাত্রীদের অগি্নদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিরাজমান অস্থিতিশীলতার কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনেকে আশঙ্কা করেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে এবং অর্থনীতি ধসে পড়ার মতো পরিস্থিতি হলে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। নির্বাচন প্রতিহত করতেই বিরোধীরা যানবাহনের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
এদিকে কেউ কেউ এটাও মনে করছেন যে, নবনির্বাচিত সরকারের প্রতি বিরোধিতা উৎপাটিত করার জন্য আওয়ামী লীগ দেশে জরুরি আইন জারি করতে পারে।
তবে নির্বাচনটি আর যাই হোক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া এখানে ব্যাপক জনগণের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ কিন্তু নেই। এরপরও আওয়ামী লীগ নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করতে পারে। তারা সাংবিধানিকভাবে কর্তব্য কর্ম করলেও এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জনমত জরিপে সবার অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের আভাস দেওয়া হচ্ছিল। আওয়ামী লীগকে তাদের পদক্ষেপ গণতন্ত্রকে কতটা এগিয়ে নেবে সেটা এই আলোকেই বিচার করতে হবে।
এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন তলানিতে, তেমনি ভোটাররাও এতে নিজেদের প্রতারিত ভাবতে পারেন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ভারত সম্ভবত একটি ফর্মুলা উদ্ভাবন করার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে সিরিয়াস আলোচনার জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ দিতে পারে। এসব আলোচনার মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম হতে পারে। তবে ওই নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এর অনেক আগেই তা অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কত আগে তা হবে সে ব্যাপারেও রয়েছে প্রশ্ন।
অনেকে মনে করেন, এখন থেকে ৬ মাসের মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের পর সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে তেমন একটা কানাঘুষাও রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের হয়তো ভিন্ন নিজস্ব ধারণাও থাকতে পারে। তারা এক বছর বা তারও কম সময় ক্ষমতায় থাকার কথা চিন্তা করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আরও সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অবলোকন করতে পারি।
গত কয়েক বছর থেকেই এই জামায়াতে ইসলামী তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অব্যাহতভাবে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। প্রকাশ্যেই তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এমনকি হত্যাও করছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য এর শীর্ষ নেতাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হয়েছে এবং গত মাসে একজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত সমর্থকরা মনে করছে, ভারতের সমর্থনে তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেবে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে এলে জামায়াত তাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে। যুদ্ধাপরাধ আদালত বিলুপ্ত করবে এবং এই আদালতের রায়কে বাতিল করবে। সে কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা এবং যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
তাই আগামীতে বিএনপি জামায়াতকে জোট সঙ্গী হিসেবে রাখবে কি রাখবে না তার ওপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যৎ যে কোনো আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করবে।
বিবিসি থেকে ভাষান্তরিত
বিবিসি বাংলা সম্পাদক
No comments