যোগ্য কাউকে দায়িত্ব ছেড়ে দেব
সংবাদ সম্মেলনে মনমোহন সিং |
গুঞ্জনই সত্যি হলো। সরে দাঁড়াচ্ছেন মনমোহন সিং। ভারতের আগামী সাধারণ নির্বাচনের পর অবসর নেবেন বলে ঘোষণা করলেন তিনি। তৃতীয়বারের জন্য আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের সামনে গতকাল শুক্রবার এ কথা জানিয়ে মনমোহন বলেন, নির্বাচনের পর নিশ্চিতভাবেই তৃতীয়বারের জন্য ইউপিএ সরকার গঠিত হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব তিনি অন্য কারও হাতে তুলে দেবেন।
কে হতে পারেন সেই ব্যক্তি, তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। বলেছেন,দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সব যোগ্যতাই রাহুল গান্ধীর মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির প্রার্থী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন বাস্তব রূপ নেবে না। মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের পক্ষে বিপর্যয় হবে। গত সাড়ে নয় বছরে মনমোহনের এটি মাত্র তৃতীয় সংবাদ সম্মেলন। এই সম্মেলনে তিনি কী বলবেন, তা নিয়ে গত কয়েক দিন জল্পনার অন্ত ছিল না। সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মনমোহন তাঁর প্রারম্ভিক সংক্ষিপ্ত ভাষণেই জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী দায়িত্বে তিনি আর নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেছে নতুন জল্পনা। ১৭ জানুয়ারি দিল্লিতে এক দিনের জন্য অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) যে অধিবেশন বসবে, সেখানে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাহুলের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে কি না। নিজের অবসর গ্রহণ ও রাহুল গান্ধীকে উপযুক্ত বলা ছাড়াও মোদি সম্পর্কিত কড়া মন্তব্য ছিল মনমোহনের তৃতীয় চমক। সাধারণত যিনি কারও সম্পর্কেই কঠোর ও কড়া মন্তব্য করেন না, সেই মনমোহন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেন অত্যন্ত কড়া ভাষায়। বিজেপি তাঁকে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী বলে অভিহিত করেছে।
এই মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আহমেদাবাদের রাস্তায় নিরীহ মানুষের হত্যালীলা শক্তির প্রদর্শন হতে পারে না, গণহত্যার স্তূপে বসে থাকার অর্থই শক্তিমান নয়।’ প্রায় ১০ বছরের ‘রাজত্বের’ সাফল্যের সংক্ষিপ্ত খতিয়ান দেন মনমোহন। জানান, তিনটি ক্ষেত্রে কিছুটা আক্ষেপ তাঁর রয়েছে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায়। সেগুলো হলো: ১. আরও বেশি কর্মসংস্থান, ২. মূল্যবৃদ্ধি কম না হওয়া এবং ৩. দুর্নীতিকে সেভাবে রাশ টানতে না পারা। এই অ-সাফল্যের পেছনে বিশ্বজোড়া মন্দাকে কিছুটা দায়ী করেন তিনি। নিজে স ৎ হলেও কেন দুর্নীতি ও দুর্নীতিগ্রস্তদের মোকাবিলায় ব্যর্থ, সেই প্রশ্ন মনমোহনকে বারবার শুনতে হয়েছে। বস্তুত দুর্নীতিসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি। তাঁর উত্তরও বিস্ময় সৃষ্টি করে যখন তিনি বলেন, ‘টুজি বা কয়লা ব্লক বণ্টন কেলেঙ্কারি ইউপিএ-১ সরকারের আমলের ঘটনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের মানুষ ইউপিএ-২-এর সময় আমাদের ওপর ভরসা রেখেছেন। বিরোধী দলের স্বার্থ আছে। মিডিয়া ও সিএজি কখনো কখনো সেই সুরে গলা মিলিয়েছে।’
No comments