শাহরি রমজান-আহলান সাহলান by মাওলানা এম এ করিম
পবিত্র রমজান মাস, স্বাগত। আহলান সাহলান।
এটি আল্লাহপ্রেমিক মুসলমানদের প্রতীক্ষার মাস। তাঁর প্রতি ভয় ও ভালোবাসার
শিক্ষা, দীক্ষা ও পরীক্ষার মাস। এ মাসের পুরো সময় চলবে স্রষ্টা মাশুকের
সঙ্গে আশেক নর-নারীর সালাম, কালাম, আরজি পেশ, ইশক ও মহব্বত নিবেদন।
রমজান মাসের আগমনে ইমানদার বান্দারা আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। কোরআন শরিফে
বলা হয়েছে, 'বলো, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা
আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম।' (সুরা ইউনুস, আয়াত
৫৮)। দুনিয়াবি কোনো কিছুর সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। এ মাসের
আগমনে প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বলতেন, 'তোমাদের সামনে
মোবারক মাস রমজান এসেছে।' (সুনানু নাসাঈ, হাদিস ২১০৫)। ফজিলত বর্ণনা করে
হুজুর (সা.) বলেছেন, 'আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রোজা পালন ফরজ করেছেন। এ
মাসে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের
দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে, যা
হাজার রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে মূলত
সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।' (নাসাঈ শরিফ, হাদিস ২১০৫)।
রোজা ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। উদ্দেশ্য হলো, এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।' (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'ইসলাম যে পাঁচ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এর একটি হলো রোজা পালন। এটি জান্নাত লাভের মাধ্যম। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, রমজান মাসে রোজা পালন করল, আল্লাহ তায়ালার কর্তব্য হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো...।' (সহিহ বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৭৪২৩)।
'রমজান মাসে কোরআন শরিফ নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের দিশারি, স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী।' (সুরা বাকারা, আয়াত নম্বর ১৮৫)। রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশের বায়তুল ইজ্জতে কোরআন শরিফ একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। কোরআন শরিফের পাশাপাশি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা, তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিলসহ সব আসমানি কিতাব এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানিতে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে, তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে রোজা। দুটি নেয়ামতেরই শোকরিয়া আদায় করতে হবে। কোরআন শরিফে মানুষকে মানুষ গড়ার, শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি করার এবং আদর্শ আশেক বানানোর যেসব বিধান, কৌশল ও উপায়-উপকরণ রয়েছে, সেসবের অন্যতম একটি হলো রমজান মাসের রোজা। প্রত্যেক বান্দা এ মাসে আল্লাহ তায়ালার মেহমান। তিনি তাঁর প্রিয় মেহমানদের জন্য সর্বোত্তম খোরাক পাঠিয়েছেন কোরআন শরিফ, যাঁদের জ্ঞান পিপাসা ও মারেফাত লাভের ক্ষুধা রয়েছে, তাঁরা পবিত্র কোরআন শরিফে চাহিদার সব কিছুই পাবেন। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে আমাদের দাওয়াত করেছেন কোরআন অধ্যয়ন, গবেষণা এবং এর আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের জীবন গড়ে তোলার জন্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'রমজান মাসের আগমন ঘটলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়।' অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, 'শয়তানকে শিকল পরানো হয়।' (সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস ২৫৪৭)। এ মাসে শয়তানের স্বাভাবিক অপতৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা করে। বিভিন্ন ধরনের গোনাহ থেকে দূরে থাকে। অনেক নেক কাজ করে থাকে। শবেকদর মহিমান্বিত একটি রাত। এটিও রমজান মাসেই পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'শবেকদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।' (সুরা কদর, আয়াত ৩-৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।' (মাজমাউ মুআল্লাফাতিল আলবানি, হাদিস ১০০২)। রমজান মাস পেয়েও যেসব ব্যক্তি নিজেদের গোনাহ মাফ করাতে পারেনি, হাদিস শরিফে তাদের ধিক্কার জানানো হয়েছে। হুজুর (সা.) বলেছেন, 'ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার গোনাহগুলো ক্ষমা করা হয়নি।' (জামিউল উসুল ফি আহাদিসির রাসুল, হাদিস ১৪১০)।
পবিত্র এ মাস রহমত ও বরকত অর্জনের, গোনাহ থেকে নিজের ক্ষমাপ্রাপ্তির এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে জান্নাতি জীবন নিশ্চিত করার মহাসুযোগ নিয়ে প্রতিবছর হাজির হয়। এ মাসে শুধু দিনভর না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়, এর অনেক শিক্ষা ও দাবি রয়েছে। আসুন, আমরা পবিত্র রমজান মাসকে যথাযথভাবে বরণ করে নিই।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাবেক প্রিন্সিপাল, রানাপিং আরাবিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসা, সিলেট
রোজা ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। উদ্দেশ্য হলো, এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।' (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'ইসলাম যে পাঁচ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এর একটি হলো রোজা পালন। এটি জান্নাত লাভের মাধ্যম। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, রমজান মাসে রোজা পালন করল, আল্লাহ তায়ালার কর্তব্য হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো...।' (সহিহ বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৭৪২৩)।
'রমজান মাসে কোরআন শরিফ নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের দিশারি, স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী।' (সুরা বাকারা, আয়াত নম্বর ১৮৫)। রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশের বায়তুল ইজ্জতে কোরআন শরিফ একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। কোরআন শরিফের পাশাপাশি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা, তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিলসহ সব আসমানি কিতাব এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানিতে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে, তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে রোজা। দুটি নেয়ামতেরই শোকরিয়া আদায় করতে হবে। কোরআন শরিফে মানুষকে মানুষ গড়ার, শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি করার এবং আদর্শ আশেক বানানোর যেসব বিধান, কৌশল ও উপায়-উপকরণ রয়েছে, সেসবের অন্যতম একটি হলো রমজান মাসের রোজা। প্রত্যেক বান্দা এ মাসে আল্লাহ তায়ালার মেহমান। তিনি তাঁর প্রিয় মেহমানদের জন্য সর্বোত্তম খোরাক পাঠিয়েছেন কোরআন শরিফ, যাঁদের জ্ঞান পিপাসা ও মারেফাত লাভের ক্ষুধা রয়েছে, তাঁরা পবিত্র কোরআন শরিফে চাহিদার সব কিছুই পাবেন। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে আমাদের দাওয়াত করেছেন কোরআন অধ্যয়ন, গবেষণা এবং এর আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের জীবন গড়ে তোলার জন্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'রমজান মাসের আগমন ঘটলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়।' অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, 'শয়তানকে শিকল পরানো হয়।' (সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস ২৫৪৭)। এ মাসে শয়তানের স্বাভাবিক অপতৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা করে। বিভিন্ন ধরনের গোনাহ থেকে দূরে থাকে। অনেক নেক কাজ করে থাকে। শবেকদর মহিমান্বিত একটি রাত। এটিও রমজান মাসেই পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'শবেকদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।' (সুরা কদর, আয়াত ৩-৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।' (মাজমাউ মুআল্লাফাতিল আলবানি, হাদিস ১০০২)। রমজান মাস পেয়েও যেসব ব্যক্তি নিজেদের গোনাহ মাফ করাতে পারেনি, হাদিস শরিফে তাদের ধিক্কার জানানো হয়েছে। হুজুর (সা.) বলেছেন, 'ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার গোনাহগুলো ক্ষমা করা হয়নি।' (জামিউল উসুল ফি আহাদিসির রাসুল, হাদিস ১৪১০)।
পবিত্র এ মাস রহমত ও বরকত অর্জনের, গোনাহ থেকে নিজের ক্ষমাপ্রাপ্তির এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে জান্নাতি জীবন নিশ্চিত করার মহাসুযোগ নিয়ে প্রতিবছর হাজির হয়। এ মাসে শুধু দিনভর না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়, এর অনেক শিক্ষা ও দাবি রয়েছে। আসুন, আমরা পবিত্র রমজান মাসকে যথাযথভাবে বরণ করে নিই।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাবেক প্রিন্সিপাল, রানাপিং আরাবিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসা, সিলেট
No comments