লিমনের মামলা প্রত্যাহার- অবশেষে শুভবুদ্ধির উদয়
প্রায় আড়াই বছর অশেষ হয়রানি-ভোগান্তির পর
ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন
র্যাবের দায়ের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত ও মানবিক, তবে তা গ্রহণে অনেক বিলম্ব করা
হলো। একটি অন্যায় কাজকে চাপা দিতে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান র্যাবের গুলিতে আহত
হওয়ার পর তার সময়মতো চিকিৎসাও করানো হয়নি। এক পর্যায়ে তার বাম পা ঊরু থেকে
নিচ পর্যন্ত কেটে বাদ দিতে হয়। কিন্তু তাতেই ঘটনার হোতাদের রোষ শেষ হয়নি।
লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দান ও অস্ত্র আইনে মামলাও দায়ের
করা হয়। এসবই যে অন্যায় ছিল, তা সবাই বুঝতে পেরেছে ঘটনার শুরু থেকেই।
সংবাদপত্র থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংগঠন লিমনকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য
দায়ীদের শাস্তি বিধানে বারবার দাবি তুলেছে, পরামর্শ দিয়েছে। মানবাধিকার
কমিশনের চেয়ারম্যান এ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু র্যাব-পুলিশের হয়ে
যারা তদন্ত করেছেন, তাদের কিছুই বোধগম্য হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং
সরকারের আরও উচ্চ পর্যায় থেকেও কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। কেন
এভাবে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা, তার কোনো সৎ ব্যাখ্যা মেলেনি। শুধু লিমন
হোসেনের প্রতি নৃশংস আচরণের ক্ষেত্রে নয়, মহাজোট সরকার আরও অনেক ইস্যুতেই
জলজ্যান্ত সত্যকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করেছে। উপেক্ষা করেছে জনমত। কিছু
ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা শেষ পর্যন্ত বাস্তবতার কাছে নতিস্বীকার করেছে
বটে, কিন্তু ততদিনে পানি অনেক ঘোলা হয়েছে। জনমনে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অনেক
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। দুর্ভাগ্য যে, তারপরও সরকারি মহল একের পর এক
যুক্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়ে গেছে ক্লান্তিহীনভাবে। এ যেন
জেনেশুনে নিজের পায়ে কুঠারের আঘাত করে যাওয়া, দিনের আলোয় সবাই যা স্পষ্ট
দেখে তার বিরুদ্ধাচরণ করে চলা। লিমন হোসেনের ঘটনায় হেনস্তা হয়ে অবশেষে
শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে সরকারের। তবে তাদের এখন আরও একটি কঠিন বাস্তবতার
মুখোমুখি হতে হবে_ সরকার মামলা তুলে নিলেও লিমন হোসেনের মা হেনোয়ারা বেগম
বলেছেন, তিনি মামলা তুলবেন না। তিনি ন্যায়বিচার চেয়েছেন। তার এ দাবির সঙ্গে
কিন্তু প্রবল জনমতও রয়েছে।
No comments