মিথ্যাচারের রাজনীতি by মাহমুদুল বাসার
অভিজ্ঞ
ব্যক্তিরা রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা রাখতে চান এজন্য যে, রাজনীতিতে দেদার
মিথ্যার চর্চা হয়। হিটলারের সচিব, বিশ্ববিখ্যাত মিথ্যুক গোয়েবলস্ কোনো
পাদরি ছিলেন না, ছিলেন রাজনৈতিক সচিব। সুবিখ্যাত বক্তা, আওয়ামী লীগের প্রথম
সারির নেতা মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী এক বক্তৃতায় গল্পের ছলে বলেছিলেন,
‘এক নেতা কথায় কথায় মিথ্যা বলতেন। তিনি হজ করে আসার পর তার সঙ্গে দেখা গেল
একজন লোক। লোকে জিজ্ঞেস করল, ‘হাজী সাহেব, ইনি কে?’ উত্তরে হাজী সাহেব
বললেন, ‘ইনি আমার সচিব।’ লোকে বলল, ‘কই আগে তো কোনো সচিব ছিল না!’ হাজী
সাহেব বললেন, ‘জানেন তো রাজনীতিতে নেমে মিথ্যা কথা না বলে পারি না, হজ করে
আসার পর নিজে তো এত মিথ্যা বলতে পারব না, তাই মিথ্যা কথা বলার জন্য সচিব
রেখেছি।’ পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুও বলেছেন, ‘রাজনীতিতে মিথ্যাচার অনিবার্য।’
রাজনীতিতে মিথ্যাচার নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর একটি গল্প বলি। একবার এক দেশে
দু’জন যুবককে পৌর কর্তৃপক্ষ বললেন, ‘তোমরা একটা উঁচু মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে যত
বেশি মিথ্যা কথা বলতে পারবে, তাকে সেরা পুরস্কার দেয়া হবে।’ ওদের মিথ্যা
বলা প্রতিযোগিতার এক পর্যায়ে এক পাদ্রি এসে ধমক দিয়ে বলল, ‘এই তোমরা এত
মিথ্যা কথা বলছ কেন? জানো, আমি আমার জীবনে একটা মিথ্যা কথাও বলিনি?’
যুবকদ্বয় অট্টহাসি দিয়ে বলল, ‘ফাদার, আমাদের পুরস্কারটি আপনারই প্রাপ্য।’
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে উত্থান ঘটেছিল বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানদের।
তখনকার মিডিয়া বাংলা ভাইয়ের খুনখারাবি ও জঙ্গি তৎপরতার কথা বারবার স্মরণ
করিয়ে দিয়েছিল। শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী বলে বসলেন যে, ‘বাংলা ভাই
বলে কেউ নেই, এসব মিডিয়ার সৃষ্টি।’ পরে দেখা গেল মূর্তমান বাংলা ভাইয়ের
ফাঁসি হল। রবীন্দ্রনাথের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পে আছে, ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ
করিল সে মরে নাই।’ বাংলা ভাইও ফাঁসিতে জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছিল নিজামী
মিথ্যা কথা বলেছিলেন। বিষ এক কলস খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, একফোঁটা খেলেই
যথেষ্ট।
পাকিস্তানের শাসকরা টানা ২৩ বছর মিথ্যাচার করেছে। হাদিসে আছে, ‘মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।’ ওরাও ধ্বংস হয়ে গেছে। নিজেদের গদি রক্ষা করার জন্য পাক শাসকরা কথায় কথায় ইসলাম টেনে এনেছে; অথচ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহ সাহেবই ইসলামী আচরণে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি রোজা-নামাজ করতেন না, জুমার নামাজও পড়তেন না। এটাই মিথাচার।
১৯৭৪ সালে তাৎক্ষণিকভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছিল, এ কথা সত্য। কিন্তু তখন কেবল চালের দামই বৃদ্ধি পেয়েছিল, কাপড়ের দাম নয়। অথচ পত্রিকায় দেখানো হয়েছিল জাল পরা বাসন্তীকে। এই প্রচারণার কারণে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি মারাত্মক হোঁচট খেয়েছিল। পরে কৃতী সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীন অকুস্থল তদন্ত করে দেখিয়েছিলেন, ঘটনাটি সাজানো। এটাও তো মিথ্যাচার।
মিথ্যাচার এখনও চলছে সমান গতিতে। সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেককেই উদ্ধার করে জীবন ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা গার্মেন্ট কর্মী রেশমাকে সেনা তত্ত্বাবধানে অনেকটা অলৌকিকভাবেই উদ্ধার করা হয়েছে। হঠাৎ শোনা যাচ্ছে, এটা নাকি সাজানো নাটক। বলেছে এক বিদেশী পত্রিকা। বিদেশী মাত্রই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। লর্ড ক্লাইভ এবং নীলকর দস্যুরা জঘন্য মিথ্যুক ছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রশাসন সম্পর্কে লোমহর্ষক মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জার এবং ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার। ব্রিটিশ সাংবাদিক লেখক ম্যাসকারেনহাস বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নোংরা মিথ্যা বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু নাকি ভুট্টোর সঙ্গে গোপনে কনফেডারেশনের চুক্তি করেছিলেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, ম্যাসকারেনহাস ‘দি রেপ অব বাংলাদেশ’ বইটি লিখে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার বদৌলতে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরে রহমানের কাছে কয়েক লাখ টাকা চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তা দিতে অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমি গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রী, এত টাকা কোথায় পাব?’ এরপরই ম্যাসকারেনহাস বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। (আবদুল মতিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : মুক্তিযুদ্ধের পর)।
বিরোধীদলীয় নেতা বিদেশের একটি পত্রিকায় নিবন্ধ লেখা নিয়ে পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা না বললেও পারতেন।
মাহমুদুল বাসার, কলাম লেখক, গবেষক
পাকিস্তানের শাসকরা টানা ২৩ বছর মিথ্যাচার করেছে। হাদিসে আছে, ‘মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।’ ওরাও ধ্বংস হয়ে গেছে। নিজেদের গদি রক্ষা করার জন্য পাক শাসকরা কথায় কথায় ইসলাম টেনে এনেছে; অথচ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহ সাহেবই ইসলামী আচরণে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি রোজা-নামাজ করতেন না, জুমার নামাজও পড়তেন না। এটাই মিথাচার।
১৯৭৪ সালে তাৎক্ষণিকভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছিল, এ কথা সত্য। কিন্তু তখন কেবল চালের দামই বৃদ্ধি পেয়েছিল, কাপড়ের দাম নয়। অথচ পত্রিকায় দেখানো হয়েছিল জাল পরা বাসন্তীকে। এই প্রচারণার কারণে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি মারাত্মক হোঁচট খেয়েছিল। পরে কৃতী সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীন অকুস্থল তদন্ত করে দেখিয়েছিলেন, ঘটনাটি সাজানো। এটাও তো মিথ্যাচার।
মিথ্যাচার এখনও চলছে সমান গতিতে। সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেককেই উদ্ধার করে জীবন ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা গার্মেন্ট কর্মী রেশমাকে সেনা তত্ত্বাবধানে অনেকটা অলৌকিকভাবেই উদ্ধার করা হয়েছে। হঠাৎ শোনা যাচ্ছে, এটা নাকি সাজানো নাটক। বলেছে এক বিদেশী পত্রিকা। বিদেশী মাত্রই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। লর্ড ক্লাইভ এবং নীলকর দস্যুরা জঘন্য মিথ্যুক ছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রশাসন সম্পর্কে লোমহর্ষক মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জার এবং ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার। ব্রিটিশ সাংবাদিক লেখক ম্যাসকারেনহাস বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নোংরা মিথ্যা বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু নাকি ভুট্টোর সঙ্গে গোপনে কনফেডারেশনের চুক্তি করেছিলেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, ম্যাসকারেনহাস ‘দি রেপ অব বাংলাদেশ’ বইটি লিখে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার বদৌলতে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরে রহমানের কাছে কয়েক লাখ টাকা চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তা দিতে অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমি গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রী, এত টাকা কোথায় পাব?’ এরপরই ম্যাসকারেনহাস বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। (আবদুল মতিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : মুক্তিযুদ্ধের পর)।
বিরোধীদলীয় নেতা বিদেশের একটি পত্রিকায় নিবন্ধ লেখা নিয়ে পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা না বললেও পারতেন।
মাহমুদুল বাসার, কলাম লেখক, গবেষক
No comments