জিএসপি বাতিলের প্রধান কারণ by ইফতেখার আহমেদ টিপু
গার্মেন্ট মালিকদের বেপরোয়া মনোভাবের
কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক সুবিধা বা
জিএসপি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁরা
গার্মেন্টশ্রমিকদের কাজের পরিবেশ নিরাপদ করার দিকে নজর দেননি।
শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নেও কোনো গরজ দেখাননি।
জিএসপি রক্ষায় গার্মেন্ট মালিকদের গাফিলতিও ছিল লক্ষণীয়। এ সুবিধা বজায় রাখতে মার্কিন প্রশাসনের সমর্থন আদায়ে লবিস্ট নিয়োগের কথা থাকলেও সে পথে তাঁরা এগোননি। লবিস্ট নিয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি ক্ষমতাদর্পী গার্মেন্ট মালিকরা।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের জন্য যে জিএসপি সুবিধা দিত, তৈরি পোশাক খাত ছিল তার আওতামুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি প্রত্যাহার করায় প্রত্যক্ষভাবে গার্মেন্ট মালিকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। হয়তো এ কারণেই তারা জিএসপি রক্ষার তাগিদ অনুভব করেননি। প্রত্যক্ষভাবে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্ন না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি পণ্যের ভাবমূর্তির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে গার্মেন্ট খাতে যে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল, তা থেমে যাওয়াই শুধু নয়, ধস নামারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। জিএসপি স্থগিত হওয়ায় বেশ কিছু পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কয়েক গুণ শুল্ক দিতে হবে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী দেশে ওই সব বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে। বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্য এই সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাকে এই সুবিধা নেই। আর তৈরি পোশাকই হলো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয়ের মাত্র ০.৫৪ শতাংশ আসে জিএসপি সুবিধা থেকে, যার পরিমাণ গত বছর ছিল ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জিএসপি সুবিধায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ সামান্য হলেও ভয়ের বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার নেই। তাই এর প্রভাব পড়বে সবখানে। এর প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়নেও পড়বে। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকও জিএসপি সুবিধা পায়।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হলেও এর মূল বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আমাদের জন্য হতাশাজনক। আর এই সিদ্ধান্ত ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপড়েনেরই ইঙ্গিত বহন করে।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে শ্রমিক শোষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার, যা সরকার ও পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর অজানা নয়। বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা না দেওয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই ছিল। তৈরি পোশাক ও মৎস্যশিল্পে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিজ অর্গানাইজেশন ২০০৭ সালে ইউএসটিআরের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। এরপর শ্রমিক নেতা আমিনুল নিখোঁজ, তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বস্তুত শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা তদন্তে বিলম্ব হওয়া, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি ইস্যুতে জিএসপির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বরাবর নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এসেছেন। এ ছাড়া টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশ সরকারের গড়িমসি এবং প্রফেসর ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে সরকারের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখেনি।
মূলত রানা প্লাজা ধসের পর মে মাসে ইইউ পার্লামেন্টের প্লিনারি অধিবেশনে আলোচনার পর প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল, তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রম অধিকারের গুরুতর পদ্ধতিগত লঙ্ঘন চলতে থাকলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করা হতে পারে। এখন বড় আশঙ্কা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটে কি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ ব্যাপারে উৎসাহিত হতে পারে। এমনটি হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এই জিএসপির আওতায় নয়, তবু জিএসপি বাতিলের ঘটনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। আরো বহু পণ্য জিএসপির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে। সেসব পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রভাব পড়বে জিএসপি বাতিল হওয়ায়। বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাবসহ দেশের ভাবমূর্তির সংকটের আশঙ্কা তো আছেই।
যুক্তরাষ্ট্র এ দেশের গার্মেন্ট খাতে কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকারের নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু বাংলাদেশে যে এটা লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার প্রমাণ তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনা। এ জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে চাইলে এ দেশের প্রতিটি কারখানায় কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে সর্বাগ্রে। শুধু চাপের কারণেই নয়, দেশের স্বার্থেই শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জনগণ মনে করে, কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমেই এসবের মোকাবিলা করা দরকার।
স্মর্তব্য, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে মার্কিন প্রশাসনকে সামাল দিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে লবিস্ট নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, তার একাংশ সরকার ব্যয় করতেও রাজি হয়। কিন্তু গার্মেন্ট মালিকদের গাফিলতিতে লবিস্ট নিয়োগ আর হয়নি। জিএসপি স্থগিতের জন্য গার্মেন্ট মালিকরা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপালেও এটি ছিল তাঁদের বেপরোয়া মনোভাবের ফল। জিএসপি আবার চালু করতে হলে গার্মেন্ট মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। কাজের পরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হতে হবে। তাতেই তাঁদের মঙ্গল।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ, চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ
chairman@ifadgroup.com
জিএসপি রক্ষায় গার্মেন্ট মালিকদের গাফিলতিও ছিল লক্ষণীয়। এ সুবিধা বজায় রাখতে মার্কিন প্রশাসনের সমর্থন আদায়ে লবিস্ট নিয়োগের কথা থাকলেও সে পথে তাঁরা এগোননি। লবিস্ট নিয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি ক্ষমতাদর্পী গার্মেন্ট মালিকরা।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের জন্য যে জিএসপি সুবিধা দিত, তৈরি পোশাক খাত ছিল তার আওতামুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি প্রত্যাহার করায় প্রত্যক্ষভাবে গার্মেন্ট মালিকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। হয়তো এ কারণেই তারা জিএসপি রক্ষার তাগিদ অনুভব করেননি। প্রত্যক্ষভাবে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্ন না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি পণ্যের ভাবমূর্তির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে গার্মেন্ট খাতে যে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল, তা থেমে যাওয়াই শুধু নয়, ধস নামারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। জিএসপি স্থগিত হওয়ায় বেশ কিছু পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কয়েক গুণ শুল্ক দিতে হবে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী দেশে ওই সব বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে। বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্য এই সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাকে এই সুবিধা নেই। আর তৈরি পোশাকই হলো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয়ের মাত্র ০.৫৪ শতাংশ আসে জিএসপি সুবিধা থেকে, যার পরিমাণ গত বছর ছিল ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জিএসপি সুবিধায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ সামান্য হলেও ভয়ের বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার নেই। তাই এর প্রভাব পড়বে সবখানে। এর প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়নেও পড়বে। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকও জিএসপি সুবিধা পায়।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হলেও এর মূল বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আমাদের জন্য হতাশাজনক। আর এই সিদ্ধান্ত ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপড়েনেরই ইঙ্গিত বহন করে।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে শ্রমিক শোষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার, যা সরকার ও পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর অজানা নয়। বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা না দেওয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই ছিল। তৈরি পোশাক ও মৎস্যশিল্পে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিজ অর্গানাইজেশন ২০০৭ সালে ইউএসটিআরের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। এরপর শ্রমিক নেতা আমিনুল নিখোঁজ, তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বস্তুত শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা তদন্তে বিলম্ব হওয়া, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি ইস্যুতে জিএসপির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বরাবর নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এসেছেন। এ ছাড়া টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশ সরকারের গড়িমসি এবং প্রফেসর ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে সরকারের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখেনি।
মূলত রানা প্লাজা ধসের পর মে মাসে ইইউ পার্লামেন্টের প্লিনারি অধিবেশনে আলোচনার পর প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল, তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রম অধিকারের গুরুতর পদ্ধতিগত লঙ্ঘন চলতে থাকলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করা হতে পারে। এখন বড় আশঙ্কা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটে কি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ ব্যাপারে উৎসাহিত হতে পারে। এমনটি হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এই জিএসপির আওতায় নয়, তবু জিএসপি বাতিলের ঘটনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। আরো বহু পণ্য জিএসপির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে। সেসব পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রভাব পড়বে জিএসপি বাতিল হওয়ায়। বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাবসহ দেশের ভাবমূর্তির সংকটের আশঙ্কা তো আছেই।
যুক্তরাষ্ট্র এ দেশের গার্মেন্ট খাতে কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকারের নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু বাংলাদেশে যে এটা লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার প্রমাণ তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনা। এ জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে চাইলে এ দেশের প্রতিটি কারখানায় কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে সর্বাগ্রে। শুধু চাপের কারণেই নয়, দেশের স্বার্থেই শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জনগণ মনে করে, কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমেই এসবের মোকাবিলা করা দরকার।
স্মর্তব্য, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে মার্কিন প্রশাসনকে সামাল দিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে লবিস্ট নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, তার একাংশ সরকার ব্যয় করতেও রাজি হয়। কিন্তু গার্মেন্ট মালিকদের গাফিলতিতে লবিস্ট নিয়োগ আর হয়নি। জিএসপি স্থগিতের জন্য গার্মেন্ট মালিকরা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপালেও এটি ছিল তাঁদের বেপরোয়া মনোভাবের ফল। জিএসপি আবার চালু করতে হলে গার্মেন্ট মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। কাজের পরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হতে হবে। তাতেই তাঁদের মঙ্গল।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ, চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ
chairman@ifadgroup.com
No comments