ইয়েস বস! by ফারাহ শাম্মা
‘দূর! এবার চাকরিই ছেড়ে দেব’—দপ্তরে ঊর্ধ্বতনের মেজাজ খারাপ করা বকুনি খেয়ে এ কথা অন্তত একবার ভেবেছেন অনেকেই। আবার উল্টোদিকে তদারককারী কর্মকর্তার ব্যবহার নিয়ে সন্তুষ্ট অনেকেই বেশ দক্ষতার সঙ্গে চাকরি করে চলেছেন।
মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘গ্রো-এন-এক্সেল’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুখ্য পরামর্শক এম জুলফিকার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, বলা হয়ে থাকে যে আসলে চাকরি ছাড়লে মানুষ ছাড়ে তার বসকে, প্রতিষ্ঠানকে নয়। বসের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতির কারণে এক প্রতিষ্ঠানে হয়তো কেউ ভালো করছেন না, কিন্তু আরেক প্রতিষ্ঠানে হয়তো অন্য কারও অধীনে তিনি খুব ভালো করছেন। চাকরির ক্ষেত্রে তাই অধীন কর্মী ও তাঁর তত্ত্বাবধায়ক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে সুসম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ পরিচালনা বিভাগে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ওমর ফারুক মনে করেন, এককথায়, ভালো বস বা তত্ত্বাবধায়ক মানে কাজের ভালো পরিবেশ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সহজ সম্পর্ক হলে কাজ করে আরাম। অযথাই মেজাজ খারাপ না করে তিনি যদি ভালোভাবে কোনো কাজ বা ভুলগুলো বুঝিয়ে দেন, সহযোগী মনোভাবাপন্ন হন, তবে তাঁর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সহজ হয়। আর এই ভালো বোঝাপড়া কর্মীদের বাড়তি চাপমুক্ত রাখে। তাঁরা মানসিকভাবে ভালো থাকেন বলেই কাজে আরও উদ্যমী হন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সহজ ও সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে যা করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন এম জুলফিকার হোসেন— তত্ত্বাবধায়কের কাজের ধারা বুঝতে হবে। তিনি কর্মীদের কাছে কী আশা করছেন তা বুঝতে পারলে সে ধারায় কাজ করে তাঁকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব।
কাজের মাধ্যমেই অর্জন করে নিতে হবে তত্ত্বাবধায়কের আস্থা ও বিশ্বাস।
তত্ত্বাবধায়ককে সম্মান করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তত্ত্বাবধায়ক নিজ থেকে না করলেও, কাজের অগ্রগতি ও মূল্যায়ন সম্বন্ধে প্রায়ই তাঁর সঙ্গে কথা বলা ও মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
তত্ত্বাবধানকারী ব্যবস্থাপক এমনিই ব্যস্ত মানুষ। যোগাযোগ করতে গিয়ে অযথাই তাঁর বেশি সময় নিয়ে ফেলছেন কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।
অন্তর্মুখী না হয়ে কাজের ক্ষেত্রে নিজের কোনো অর্জন বা সাফল্য সম্পর্কে তাঁকে জানানো উচিত।
কাজসংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ বা ভাবনা অবশ্যই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।
তাঁর মন-মেজাজ কী অবস্থায় আছে, তা বোঝার চেষ্টা করে সেভাবে মিথস্ক্রিয়া করাই ভালো।
দ্বিমত হতেই পারে, তবে তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কখনোই সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্বের পর্যায়ে যাওয়া যাবে না। কোনো বিষয়ে তাঁর ব্যবহার বা কথা পছন্দ না হলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধত বা পাল্টা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। নিজেকে ও তাঁর মেজাজকে থিতু হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। দরকারে পরে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিনয়ীভাবে আলাপ করা যেতে পারে।
ইতিমধ্যেই যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়ে থাকে, তবে অবিলম্বে তা স্বাভাবিক করা শুরু করতে হবে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে। তবে এম জুলফিকার হোসেন মনে করেন, এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ তত্ত্বাবধায়কেরই নেওয়া উচিত। কারণ, একটি প্রতিষ্ঠানে বসের দায়িত্বই হলো তাঁর অধীন যেসব নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন, কাজের প্রতি তাঁদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, যাতে তাঁদের কাজের স্পৃহা বহুগুণে বাড়ে এবং এভাবে বেশি কাজ আদায় করা সম্ভব হয়। আর এ জন্যই অধীন কর্মীদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার, যাতে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব না সৃষ্টি হয়। এভাবে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হয়। নিজের তত্ত্বাবধায়কের ওপর অধীন কর্মীরও ভরসা তৈরি হয়, তিনি কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাই আত্মবিশ্বাসী দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বই মুখ্য।’
সুসম্পর্ক তৈরিতে তত্ত্বাবধায়কের যা করণীয়, তা নিয়ে বললেন তিনি—
সব সময় প্রাণবন্ত, ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা চাই, যেন তা অধীন দলের মধ্যে উদ্দীপনা ছড়ায়।
কর্মীর প্রকৃতি বুঝে সে অনুযায়ী আচরণে তাঁর কাছ থেকে কাজ আদায় করা সম্ভব।
কর্মীর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় ও চারিত্রিক খুঁটিনাটি যেমন বেশভূষা, চলার ধরন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে যাওয়া ঠিক নয়। ভালো তত্ত্বাবধায়ক একজন ভালো শ্রোতা ও ভালো প্রশিক্ষক। কর্মীদের কেউ কোনো সমস্যা বা উদ্যোগের কথা বলতে এলে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। এতে তত্ত্বাবধায়কের ওপর তাঁর আস্থা বাড়বে এবং দক্ষ প্রশিক্ষকের মতো ধৈর্যসহকারে তাঁর খামতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে শুধরে দেওয়া প্রয়োজন।
কর্মী ভালো কাজ করলে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে এবং তারিফ করতে হবে। তবে তা যাতে সবার সামনে বারবার না হয়ে যায়, যাতে মনে হতে পারে তাঁর প্রতি পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। সবার সামনে সমালোচনা বা ভর্ৎসনাও করা কখনোই উচিত নয়।
কারণে-অকারণে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে অধীন কর্মীদের সময় নিয়ে ফেলা উচিত নয়। সময় ব্যবস্থাপনার দিকে তত্ত্বাবধায়কেরই নজর রাখা দরকার।
অধীন কর্মীকে কাজ দিয়ে বারবার তদারকি, তাগাদা না করলে বরং অধীন কর্মী আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজ করতে শেখেন।
একজন অভিজ্ঞ, সুযোগ্য, গতিময় তত্ত্বাবধায়কের এটাও খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে এই প্রজন্মের নতুন চাকুরেদের চাহিদা, প্রকৃতি, আচরণ—সবই আগের প্রজন্মের চেয়ে আলাদা। তাই কাজ আদায়ের ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে আচরণও সেভাবেই হওয়া চাই। এভাবে অধীন কর্মীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন কাজ আদায় করা যাবে, যা শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণের জন্য লাভজনক, তথা তত্ত্বাবধায়ক ও কর্মীর পেশাগত উন্নতিতে সহায়ক।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সহজ ও সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে যা করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন এম জুলফিকার হোসেন— তত্ত্বাবধায়কের কাজের ধারা বুঝতে হবে। তিনি কর্মীদের কাছে কী আশা করছেন তা বুঝতে পারলে সে ধারায় কাজ করে তাঁকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব।
কাজের মাধ্যমেই অর্জন করে নিতে হবে তত্ত্বাবধায়কের আস্থা ও বিশ্বাস।
তত্ত্বাবধায়ককে সম্মান করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তত্ত্বাবধায়ক নিজ থেকে না করলেও, কাজের অগ্রগতি ও মূল্যায়ন সম্বন্ধে প্রায়ই তাঁর সঙ্গে কথা বলা ও মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
তত্ত্বাবধানকারী ব্যবস্থাপক এমনিই ব্যস্ত মানুষ। যোগাযোগ করতে গিয়ে অযথাই তাঁর বেশি সময় নিয়ে ফেলছেন কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।
অন্তর্মুখী না হয়ে কাজের ক্ষেত্রে নিজের কোনো অর্জন বা সাফল্য সম্পর্কে তাঁকে জানানো উচিত।
কাজসংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ বা ভাবনা অবশ্যই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।
তাঁর মন-মেজাজ কী অবস্থায় আছে, তা বোঝার চেষ্টা করে সেভাবে মিথস্ক্রিয়া করাই ভালো।
দ্বিমত হতেই পারে, তবে তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কখনোই সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্বের পর্যায়ে যাওয়া যাবে না। কোনো বিষয়ে তাঁর ব্যবহার বা কথা পছন্দ না হলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধত বা পাল্টা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। নিজেকে ও তাঁর মেজাজকে থিতু হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। দরকারে পরে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিনয়ীভাবে আলাপ করা যেতে পারে।
ইতিমধ্যেই যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়ে থাকে, তবে অবিলম্বে তা স্বাভাবিক করা শুরু করতে হবে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে। তবে এম জুলফিকার হোসেন মনে করেন, এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ তত্ত্বাবধায়কেরই নেওয়া উচিত। কারণ, একটি প্রতিষ্ঠানে বসের দায়িত্বই হলো তাঁর অধীন যেসব নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন, কাজের প্রতি তাঁদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, যাতে তাঁদের কাজের স্পৃহা বহুগুণে বাড়ে এবং এভাবে বেশি কাজ আদায় করা সম্ভব হয়। আর এ জন্যই অধীন কর্মীদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার, যাতে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব না সৃষ্টি হয়। এভাবে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হয়। নিজের তত্ত্বাবধায়কের ওপর অধীন কর্মীরও ভরসা তৈরি হয়, তিনি কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাই আত্মবিশ্বাসী দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বই মুখ্য।’
সুসম্পর্ক তৈরিতে তত্ত্বাবধায়কের যা করণীয়, তা নিয়ে বললেন তিনি—
সব সময় প্রাণবন্ত, ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা চাই, যেন তা অধীন দলের মধ্যে উদ্দীপনা ছড়ায়।
কর্মীর প্রকৃতি বুঝে সে অনুযায়ী আচরণে তাঁর কাছ থেকে কাজ আদায় করা সম্ভব।
কর্মীর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় ও চারিত্রিক খুঁটিনাটি যেমন বেশভূষা, চলার ধরন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে যাওয়া ঠিক নয়। ভালো তত্ত্বাবধায়ক একজন ভালো শ্রোতা ও ভালো প্রশিক্ষক। কর্মীদের কেউ কোনো সমস্যা বা উদ্যোগের কথা বলতে এলে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। এতে তত্ত্বাবধায়কের ওপর তাঁর আস্থা বাড়বে এবং দক্ষ প্রশিক্ষকের মতো ধৈর্যসহকারে তাঁর খামতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে শুধরে দেওয়া প্রয়োজন।
কর্মী ভালো কাজ করলে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে এবং তারিফ করতে হবে। তবে তা যাতে সবার সামনে বারবার না হয়ে যায়, যাতে মনে হতে পারে তাঁর প্রতি পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। সবার সামনে সমালোচনা বা ভর্ৎসনাও করা কখনোই উচিত নয়।
কারণে-অকারণে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে অধীন কর্মীদের সময় নিয়ে ফেলা উচিত নয়। সময় ব্যবস্থাপনার দিকে তত্ত্বাবধায়কেরই নজর রাখা দরকার।
অধীন কর্মীকে কাজ দিয়ে বারবার তদারকি, তাগাদা না করলে বরং অধীন কর্মী আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজ করতে শেখেন।
একজন অভিজ্ঞ, সুযোগ্য, গতিময় তত্ত্বাবধায়কের এটাও খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে এই প্রজন্মের নতুন চাকুরেদের চাহিদা, প্রকৃতি, আচরণ—সবই আগের প্রজন্মের চেয়ে আলাদা। তাই কাজ আদায়ের ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে আচরণও সেভাবেই হওয়া চাই। এভাবে অধীন কর্মীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন কাজ আদায় করা যাবে, যা শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণের জন্য লাভজনক, তথা তত্ত্বাবধায়ক ও কর্মীর পেশাগত উন্নতিতে সহায়ক।
No comments