বাহরাইনে ১০ বাংলাদেশি অগ্নিদগ্ধ

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে তখনো দিনের আলো ছড়ায়নি। এরই মধ্যে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। বাহরাইনের রাজধানী মানামা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রিফা এলাকায় একটি বাড়ির এক কক্ষে ১১ বাংলাদেশি শ্রমিক বাস করতেন।


রবিবার ভোরে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সেখানে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে ঘুমন্ত ১১ বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জন অগ্নিদগ্ধ ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। বেঁচে আছেন মাত্র একজন। বাহরাইনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে প্রকাশ, নিহত ১০ জনের মধ্যে আটজন কুমিল্লার এবং দুজন চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে প্রায় সর্বস্ব খুইয়ে যাঁরা পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশ-বিভুঁইয়ে তাঁরা শেষ পর্যন্ত মর্মন্তুদ সংবাদের শিরোনাম হলেন। আমরা এ মর্মন্তুদ ঘটনায় গভীর শোক জ্ঞাপনের পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।
যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে কাজের সন্ধানে, উপার্জনের লক্ষ্যে যান তাঁদের বেশির ভাগকে প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে চলতে হয়। জীবনযাপনের শক্ত শিকলে সেখানেও বাঁধা থাকেন তাঁরা। উপার্জিত অর্থ থেকে যতটা পারেন সাশ্রয় করে দেশে পাঠানোর চেষ্টা করেন। আর এ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে তাঁদের অনেক ক্ষেত্রেই মানবেতর জীবনযাপনের পথ বেছে নিতে হয়। বাহরাইনে বাংলাদেশের এই হতভাগ্য শ্রমিকরাও তা-ই করেছিলেন। বাহরাইনের ওই এলাকায়ই প্রবাসী শ্রমিকরা তুলনামূলক কম ভাড়ায় গাদাগাদি করে বাস করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশ, এসব বাসস্থান কক্ষের কোনো জানালা বা বহির্গমন ব্যবস্থা নেই। সেসব স্থানে কোনো রকমে একটু বিশ্রাম বা অবকাশ যাপন করে আবার কাজের সন্ধানে কিংবা কর্মস্থলে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়া। এ রকম নিয়তি অসংখ্য প্রবাসীর। হতভাগ্যদের পরিবার-পরিজন ও স্বজনদের আর্তনাদের যেসব সচিত্র প্রতিবেদন দেশের পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত-প্রকাশিত হয়েছে, এক কথায় তা এতই মর্মস্পর্শী যে ভাষায় প্রকাশ করা দুরূহ। তাঁদের শোকের মাতম থামিয়ে দেওয়া সহজসাধ্য নয়। একে তো তাঁরা হারিয়েছেন তাঁদের স্বজনদের, অন্যদিকে প্রায় সব কিছু খুইয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে যাঁরা বিদেশে পাড়ি দিয়ে দিনবদলের সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন, তাঁদের ধার-দেনা পরিশোধের বিরাট বোঝা কী করে বইবেন পরিবারের সদস্যরা- এ নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকার হাত বাড়িয়ে না দিলে দুর্ঘটনা-পরবর্তী কঠিন পরিস্থিতি থেকে তাঁদের রক্ষা করা কঠিন।
আমরা আশা করি, সরকার যত দ্রুত সম্ভব হতভাগ্যদের লাশ দেশে আনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। তাঁদের যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা অপূরণীয় বটে; তবু পরিবারের সদস্যদের বাঁচানোর লক্ষ্যে সরকারকে এ প্রয়াস নিতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সে দেশ অথবা তাঁদের কর্মস্থল থেকেও সাহায্য-সহযোগিতা পান। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সে দেশ থেকেও মানবিক সাড়া মিলবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.