ডিজিটাল শিক্ষা-ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম by জাকারিয়া স্বপন
এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতের বাজেট বাড়িয়ে যেন অন্তত ৪ ভাগ করা হয়। তাহলে তো আর আমাদের অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না, কারও কাছে হাত পাততে হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া কেন মোবাইল কোম্পানিগুলোর দয়ার ওপর নির্ভরশীল হবে? আমরা চাই, আপনার সেই ক্ষমতা হোক।
আপনি অন্য কোনো খাত থেকে বাজেট কেটে হলেও শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়ে দিন এবং আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটান। তাহলেই হয়তো ২০২১ সালের সেই লক্ষ্যে আমাদের অনেক যোগ্যতার মূল যোগ্যতাটি অর্জন করা সম্ভব হবে
রোববার (২০ মে, ২০১২) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও শিক্ষক কর্তৃক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ'-এর উদ্বোধন করেন। উদ্দেশ্য আগামী বছরের মধ্যে দেশের ২০ হাজার ৫০০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় এই ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপন করা। এ প্রকল্পের আওতায় স্কুলগুলোকে একটি করে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর এবং ইন্টারনেট মডেম দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) নীতিমালা এখনও সরকারিভাবে অনুমোদিত না হলেও এখানে তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এর ভেতর মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক ২৭০টি এবং বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল দিয়েছে ৬৬টি স্কুলের যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি স্থানীয় অনেক ব্যক্তি নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের স্কুলগুলোকে এ যন্ত্রপাতি কিনে দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি স্কুলে এই সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুষ্ঠানটিতে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। দেশের চারটি জায়গার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে তিনি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। যশোরের মনিরামপুর গার্লস স্কুল, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জিটি স্কুল, কুমিল্লার দেবিদ্বারের স্কুল এবং রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স করে তাদের ক্লাসের কার্যক্রম দেখানো হয়।
তিনি প্রথমেই যশোরের মনিরামপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা। সেই সুদূরে ক্লাসরুমে বসে ছাত্রীরা সরাসরি কথা বলল দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এটা আগে কখনোই সম্ভব ছিল না। তিনি খুবই সাবলীলভাবে ছাত্রীদের কথা শোনেন, তাদের সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং বলেন, 'বড় হলে তোমরা আমার মতো প্রধানমন্ত্রীও হতে পারো।' তারপর তিনি কথা বলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের স্কুলের ছেলেদের সঙ্গে, তারপর টুঙ্গিপাড়া এবং সবশেষে রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে। সে সময় তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, তারা যে কনটেন্ট তৈরি করছেন সেগুলোর মান ঠিক আছে কি-না, ক্লাসরুমে সেগুলো পড়ানো হচ্ছে কি-না এবং এগুলো দেখার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে বলেন। খুবই আনন্দঘন পরিবেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকরা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও এ-টু-আই প্রকল্পের পরিচালক নজরুল ইসলাম খান তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে মাত্র শতকরা ১ ভাগ শিশু স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, যা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য খুবই বড় একটি অর্জন। এই সরকারের সময়ে ২০ লাখ নতুন ছাত্রছাত্রীকে স্কুলের আওতায় আনা হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এখনও অসংখ্য ছাত্রছাত্রী প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক স্কুল থেকে ড্রপআউট হয়ে যায়। তাদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করার লক্ষ্যে এই ডিজিটাল ক্লাসরুমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাত্র এক লাখ টাকার বিনিময়ে একটি স্কুলে একটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর এবং একটি ইন্টারনেট মডেম দিয়ে এই ক্লাসরুম তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করতে যেখানে খরচ হতে পারে ২০ লাখ টাকার মতো, সেখানে এই এক লাখ টাকায় একটি ডিজিটাল ক্লাসরুম হতে পারে।
তিনি এই প্রকল্পটিকে সার্থক করার জন্য টেলিফোন কোম্পানিগুলোর সহায়তা প্রাপ্তির আশা করে বলেন, যদি টেলিকম কোম্পানিগুলো ঠিকমতো সাহায্য করে তাহলে আগামী ৩ বছরের ভেতর সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ক্লাসরুম দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত হবে এবং একমাত্র শিক্ষাই সে কাজটি করতে পারে। মানুষকে শিক্ষিত করে দিলে তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য এবং কর্মসংস্থান করে নিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবং তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার যদি ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি সব স্কুল-কলেজকে ডিজিটাল করে দিতাম। আমরা গরিব দেশ, আমাদের ক্ষমতা সীমিত। তাই অন্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি একটু দ্বিমত পোষণ করতে চাই। তিনি ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশকে যদি একটি মধ্যম আয়ের দেশ করতে হয়, তাহলে আমাদের মানুষগুলোকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং তারাই তাদের কর্মসংস্থান করে নেবে। কিন্তু সেই শিক্ষার জন্য যদি পিপিপির ওপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে সেটা সফল হবে না। বর্তমান পৃথিবীতে শিক্ষা সবচেয়ে কঠিন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে তো শিক্ষা গোটা বিশ্বে ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে, পাশাপাশি মাত্রাগত পরিবর্তনও হয়েছে অনেক এবং আরও পরিবর্তন সামনে আসছে। প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার বাজার আরও কঠিন হচ্ছে।
একটি দেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হবে, তখন সেই সিস্টেমের সঙ্গে আরও হাজারো নতুন বিষয় এসে যোগ হবে। এটি কখনোই একটি প্যারামিটার দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। এর একটি বৈজ্ঞানিক মডেল তৈরি করে গবেষণা করার বিষয় হলো, বাংলাদেশ যদি ২০২১ সালে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হয়, তাহলে তখনকার লোকসংখ্যা, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ইত্যাদি বিষয় কোনটা কীভাবে পাল্টে যাবে_ সেগুলো নিয়ে এখনই স্টিমুলেট করা যেতে পারে এবং সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে যে বিষয়টিতে জোর দেওয়ার জন্য এ লেখার অবতারণা, তা হলো শিক্ষা। আমাদের জীবনে নতুন অনেক কিছু চলে এসেছে এবং আসবে। মানুষ যত বাড়বে, আমাদের তত বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শিক্ষা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। এটা ঠিকমতো না হলে এখন যে গোলমেলে পরিস্থিতি রয়েছে, দিব্যি দিয়ে বলে দেওয়া যায়, ২০২১ সালে পরিস্থিতি আরও গোলমেলে হবে। আর সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন হবে সর্বত্র এবং তার বিশাল একটি অংশজুড়ে থাকবে প্রযুক্তি জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষা খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি বাজেটের মাত্র দুই ভাগের একটু বেশি। এই যদি হয় আমাদের বাজেটের অবস্থা, তাহলে তা শিক্ষা খাতে যে তেমন গুণগত মান বাড়াবে না, সেটা নিশ্চিত।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতের বাজেট বাড়িয়ে যেন অন্তত ৪ ভাগ করা হয়। তাহলে তো আর আমাদের অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না, কারও কাছে হাত পাততেও হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া কেন মোবাইল কোম্পানিগুলোর দয়ার ওপর নির্ভরশীল হবে? আমরা চাই, আপনার সেই ক্ষমতা হোক। আপনি অন্য কোনো খাত থেকে বাজেট কেটে হলেও শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়ে দিন এবং আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটান। তাহলেই হয়তো ২০২১ সালের সেই লক্ষ্যে আমাদের অনেক যোগ্যতার মূল যোগ্যতাটি অর্জন করা সম্ভব হবে।
জাকারিয়া স্বপন :তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ
zs@priyo.com
রোববার (২০ মে, ২০১২) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও শিক্ষক কর্তৃক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ'-এর উদ্বোধন করেন। উদ্দেশ্য আগামী বছরের মধ্যে দেশের ২০ হাজার ৫০০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় এই ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপন করা। এ প্রকল্পের আওতায় স্কুলগুলোকে একটি করে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর এবং ইন্টারনেট মডেম দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) নীতিমালা এখনও সরকারিভাবে অনুমোদিত না হলেও এখানে তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এর ভেতর মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক ২৭০টি এবং বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল দিয়েছে ৬৬টি স্কুলের যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি স্থানীয় অনেক ব্যক্তি নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের স্কুলগুলোকে এ যন্ত্রপাতি কিনে দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি স্কুলে এই সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুষ্ঠানটিতে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। দেশের চারটি জায়গার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে তিনি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। যশোরের মনিরামপুর গার্লস স্কুল, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জিটি স্কুল, কুমিল্লার দেবিদ্বারের স্কুল এবং রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স করে তাদের ক্লাসের কার্যক্রম দেখানো হয়।
তিনি প্রথমেই যশোরের মনিরামপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা। সেই সুদূরে ক্লাসরুমে বসে ছাত্রীরা সরাসরি কথা বলল দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এটা আগে কখনোই সম্ভব ছিল না। তিনি খুবই সাবলীলভাবে ছাত্রীদের কথা শোনেন, তাদের সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং বলেন, 'বড় হলে তোমরা আমার মতো প্রধানমন্ত্রীও হতে পারো।' তারপর তিনি কথা বলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের স্কুলের ছেলেদের সঙ্গে, তারপর টুঙ্গিপাড়া এবং সবশেষে রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে। সে সময় তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, তারা যে কনটেন্ট তৈরি করছেন সেগুলোর মান ঠিক আছে কি-না, ক্লাসরুমে সেগুলো পড়ানো হচ্ছে কি-না এবং এগুলো দেখার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে বলেন। খুবই আনন্দঘন পরিবেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকরা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও এ-টু-আই প্রকল্পের পরিচালক নজরুল ইসলাম খান তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে মাত্র শতকরা ১ ভাগ শিশু স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, যা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য খুবই বড় একটি অর্জন। এই সরকারের সময়ে ২০ লাখ নতুন ছাত্রছাত্রীকে স্কুলের আওতায় আনা হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এখনও অসংখ্য ছাত্রছাত্রী প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক স্কুল থেকে ড্রপআউট হয়ে যায়। তাদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করার লক্ষ্যে এই ডিজিটাল ক্লাসরুমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাত্র এক লাখ টাকার বিনিময়ে একটি স্কুলে একটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর এবং একটি ইন্টারনেট মডেম দিয়ে এই ক্লাসরুম তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করতে যেখানে খরচ হতে পারে ২০ লাখ টাকার মতো, সেখানে এই এক লাখ টাকায় একটি ডিজিটাল ক্লাসরুম হতে পারে।
তিনি এই প্রকল্পটিকে সার্থক করার জন্য টেলিফোন কোম্পানিগুলোর সহায়তা প্রাপ্তির আশা করে বলেন, যদি টেলিকম কোম্পানিগুলো ঠিকমতো সাহায্য করে তাহলে আগামী ৩ বছরের ভেতর সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ক্লাসরুম দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত হবে এবং একমাত্র শিক্ষাই সে কাজটি করতে পারে। মানুষকে শিক্ষিত করে দিলে তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য এবং কর্মসংস্থান করে নিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবং তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার যদি ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি সব স্কুল-কলেজকে ডিজিটাল করে দিতাম। আমরা গরিব দেশ, আমাদের ক্ষমতা সীমিত। তাই অন্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি একটু দ্বিমত পোষণ করতে চাই। তিনি ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশকে যদি একটি মধ্যম আয়ের দেশ করতে হয়, তাহলে আমাদের মানুষগুলোকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং তারাই তাদের কর্মসংস্থান করে নেবে। কিন্তু সেই শিক্ষার জন্য যদি পিপিপির ওপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে সেটা সফল হবে না। বর্তমান পৃথিবীতে শিক্ষা সবচেয়ে কঠিন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে তো শিক্ষা গোটা বিশ্বে ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে, পাশাপাশি মাত্রাগত পরিবর্তনও হয়েছে অনেক এবং আরও পরিবর্তন সামনে আসছে। প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার বাজার আরও কঠিন হচ্ছে।
একটি দেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হবে, তখন সেই সিস্টেমের সঙ্গে আরও হাজারো নতুন বিষয় এসে যোগ হবে। এটি কখনোই একটি প্যারামিটার দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। এর একটি বৈজ্ঞানিক মডেল তৈরি করে গবেষণা করার বিষয় হলো, বাংলাদেশ যদি ২০২১ সালে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হয়, তাহলে তখনকার লোকসংখ্যা, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ইত্যাদি বিষয় কোনটা কীভাবে পাল্টে যাবে_ সেগুলো নিয়ে এখনই স্টিমুলেট করা যেতে পারে এবং সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে যে বিষয়টিতে জোর দেওয়ার জন্য এ লেখার অবতারণা, তা হলো শিক্ষা। আমাদের জীবনে নতুন অনেক কিছু চলে এসেছে এবং আসবে। মানুষ যত বাড়বে, আমাদের তত বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শিক্ষা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। এটা ঠিকমতো না হলে এখন যে গোলমেলে পরিস্থিতি রয়েছে, দিব্যি দিয়ে বলে দেওয়া যায়, ২০২১ সালে পরিস্থিতি আরও গোলমেলে হবে। আর সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন হবে সর্বত্র এবং তার বিশাল একটি অংশজুড়ে থাকবে প্রযুক্তি জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষা খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি বাজেটের মাত্র দুই ভাগের একটু বেশি। এই যদি হয় আমাদের বাজেটের অবস্থা, তাহলে তা শিক্ষা খাতে যে তেমন গুণগত মান বাড়াবে না, সেটা নিশ্চিত।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতের বাজেট বাড়িয়ে যেন অন্তত ৪ ভাগ করা হয়। তাহলে তো আর আমাদের অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না, কারও কাছে হাত পাততেও হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া কেন মোবাইল কোম্পানিগুলোর দয়ার ওপর নির্ভরশীল হবে? আমরা চাই, আপনার সেই ক্ষমতা হোক। আপনি অন্য কোনো খাত থেকে বাজেট কেটে হলেও শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়ে দিন এবং আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটান। তাহলেই হয়তো ২০২১ সালের সেই লক্ষ্যে আমাদের অনেক যোগ্যতার মূল যোগ্যতাটি অর্জন করা সম্ভব হবে।
জাকারিয়া স্বপন :তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ
zs@priyo.com
No comments