শিক্ষা-কবির ক্ষোভ এবং লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষা by ফারুক যোশী
এলোমেলো অক্ষরগুলো যারা দেখে তাদের জীবনের শুরুতে, সেই শিশুগুলোকেই নিয়ে আসতে হবে স্বচ্ছ সূর্যালোকে। আর এভাবে সবার মিলিত প্রয়াসেই পাল্টে যেতে পারে একটি প্রজন্ম, একটি সমাজ; সর্বোপরি ব্রিটেনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা এ মাসের প্রথম দিনে একটা রিপোর্ট বেরিয়েছে লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে।
যে রিপোর্টটি প্রকাশের পর বিস্মিত হয়েছেন সবাই। এমনকি ব্রিটেনের গোটা সরকার ব্যবস্থাকেই ধাক্কা দিয়েছে এ রিপোর্ট। ইংল্যান্ডের মতো দেশ, যেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ওই দেশটির একটা ইগো আছে; প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে অন্যান্য দেশের মতো তারা দেখে শিশুদের মেধা বিকাশের প্রথম ধাপ হিসেবে। প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ কাজ শুরু করে শিশুর পাঁচ বছর বয়সের আগ থেকেই। শিশুর জন্মনিবন্ধন থেকে তথ্য নিয়ে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ শিশুর অভিভাবকের কাছে ভর্তিপ্যাক পাঠায় এবং এভাবেই শুরু হয় তাদের পথচলা। এ শিশুরা স্কুলে যায় ঠিকই, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা শিক্ষক-শিক্ষিকা কি দেখাশোনা করছেন ওই শিশুদের তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর সে কারণেই কি ঝরে যাচ্ছে এই সভ্যতায় অসংখ্য শিশু, তার এক দুঃখজনক চিত্র হলো গত সপ্তাহের লন্ডনের বহুল প্রচারিত ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের ওই প্রতিবেদন।
লন্ডনের ওই সান্ধ্য দৈনিক তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে এনেছে লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কথা। হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স এগারো, দেখা গেছে তাদের পড়ার মান এতই নিচে যে, তারা সাত বছর বয়সের শিশুদের সমমানের দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। দেখা গেছে, আগে যেখানে ৪ জন শিশুর মধ্যে একজন ছিল এ রকম জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড (প্রাথমিক শিক্ষায়) পূরণে অক্ষম; এ বছর এসে দেখা গেছে তা আরও নিম্নগামী হয়েছে। ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড রিপোর্ট করেছে, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু ভালো করে লিখতে কিংবা পড়তে পারে না। এই লিটারেসি ক্রাইসিস এমন পর্যায়ে যে, পত্রিকাটি বলছে, জাতীয় শিক্ষা গাইডলাইন্স অনুযায়ী এগারোটি বারার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছেলেমেয়ে কার্যত অশিক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। পৃথিবীর একটি বিখ্যাত শহর লন্ডনের বিভিন্ন বারা বিশেষত বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেট কিংবা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কালো অধ্যুষিত হেকনি বারাসহ অন্তত এগারোটি বারায় এ রকম চিত্র সরকারের ওপর মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ চিত্রটি জনসমক্ষে তুলে ধরতে অর্থাৎ ফ্রিডম অব ইনফরমেশনের জন্য পাঁচ মাস লড়াই চালাতে হয়েছে ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের। চাঞ্চল্যকর এ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর এডুকেশন মিনিস্টার মিসেল গোব এ ক্রাইসিসকে বলতে গেলে সরকারের এক ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন এবং বলেছেন, যে শিশুরা পড়তে জানে না তাদের সারাটি জীবন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে এক ধরনের অজ্ঞতার অন্ধকার গৃহের মধ্যেই অতিবাহিত করতে হয়। প্রকারান্তরে এই রিপোর্ট সরকারের এডুকেশন বিভাগের বিরুদ্ধে গেলেও শিশুদের এই পেছনে পড়ে থাকার কথা জনসমক্ষে তুলে ধরার সাহসী ও এ সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় রিপোর্টটির জন্য তিনি এই সান্ধ্য দৈনিকটির প্রশংসাও করেছেন।
এবার আসা যেতে পারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাদান পদ্ধতির ব্যাপারে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেক সময় অভিযোগ করে, প্যারেন্টস কিংবা অভিভাবকরা নিয়মিত শিশুদের খেয়াল রাখেন না। বিশেষত অভিবাসী প্যারেন্টদের, এমনকি প্যারেন্টস মিটিংয়ে উপস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু কার্যত দেখা গেছে অভিবাসীদের ছেলেমেয়েরাই ভালো ফল করছে। অর্থাৎ যদি অভিবাসীদের ওপর এ অভিযোগ করেই থাকেন, তবুও একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বাড়িতে তুলনামূলকভাবে অভিবাসীরাই তাদের সন্তানদের খেয়াল রাখে বেশি। অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের নেগলিজেন্সিও এখানে এক ধরনের বড় ভূমিকা রাখে। অনেক সময় স্কুল শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকারাও তাদের পেশাদারিত্বের (প্রফেশনালিজম) বাইরে গিয়ে কোনো ব্যাপার দেখার চেষ্টা করেন না।
লন্ডনের বাইরে ওল্ডহ্যাম শহরের একটি সেকেন্ডারি স্কুলের চিত্র এখানে তুলে ধরলে এ আলোচনাটা আরও স্পষ্ট হতে পারে। গ্রেইন্জ স্কুল নামে এই স্কুলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের স্কুল। দীর্ঘদিন থেকে এ স্কুলটি খারাপ ফল করে আসছে। স্কুলের এই বয়সের ছেলেমেয়েরা গ্যাংফাইট করত। নানা অনাচারে এ স্কুলটি এক আলোচিত নাম। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলও এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। কিন্তু শেষমেশ মাত্র গত বছর সেপ্টেম্বরে এই স্কুলটি তার সবকিছু পাল্টে দেয়। স্কুলের নাম পর্যন্ত বদলিয়ে ফেলে। 'ওল্ডহ্যাম একাডেমী নর্থ' নাম দিয়ে নতুনরূপে যাত্রা শুরু করে। কিছু নতুন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ শুরু করে। দেখা গেছে, মাত্র আট-নয় মাসের মাথায় এ স্কুলে আশানুরূপ পরিবর্তন এসেছে। অভিভাবকরা আগের চেয়ে আরও মনোযোগী। ছাত্রছাত্রীরা উদ্যমী। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ কমে গেছে। প্রকাশ্যেই এ ছাত্রছাত্রীরা আগের স্কুল কর্তৃপক্ষ এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উন্নাসিক মনোভাবের কথা ক্ষোভের সঙ্গে তুলে ধরে এখন প্রকাশ্যে। শিক্ষকরা, যারা আগেও এখানে কাজ করেছেন, তারাও স্বীকার করছেন তাদের আগের ব্যর্থতার কথা। এ রকম চিত্র ওল্ডহ্যাম শুধু নয়, লন্ডন এবং লন্ডনের বাইরেও অনেক স্কুলের। সে কারণে লন্ডনের ছাত্রছাত্রীদের এসব নেগেটিভ ফলের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়াতে পারবে না কোনোভাবেই। দিন যতই যাচ্ছে, এসব তর্কাতর্কি যতই বাড়ছে, ততই কিন্তু সরকারের শিক্ষা বিভাগের ওপর সব দায়ভার পড়ছে। প্রকারান্তরে এর দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।
যতই বড় বড় কথা বলা হোক না কেন ধারণা করা হয়, পৃথিবীর একটি বিখ্যাত শহর এই লন্ডনেই অন্তত দশ লাখ মানুষ আছে, যারা ইংরেজি পড়তে পুরোপুরি (এনাফ) সমর্থ নয়। দীর্ঘদিন থেকে অনুলি্লখিত এবং অনুন্মোচিত এ রকম রিপোর্ট ব্রিটেনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এক ধরনের বদ্ধ পিঞ্জরের মধ্যে আবদ্ধ রেখেছে। যে কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে একটা অর্ধশিক্ষিত শ্রেণী, যার প্রভাব পড়েছে সব জায়গায়। ব্যবসা এমনকি অফিসেও কিছু জায়গায় এমন কিছু অদক্ষ লোক বসানো হয়েছে। মূলত ওই রকম ব্যবসা কিংবা কোনো কোনো অফিসের রিসেপশনের কাউন্টারে গেলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, ওই শ্রেণীর অদক্ষতার কারণে ব্যবসায়িক এবং অফিসিয়াল সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এডুকেশন মিনিস্টার গোব বলেছেন, তিনি এ প্রজন্মকে অন্ধকার থেকে অবমুক্ত করবেন। কবি জেপানিয়া পৃথিবীর বিভিন্ন স্কুলে কাজ করেছেন এবং অভিজ্ঞতার আলোকেই এ থেকে মুক্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি ভারত এবং চীনের স্কুলগুলোকে ঐক্যের আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলেই মিশ্র সংস্কৃতির এই ব্রিটেন। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণের এক সুন্দর সহাবস্থান। এই সহাবস্থানকে সুসংহত করতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে যেমন বদ্ধপরিকর সরকার, ঠিক তেমনি অভিভাবক, শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী সবাইকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্র থেকে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষত যে শিশুগুলো তাদের ডিসেলেক্সির কারণে ঝরে যেতে পারে, তাদের জন্য সবারই কাজ করতে হবে। এলোমেলো অক্ষরগুলো যারা দেখে তাদের জীবনের শুরুতে, সেই শিশুগুলোকেই নিয়ে আসতে হবে স্বচ্ছ সূর্যালোকে। আর এভাবে সবার মিলিত প্রয়াসেই পাল্টে যেতে পারে একটি প্রজন্ম, একটি সমাজ; সর্বোপরি ব্রিটেনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।
ফারুক যোশী : কলাম লেখক
লন্ডনের ওই সান্ধ্য দৈনিক তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে এনেছে লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কথা। হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স এগারো, দেখা গেছে তাদের পড়ার মান এতই নিচে যে, তারা সাত বছর বয়সের শিশুদের সমমানের দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। দেখা গেছে, আগে যেখানে ৪ জন শিশুর মধ্যে একজন ছিল এ রকম জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড (প্রাথমিক শিক্ষায়) পূরণে অক্ষম; এ বছর এসে দেখা গেছে তা আরও নিম্নগামী হয়েছে। ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড রিপোর্ট করেছে, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু ভালো করে লিখতে কিংবা পড়তে পারে না। এই লিটারেসি ক্রাইসিস এমন পর্যায়ে যে, পত্রিকাটি বলছে, জাতীয় শিক্ষা গাইডলাইন্স অনুযায়ী এগারোটি বারার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছেলেমেয়ে কার্যত অশিক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। পৃথিবীর একটি বিখ্যাত শহর লন্ডনের বিভিন্ন বারা বিশেষত বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেট কিংবা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কালো অধ্যুষিত হেকনি বারাসহ অন্তত এগারোটি বারায় এ রকম চিত্র সরকারের ওপর মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ চিত্রটি জনসমক্ষে তুলে ধরতে অর্থাৎ ফ্রিডম অব ইনফরমেশনের জন্য পাঁচ মাস লড়াই চালাতে হয়েছে ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের। চাঞ্চল্যকর এ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর এডুকেশন মিনিস্টার মিসেল গোব এ ক্রাইসিসকে বলতে গেলে সরকারের এক ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন এবং বলেছেন, যে শিশুরা পড়তে জানে না তাদের সারাটি জীবন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে এক ধরনের অজ্ঞতার অন্ধকার গৃহের মধ্যেই অতিবাহিত করতে হয়। প্রকারান্তরে এই রিপোর্ট সরকারের এডুকেশন বিভাগের বিরুদ্ধে গেলেও শিশুদের এই পেছনে পড়ে থাকার কথা জনসমক্ষে তুলে ধরার সাহসী ও এ সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় রিপোর্টটির জন্য তিনি এই সান্ধ্য দৈনিকটির প্রশংসাও করেছেন।
এবার আসা যেতে পারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাদান পদ্ধতির ব্যাপারে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেক সময় অভিযোগ করে, প্যারেন্টস কিংবা অভিভাবকরা নিয়মিত শিশুদের খেয়াল রাখেন না। বিশেষত অভিবাসী প্যারেন্টদের, এমনকি প্যারেন্টস মিটিংয়ে উপস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু কার্যত দেখা গেছে অভিবাসীদের ছেলেমেয়েরাই ভালো ফল করছে। অর্থাৎ যদি অভিবাসীদের ওপর এ অভিযোগ করেই থাকেন, তবুও একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বাড়িতে তুলনামূলকভাবে অভিবাসীরাই তাদের সন্তানদের খেয়াল রাখে বেশি। অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের নেগলিজেন্সিও এখানে এক ধরনের বড় ভূমিকা রাখে। অনেক সময় স্কুল শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকারাও তাদের পেশাদারিত্বের (প্রফেশনালিজম) বাইরে গিয়ে কোনো ব্যাপার দেখার চেষ্টা করেন না।
লন্ডনের বাইরে ওল্ডহ্যাম শহরের একটি সেকেন্ডারি স্কুলের চিত্র এখানে তুলে ধরলে এ আলোচনাটা আরও স্পষ্ট হতে পারে। গ্রেইন্জ স্কুল নামে এই স্কুলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের স্কুল। দীর্ঘদিন থেকে এ স্কুলটি খারাপ ফল করে আসছে। স্কুলের এই বয়সের ছেলেমেয়েরা গ্যাংফাইট করত। নানা অনাচারে এ স্কুলটি এক আলোচিত নাম। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলও এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। কিন্তু শেষমেশ মাত্র গত বছর সেপ্টেম্বরে এই স্কুলটি তার সবকিছু পাল্টে দেয়। স্কুলের নাম পর্যন্ত বদলিয়ে ফেলে। 'ওল্ডহ্যাম একাডেমী নর্থ' নাম দিয়ে নতুনরূপে যাত্রা শুরু করে। কিছু নতুন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ শুরু করে। দেখা গেছে, মাত্র আট-নয় মাসের মাথায় এ স্কুলে আশানুরূপ পরিবর্তন এসেছে। অভিভাবকরা আগের চেয়ে আরও মনোযোগী। ছাত্রছাত্রীরা উদ্যমী। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ কমে গেছে। প্রকাশ্যেই এ ছাত্রছাত্রীরা আগের স্কুল কর্তৃপক্ষ এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উন্নাসিক মনোভাবের কথা ক্ষোভের সঙ্গে তুলে ধরে এখন প্রকাশ্যে। শিক্ষকরা, যারা আগেও এখানে কাজ করেছেন, তারাও স্বীকার করছেন তাদের আগের ব্যর্থতার কথা। এ রকম চিত্র ওল্ডহ্যাম শুধু নয়, লন্ডন এবং লন্ডনের বাইরেও অনেক স্কুলের। সে কারণে লন্ডনের ছাত্রছাত্রীদের এসব নেগেটিভ ফলের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়াতে পারবে না কোনোভাবেই। দিন যতই যাচ্ছে, এসব তর্কাতর্কি যতই বাড়ছে, ততই কিন্তু সরকারের শিক্ষা বিভাগের ওপর সব দায়ভার পড়ছে। প্রকারান্তরে এর দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।
যতই বড় বড় কথা বলা হোক না কেন ধারণা করা হয়, পৃথিবীর একটি বিখ্যাত শহর এই লন্ডনেই অন্তত দশ লাখ মানুষ আছে, যারা ইংরেজি পড়তে পুরোপুরি (এনাফ) সমর্থ নয়। দীর্ঘদিন থেকে অনুলি্লখিত এবং অনুন্মোচিত এ রকম রিপোর্ট ব্রিটেনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এক ধরনের বদ্ধ পিঞ্জরের মধ্যে আবদ্ধ রেখেছে। যে কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে একটা অর্ধশিক্ষিত শ্রেণী, যার প্রভাব পড়েছে সব জায়গায়। ব্যবসা এমনকি অফিসেও কিছু জায়গায় এমন কিছু অদক্ষ লোক বসানো হয়েছে। মূলত ওই রকম ব্যবসা কিংবা কোনো কোনো অফিসের রিসেপশনের কাউন্টারে গেলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, ওই শ্রেণীর অদক্ষতার কারণে ব্যবসায়িক এবং অফিসিয়াল সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এডুকেশন মিনিস্টার গোব বলেছেন, তিনি এ প্রজন্মকে অন্ধকার থেকে অবমুক্ত করবেন। কবি জেপানিয়া পৃথিবীর বিভিন্ন স্কুলে কাজ করেছেন এবং অভিজ্ঞতার আলোকেই এ থেকে মুক্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি ভারত এবং চীনের স্কুলগুলোকে ঐক্যের আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলেই মিশ্র সংস্কৃতির এই ব্রিটেন। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণের এক সুন্দর সহাবস্থান। এই সহাবস্থানকে সুসংহত করতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে যেমন বদ্ধপরিকর সরকার, ঠিক তেমনি অভিভাবক, শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী সবাইকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্র থেকে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষত যে শিশুগুলো তাদের ডিসেলেক্সির কারণে ঝরে যেতে পারে, তাদের জন্য সবারই কাজ করতে হবে। এলোমেলো অক্ষরগুলো যারা দেখে তাদের জীবনের শুরুতে, সেই শিশুগুলোকেই নিয়ে আসতে হবে স্বচ্ছ সূর্যালোকে। আর এভাবে সবার মিলিত প্রয়াসেই পাল্টে যেতে পারে একটি প্রজন্ম, একটি সমাজ; সর্বোপরি ব্রিটেনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।
ফারুক যোশী : কলাম লেখক
No comments