রেলে ফের নিয়োগ ব্যস্ততা by ভূঁইয়া নজরুল

স্থগিত নিয়োগ কার্যক্রমের বিষয়টি সমাধান না করেই নতুন করে লোকবল নিয়োগ করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। এবার ৯১ ক্যাটাগরিতে চার হাজার ৮৯২ জনকে নিয়োগ করা হবে। যদিও অনিয়মের কারণে দুই মাস আগে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম।


স্থগিত নিয়োগের ব্যাপারে কোনো সমাধানে পৌঁছানোর আগেই নতুন করে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া (বিজ্ঞাপন) শুরু হওয়ায় ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৯ এপ্রিল ও ৭ মে ঢাকার রেল ভবনের সম্মেলনকক্ষে রেলওয়ের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নবনিয়োগ-সংক্রান্ত সভায় নতুন এ নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ৬৮ ক্যাটাগরির সাত হাজার ২৭৫ পদে লোক নিয়োগে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় সে ব্যাপারে তদন্ত করছে রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্তদল। অভিযোগ রয়েছে, সেই নিয়োগ কার্যক্রমে অনিয়মের মাধ্যমে ঘুষের টাকা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন রেলওয়ের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা। ৭০ লাখ টাকাসহ এপ্রিল মাসে ঢাকায় বিজিবির হাতে ধরা পড়ার পর সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন ইউসুফ মৃধা ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) এনামুল হক। এ ঘটনায় পদত্যাগকারী রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম চিহ্নিত হওয়ার পরও এর সুরাহা না করেই নতুনভাবে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (সংস্থাপন) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল গতকাল সোমবার বলেন, 'নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা যাবে না। রেলের স্বার্থেই শূন্য থাকা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর প্রায় ১৬ হাজার পদে নিয়োগ চলমান রাখতে হবে। তবে স্থগিত হওয়া পদগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে ওভারলেপ ও আইনি জটিলতা এড়াতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য দুই অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'
এবারের নিয়োগ কার্যক্রম পুরোপুরি স্বচ্ছভাবে করার অঙ্গীকার জানিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের জিএম মোহাম্মদ তাফাজ্জল হোসেন বলেন, 'নিয়োগের আবেদনপত্রে প্রার্থীদের যোগাযোগের জন্য কোনো টেলিফোন নম্বরের ঘর রাখা হয়নি। আগে এই টেলিফোন নম্বরে কল করেই প্রার্থীদের ঘুষ দেওয়ার জন্য ডাকা হতো, এবার আর তা সম্ভব হবে না।'
আবেদন সহজ করতে ওয়েবসাইটে ফরম দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তাফাজ্জল হোসেন বলেন, 'আগে প্রার্থীরা নিকটস্থ রেলস্টেশনে গিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করত। এবার তারা রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করে জমা দেবে। এতে হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে।'
রেল মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে জানিয়ে জিএম বলেন, 'এর অনেক আগেই নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা যাবে। তবে স্বচ্ছতার জন্য আমাদের সবাইকে আগে স্বচ্ছ মানসিকতার অধিকারী হতে হবে।'
স্থগিত হওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে খালাসি পদে আবেদন করা প্রার্থী লোকমান হোসেন বলেন, 'আমাদের নিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা না দিয়ে আবার নতুন করে খালাসি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগের প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরা নানা রকম সংশয়ে রয়েছি।' লোকমানের মতো এ ধরনের অসংখ্য ক্যাটাগরির হাজারো প্রার্থী তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগছেন।
নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া
গত বছরের নিয়োগ কমিটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। সভার কার্যবিবরণীর ৯ দশমিক ৫ ধারায় নবনিয়োগের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অতিরিক্ত বিভাগীয় প্রধান/পরিচালক (আহ্বায়ক), সিনিয়র স্কেল কর্মকর্তা (সদস্য) সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করতে হবে। আহ্বায়ক যে অঞ্চলের হবেন সদস্যসচিব (সংস্থাপন প্রতিনিধি) সে অঞ্চলের হতে হবে। কমসংখ্যক পদের ক্ষেত্রে একাধিক ক্যাটাগরির জন্য একটি নির্বাচনী কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কোনো কমিটিতে এক বিভাগের একাধিক সদস্য রাখা যাবে না। কোনো কমিটির একজন সদস্য অন্যজনের সরাসরি অধস্তন কর্মকর্তা হতে পারবেন না। প্রাপ্ত আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহাব্যবস্থাপক সিনিয়র স্কেল পর্যায়ের কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন-চার সদস্যবিশিষ্ট প্রত্যেক ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে পৃথক বাছাই কমিটি গঠন করবেন। বাছাই কমিটি বাছাই শেষে প্রতিবেদন পেশ করবে।
আবেদনপত্র অনলাইনে : এবার রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে নির্ধারিত ঠিকানায় জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার সময় তৃতীয় শ্রেণীর পদের জন্য ১০০ টাকা ও চতুর্থ শ্রেণীর পদের জন্য ৫০ টাকার ট্রেজারি চালান রেলপথ ও রেল মন্ত্রণালয়ের কোডে জমা দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.