'আরব বসন্ত'র কঠিন চ্যালেঞ্জ-ঐক্যবদ্ধ না হলে লিবিয়ারও আফগানিস্তান বা ইরাক হওয়ার আশঙ্কা by মেহেদী হাসান
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান শুরুর পর এখনো প্রত্যাশিত শান্তি ফেরেনি আফগানিস্তানে। সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরও প্রায় প্রতিদিনই রক্তে ভাসছে ইরাকের পথঘাট। এমন দৃশ্য কবে বদলাবে, তা যেন জানে না কেউ। এরই মধ্যে গত ডিসেম্বর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব বা আন্দোলনকে 'আরব বসন্ত' নামে আখ্যায়িত করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। তথাকথিত আরব বসন্তের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার পালাবদলের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষকরা।
বিশেষ করে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতায় লিবিয়ার ৪২ বছরের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন এবং গত বৃহস্পতিবার তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ওই দেশসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে, তিউনিসিয়ার বেন আলী, মিসরের হোসনি মুবারকের পর লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন হয়েছে। এরপর কে? আবার আরব বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো এ তালিকার শুরুতেই যোগ করেছে ইরাকে সাদ্দাম হোসেন এবং আফগানিস্তানে তালেবান শাসকদের নাম। সুস্পষ্টভাবেই তারা বলছে, জীবন দিয়ে সিরিয়া ও ইয়েমেনকে সতর্ক করে গেলেন গাদ্দাফি। আবার অনেকে একে ইরানের জন্যও সতর্ক সংকেত বলছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা মনে করেন, চলমান আরব বসন্ত এবং সর্বশেষ গাদ্দাফিকে হত্যার মধ্য দিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর তা ওই অঞ্চলে পশ্চিমা শক্তিগুলোর স্বার্থ পূরণেই সহায়ক হতে পারে।
লিবিয়া : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, লিবিয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নির্ভর করছে নতুন নেতৃত্বের ওপর। নতুন নেতৃত্ব পারস্পরিক মতবিরোধ দূর করে নিজেদের কতটা যোগ্য প্রমাণ করতে পারেন তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিবর্তন যদি সম্পূর্ণভাবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততার মাধ্যমে হতো তাহলে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয় ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় পরিবর্তন এসেছে পশ্চিমা বহুজাতিক বাহিনীর সমর্থন ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, লিবিয়া নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। গোত্রগুলো পরস্পরকে কতটা ছাড় দিতে পারে এর ওপর নতুন নেতৃত্বের সাফল্য নির্ভর করছে। লিবিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হলো বাইরের প্রভাব। যে বহুজাতিক বাহিনী গাদ্দাফিকে উৎখাতে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রভাব লিবিয়ার ওপর আগামী দিনগুলোতে কতটা থাকবে তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যে কায়দায় গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়েছে এর মধ্য দিয়ে লিবিয়ার ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। পশ্চিমা দেশগুলোর লিবিয়াসহ ওই অঞ্চলে তেল ও খনিজ সম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, লিবিয়ায় প্রায় ১৪০টি গোত্রের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০টি খুবই প্রভাবশালী। গাদ্দাফির শাসনামলে ওই গোত্রগুলোর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব তেমন একটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। কিন্তু ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে।
ড. দেলোয়ার বলেন, লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্য বড় পরীক্ষা। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা একনায়ক বা স্বৈরাচারী শাসকদের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে।
ড. দেলোয়ার আরো বলেন, ব্যক্তি গাদ্দাফির অনেক সমস্যা ছিল। ৪২ বছর ধরে টানা শাসন কোনোভাবেই কাম্য নয়। গাদ্দাফি বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালের খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। গাদ্দাফির পতনের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক ঐক্য বা কণ্ঠস্বর আরো অনেক দুর্বল হয়ে পড়বে। অঞ্চল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের যে শক্তি ছিল তাও কমে যাচ্ছে। ফলে ওই অঞ্চলে পশ্চিমা আধিপত্য বাড়বে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের নতুন করে স্নায়ুর লড়াই বা উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।
ড. দেলোয়ার হোসেন ইরাক ও আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া পশ্চিমা শক্তির সাহায্যে ইরাক ও আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে শান্তি আসেনি। লিবিয়ার জনগণের সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণার বদলে পশ্চিমা দেশগুলো যদি কোনো গণতান্ত্রিক মডেল চাপিয়ে দেয় তাহলে তাও বড় ধরনের শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যেভাবে চলছে আরব বসন্ত : আরব বসন্তের প্রথম প্রভাব পড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে তিউনিসিয়ায়। ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন প্রায় ২৪ বছর শাসন করা প্রেসিডেন্ট বেন আলী। এর পরও নিয়মিত আন্দোলন চলেছে গত মার্চ পর্যন্ত। আলজেরিয়ায় আরব বসন্ত নামে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে আলজেরীয় সরকার ১৯ বছরের পুরনো জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর গত এপ্রিল মাসে আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। লেবাননে আরব বসন্তের ছোঁয়া লাগে গত ১২ জানুয়ারি। ৪০ ভাগ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে লেবানন সরকার পরিস্থিতি কিছুটা সামলে নিয়েছে। মৌরিতানিয়ায় গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আন্দোলন চললেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। সুদানেও আরব বসন্তের ছোঁয়া লাগে গত ১৭ জানুয়ারি। দেশটির প্রেসিডেন্ট বসির নতুন করে আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন কিছুটা সামাল দেন। ওমান ও সৌদি আরব আন্দোলনের মুখে জনগণের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। সৌদি আরব ২০১৫ সালের শুরা কাউন্সিল ও পৌর নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। মিসরে ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন চলছে এখনো। এর মধ্যে পতন হয়েছে ৩০ বছরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের। ইয়েমেনে আন্দোলন চলছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে। রক্তাক্ত ইরাকেও আরব বসন্তের প্রভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন হয়েছে। এরপর প্রেসিডেন্ট নুরি আল মালিকি নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন কয়েকজন প্রাদেশিক গভর্নর ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাও। বাহরাইনেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন চলছে। লিবিয়ায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এখনো স্পষ্ট নয়। কুয়েতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনে মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগে বাধ্য হন। গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার দেশটিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মরক্কোতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের পর সংবিধান সংস্কারে গণভোট ও অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া ঘোষণা এসেছে। সিরিয়ায় গত মার্চ থেকে এখনো আন্দোলন চলছে। ইসরায়েল সীমান্তের দেশগুলোতেও গত কয়েক মাসে দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে। আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে লিবিয়াতেই নিহত মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরব বসন্তের উভয় সংকট : আরব দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে একনায়কতান্ত্রিক বা পারিবারিক শাসন চলছে। সেখানে ছিল না তেমন কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন। হঠাৎ করে আরব বসন্তে জেগে ওঠা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সমর্থনে ক্ষমতার পালাবদল হলেও সে দেশগুলোর স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের সক্ষমতা নিয়েও আছে বিশ্লেষকদের উদ্বেগ। হঠাৎ গণতন্ত্রের স্বাদ পাওয়া দেশগুলোর বিভিন্ন গোত্র ও গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যেও সংঘাতে জড়াতে পারে। আর এর ফলে পরিবর্তনের সুযোগে আরো বড় অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
টাইম ম্যাগাজিনে গত সেপ্টেম্বরে "লিবিয়া'স রেভল্যুশন প্রোডিউসেস অ্যা নিউ হাইব্রিড : প্রো ওয়েস্টার্ন ইসলামিস্টস" শীর্ষক এক প্রতিবেদনে লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের অনুগত সেনাদের ব্যাপারেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা দেখতে আগ্রহী হলেও আগামী দিনগুলোয় লিবিয়ায় আরো কট্টর শাসনব্যবস্থারও আশঙ্কা রয়েছে।
লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের অনেকে বিভিন্ন সময় ইসলামী আইন চালুর ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেক গোত্রও এ ব্যাপারে আগ্রহী।
অন্যদিকে মিসরের অস্থিতিশীলতার সুযোগে আগামী দিনগুলোতে কট্টর মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থানের আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম ওয়ালিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বৈরশাসক সিয়াদ বারের ২০ বছরের ক্ষমতার অবসানের পর সোমালিয়ার কী অবস্থা তা সহজেই বোঝা যায়। তবে তিনি মনে করেন না লিবিয়ার অবস্থা সোমালিয়ার মতো হবে। কেননা তেল রপ্তানিকারক ওই দেশটির মাথাপিছু আয় ভালো। লিবিয়ার একটা অংশ শরিয়াহ আইন চাইছে। তবে বেশির ভাগই চাইছে, মুসলিম দেশ হোক কিন্তু শরিয়াহ আইন নয়। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডও শরিয়াহ আইন চায়।
এম ওয়ালিউর রহমান বলেন, ত্রিপোলির পতনের পরপরই লিবিয়ার সব অস্ত্রভাণ্ডার লুট হয়ে গেছে। নতুন যে সরকারই আসুক না কেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
ওয়ালিউর রহমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নির্ভর করছে সিরিয়ার ওপর।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সি এম শফি সামী কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই মাস আগে ত্রিপোলির পতন হয়েছে। গাদ্দাফির ওই পরিণতি সময়ের ব্যাপার ছিল। লিবিয়ার ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) বলেছে, রবিবার (আজ) তারা আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। আপাতদৃষ্টিতে লিবিয়া গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। আরব জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু এখনই এটা ভাবা ঠিক হবে না যে লিবিয়া সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। গোত্রগুলোর নানা ধরনের প্রত্যাশা রয়েছে। এটাও ভাবা ঠিক হবে না যে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ। সেখানে অনেক বিভাজন আছে। একমাত্র গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।
সি এম শফি সামী আরও বলেন, মিসর বা অন্য দেশগুলোর মতো রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো লিবিয়ায় গড়ে ওঠেনি। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
গাদ্দাফির পতনের পর মধ্যপ্রাচ্য দুর্বল হয়ে পড়বে কি না জানতে চাইলে সি এম শফি সামী বলেন, 'এটা বলা মুশকিল। প্রথমদিকে গাদ্দাফির বক্তব্যে তৃতীয় বিশ্বের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল। কিন্তু পরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা আর দুর্নীতির কারণে তিনি আর নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তিনি অনেক বৈরিতার জন্ম দিয়েছেন।'
আরো বেপরোয়া পশ্চিমা শক্তি! : গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ম্যান্ডেট দেয়নি জাতিসংঘ। এর পরও পশ্চিমা বাহিনীর হামলা ও মদদে গাদ্দাফিবিরোধীদের সশস্ত্র অভিযানেই ত্রিপোলির পতন হয়। মারণাস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে হামলা হয়েছিল। এরপর ক্ষমতাচ্যুত সাদ্দাম হোসেনকে বিচারের পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। কোনো অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর তাঁর দেহ যুক্তরাষ্ট্র ভাসিয়ে দেয় সাগরে। সর্বশেষ গাদ্দাফির নির্মম মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় অন্তর্বর্তী সরকারের চালানো অভিযানে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে ওই মৃত্যু বা হত্যার ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়া_তিনটি দেশের খনিজ সম্পদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহ রয়েছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান এবং ২০০৩ সালে ইরাক অভিযানের পরও এখনো দেশ দুটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অসংখ্য সেনা অবস্থান করছে। জঙ্গি দমনের নামে অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানে ঢুকে হামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শীতল যুদ্ধ থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এভাবে অন্য একটি দেশে অভিযান চালানোর সুযোগ পেত না।
গাদ্দাফির পর কে? : গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল এক নিবন্ধে লিখেছেন, "মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর খবর যদি নিশ্চিত হয়ে থাকে তাহলে তা আলজেরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত আরব একনায়কদের জন্য সতর্ক সংকেত_'ভালোয় ভালোয় পালিয়ে যাও। বেশি দিন ক্ষমতা আঁকড়ে রেখো না।' নজিরবিহীন আরব বিপ্লবের আসল রূপ এখনো দেখা যায়নি।"
লিবিয়া : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, লিবিয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নির্ভর করছে নতুন নেতৃত্বের ওপর। নতুন নেতৃত্ব পারস্পরিক মতবিরোধ দূর করে নিজেদের কতটা যোগ্য প্রমাণ করতে পারেন তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিবর্তন যদি সম্পূর্ণভাবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততার মাধ্যমে হতো তাহলে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয় ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় পরিবর্তন এসেছে পশ্চিমা বহুজাতিক বাহিনীর সমর্থন ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, লিবিয়া নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। গোত্রগুলো পরস্পরকে কতটা ছাড় দিতে পারে এর ওপর নতুন নেতৃত্বের সাফল্য নির্ভর করছে। লিবিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হলো বাইরের প্রভাব। যে বহুজাতিক বাহিনী গাদ্দাফিকে উৎখাতে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রভাব লিবিয়ার ওপর আগামী দিনগুলোতে কতটা থাকবে তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যে কায়দায় গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়েছে এর মধ্য দিয়ে লিবিয়ার ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। পশ্চিমা দেশগুলোর লিবিয়াসহ ওই অঞ্চলে তেল ও খনিজ সম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, লিবিয়ায় প্রায় ১৪০টি গোত্রের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০টি খুবই প্রভাবশালী। গাদ্দাফির শাসনামলে ওই গোত্রগুলোর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব তেমন একটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। কিন্তু ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে।
ড. দেলোয়ার বলেন, লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্য বড় পরীক্ষা। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা একনায়ক বা স্বৈরাচারী শাসকদের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে।
ড. দেলোয়ার আরো বলেন, ব্যক্তি গাদ্দাফির অনেক সমস্যা ছিল। ৪২ বছর ধরে টানা শাসন কোনোভাবেই কাম্য নয়। গাদ্দাফি বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালের খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। গাদ্দাফির পতনের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক ঐক্য বা কণ্ঠস্বর আরো অনেক দুর্বল হয়ে পড়বে। অঞ্চল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের যে শক্তি ছিল তাও কমে যাচ্ছে। ফলে ওই অঞ্চলে পশ্চিমা আধিপত্য বাড়বে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের নতুন করে স্নায়ুর লড়াই বা উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।
ড. দেলোয়ার হোসেন ইরাক ও আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া পশ্চিমা শক্তির সাহায্যে ইরাক ও আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে শান্তি আসেনি। লিবিয়ার জনগণের সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণার বদলে পশ্চিমা দেশগুলো যদি কোনো গণতান্ত্রিক মডেল চাপিয়ে দেয় তাহলে তাও বড় ধরনের শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যেভাবে চলছে আরব বসন্ত : আরব বসন্তের প্রথম প্রভাব পড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে তিউনিসিয়ায়। ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন প্রায় ২৪ বছর শাসন করা প্রেসিডেন্ট বেন আলী। এর পরও নিয়মিত আন্দোলন চলেছে গত মার্চ পর্যন্ত। আলজেরিয়ায় আরব বসন্ত নামে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে আলজেরীয় সরকার ১৯ বছরের পুরনো জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর গত এপ্রিল মাসে আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। লেবাননে আরব বসন্তের ছোঁয়া লাগে গত ১২ জানুয়ারি। ৪০ ভাগ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে লেবানন সরকার পরিস্থিতি কিছুটা সামলে নিয়েছে। মৌরিতানিয়ায় গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আন্দোলন চললেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। সুদানেও আরব বসন্তের ছোঁয়া লাগে গত ১৭ জানুয়ারি। দেশটির প্রেসিডেন্ট বসির নতুন করে আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন কিছুটা সামাল দেন। ওমান ও সৌদি আরব আন্দোলনের মুখে জনগণের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। সৌদি আরব ২০১৫ সালের শুরা কাউন্সিল ও পৌর নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। মিসরে ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন চলছে এখনো। এর মধ্যে পতন হয়েছে ৩০ বছরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের। ইয়েমেনে আন্দোলন চলছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে। রক্তাক্ত ইরাকেও আরব বসন্তের প্রভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন হয়েছে। এরপর প্রেসিডেন্ট নুরি আল মালিকি নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন কয়েকজন প্রাদেশিক গভর্নর ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাও। বাহরাইনেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন চলছে। লিবিয়ায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এখনো স্পষ্ট নয়। কুয়েতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনে মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগে বাধ্য হন। গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার দেশটিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মরক্কোতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের পর সংবিধান সংস্কারে গণভোট ও অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া ঘোষণা এসেছে। সিরিয়ায় গত মার্চ থেকে এখনো আন্দোলন চলছে। ইসরায়েল সীমান্তের দেশগুলোতেও গত কয়েক মাসে দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে। আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে লিবিয়াতেই নিহত মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরব বসন্তের উভয় সংকট : আরব দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে একনায়কতান্ত্রিক বা পারিবারিক শাসন চলছে। সেখানে ছিল না তেমন কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন। হঠাৎ করে আরব বসন্তে জেগে ওঠা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সমর্থনে ক্ষমতার পালাবদল হলেও সে দেশগুলোর স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের সক্ষমতা নিয়েও আছে বিশ্লেষকদের উদ্বেগ। হঠাৎ গণতন্ত্রের স্বাদ পাওয়া দেশগুলোর বিভিন্ন গোত্র ও গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যেও সংঘাতে জড়াতে পারে। আর এর ফলে পরিবর্তনের সুযোগে আরো বড় অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
টাইম ম্যাগাজিনে গত সেপ্টেম্বরে "লিবিয়া'স রেভল্যুশন প্রোডিউসেস অ্যা নিউ হাইব্রিড : প্রো ওয়েস্টার্ন ইসলামিস্টস" শীর্ষক এক প্রতিবেদনে লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের অনুগত সেনাদের ব্যাপারেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা দেখতে আগ্রহী হলেও আগামী দিনগুলোয় লিবিয়ায় আরো কট্টর শাসনব্যবস্থারও আশঙ্কা রয়েছে।
লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের অনেকে বিভিন্ন সময় ইসলামী আইন চালুর ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেক গোত্রও এ ব্যাপারে আগ্রহী।
অন্যদিকে মিসরের অস্থিতিশীলতার সুযোগে আগামী দিনগুলোতে কট্টর মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থানের আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম ওয়ালিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বৈরশাসক সিয়াদ বারের ২০ বছরের ক্ষমতার অবসানের পর সোমালিয়ার কী অবস্থা তা সহজেই বোঝা যায়। তবে তিনি মনে করেন না লিবিয়ার অবস্থা সোমালিয়ার মতো হবে। কেননা তেল রপ্তানিকারক ওই দেশটির মাথাপিছু আয় ভালো। লিবিয়ার একটা অংশ শরিয়াহ আইন চাইছে। তবে বেশির ভাগই চাইছে, মুসলিম দেশ হোক কিন্তু শরিয়াহ আইন নয়। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডও শরিয়াহ আইন চায়।
এম ওয়ালিউর রহমান বলেন, ত্রিপোলির পতনের পরপরই লিবিয়ার সব অস্ত্রভাণ্ডার লুট হয়ে গেছে। নতুন যে সরকারই আসুক না কেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
ওয়ালিউর রহমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নির্ভর করছে সিরিয়ার ওপর।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সি এম শফি সামী কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই মাস আগে ত্রিপোলির পতন হয়েছে। গাদ্দাফির ওই পরিণতি সময়ের ব্যাপার ছিল। লিবিয়ার ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) বলেছে, রবিবার (আজ) তারা আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। আপাতদৃষ্টিতে লিবিয়া গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। আরব জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু এখনই এটা ভাবা ঠিক হবে না যে লিবিয়া সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। গোত্রগুলোর নানা ধরনের প্রত্যাশা রয়েছে। এটাও ভাবা ঠিক হবে না যে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ। সেখানে অনেক বিভাজন আছে। একমাত্র গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।
সি এম শফি সামী আরও বলেন, মিসর বা অন্য দেশগুলোর মতো রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো লিবিয়ায় গড়ে ওঠেনি। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
গাদ্দাফির পতনের পর মধ্যপ্রাচ্য দুর্বল হয়ে পড়বে কি না জানতে চাইলে সি এম শফি সামী বলেন, 'এটা বলা মুশকিল। প্রথমদিকে গাদ্দাফির বক্তব্যে তৃতীয় বিশ্বের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল। কিন্তু পরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা আর দুর্নীতির কারণে তিনি আর নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তিনি অনেক বৈরিতার জন্ম দিয়েছেন।'
আরো বেপরোয়া পশ্চিমা শক্তি! : গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ম্যান্ডেট দেয়নি জাতিসংঘ। এর পরও পশ্চিমা বাহিনীর হামলা ও মদদে গাদ্দাফিবিরোধীদের সশস্ত্র অভিযানেই ত্রিপোলির পতন হয়। মারণাস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে হামলা হয়েছিল। এরপর ক্ষমতাচ্যুত সাদ্দাম হোসেনকে বিচারের পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। কোনো অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর তাঁর দেহ যুক্তরাষ্ট্র ভাসিয়ে দেয় সাগরে। সর্বশেষ গাদ্দাফির নির্মম মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় অন্তর্বর্তী সরকারের চালানো অভিযানে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে ওই মৃত্যু বা হত্যার ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়া_তিনটি দেশের খনিজ সম্পদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহ রয়েছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান এবং ২০০৩ সালে ইরাক অভিযানের পরও এখনো দেশ দুটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অসংখ্য সেনা অবস্থান করছে। জঙ্গি দমনের নামে অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানে ঢুকে হামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শীতল যুদ্ধ থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এভাবে অন্য একটি দেশে অভিযান চালানোর সুযোগ পেত না।
গাদ্দাফির পর কে? : গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল এক নিবন্ধে লিখেছেন, "মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর খবর যদি নিশ্চিত হয়ে থাকে তাহলে তা আলজেরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত আরব একনায়কদের জন্য সতর্ক সংকেত_'ভালোয় ভালোয় পালিয়ে যাও। বেশি দিন ক্ষমতা আঁকড়ে রেখো না।' নজিরবিহীন আরব বিপ্লবের আসল রূপ এখনো দেখা যায়নি।"
No comments