শুরু হচ্ছে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ-সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার by ফারজানা লাবনী
চারবার দরপত্র আহ্বানের পর অবশেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) তৈরির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক)-এর বিশেষজ্ঞ কমিটি গত রবিবার চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'জেএলইপিসিএল-ডিসিএলজেভি' লিমিটেডকে এ কাজের জন্য নির্বাচিত করে অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পেলে এক মাসের মধ্যে সিইটিপি তৈরির কাজ শুরু করা যাবে বলে বিসিক কর্মকর্তারা আশা করেন।
২০০৯ সালে ১৮ নভেম্বর সিইটিপি নির্মাণে চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিসিক। এতে দেশি-বিদেশি ১৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বিসিকের পরিচালক (উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) খায়রুল আনামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি চূড়ান্তভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে গত দুই বছরে ২২টি বৈঠকে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২০ জুন সিইটিপি নির্মাণের জন্য প্রথম দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ সময় আগ্রহী কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। একই বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেওয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরের বছর ১২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু বাছাইয়ের শেষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান দুটি আদালতের আশ্রয় নেওয়ায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিইটিপি নির্মাণে আর কোনো অগ্রগতি নেই। চতুর্থ দফা দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। বারবার দরপত্র আহ্বান করার পরও কেন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, তা জানতে জুলাই মাসে বিসিক থেকে তদন্ত করা হয়। এতে দেখা গেছে, কিছু চামড়া ব্যবসায়ীর কারণে বিভিন্ন সময়ে দরপত্রের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দরপত্র প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অসাধু চামড়া ব্যবসায়ীরা এবারও (চতুর্থ দফা) দরপত্রে অংশ নিয়েছিল। তদন্ত করে তাদের বাদ দেওয়ায় দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।'
এর আগে বাংলাদেশ ফিনিস্ড লেদার, লেদার গুড্স অ্যান্ড এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)-এর নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৈঠককালে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সিইটিপি নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর না করলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের প্লট বাতিল করা হবে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-এর সভাপতি শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হাজারীবাগে প্রায় দুই শ কারখানা আছে। অনেক কারখানার মালিকের পুঁজির স্বল্পতা রয়েছে। বড় বড় ৪০ থেকে ৪৫টি চামড়া কারখানা স্থানান্তর সম্ভব হলেও ক্ষতিপূরণ ছাড়া ছোট বা মাঝারি কারখানাগুলোর পক্ষে হাজারীবাগ ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি জানান, ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা ২০০৩ সালে সরকারের কাছে দুই হাজার ৮৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ ব্যাপারে ২০০৬ সালে গঠিত সচিব কমিটি ট্যানারি মালিকদের আড়াই শ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করে; কিন্তু সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে সিইটিপি নির্মাণের ব্যয়ও ট্যানারি মালিকদের বহন করতে হবে, যা চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরনের বোঝা বলে মানে করেন শাহীন আহমেদ। ট্যানারি মালিকদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণ মওকুফ এবং স্বল্প সুদে নতুন ব্যাংক ঋণ দেওয়া।
এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, দাবি তো থাকবেই। তার মধ্যেই কাজ করে যেতে হবে। ট্যানারি সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেই দাবির বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। বিটিএ সভাপতি বলেন, এত রদিনেও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি। আর ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে_সে আশা না করাই ভালো।
ট্যানারি মালিকদের নানা টালবাহানা থাকলেও শিল্প স্থানান্তরে শ্রমিকদের আপত্তি নেই। গত সপ্তাহে ট্যানারি শ্রমিক নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, মালিকরা বাসস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে শুধু সাভার নয়, যেকোনো জায়গায় ট্যানারি স্থানান্তর করা যেতে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো অজুহাত নয়, সিইটিপি নির্মাণের কাজ শুরু হলেই কারখানা সরিয়ে নিতে হবে_এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে আছে।'
বুড়িগঙ্গা নদীসহ রাজধানীর আবাসিক এলাকার পরিবেশদূষণের অভিযোগে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে হাজারীবাগ এলাকা থেকে ট্যানারি শিল্প সরানোর দাবি জানানো হচ্ছে। মালিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চামড়া শিল্পের জন্য পরিকল্পিত শিল্প এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য সাভারে প্রায় ২০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। সেখানে ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভার চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলে হাজারীবাগ এলাকা থেকে কারখানাগুলো স্থানান্তরের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এসব কারখানা স্থাপিত হলে বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হবে। এ বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশনের জন্য শিল্পনগরীর ১৬ একর জমিতে সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে কম মূল্যে ১০ কাঠা থেকে তিন বিঘা জায়গায় প্লট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৯৭ জন ট্যানারি শিল্পমালিক তাঁদের প্লটও বুঝে নিয়েছেন।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২০ জুন সিইটিপি নির্মাণের জন্য প্রথম দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ সময় আগ্রহী কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। একই বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেওয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরের বছর ১২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু বাছাইয়ের শেষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান দুটি আদালতের আশ্রয় নেওয়ায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিইটিপি নির্মাণে আর কোনো অগ্রগতি নেই। চতুর্থ দফা দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। বারবার দরপত্র আহ্বান করার পরও কেন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, তা জানতে জুলাই মাসে বিসিক থেকে তদন্ত করা হয়। এতে দেখা গেছে, কিছু চামড়া ব্যবসায়ীর কারণে বিভিন্ন সময়ে দরপত্রের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দরপত্র প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অসাধু চামড়া ব্যবসায়ীরা এবারও (চতুর্থ দফা) দরপত্রে অংশ নিয়েছিল। তদন্ত করে তাদের বাদ দেওয়ায় দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।'
এর আগে বাংলাদেশ ফিনিস্ড লেদার, লেদার গুড্স অ্যান্ড এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)-এর নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৈঠককালে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সিইটিপি নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর না করলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের প্লট বাতিল করা হবে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-এর সভাপতি শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হাজারীবাগে প্রায় দুই শ কারখানা আছে। অনেক কারখানার মালিকের পুঁজির স্বল্পতা রয়েছে। বড় বড় ৪০ থেকে ৪৫টি চামড়া কারখানা স্থানান্তর সম্ভব হলেও ক্ষতিপূরণ ছাড়া ছোট বা মাঝারি কারখানাগুলোর পক্ষে হাজারীবাগ ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি জানান, ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা ২০০৩ সালে সরকারের কাছে দুই হাজার ৮৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ ব্যাপারে ২০০৬ সালে গঠিত সচিব কমিটি ট্যানারি মালিকদের আড়াই শ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করে; কিন্তু সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে সিইটিপি নির্মাণের ব্যয়ও ট্যানারি মালিকদের বহন করতে হবে, যা চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরনের বোঝা বলে মানে করেন শাহীন আহমেদ। ট্যানারি মালিকদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণ মওকুফ এবং স্বল্প সুদে নতুন ব্যাংক ঋণ দেওয়া।
এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, দাবি তো থাকবেই। তার মধ্যেই কাজ করে যেতে হবে। ট্যানারি সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেই দাবির বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। বিটিএ সভাপতি বলেন, এত রদিনেও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি। আর ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে_সে আশা না করাই ভালো।
ট্যানারি মালিকদের নানা টালবাহানা থাকলেও শিল্প স্থানান্তরে শ্রমিকদের আপত্তি নেই। গত সপ্তাহে ট্যানারি শ্রমিক নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, মালিকরা বাসস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে শুধু সাভার নয়, যেকোনো জায়গায় ট্যানারি স্থানান্তর করা যেতে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো অজুহাত নয়, সিইটিপি নির্মাণের কাজ শুরু হলেই কারখানা সরিয়ে নিতে হবে_এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে আছে।'
বুড়িগঙ্গা নদীসহ রাজধানীর আবাসিক এলাকার পরিবেশদূষণের অভিযোগে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে হাজারীবাগ এলাকা থেকে ট্যানারি শিল্প সরানোর দাবি জানানো হচ্ছে। মালিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চামড়া শিল্পের জন্য পরিকল্পিত শিল্প এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য সাভারে প্রায় ২০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। সেখানে ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভার চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলে হাজারীবাগ এলাকা থেকে কারখানাগুলো স্থানান্তরের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এসব কারখানা স্থাপিত হলে বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হবে। এ বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশনের জন্য শিল্পনগরীর ১৬ একর জমিতে সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে কম মূল্যে ১০ কাঠা থেকে তিন বিঘা জায়গায় প্লট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৯৭ জন ট্যানারি শিল্পমালিক তাঁদের প্লটও বুঝে নিয়েছেন।
No comments