লবণ খাওয়া কমানোর সুফল নিয়ে সংশয়!

স্বাস্থ্যের ওপর খাবার লবণের প্রভাব নিয়ে একটি পর্যালোচনা ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক বলেন, লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমালে হূদেরাগ কিংবা অকালমৃত্যুর ঝুঁকি কমে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একটি পর্যালোচনায় তাঁরা দেখেছেন, লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমানো হলে রক্তচাপ কিছুটা কমে। তবে তার মানে এই নয়, এতে অকালমৃত্যু কিংবা হূদেরাগের ঝুঁকি কমে। ওই গবেষকেরা বলেন, হূৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য এত দিন ধরে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তা যথেষ্ট ছিল না। এ জন্য শিগগির বড় পরিসরের গবেষণা শুরু করার প্রয়োজন।
পর্যালোচনার নেতৃত্বে ছিলেন এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের রড টেইলর। তিনি বলেন, লবণ খাওয়া কমানোর উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা অর্জনের জন্য বড় পরিসরে কিছু গবেষণামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওই পর্যালোচনার তীব্র সমালোচনা করেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ফ্রান্সেসকো কাপ্পুচিও বলেন, ওই পর্যালোচনাটি ছিল ‘বিস্ময়করভাবে দুর্বল’। বিশ্বজুড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধে লবণ খাওয়া কমানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। একটিমাত্র পর্যালোচনার ফলে মানুষ এ স্বাস্থ্যবিধি পরিবর্তন করবে না।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইমন কেপওয়েল বলেন, পর্যালোচনাটি হতাশাজনক ও এটি কিছুই প্রমাণ করে না। লবণ খাওয়া-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে এটি মানুষের ধারণার পরিবর্তন করেনি।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি স্বাভাবিক রক্তচাপ কমে।
আগের পরীক্ষাগুলোতে লবণ খাওয়া কমানোর ফলে রক্তচাপ প্রতিরোধে কিছু উপকারিতা পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে তাতে বৃহত্তর জনসাধারণের হূৎপিণ্ডের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় বলে কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। বিশ্বজুড়ে মানুষের অকালমৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ থেকে সৃষ্ট হূৎপিণ্ড ও ধমনির বিভিন্ন রোগ।
টেইলর বলেন, ওই পর্যবেক্ষণে লবণ খাওয়া কমিয়ে বড় ধরনের কোনো উপকারিতা না পাওয়ার কারণ হচ্ছে, তুলনামূলক কম মানুষের ওপর জরিপটি চালানো হয়। এ ছাড়া তিনি বলেন, ওই পরীক্ষায় যাদের পর্যবেক্ষণ করা হয় তারা লবণ খাওয়া অতি অল্প পরিমাণ কমিয়েছিল। তাই রক্তচাপ ও হূদেরাগের ক্ষেত্রে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
এ পর্যবেক্ষণের জন্য টেইলরের গবেষণাদল সাতটি জরিপ চালায়, যাতে মোট ছয় হাজার ৪৮৯ জন অংশগ্রহণ করেন। গবেষকেরা বলেন, এতে তাঁরা উপসংহারে যাওয়ার মতো যথেষ্ট উপাত্ত পেয়ে যান। কিন্তু তার পরও বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্বাস্থ্যের উপকার হয় বলে স্পষ্টভাবে কোনো কিছু শনাক্ত করার জন্য অন্তত ১৮ হাজার লোকের ওপর জরিপ চালিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক এলেরিন রাশ বলেন, একটিমাত্র পরীক্ষা এবং একটিমাত্র পুষ্টি উপাদানের ওপর এ ধরনের সাধারণ সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ দেওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক নয়।

No comments

Powered by Blogger.