ওসামার স্ত্রী-সন্তানদের ফেরত না পাঠানোর নির্দেশ তদন্ত কমিশনের

অ্যাবোটাবাদে আটক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের স্ত্রী-সন্তানদের ফেরত না পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তানের তদন্ত কমিশন। কমিশন অনুমতি দিলে কেবলই তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে।
অ্যাবোটাবাদে মার্কিন গোপন কমান্ডো অভিযানের তদন্ত করছে এই কমিশন। গত ২ মে ভোররাতের ওই অভিযানে আল-কায়েদা নেতা ওসামা নিহত হন। পরে ওসামার কম্পাউন্ড থেকে আটক করা হয় তাঁর তিনজন স্ত্রী ও নয়জন সন্তানকে। তারা পাকিস্তান সরকারের হেফাজতে রয়েছে।
কমিশন বলেছে, কমিশনের অনুমতি ছাড়া ওসামা বিন লাদেনের পরিবারের সদস্যদের যেন ফেরত পাঠানো না হয়, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইএসআইকে (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওসামার কনিষ্ঠ স্ত্রী আমল আবদুল ফাত্তাহকে কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর দেশ ইয়েমেনে ফেরত পাঠানো হতে পারে—এমন খবর প্রচারের পর তদন্ত কমিশন এ নির্দেশ দিয়েছে। গত মঙ্গলবার কমিশনের সদস্যরা প্রথমবারের মতো বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
চার সদস্যের এ কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক। তদন্তকালে কমিশন ওসামার পরিবারের সদস্যসহ যে কাউকে সমন জারি করার ক্ষমতা রাখে। তবে তদন্ত শেষ করতে কমিশনকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, ‘তাঁরা (ওসামার পরিবারের সদস্যরা) শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন। কিন্তু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের পাকিস্তানে থাকতে হচ্ছে। ওসামার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরাও (নিরাপত্তা কর্মকর্তারা) কথা বলতে চান।’ তিনি বলেন, ‘তাঁরা ফিরে যাওয়ার দাবি করতে পারেন এবং তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়াও হবে।’
কমিশনের এ সিদ্ধান্তের ফলে ওসামার ইয়েমেনি স্ত্রী আবদুল ফাত্তাহর পরিবার হতাশ হতে পারে। তাঁরা গত মাসে সাংবাদিকদের জানান, আবদুল ফাত্তাহ ও তাঁর সন্তানকে তাঁরা ফিরে পেতে চান।
অ্যাবোটাবাদে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একাডেমি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ওসামা। সামরিক একাডেমির একদম কাছে ওসামার মতো একজন সন্ত্রাসী কীভাবে বছরের পর বছর নিভৃতে অবস্থান করেছেন, তা নিয়ে বিশ্ববাসীর মনে সন্দেহ রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থা জড়িত ছিল কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এ পর্যন্ত যা খবর, অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িটিতে ওসামা পাঁচ বছর ধরে অবস্থান করেছিলেন। তাঁকে হত্যায় মার্কিন সামরিক বাহিনী পাকিস্তান সরকারের অনুমতি ছাড়াই অভিযান চালায়। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ অভিযানকে ভালোভাবে নেয়নি।
এ অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের দাবির মুখে বিষয়টি তদন্তে পাকিস্তান সরকার কমিশন গঠন করেছে। বিরোধীদের দাবি, সেনাবাহিনী তদন্ত করলে আসল ঘটনা না-ও বেরিয়ে আসতে পারে।
কমিশন তদন্তের স্বার্থে সেনাবাহিনীর যেকোনো সদস্য এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। তবে তাঁদের নাম-পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছে কমিশন। আগামী সপ্তাহে কমিশন ফের বৈঠকে বসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.