কেউ ২৭ বছর, কেউ ২৭ দিন
নির্বাহী কমিটির অন্য সব পদাধিকারীদের জন্য একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি পদটা ব্যতিক্রম। এই পদে ‘সময়’ বলে কিছু নেই। ব্যতিক্রমীভাবে কাউকে ২৭ বছরও থাকতে দেখা গেছে। কেউ ২৭ দিনও থাকেন না।
তবে সভাপতির জন্যও নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া উচিত। সেটি না থাকায় এই পদে চলতে থাকে আসা-যাওয়ার খেলা। সরকার বদলে গেলে সভাপতি পদেও আসে পরিবর্তন। অবশ্য এমন সভাপতিও আছেন, নিয়োগ পেয়ে এক কাপ চা খেতেও ফেডারেশনে কখনো আসেননি। কোনো সভা না করেই বিদায় নিয়েছেন, এমন সভাপতিও অনেক। এক-দুটি সভার পরই সভাপতি পদ ছেড়েছেন অনেকেই। কখনো নিজেরাই ছেড়ে দিয়েছেন, কখনো সরকার অন্য কাউকে এনেছে। নীতিমালা না থাকলে যা হয় আরকি!
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ ২৭ বছরেরও বেশি সময় সভাপতি ছিলেন সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। ১৯৭৬ সালের জুলাই থেকে ২০০৩ সালের জুলাই পর্যন্ত টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বর্তমানে যিনি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি জানালেন, তাঁর দীর্ঘ ফেডারেশন সভাপতি জীবনের অভিজ্ঞতা, ‘অনেক সময় সপ্তাহে দু-তিনবারও ফেডারেশনে যেতাম। কিন্তু আমাদের এই ক্রীড়াঙ্গনেই অনেক সভাপতি দু-তিন মাসে একবার ফেডারেশনে যান। অনেক সভাপতি নিজের অফিসে মিটিং করেন, আমি এটা করিনি। আমি মনে করি, সভাপতিকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।’
দীর্ঘকালীন সভাপতির তালিকায় ইউসুফ হোসেনের পরই আছেন প্রয়াত কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ। ১৯৮৪ থেকে ২০০৬ সালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুর সময় পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২২ বছর হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হ্যান্ডবল ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্নেল হামিদ সম্পর্কে হ্যান্ডবল অঙ্গনের লোকজন এখনো প্রশংসামুখর। প্রায় সবাই একমত, কাজ করেছেন বলেই এত দীর্ঘ সময় সভাপতি থেকে গেছেন তিনি।
উল্টো চিত্রটা দেখতে খুব বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার নেই। দাবার বর্তমান সভাপতি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরের আগে সভাপতি হয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে তথ্য কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ জমির। একটি সভা করার পরই তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন। বিদেশে থাকায় মোহাম্মদ জমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁকে দাবা ফেডারেশনের সভাপতি করতে তদবির করেছিলেন, এমন এক ঘনিষ্ঠজন বললেন, ‘উনি রাগ করে দায়িত্ব ছেড়েছেন। ফেডারেশনের কর্মকর্তারা ওনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আমাকে বলেছেন, “তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে”!’
এতেই বোঝা যাচ্ছে, সভাপতি পদটা কত স্পর্শকাতর! ভালো লাগল না চলে এলাম, সরকার আরেকজনকে দেবে—এভাবেই চলছে। ১৯৯৭ সালে দাবা ফেডারেশনেরই সভাপতি হয়েছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এক সভাপতি। ফেডারেশনের একটি সভা করেছেন তিনি, তবে সেটি ছিল তাঁর ব্যবসায়িক অফিসে। দেড়-দুই মাস পর দায়িত্বই ছেড়ে দেন।
মনোনীত হয়েও অনেক সভাপতি যোগদানই করেননি, এমন উদাহরণও আছে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একযোগে ১৫-১৬টি ফেডারেশনের সভাপতি পরিবর্তনের ঢেউয়ে খো খোর সভাপতি করা হয় এক সচিবকে। খো খো ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ জানাচ্ছেন পরের ঘটনা, ‘উনি আসেন না, আসেন না...আমরা বারবার ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করি। মাসখানেক পর শুনলাম উনি পদত্যাগ করেছেন।’
এই ‘পদত্যাগের’ ঘটনা বেশি ঘটে ছোট ফেডারেশনে। এক ক্যারম ফেডারেশনেই গত চার বছরে চারজন সভাপতি এসেছেন! প্রথম তিনজন সচিব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর সভাপতি করা হয় তখনকার সংস্কৃতি সচিবকে। পরের বছর ১৯ জুলাই তাঁর বিদায়। ওই দিনই নিয়োগ পান ভারপ্রাপ্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক সচিব। তিনি ছিলেন ২০০৮ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ওই দিন সভাপতির খাতায় ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের নাম। ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁর জায়গায় নাটোর-৩-এর সাংসদ জুনায়েদ আহমেদের পদার্পণ। যিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব ক্যারম চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের যাওয়া নিশ্চিত না করে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খবরে এসেছেন।
সভাপতি পদে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলা দেখে ক্যারম ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল কাদের বিশ্বাস হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘শুরুতে হয়তো ফেডারেশনের সভাপতি পদটাকে বড় কিছু ভাবেন অনেকে। তারপর যখন দেখেন ছোট ফেডারেশন, একসময় অপারগতা দেখিয়ে আর আসেন না। সংস্কৃতি সচিব এ বি এম আবদুল হক তো কোনো সভা না করেই বিদায় নিয়েছেন।’
ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার খবরে বিরক্তিও ঝরে অনেকের কণ্ঠে। দায়িত্বটা যে তাঁর কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়। হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুরের কাছে শোনা যাক তাঁর একটা অভিজ্ঞতা, ‘গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হ্যান্ডবলের সভাপতি করা হলো এক সচিবকে। নিয়োগের দুই মাস পর আমি ওনাকে প্রথম ফোন করলাম। বললেন, “আমি চিঠি পেয়েছি। কিন্তু সরকার আমাকে এই দায়িত্ব কেন দিল বুঝলাম না। আমি তো হ্যান্ডবল কখনো খেলিনি।” খুব বিরক্ত মনে হচ্ছিল তাঁকে। একদিন তাঁর অফিসে গেলে সচিব সাহেব অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলেন আমাকে। পরে কথা বললেন রুমে দাঁড় করিয়ে রেখে।’
ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতিদের এমন অনেক গল্পই হাস্যরসিকতা হয়ে ফেরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে।
তবে সভাপতির জন্যও নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া উচিত। সেটি না থাকায় এই পদে চলতে থাকে আসা-যাওয়ার খেলা। সরকার বদলে গেলে সভাপতি পদেও আসে পরিবর্তন। অবশ্য এমন সভাপতিও আছেন, নিয়োগ পেয়ে এক কাপ চা খেতেও ফেডারেশনে কখনো আসেননি। কোনো সভা না করেই বিদায় নিয়েছেন, এমন সভাপতিও অনেক। এক-দুটি সভার পরই সভাপতি পদ ছেড়েছেন অনেকেই। কখনো নিজেরাই ছেড়ে দিয়েছেন, কখনো সরকার অন্য কাউকে এনেছে। নীতিমালা না থাকলে যা হয় আরকি!
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ ২৭ বছরেরও বেশি সময় সভাপতি ছিলেন সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। ১৯৭৬ সালের জুলাই থেকে ২০০৩ সালের জুলাই পর্যন্ত টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বর্তমানে যিনি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি জানালেন, তাঁর দীর্ঘ ফেডারেশন সভাপতি জীবনের অভিজ্ঞতা, ‘অনেক সময় সপ্তাহে দু-তিনবারও ফেডারেশনে যেতাম। কিন্তু আমাদের এই ক্রীড়াঙ্গনেই অনেক সভাপতি দু-তিন মাসে একবার ফেডারেশনে যান। অনেক সভাপতি নিজের অফিসে মিটিং করেন, আমি এটা করিনি। আমি মনে করি, সভাপতিকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।’
দীর্ঘকালীন সভাপতির তালিকায় ইউসুফ হোসেনের পরই আছেন প্রয়াত কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ। ১৯৮৪ থেকে ২০০৬ সালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুর সময় পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২২ বছর হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হ্যান্ডবল ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্নেল হামিদ সম্পর্কে হ্যান্ডবল অঙ্গনের লোকজন এখনো প্রশংসামুখর। প্রায় সবাই একমত, কাজ করেছেন বলেই এত দীর্ঘ সময় সভাপতি থেকে গেছেন তিনি।
উল্টো চিত্রটা দেখতে খুব বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার নেই। দাবার বর্তমান সভাপতি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরের আগে সভাপতি হয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে তথ্য কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ জমির। একটি সভা করার পরই তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন। বিদেশে থাকায় মোহাম্মদ জমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁকে দাবা ফেডারেশনের সভাপতি করতে তদবির করেছিলেন, এমন এক ঘনিষ্ঠজন বললেন, ‘উনি রাগ করে দায়িত্ব ছেড়েছেন। ফেডারেশনের কর্মকর্তারা ওনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আমাকে বলেছেন, “তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে”!’
এতেই বোঝা যাচ্ছে, সভাপতি পদটা কত স্পর্শকাতর! ভালো লাগল না চলে এলাম, সরকার আরেকজনকে দেবে—এভাবেই চলছে। ১৯৯৭ সালে দাবা ফেডারেশনেরই সভাপতি হয়েছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এক সভাপতি। ফেডারেশনের একটি সভা করেছেন তিনি, তবে সেটি ছিল তাঁর ব্যবসায়িক অফিসে। দেড়-দুই মাস পর দায়িত্বই ছেড়ে দেন।
মনোনীত হয়েও অনেক সভাপতি যোগদানই করেননি, এমন উদাহরণও আছে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একযোগে ১৫-১৬টি ফেডারেশনের সভাপতি পরিবর্তনের ঢেউয়ে খো খোর সভাপতি করা হয় এক সচিবকে। খো খো ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ জানাচ্ছেন পরের ঘটনা, ‘উনি আসেন না, আসেন না...আমরা বারবার ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করি। মাসখানেক পর শুনলাম উনি পদত্যাগ করেছেন।’
এই ‘পদত্যাগের’ ঘটনা বেশি ঘটে ছোট ফেডারেশনে। এক ক্যারম ফেডারেশনেই গত চার বছরে চারজন সভাপতি এসেছেন! প্রথম তিনজন সচিব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর সভাপতি করা হয় তখনকার সংস্কৃতি সচিবকে। পরের বছর ১৯ জুলাই তাঁর বিদায়। ওই দিনই নিয়োগ পান ভারপ্রাপ্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক সচিব। তিনি ছিলেন ২০০৮ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ওই দিন সভাপতির খাতায় ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের নাম। ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁর জায়গায় নাটোর-৩-এর সাংসদ জুনায়েদ আহমেদের পদার্পণ। যিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব ক্যারম চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের যাওয়া নিশ্চিত না করে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খবরে এসেছেন।
সভাপতি পদে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলা দেখে ক্যারম ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল কাদের বিশ্বাস হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘শুরুতে হয়তো ফেডারেশনের সভাপতি পদটাকে বড় কিছু ভাবেন অনেকে। তারপর যখন দেখেন ছোট ফেডারেশন, একসময় অপারগতা দেখিয়ে আর আসেন না। সংস্কৃতি সচিব এ বি এম আবদুল হক তো কোনো সভা না করেই বিদায় নিয়েছেন।’
ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার খবরে বিরক্তিও ঝরে অনেকের কণ্ঠে। দায়িত্বটা যে তাঁর কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়। হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুরের কাছে শোনা যাক তাঁর একটা অভিজ্ঞতা, ‘গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হ্যান্ডবলের সভাপতি করা হলো এক সচিবকে। নিয়োগের দুই মাস পর আমি ওনাকে প্রথম ফোন করলাম। বললেন, “আমি চিঠি পেয়েছি। কিন্তু সরকার আমাকে এই দায়িত্ব কেন দিল বুঝলাম না। আমি তো হ্যান্ডবল কখনো খেলিনি।” খুব বিরক্ত মনে হচ্ছিল তাঁকে। একদিন তাঁর অফিসে গেলে সচিব সাহেব অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলেন আমাকে। পরে কথা বললেন রুমে দাঁড় করিয়ে রেখে।’
ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতিদের এমন অনেক গল্পই হাস্যরসিকতা হয়ে ফেরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে।
No comments