নেপাল বদলাচ্ছে, রাজনীতিকেরা বদলাচ্ছেন না by সোহরাব হাসান

২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের পতন এবং গণতন্ত্রের জয়যাত্রা নেপালি জনগণকে যতটা আশাবাদী করে তুলেছিল, কিন্তু আজ রাজনৈতিক দলগুলোর বৈরী ও আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড তারচেয়ে বেশি হতাশার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। অনেকেই রাজনীতিকদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন; কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, এর চেয়ে রাজতন্ত্রই ভালো ছিল। গণতন্ত্রের চেয়ে কখনোই রাজতন্ত্র বা সামরিক শাসন ভালো হতে পারে না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে রাজনীতিকেরা গণতন্ত্রের নামে যেভাবে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাতে জনগণ আর তাঁদের ওপর ভরসা করতে পারছে না। বাংলাদেশ বা নেপালও তার ব্যতিক্রম নয়।
৯ সেপ্টেম্বর মধ্যাহ্নে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট যখন ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করল, তখন নেপালের নবরূপ চোখে পড়ল। ১০ বছর আগে শেষবার নেপাল ভ্রমণে গিয়ে যে হতশ্রী কাঠমান্ডু দেখেছিলাম, এখন তা অনেকটাই বদলে গেছে। রাস্তার দুই পাশে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে, শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বেড়েছে, মোড়ে মোড়ে তৈরি হচ্ছে নতুন মার্কেট, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গড়ে উঠছে নাইট ক্লাব, নতুন নতুন আবাসিক হোটেল। সালোয়ার-কামিজ ছেড়ে প্যান্ট-শার্টে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে নবপ্রজন্মের নেপালি নারী; অনেক বেশি মেয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁরা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও মনোনিবেশ করছেন। দেশটির অর্থনীতিও ১০ বছরের গৃহযুদ্ধ এবং বিশ্বমন্দার ধকল কাটাতে সক্ষম হয়েছে। বাড়ছে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, জনপ্রতি আয়। সর্বোপরি বিশ্বজুড়ে যখন ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ছে, বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্রটি বাইরের চাপ ছাড়াই তখন প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এ সবই ছিল আশা ও উদ্দীপনার দিক।
কিন্তু বহিরাঙ্গে নেপাল যতটা অগ্রসর হয়েছে, অন্তরঙ্গে তার ছাপ নেই। রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকেরা সেকেলে ধ্যান-ধারণা ঝেড়ে ফেলে একযোগে কাজ করার মানসিকতা অর্জন করতে পারেননি। নেপালের তিনটি প্রধান দল—মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (সিপিএন-ইউএমএল) ও নেপালি কংগ্রেস। বিগত নির্বাচনে ৬০১ সদস্যের গণপরিষদে তাদের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা যথাক্রমে ২৩৮, ১০৯, ১১৫। কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। প্রথমে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেও অপর দুই দল তাঁকে সহযোগিতা করেনি। মাওবাদী ও সিপিএন-ইউএমএল একমত হতে না পারায় শেষ পর্যন্ত নেপালি কংগ্রেস প্রার্থী রামচরণ মাধবই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
নেপালে বর্তমানে প্রধান তিন দলের মধ্যে যে ক্ষমতার লড়াই চলছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনগণ। প্রচণ্ড তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে দলীয় কর্মী-সদস্যদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন বলে অভিযোগ আছে। আবার মাওবাদীদের নালিশ হলো, তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। প্রচণ্ড মাওবাদী গেরিলাদের সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণের নির্দেশ দিলেও সেনাপ্রধান তাতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বরখাস্তের নির্দেশ দিলে রাষ্ট্রপতির অসম্মতির কারণে তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবাদে প্রচণ্ড পদত্যাগ করেন। সিপিএন-ইউএমএলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন মাধব কুমার নেপালের নেতৃত্বে। পরে মাওবাদীরা গত মে মাসে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে সেই সরকারও পদত্যাগে বাধ্য হয়। অগ্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাধব কুমার নেপাল কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হন এই শর্তে যে দুই মাসের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। কিন্তু মাত্র পাঁচ মাসে আটবার ভোটাভুটি হলেও সাংসদেরা একজন প্রধানমন্ত্রী বাছাই করতে পারেননি। তিন প্রধান দলের কেউই অন্যকে ছাড় দিতে রাজি নয়। কোনো দল প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী দিলে অন্য দুই দল ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হন। সর্বশেষ ভোটাভুটিতে সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদীরা বলেছিল, সব দলের প্রার্থী প্রত্যার করে মতৈক্যের ভিত্তিকে একজন প্রার্থী দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়াও উল্লিখিত তিন দলের মধ্যে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে; যার মীমাংসা ছাড়া নেপালে গণতন্ত্র টেকসই হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম সমঝোতা ছাড়া প্রস্তাবিত সংবিধানও বর্ধিত সময় অর্থাৎ ২০১১ সালের মে মাসের মধ্যে প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। কে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়বেন এবং তার বিনিময়ে কী পাওয়া যাবে সেই হিসাব-নিকাশ চলছে রাজনীতিকদের মধ্যে। তিন দলের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য ক্রমেই ঘুচে এসেছে; বড় হয়ে উঠেছে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ। আদর্শের দিক থেকে মাওবাদী ও সিপিএন-ইউএমএলের মিল থাকলেও এতে নেতৃত্বের বিরোধ প্রকট।
গত সপ্তাহে সিপিএন-ইউএমএলের সমঝোতাও রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে পারেনি। এর আগেও বহুবার রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার কাছাকাছি এসেও তীরে এসে নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। যে কারণে দুই বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদে সংবিধান রচনা করতে পারেনি। ফলে গণপরিষদের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সংবিধান অনুমোদন করতে হলে তিনটি প্রধান দলকেই মতৈক্যে আসতে হবে। সরকার-পদ্ধতি নিয়েও বিরোধ রয়েছে। নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন-ইউএমএল সংসদীয় গণতন্ত্রের সমর্থক হলেও মাওবাদীরা চায় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার।

২.
তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডেই নেপালি জনগণ হতাশ ও বিভ্রান্ত। কাঠমান্ডুতে, পোখরায় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ, যাঁদের সঙ্গেই কথা হয়েছে, বলেছেন, রাজনীতিকেরা দেশটির সর্বনাশ করছেন। দুই বছরেও সংবিধান রচনা করতে না পারা কিংবা বারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ায় জনগণ খোদ রাজনীতির ওপরই আস্থা হারাতে বসেছে। নেপালে আমাদের অবস্থানকালে পত্রপত্রিকায় যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাও রাজনীতি বা রাজনীতিকদের জন্য সম্মানজনক নয়।
কাঠমান্ডু পোস্ট-এ চীনা দূতাবাসের জনৈক কর্মকর্তার সঙ্গে মাওবাদী এক নেতার কথোপকথনের বিবরণ ছাপা হয়েছে, যাতে মাওবাদী নেতা অন্য দল থেকে সাংসদ কেনার জন্য ৬০ লাখ রুপি চেয়েছেন। নেপালি গোয়েন্দা বিভাগ কথোপকথনের টেপ উদ্ধার করেছে। চীনাপন্থী বলে পরিচিত মাওবাদীরা চীনের কাছে এই অর্থ চেয়েছে, যাতে নেপালি কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে না পারে। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে দুই কমিউনিস্ট পার্টির তিন দফা সমঝোতা চুক্তি সইয়েও চীনের ভূমিকা আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও কাঠমান্ডু এসেছিলেন। নেপালের সাধারণ মানুষ এসব তৎপরতা সুনজরে দেখছে না। নাগরিক সমাজের কোনো কোনো প্রতিনিধি মনে করেন, নেপালের রাজনীতি এখন সীমান্তের বাইরে চলে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ইত্যাদি ব্যাপারে দেশটি ভারতের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বেশ কয়েক বছর আগে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন অধিকারী এই নিবন্ধকারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু ভূমি দ্বারা অবরুদ্ধ নই, ভারত দ্বারাও অবরুদ্ধ।’ মেক্সিকোর সাধারণ মানুষ যেমন ভাবে তারা আমেরিকা দ্বারা শোষিত, তেমনি নেপালের জনগণও মনে করে ভারত তাদের শোষণ করছে। নিজেকে ফ্রিডম পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয়দানকারী বিক সম্রাট সিং আলাপ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা ধর্ম ও বিপ্লব—দুটিই চাই। বাইরের সংস্কৃতি নেপালের সংস্কৃতির প্রাণভোমরাটিকে গলা টিপে হত্যা করছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে। একই সঙ্গে সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে।’ একদা আবুধাবিতে বসবাসকারী এই তরুণ বলেন, ‘সব ধর্মে শান্তির কথা থাকলেও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি একে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করছে। তাঁর শেষ মন্তব্য ছিল, ধর্মানুরাগী তরুণ নেতৃত্বই নেপালকে বাঁচাতে পারে। তাঁদের হাতে দেশের নেতৃত্ব না দিলে একসময় হয়তো চীন ও ভারত দেশটি ভাগাভাগি করে নেবে। এত দিন তরুণ মুসলিম জঙ্গিদের কণ্ঠে যেসব কথা শুনেছি, তাঁর কণ্ঠে একই প্রতিধ্বনি লক্ষ করে বিপদের আশঙ্কা করি।
নেপাল কংগ্রেস বা সিপিএন-ইউএমএলের কাজকর্ম সম্পর্কে সে দেশের জনগণ মোটামুটি ওয়াকিবহাল। তারা একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেছে; তারা কতটা পারবে না-পারবে সে সম্পর্কেও তাদের মোটামুটি ধারণা আছে। তাদের কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। কিন্তু যে মাওবাদী পার্টি বিপ্লবকালে জনগণকে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখিয়েছে, মুক্তাঞ্চলে তারা জোতদারদের জমি কৃষকদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে; ক্ষমতায় গিয়ে দেখেছে পরিবর্তন আনাটা কত কঠিন। তাদের স্লোগান ছিল রাজতন্ত্রের পতন। রাজতন্ত্রের পতন হওয়ায় প্রচণ্ড ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষমতার ভাগীদার হয়েছেন; কিন্তু যে হাজার হাজার তরুণ তাঁদের কথায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তাঁরা কিছুই পাননি। তাঁদের অবস্থান হয়েছে জাতিসংঘ মিশনের তত্ত্বাবধানাধীন ক্যাম্প।
এ কারণেই মাওবাদীদের প্রতি সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের সমর্থন কমে গেছে। কেবল নেপাল নয়, আরও যেসব দেশে সশস্ত্র উপায়ে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে, সেসব দেশেও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। আজ ভারতে মাওবাদীরা আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষগুলোকে যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেও তা পূরণ করতে পারবে, সে কথা কেউ বিশ্বাস করে না। ফলে বিপুল ও বিশাল জনগোষ্ঠী যাঁদের হুকুম তামিল করে, হাতিয়ার হাতে নিয়ে প্রতিশোধস্পৃহায় সবকিছু তছনছ করে দেয়, তাঁরা জানেন না বিপ্লবের পর কী হবে?
পোখরার ফেওয়া লেক-এ নৌকার হাল ধরেছিল কুল বাহাদুর নামে যে হাসিখুশি মুখের যুবক, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাজনীতিক সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? সে চটপট জবাব দিল, ‘বহুত গরবর হ্যায়।’ উন্নয়নশীল দেশের গণতন্ত্র তথা রাজনীতিকদের সঙ্গে জনগণের এই দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সাংবাদিক নিত্যনন্দ তিনসিনা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, তথাকথিত নবনেপালের কারিগরেরা যদি জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে এবং সামাজিক সাম্য নিশ্চিত করতে না পারেন, সেটি হবে দেশ ও জাতির জন্য চরম বিপর্যয়।
কাঠমান্ডু পোস্ট ১৪ সেপ্টেম্বর সম্পাদকীয়তে সেই অবিস্মরণীয় উক্তিই করেছে, যা প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিকদের জন্য প্রযোজ্য: জনগণের কাছে এটি প্রতিভাত যে রাজনীতিকেরা তাদের (জনগণ) আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মোটেই ভাবেন না, তাঁরা রাষ্ট্রকে নিজেদের সংকীর্ণ, দলীয় স্বার্থে ব্যবহারে পারঙ্গম এবং সেটি করতে চান অনন্তকাল ধরে।
নেপালে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জন টানক্যানট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো একের পর এক বৈঠক করে যাচ্ছে। এখন এমন একজন নেতা প্রয়োজন, যিনি বলতে পারবেন, সমাধান বের করতে হবে।
নেপালের রাজনীতিকেরা কি নেপালবাসীকে আশার আলো দেখাবেন, না ক্ষমতার লড়াইয়ে অনাদিকাল ব্যাপৃত থেকে তাদের সামনে মুলো ঝুলিয়ে রাখবেন। এ ক্ষেত্রে সদ্য রণাঙ্গন ত্যাগ করা মাওবাদী, পরীক্ষিত বামপন্থী সিপিএন-ইউএমএল কিংবা ঐতিহ্যবাহী নেপালি কংগ্রেসের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য খুবই কম বলে অধিকাংশ নেপালবাসী মনে করে।
নেপালের সাম্প্রতিক রাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতির মিল-অমিল দুটিই আছে। নেপালে ও বাংলাদেশে প্রায় একই সময়ে গণতন্ত্রের নবযাত্রা সূচিত হয় ১৯৯১ সালে। এর মধ্যে নেপালে অনেক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে, রাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্র নেই (তবে কারও মতে যা চলছে তা রাজতন্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়)। আরেকটি পার্থক্য হলো, নেপালে এত কিছুর পরও কোনো দল সংসদ (গণপরিষদ) বর্জন করেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা বিরোধী দলে থাকলে সংসদে যেতে পছন্দ করেন না। আবার সরকারি দলে থাকলে অন্যের সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতাও তাঁরা অর্জন করতে পারেননি।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net

No comments

Powered by Blogger.