আসন্ন কোপেনহেগেন সম্মেলন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন -জলবায়ু পরিবর্তন by কাজী গোলাম মোস্তফা
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এখন স্বীকৃত সত্য, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে বায়ুমণ্ডলের এবং সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশই কমবেশি উদ্বিগ্ন। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো, বিশেষত যেসব দেশের ভূমির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চতার চেয়ে খুব বেশি ওপরে নয়। অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে মালদ্বীপ ও টুভালু দেশ দুটি। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের বর্তমান মাত্রা অব্যাহত থাকলে মেরু অঞ্চলের জমাট বরফ ও হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কয়েক দশকের মধ্যে দেশ দুটি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তখন দেশ দুটির সব অধিবাসীর জলবায়ু উদ্বাস্তু হওয়া ভিন্ন কোনো গত্যন্তর থাকবে না। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে কিরিবাতি, কোস্টারিকা ও বাংলাদেশ। এসব দেশের উপকূলীয় এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
তবে আশার কথা, পৃথিবীকে রক্ষার জন্য কমবেশি সবাই সচেষ্ট আছে, বিশেষভাবে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ বিশ্বের সব দেশকে একক নীতি ও এক লক্ষ্যমাত্রার আলোকে সচেতন ও সংগঠিত করার জন্য ১৯৭২ সালের জুন মাসে স্টকহোমে মানব পরিবেশ উন্নয়নের ডিক্লারেশনের মাধ্যমে পরিবেশবিষয়ক কার্যক্রম শুরু করে। এর পর থেকে পরিবেশ উন্নয়ন, বৈশ্বিক জলবায়ু সংরক্ষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলা, বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মরুকরণ প্রতিরোধ, ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন থেকে ওজোন স্তর রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে জাতিসংঘ বিশ্বের সব রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন সভা, সম্মেলন ও কনভেনশনের আয়োজন করে বিশ্বময় আন্দোলন গড়ে তোলে। জাতিসংঘ সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আয়োজন করে জলবায়ু সম্মেলনের। উদ্দেশ্য ছিল কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠেয় আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ-১৫) অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা এর কূটনৈতিক গুরুত্ব ও প্রভাবকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন প্রশমনে কাজে লাগানো।
ইদানীং অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা প্রায় দুই মিটার বেড়ে যাবে, ফলে দ্বীপ ও ব-দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। তার পর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বব্যাপী ঘটবে পরিবেশ বিপর্যয়, মোকাবিলা করতে হবে অনেক বৈরী অবস্থার। সম্প্রতি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘটে যাওয়া সিডর ও আইলার আঘাত পরিবেশ বিপর্যয়েরই আলামত।
জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের আওতায় সম্পাদিত কিয়োটো প্রোটোকলকে পুরো বিশ্বে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিয়োটো প্রোটোকলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোফ্লোরো কার্বনস, পারফ্লোরো কার্বনস ও সালফার হেক্সাফ্লোরাইড—এই ছয়টি গ্যাসকে গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে কার্বন ডাই-অক্সাইডই মুখ্য গ্রিন হাউস গ্যাস।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শীর্ষে অবস্থানকারী চীন, ভারত ও ব্রাজিল অতিদ্রুত উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলেও তাদের কার্বন নির্গমন কম থাকায় দেশগুলোর জন্য কিয়োটো প্রোটোকলে লক্ষ্যমাত্রার কোনো দায় ছিল না। মোট কার্বন নির্গমন বিষয়ে ইদানীং চীন কয়েকটি উন্নত দেশের চেয়েও এগিয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোর ধারণা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে চীন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে যাবে।
কিয়োটো প্রোটোকলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ব্যতিরেকে অন্য সব উন্নত দেশের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনটন প্রশাসন এই প্রোটোকলে সম্মতি দিলেও মার্কিন সিনেট তা গ্রহণ না করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি পাল্টা দায় চাপিয়ে প্রোটোকলটি র্যাটিফাই করেনি। বুশ প্রশাসনের সময় এ বিষয়ে নেতিবাচক ভূমিকা পরিলক্ষিত হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করছেন। কার্বন নির্গমন হ্রাসসংক্রান্ত যেকোনো উদ্যোগে মার্কিন প্রশাসনের সম্পৃক্ত হওয়া খুবই প্রয়োজনীয়, কেননা বিশ্বের মোট গ্রিন হাউস গ্যাসের ২৫ শতাংশ নির্গত হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
আগামী ৭-১৮ ডিসেম্বর কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ-১৫) অনুষ্ঠিত হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য কিয়োটো প্রোটোকলের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে কোপেনহেগেন সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো কিয়োটো প্রোটোকলকে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করে কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়ে সচেষ্ট ছিল। ইইউ আসন্ন কোপেনহেগেন সম্মেলনে ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমানো এবং মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হলে আরও অধিক কমিয়ে আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আসছিল। তার পর জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এডাপ্টেশন সহায়তা প্রদান বিষয়ে ইইউ সম্মতি প্রকাশ করে। তবে কোপেনহেগেন সম্মেলনের সফলতা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসহ পৃথিবীকে সংকটময় বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নেতৃত্ব প্রদানের মনোবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনের যথার্থতা নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে না এলে তারা রক্ষণশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর ব্যাংককে ১৮০টি দেশের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হলো। সভায় আসন্ন কোপেনহেগেন সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য ২০১২-পরবর্তী অবস্থান আপস-মীমাংসার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে গিয়ে ইইউ দেশগুলোর বিপরীত মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইইউ দেশগুলো উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশের ওপর গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের দায় সমভাবে চাপিয়ে নতুন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পক্ষে মতামত উত্থাপন করে। কিয়োটো প্রোটোকল অনুযায়ী কোনো দায় না থাকা সত্ত্বেও চীন এবং ভারত কার্বন নির্গমন মাত্রা কমানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ না করে তাদের সরকারের প্রতিশ্রুত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে। বিষয়টি নিয়ে উন্নত দেশগুলো এবং অপর পক্ষে চীনের নেতৃত্বে জি-৭৭ভুক্ত ১৩০টি উন্নয়নশীল দেশ পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগের জন্য এক অশনিসংকেত।
কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ ২০১২ সালে উত্তীর্ণ হবে, তখনো এর লক্ষ্যমাত্রা বহুলাংশেই অর্জিত হবে না। এ কারণেই গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের অপ্রতিরোধ্য গতিকে থামিয়ে অনিবার্য বিপর্যয় রোধকল্পে আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা স্থির করাটা এখন সময়ের দাবি।
কাজী গোলাম মোস্তফা: পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা)।
তবে আশার কথা, পৃথিবীকে রক্ষার জন্য কমবেশি সবাই সচেষ্ট আছে, বিশেষভাবে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ বিশ্বের সব দেশকে একক নীতি ও এক লক্ষ্যমাত্রার আলোকে সচেতন ও সংগঠিত করার জন্য ১৯৭২ সালের জুন মাসে স্টকহোমে মানব পরিবেশ উন্নয়নের ডিক্লারেশনের মাধ্যমে পরিবেশবিষয়ক কার্যক্রম শুরু করে। এর পর থেকে পরিবেশ উন্নয়ন, বৈশ্বিক জলবায়ু সংরক্ষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলা, বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মরুকরণ প্রতিরোধ, ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন থেকে ওজোন স্তর রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে জাতিসংঘ বিশ্বের সব রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন সভা, সম্মেলন ও কনভেনশনের আয়োজন করে বিশ্বময় আন্দোলন গড়ে তোলে। জাতিসংঘ সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আয়োজন করে জলবায়ু সম্মেলনের। উদ্দেশ্য ছিল কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠেয় আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ-১৫) অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা এর কূটনৈতিক গুরুত্ব ও প্রভাবকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন প্রশমনে কাজে লাগানো।
ইদানীং অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা প্রায় দুই মিটার বেড়ে যাবে, ফলে দ্বীপ ও ব-দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। তার পর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বব্যাপী ঘটবে পরিবেশ বিপর্যয়, মোকাবিলা করতে হবে অনেক বৈরী অবস্থার। সম্প্রতি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘটে যাওয়া সিডর ও আইলার আঘাত পরিবেশ বিপর্যয়েরই আলামত।
জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের আওতায় সম্পাদিত কিয়োটো প্রোটোকলকে পুরো বিশ্বে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিয়োটো প্রোটোকলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোফ্লোরো কার্বনস, পারফ্লোরো কার্বনস ও সালফার হেক্সাফ্লোরাইড—এই ছয়টি গ্যাসকে গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে কার্বন ডাই-অক্সাইডই মুখ্য গ্রিন হাউস গ্যাস।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শীর্ষে অবস্থানকারী চীন, ভারত ও ব্রাজিল অতিদ্রুত উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলেও তাদের কার্বন নির্গমন কম থাকায় দেশগুলোর জন্য কিয়োটো প্রোটোকলে লক্ষ্যমাত্রার কোনো দায় ছিল না। মোট কার্বন নির্গমন বিষয়ে ইদানীং চীন কয়েকটি উন্নত দেশের চেয়েও এগিয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোর ধারণা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে চীন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে যাবে।
কিয়োটো প্রোটোকলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ব্যতিরেকে অন্য সব উন্নত দেশের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনটন প্রশাসন এই প্রোটোকলে সম্মতি দিলেও মার্কিন সিনেট তা গ্রহণ না করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি পাল্টা দায় চাপিয়ে প্রোটোকলটি র্যাটিফাই করেনি। বুশ প্রশাসনের সময় এ বিষয়ে নেতিবাচক ভূমিকা পরিলক্ষিত হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করছেন। কার্বন নির্গমন হ্রাসসংক্রান্ত যেকোনো উদ্যোগে মার্কিন প্রশাসনের সম্পৃক্ত হওয়া খুবই প্রয়োজনীয়, কেননা বিশ্বের মোট গ্রিন হাউস গ্যাসের ২৫ শতাংশ নির্গত হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
আগামী ৭-১৮ ডিসেম্বর কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ-১৫) অনুষ্ঠিত হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য কিয়োটো প্রোটোকলের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে কোপেনহেগেন সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো কিয়োটো প্রোটোকলকে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করে কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়ে সচেষ্ট ছিল। ইইউ আসন্ন কোপেনহেগেন সম্মেলনে ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমানো এবং মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হলে আরও অধিক কমিয়ে আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আসছিল। তার পর জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এডাপ্টেশন সহায়তা প্রদান বিষয়ে ইইউ সম্মতি প্রকাশ করে। তবে কোপেনহেগেন সম্মেলনের সফলতা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসহ পৃথিবীকে সংকটময় বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নেতৃত্ব প্রদানের মনোবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনের যথার্থতা নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে না এলে তারা রক্ষণশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর ব্যাংককে ১৮০টি দেশের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হলো। সভায় আসন্ন কোপেনহেগেন সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য ২০১২-পরবর্তী অবস্থান আপস-মীমাংসার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে গিয়ে ইইউ দেশগুলোর বিপরীত মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইইউ দেশগুলো উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশের ওপর গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের দায় সমভাবে চাপিয়ে নতুন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পক্ষে মতামত উত্থাপন করে। কিয়োটো প্রোটোকল অনুযায়ী কোনো দায় না থাকা সত্ত্বেও চীন এবং ভারত কার্বন নির্গমন মাত্রা কমানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ না করে তাদের সরকারের প্রতিশ্রুত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে। বিষয়টি নিয়ে উন্নত দেশগুলো এবং অপর পক্ষে চীনের নেতৃত্বে জি-৭৭ভুক্ত ১৩০টি উন্নয়নশীল দেশ পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগের জন্য এক অশনিসংকেত।
কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ ২০১২ সালে উত্তীর্ণ হবে, তখনো এর লক্ষ্যমাত্রা বহুলাংশেই অর্জিত হবে না। এ কারণেই গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের অপ্রতিরোধ্য গতিকে থামিয়ে অনিবার্য বিপর্যয় রোধকল্পে আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা স্থির করাটা এখন সময়ের দাবি।
কাজী গোলাম মোস্তফা: পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা)।
No comments