‘কোনো ক্রসফায়ার ঘটেনি’ -কী কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সাহারা খাতুনের মুখে আমরা যেদিন শুনলাম, এই সরকারের আমলে কোনো ক্রসফায়ার
হয়নি, ঠিক সেদিনই ক্রসফায়ারের ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি রুল জারির ঘটনা
ঘটল। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এই রুল জারি
করেন হাইকোর্ট। পত্রপত্রিকায় ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুক যুদ্ধ’ বা হালের
‘এনকাউন্টার’ শব্দগুলোও এসব ঘটনায় ‘অপরাধীদের’ নিহত হওয়ার খবর প্রায়
প্রতিদিনই থাকছে। আর এই শব্দগুলোর অর্থ যা-ই হোক, দেশের সবাই এ ব্যাপারে
নিশ্চিত যে ঘটনাগুলো অপরাধী হিসেবে সন্দেহ করা লোকজনকে বিচার না করে মেরে
ফেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ প্রতিটি মৃত্যুর বদলে আমরা শুনি একটি পুরোনো
গল্প। সচেতন নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে তা ‘বিচারবহির্ভূত’
হত্যাকাণ্ড। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তবে কী বললেন?
ক্রসফায়ার নিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের মুখে আমরা এ পর্যন্ত নানা কথা শুনলাম। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনে গিয়ে ক্রসফায়ার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, এর পর নৌপরিবহনমন্ত্রীর কাছে শুনলাম ভিন্ন কথা। বিবিসির সংলাপে গিয়ে তিনি বললেন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমেই একদিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। আর এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে জোরের সঙ্গে অসত্য শোনা গেল, ‘আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেনি।’
বিচার না করে সন্দেহভাজন অপরাধীদের মেরে ফেলা যে আইনের শাসনের সঙ্গে মেলে না, তা আমরা নিরন্তর বলে আসছি। হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে রুল জারি করে আইনের শাসনের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয়টিকেই আবার তুলে ধরেছেন। লুত্ফর খালাসী ও খায়রুল খালাসী নামে দুই ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল র্যাব। র্যাবের কাছে যাঁদের পরিচয়—চরমপন্থী, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সদস্য। এ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর লুত্ফর খালাসীর ছেলে তাঁর বাবা ও চাচাকে র্যাব ৩-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানান ১৪ নভেম্বর। তখন তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে তাঁদের ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হতে পারে। এরপর ১৬ নভেম্বর ভোরে র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে তাঁরা মারা যান।
প্রতিটি ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে একটি বন্দুকযুদ্ধ ঘটবেই, এবং তখন পালাতে গিয়ে আটক ব্যক্তিরা মারা যাবেন—এই কাহিনী আর আমাদের কত শুনতে হবে? খালাসী ভাইদের পরিবারের পক্ষ থেকে যখন ক্রসফায়ারের আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল, তখন কেন তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেল না—তার কী জবাব দেবে র্যাব, আমরা তা শোনার অপেক্ষায় রইলাম। নিহত দুই ভাই বা এর আগে যারা ক্রসফায়ারে মারা গেছেন তাঁরা অপরাধী বা সন্ত্রাসী কি না, সেটা নিশ্চিত করা গেলেই ক্রসফায়ারের নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড জায়েজ হয়ে যায় না। জনতার চোর-ডাকাত পিটিয়ে মেরে ফেলা যদি রাষ্ট্র সমর্থন না করে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের কাজও কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
নির্বচানে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও মুখে অস্বীকার করেও সরকার যখন ক্রসফায়ার বন্ধ করছে না, তখন বুঝতে হচ্ছে যে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বাভাবিক আইনের পথে সুবিধা করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে আমরা সরকারকের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আইনের শাসনের কথা বলে এ ধরনের পথ বেছে নেওয়া দেশ, জাতি, গণতন্ত্র বা দল কারও জন্যই আখেরে মঙ্গল বয়ে আনবে না। বিচার ছাড়া হত্যা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পথ কোনো সভ্য দুনিয়ায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিকভাবেও একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন কার্যকর আছে—এমন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। আমরা মনে করি, বিষয়টির দায় শুধু প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাব বা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়; এটি একটি রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারকেই ক্রসফায়ার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ক্রসফায়ার নিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের মুখে আমরা এ পর্যন্ত নানা কথা শুনলাম। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনে গিয়ে ক্রসফায়ার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, এর পর নৌপরিবহনমন্ত্রীর কাছে শুনলাম ভিন্ন কথা। বিবিসির সংলাপে গিয়ে তিনি বললেন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমেই একদিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। আর এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে জোরের সঙ্গে অসত্য শোনা গেল, ‘আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেনি।’
বিচার না করে সন্দেহভাজন অপরাধীদের মেরে ফেলা যে আইনের শাসনের সঙ্গে মেলে না, তা আমরা নিরন্তর বলে আসছি। হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে রুল জারি করে আইনের শাসনের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয়টিকেই আবার তুলে ধরেছেন। লুত্ফর খালাসী ও খায়রুল খালাসী নামে দুই ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল র্যাব। র্যাবের কাছে যাঁদের পরিচয়—চরমপন্থী, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সদস্য। এ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর লুত্ফর খালাসীর ছেলে তাঁর বাবা ও চাচাকে র্যাব ৩-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানান ১৪ নভেম্বর। তখন তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে তাঁদের ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হতে পারে। এরপর ১৬ নভেম্বর ভোরে র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে তাঁরা মারা যান।
প্রতিটি ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে একটি বন্দুকযুদ্ধ ঘটবেই, এবং তখন পালাতে গিয়ে আটক ব্যক্তিরা মারা যাবেন—এই কাহিনী আর আমাদের কত শুনতে হবে? খালাসী ভাইদের পরিবারের পক্ষ থেকে যখন ক্রসফায়ারের আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল, তখন কেন তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেল না—তার কী জবাব দেবে র্যাব, আমরা তা শোনার অপেক্ষায় রইলাম। নিহত দুই ভাই বা এর আগে যারা ক্রসফায়ারে মারা গেছেন তাঁরা অপরাধী বা সন্ত্রাসী কি না, সেটা নিশ্চিত করা গেলেই ক্রসফায়ারের নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড জায়েজ হয়ে যায় না। জনতার চোর-ডাকাত পিটিয়ে মেরে ফেলা যদি রাষ্ট্র সমর্থন না করে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের কাজও কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
নির্বচানে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও মুখে অস্বীকার করেও সরকার যখন ক্রসফায়ার বন্ধ করছে না, তখন বুঝতে হচ্ছে যে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বাভাবিক আইনের পথে সুবিধা করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে আমরা সরকারকের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আইনের শাসনের কথা বলে এ ধরনের পথ বেছে নেওয়া দেশ, জাতি, গণতন্ত্র বা দল কারও জন্যই আখেরে মঙ্গল বয়ে আনবে না। বিচার ছাড়া হত্যা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পথ কোনো সভ্য দুনিয়ায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিকভাবেও একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন কার্যকর আছে—এমন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। আমরা মনে করি, বিষয়টির দায় শুধু প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাব বা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়; এটি একটি রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারকেই ক্রসফায়ার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
No comments