বাড়িছাড়া বৃদ্ধ মা-বাবা

“আমার ছেলেরা মাইরা আধামরা কইরা লাইছে। কুত্তারে তো এইভাবে মারে না। যেভাবে আমারে মারছে। ছাতনার (পাঁজরের) আড্ডি ভাইঙ্গা লাইছে। ঘুষি দিয়া দাঁত ভাঙ্গছে। এহন কোনো রকমে হাঁটতে পারছি। হউর (শ্বশুর) বাড়ির লোক আইন্না ঘরবাড়ি কুবাই লাইছে।”

এভাবেই নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কোড্ডা গ্রামের হোসেন মিয়া (৮৫)। নিজের ছেলের হাতে নির্যাতিত হয়ে গত প্রায় ৩ মাস ধরে বাড়িছাড়া তিনি। তার  স্ত্রী আয়েশা বেগমও (৬৫) মারধরের শিকার হয়েছেন ছেলে আর ছেলের বউয়ের হাতে। তাদের ঘরে তালা দেয়ায় বাড়ি যেতে পারছেন না। থাকছেন অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। ছেলে রাশেদ মিয়া আর তার স্ত্রীর দখলে এখন ওই বৃদ্ধের ঘরবাড়ি।
গত ১৭ই অক্টোবর জেলার পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িতে  ফেরার আবেদন করেন হোসেন মিয়ার স্ত্রী আয়েশা বেগম। ওই আবেদনে এলাকার উচ্ছৃঙ্খল লোকদের নিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয় রাশেদের বিরুদ্ধে। এর আগে ওই ছেলের বিরুদ্ধে আয়েশা বেগম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। এই মামলায় গত ৩০শে সেপ্টেম্বর জেলে যায় রাশেদ। ওইদিনই রাশেদের স্ত্রীর ভাই পাশ্বর্বর্তী ঘাটিয়ারা গ্রামের রায়হান মোল্লা কোড্ডা গ্রামের ফিরোজ মিয়া, নিয়ামত উল্লাহ, দুল্লুক মিয়া, সোহাগ মিয়া, রেজ্জেক মিয়া, সাচ্চু মিয়া, মনির মিয়া, রহমত আলী, মিরাজ মিয়া, বিশাল,  রোকসানা বেগমসহ আরও কয়েকজন বৃদ্ধ আয়েশা বেগম ও তার স্বামীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। বাড়ি ফিরলে প্রাণে মারা হতে পারে, এই আশঙ্কা তাদের। হোসেন মিয়া জানান, তার সম্পত্তির ৩ ভাগের মধ্যে ২ ভাগই বড় ছেলে রাশেদকে লিখে দিয়েছেন। সম্পদ পেতে সে অত্যাচার করতো। জমি লিখে দেয়ার পাশাপাশি তখন তাকে একটি ঘরও দেয়া হয়। বিদেশ থেকে সে যে স্বর্ণালংকার এনেছিল তাও নিয়ে গেছে। এরপর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘর উঠিয়ে বসবাস করতে থাকে। এখন আবার বাড়িতে ফিরে এসে বাড়ির ভাগ চায়। বাদবাকি সম্পত্তি আমি আমার স্ত্রী, বাকি ৫ সন্তানের নামে লিখে দেই। ভাগে ১০/১১শতক করে পেয়েছে তারা। এ কারণেই আমাকে অত্যাচার করছে।
রাশেদের ছোট ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী এরশাদ মিয়া জানান, পিতার নামে থাকা জমিজমার জম্যে ৪১ শতাংশ জায়গা ২০০৮ সালে তার বড় ভাই রাশেদ মিয়ার নামে লিখে দিয়েছেন তার পিতা। এরপর এ বছরের মার্চে বাকি ৬১ শতাংশ ৭৫ পয়েন্ট জায়গা তার মা ও ৫ ভাইবোনের নামে লিখে দেন। এরমধ্যে বাড়ির জায়গাও রয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে ৫ মাস আগে দেশে এসেও ৩ মাস ধরে বাড়িতে উঠতে পারছেন না বলে জানান।
গত ৫ই ডিসেম্বর কোড্ডা গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় গিয়ে হোসেন মিয়ার বসতঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। বাড়িতে রাশেদের স্ত্রী রোকসানা রয়েছে। রোকসানা বেগমের দাবি সব সম্পদ তার স্বামীর। তবে দলিল রাশেদের বাপ-মার নামে। চুরি করে সে অন্য ছেলেদের নামে দলিল করে দিয়েছে। রোকসানা তার ঘরবাড়ি কুপানোর এবং ছেলেমেয়েদের মারধোর করার উল্টো অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় গ্রামের দক্ষিণপাড়ার সর্দার-মাতব্বররা রাশেদের পক্ষ নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাঞ্জু খলিফা নামের তাদের এক প্রতিবেশী বলেন, বাপই ছেলেরে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে এনে বাড়িতে থাকতে দেন। বাকি ৩ ছেলের নামে সম্পত্তি দলিল করে দেয়া, পরে বাবার বড় ছেলের জেলে যাওয়া নিয়ে মারামারি। পুলিশ তাদের বাড়িতে দিয়ে গেছে। ঘরের তালা খুলে দিয়ে বলেছেন আপনাদের সঙ্গে অন্য কেউ মারামারি করলে আমাদের জানাবেন। তবে কেন তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না, তা বলতে পারবো না। সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, আমার জানামতে এরকম দুটো ঘটনা আছে। বাসায় উঠিয়ে দিয়ে আসার পর পরবর্তী কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তা আমাদের জানা নেই। জানতে পারলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.